বৃষ্টিতে চলনবিলে তিন শতাধিক শুঁটকি চাতাল লন্ডভন্ড
তাড়াশ (সিরাজগঞ্জ) শাহজাহান আলী: ঘূর্ণিঝড় তিতলীর আঘাতে চলনবিলের তিন শতাধিক শুঁটকি চাতাল লন্ডভন্ড হয়েছে। দেশি মাছের শুঁটকির জন্য বিখ্যাত চলনবিলে গত চার দিনের প্রবল বর্ষণ ও ঝড়ো হাওয়ায় দুই শতাধিক শুঁটকির চাতাল ল-ভ- হয়ে গেছে। এতে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
শুঁটকি তৈরির একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবে গত বুধবার থেকে তাদের শুঁটকি তৈরির এ ভরা মওসুমে প্রায় ১৫ লাখ টাকার শুঁটকি নষ্ট হয়ে গেছে। এ আর্থিক ক্ষতিতে তারা দিশেহারা হয়ে পড়েছেন।
এ কারণে বিপুল পরিমাণ ক্ষতিতে ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে বলেও জানিয়েছেন মান্নাননগর এলাকার শুঁটকি ব্যবসায়ী কামাল উদ্দিন।
নিম্নচাপের প্রভাবে গত বুধবার থেকে চার দিনে চলন বিলাঞ্চলে বয়ে গেছে ঝড়ো হাওয়া ও ভারি বর্ষণ। এতে দেশি মাছের শুঁটকি তৈরির ভরা মওসুমে চলনবিলের তাড়াশ, উল্লাপাড়া ও শাহজাদপুর, পাবনার ভাঙ্গুড়া, চাটমোহর ও ফরিদপুর নাটোরের গুরুদাসপুর, সিংড়া এবং নওগাঁর আত্রাই উপজেলার প্রত্যন্ত বিলে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের বাঁশের বাতা ও খুঁটি দিয়ে তৈরি অস্থায়ীভাবে স্থাপন করা শুঁটকির চাতালগুলো লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে।
শুঁটকি ব্যবসায়ী শরাফত আলী বলেন, এলোমেলো বাতাসে মাটিতে পড়ে গেছে শুঁটকি, পচে গেছে ওই সময়ে কেনা হাজার হাজার টাকার দেশি মাছ।
এসব শুঁটকি তৈরির চাতালে মিঠা পানির দেশি প্রজাতির সুস্বাদু মাছ যেমন- টেংরা, খৈলসা, গুচি, বাইম, পুঁটি, টাকি, বোয়াল, শোল, মলাঢ্যালা, কাকিলাসহ ১০-১২ প্রজাতির মাছের শুঁটকি তৈরি করা হয়ে থাকে।
এসব মাছ আশ্বিন থেকে পৌষ মাস পর্যন্ত চাতালগুলোতে ব্যবসায়ীরা রোদে শুকিয়ে শুঁটকি করে প্যাকেটজাত করেন। শরাফত আলী জানান, বর্ষা মৌসুমের চলতি সময়টাতেই চলনবিলে বেশি পরিমাণ মাছ পাওয়ায় ব্যবসায়ীরা বিলের বিভিন্ন স্থানে আস্তানা গেড়ে শুঁটকি তৈরিতে মনোনিবেশ করে থাকেন।
পরে চাহিদা অনুযায়ী দেশের সৈয়দপুর, রংপুর, নীলফামারী, ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুরসহ অন্যান্য শহরে ভালো দামে তা বিক্রি করেন। এভাবে এ পেশায় জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন শত শত শুঁটকি ব্যবসায়ী। আর গত চার দিনের বর্ষণে রৌদ্রে শুকানোর জন্য ছড়িয়ে রাখা দুই শতাধিক চাতালে প্রায় ১৫ লাখ টাকার শুঁটকি বৃষ্টির কারণে পচে নষ্ট হয়ে গেছে।
মহিষলুটি এলাকার শুঁটকি আড়তের ব্যবসায়ী মছের আলী ম-ল জানান, আবহাওয়ার এ বিরূপ প্রভাবে চলন বিলাঞ্চলের শত শত শুঁটকি ব্যবসায়ীর প্রায় ১৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। তারা চার দিনে হাজার হাজার টাকার কেনা মাছ রোদে শুকাতে না পেরে পচে যাওয়া সে মাছ ফেলে দিতে বাধ্য হয়েছেন। এতে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং শুঁটকি ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে তাড়াশ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড. হাফিজুর রহমান বৃষ্টির কারণে শুঁটকির চাতালে মাছ পচে যাওয়ায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতির বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে আমরা কাজ করছি।