শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

নবেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা স্থগিত করা উচিত------হিউম্যান রাইটস ওয়াচ

২ নভেম্বর,  রয়টার্স : নভেম্বরের মাঝামাঝি রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের পরিকল্পনা স্থগিত করার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ। তারা জানায়, মিয়ানামারে রোহিঙ্গাদের জীবন ও স্বাধীনতা ঝুঁকির মুখে। অবিলম্বে প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা স্থগিত করা উচিত। গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠকে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে একটি 'যথাযথ পরিকল্পনা' নেওয়ার কথা জানায় মিয়ানমার ও বাংলাদেশ।

গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে নতুন করে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ৭ লাখেরও বেশি মানুষ। পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ২০১৭ সালের নভেম্বরে ‘অ্যারেঞ্জমেন্ট অন রিটার্ন অব ডিসপ্লেসড পার্সন্স ফ্রম রাখাইন স্টেট’ নামে বাংলাদেশ-মিয়ানমার প্রত্যাবাসন চুক্তি সম্পন্ন হয়। পরে গত ৬ জুন নেপিদোতে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার ও জাতিসংঘের সংস্থাগুলোর মধ্যেও সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তবে এখন পর্যন্ত প্রত্যাবাসন চুক্তির আওতায় একজন রোহিঙ্গাকেও ফিরিয়ে নেওয়ার সুনিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশ বলছে, এখন পর্যন্ত কোনও রোহিঙ্গাকে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিরিয়ে নেয়নি মিয়ানমার।

এই ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে জাতিসংঘও। তাদের অভিযোগ, প্রত্যাবাসন পরিকল্পনা নিয়ে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা ইউএনএইচসিআর এর সঙ্গে কোনও আলোচনাই করা হয়নি। এবার সেই পরিকল্পনা স্থগিত করার আহ্বান জানালো এইচআরডব্লিও। সংস্থাটির শরণার্থী অধিকার বিষয়ক পরিচালক বিল ফ্রেলিক বলেন, মিয়ানমার সরকার প্রত্যাবাসন নিয়ে শুধু কথাই বলে যায়। কিন্তু রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন কিংবা পরিস্থিতির উন্নয়নে কোনও পদক্ষেপই নেয়নি। তিনি বলেন, বাংলাদেশ যদি জাতিসংঘের সঙ্গে আলোচনা না করেই সিদ্ধান্ত নেয় তবে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে তারা যে প্রশংসা পেয়েছিলো সেটা হারাবে।

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে মিয়ানমারকে ২৪ হাজার ৩৪২ জন রোহিঙ্গার তালিকা দেওয়া হয়েছে। তবে নিরাপদ প্রত্যবাসন নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। অনেক রোহিঙ্গাই জানাচ্ছে তারা ফিরে যেতে ভয় পাচ্ছে। গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের বৈঠক শেষে পররাষ্ট্র সচিব শহীদুল হক জানান, নভেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরু হতে পারে। তবে প্রত্যাবাসনের প্রথম ধাপ শুরু হবে বলে নিশ্চিত করলেও ঠিক কতজন রোহিঙ্গা প্রথম দফার প্রত্যাবাসনে ফেরত যাওয়ার সুযোগ পাবে সে বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেননি তিনি। বুধবার মিয়ানমার কর্মকর্তারা দাবি করেন, তারা ৫ হাজার রোহিঙ্গাদের তালিকা পর্যালোচনা করেছে। চলতি মাসেই ২ হাজার জনের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। ১৫ নভেম্বর থেকে প্রতি সপ্তাহে ১৫০ রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফিরে যাবে। 

ফ্রেলিক বলেন, এই প্রত্যাবাসন পরিকল্পনার মাধ্যমে মিয়ানমার রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞের সমালোচনা পাশ কাটাতে চাইছে। দাতা সংস্থাগুলোর এখানে অর্থায়ন করা উচিত নয়। কারণ এখানে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হয়নি।

বাংলাদেশের তৈরি করা রোহিঙ্গা তালিকায় স্বেচ্ছায় ফিরে যাওয়ার বিষয়টির প্রাধাণ্য দেওয়া হয়নি বলেও অভিযোগ রয়েছে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচকে শরণার্থী ও ত্রাণ বিষয়ক কমিশনার আবুল কালাম বলেন,কে কে ফিরে যেতে চায় তার ওপর ভিত্তি করে এই তালিকা তৈরি হয়নি।

গত জুনে মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ প্রত্যাবাসন নিয়ে চুক্তি করে জাতিংঘের শরণার্থী সংস্থা ও উন্নয়নপ্রকল্প। এরপরেও রাখাইনের প্রকৃত অবস্থা যাচাই করা সম্ভব হয়নি। নভেম্বরে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর বিষয়টিকে জাতিসংঘ ‘তাড়াহুরো ও অপরিপক্ক’ বলে আখ্যা দিয়েছে।

ইউএনএইচসিআরের মুখপাত্র আন্দ্রে মাজেহসিস বলেন, আমরা রাখাইনের পরিস্থিতিতে সন্তুষ্ট নই। তাই প্রত্যাবাসনের ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত। এই মুহূর্তে রাখাইনে ফিরে যাওয়ার ক্ষেত্রে রোহিঙ্গাদের কোনও সহায়তা করবে না ইউএনএইচসিআর। 

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ জানায়, তারা শত শত সাক্ষাতকার নিয়ে জানতে পেরেছে যে রোহিঙ্গারা ফিরে যেতে চায়। কিন্তু শুধুমাত্র যদি সেখানে তাদের নিরাপত্তা, অধিকার, স্বাধীনতা ও জীবিকা অর্জনের সুযোগ থাকে।

কক্সবাজারে মিয়ানমার-বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের সফরের সময় একটি চিঠি দেয় রোহিঙ্গারা। সেখানে বলা হয়, ‘আমরা চাই আমাদের মানুষ হিসেবে এবং নাগরিকের সমমর্যাদা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হোক। আমরা জানাতে চাই যে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমরা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় রাজি হবো না।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ