শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বর্ষা বন্দনায় ভরপুর ‘মোহনা’

মোহাম্মদ অংকন ; বাঙালির জীবন-জীবিকা এবং সংস্কৃতির সাথে বর্ষাকাল জড়িয়ে আছে। সেই আদিকাল থেকে বাংলা সাহিত্যের মূলধারার বড় অংশজুড়ে আছে বর্ষার শৈল্পিক চিত্র। আমরা কবিতা, গান ও গল্পে খুঁজে পাই বর্ষার চিরায়ত নানা উপমা। বর্ষার আগমনে কবিরা লিখতে বসে পড়েন। আর তাদের লেখালেখির সমারোহ নিয়ে সাজানো হয় পত্র-পত্রিকা ও ছোট কাগজের পাতাগুলো। তেমনি বর্ষা বন্দনা নিয়ে সাজানো হয়েছে গাজিপুর হতে প্রকাশিত ‘মাসিক মোহনা’র বর্ষার বিশেষ সংখ্যা। 

বেশ কয়েকটি বিভাগ নিয়ে ‘মোহনা’ নিয়মিত প্রকাশ হয়ে আসছে। ‘স্মৃতিগদ্য’ বিভাগে ‘জীবনের জলসা ঘরে’ শিরোনামে দেশের খ্যাতিমান শিল্পী মুস্তাফা জামান আব্বাসী লিখেছেন, ‘জীবনটা জলসা ঘর নয়। ভালোবাসার বাতির নীচে যে পরম আরাধ্য মোতির সন্ধানে এ জলসা ঘরের আয়োজন সেখানে ক’জনই বা মোতি খুঁজে?..’ এমন চমৎকার গদ্যের আড়ালে লেখক তার বর্ষাযাপনের অতীত দিনগুলোর কথা বুনে চলেছেন। একই বিভাগে ‘গাজীপুরের বৃষ্টি, নদী ও নৌকা’ নিয়ে লিখেছেন আবুল হাসান চৌধুরী। ‘নিবন্ধ’ বিভাগে লিখেছেন ড. রকিবুল হাসান ও আবু আফজাল মোহাঃ সালেহ। ‘বর্ষার ছন্দে ছন্দে’ নিবন্ধে উঠে এসেছে বিভিন্ন সময়ের কবিদের কবিতায় ফুঁটে ওঠা বর্ষা বন্দনা। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জসীমউদ্দিন, ফররুখ আহমেদ কেউই যেন বর্ষার মোহনীয়তা ছাড়তে পারেন নি। আর তার প্রমাণ মেলে বর্ষার সব লেখায়।

গল্পে গল্পে সমকালীন গল্পকাররা বর্ষাকে তুলে ধরেছেন এই ‘মোহনা’য়। ‘বৃষ্টি’ শিরোনামের গল্পে সাদমান হোসাইন সাদ্দাম লিখেছেন, ‘শহরে থাকতে থাকতে আমরা অনেকেই হয়তো জানি না টিনের চালে বৃষ্টি পড়ার শব্দটা কেমন!..’ লেখক এই গল্পের মধ্য দিয়ে গ্রাম ও শহরের বর্ষার রূপগত পার্থক্য তুলে ধরেছেন। এছাড়া এ বিভাগে গল্প লিখেছেন, কবির কাঞ্চন, মোনোয়ার হোসেন, মির্জা নুরনবী, শেখ বিপ্লব হোসেন, মোহাম্মদ অংকন প্রমুখ। ‘ভ্রমণকাহিনী’ বিভাগে মিশকাত রাসেল ‘বৃষ্টি ভেজা সাগর, পাহাড়’ এ লিখেছেন কক্সবাজার সমুদ্র সৈকত ও হিমছড়ি পাহাড়ে বৃষ্টিভেজা আকাশ ও নোনাজলের সৈকতের দারুণ সব মুহূর্তগুলো। 

এত কিছুর পরও যেন বলতে হয়, বর্ষার প্রাসঙ্গিকতা বেশি মানায় বর্ষা নিয়ে লেখা ছড়া-কবিতায়। ‘ছড়া-কবিতা’ বিভাগে বর্ষা নিয়ে লেখা প্রায় ১০০ জন কবির ছড়া-কবিতায় মুখরিত হয়ে উঠেছে ‘মোহনা’র বর্ষা সংখ্যা। বর্ষা নিয়ে এ বিভাগে লিখেছেন অসীম সাহা, রাশেদ রউফ, জগলুল হায়দার, বাসুদেব খাস্তগীর, শশধর চন্দ্র রায়, সৈয়দ মাশহুদুল হক, শামীম খান যুবরাজ, রহিমা আক্তার মৌ, স্বপন শর্মা, অপু চৌধুরী, সুজন সাজু, মজনু মিয়া প্রমুখ। কেউ বর্ষায় প্রেমের কবিতা লিখেছেন, আবার কেউ কেউ কবিতার ছন্দে বর্ষার রুপকে তুলে ধরেছেন। বর্ষা ও বৃষ্টি নিয়ে লেখা ছড়া-কবিতার মধ্যে ‘বর্ষা দুপুর’, ‘বৃষ্টি পড়ে’, ‘বৃষ্টিবন্দনা’, ‘আষাঢ় আমার বৃষ্টি’, ‘বৃষ্টি হলে’, ‘মেঘের মেয়ে’, ‘বর্ষা রাণী’, ‘বৃষ্টি দিনের রুপ’, ‘সেই বৃষ্টি ধারা’, ‘আজ শ্রাবণে’, ‘বর্ষার ফুল’, ‘বর্ষা ও ভালোবাসা’, ‘আমরা সবাই ভিজতে চাই’, ‘বৃষ্টি এল’, ‘মেঘবার্তা’, ‘গেঁয়ো বর্ষা’, ‘বাদল ধারা’ ইত্যাদি যেন পাঠকের মন হরন করে নিবে। এছাড়া এ সংখ্যায় কলকাতার কবিরাও বর্ষা নিয়ে লিখেছেন।

সর্বোপরি ‘মোহনা’র বর্ষা সংখ্যাটি দেখিয়েছে যে বাংলার বর্ষা নিয়ে কত কিছু লেখা যায় তা-রই প্রমাণ এটি। আশা করছি, পাঠকনন্দিত কাগজটি সকলের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়ে এমন উপহার প্রতিবার দিবে। ‘মোহনা’র সফলতা কাম্য।

মাসিক মোহনা

বর্ষ-০২, বর্ষা বিশেষ সংখ্যা, আগস্ট-১৮

সম্পাদক- ইসরাফিল হোসেন

শুভেচ্ছা মূল্য-৩০ টাকা, পৃষ্ঠা-৫৬

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ