মুন্সিগঞ্জে বন্ধ করা যাচ্ছে না কারেন্ট জাল উৎপাদন
আব্দুস সালাম, মুন্সীগঞ্জ : মুন্সিগঞ্জে কোনো ভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না কারেন্ট জাল (মনোফিলামেন্ট) উৎপাদন। যেন লাগামহীন ঘোড়ার মতো চলছে তাদের জাল উৎপাদনের কাজ। বেশি মুনাফার আশায় অনেকেই প্রভাবশালীদের থেকে কারেন্ট জাল মেশিন ভাড়া নিয়ে জাল উৎপাদন করে চলছে। জাল উৎপাদনের কারখানা বন্ধ করতে না পারায় বাজারে এর সরবরাহ বন্ধ করা যায়নি। আর বন্ধ করা যাচ্ছে না ইলিশ ও জাটকা নিধন।
এসব কারেন্টজাল কারখানায় জাল তৈরি বন্ধ না হওয়ায় গত ৭ অক্টোবর থেকে ২৮ অক্টোবর জেলার পদ্মা, মেঘনা নদীতে ২২ দিনের অভিযানে ৬৬ লক্ষ ৭ হাজার ৯২ মিটার কারেন্টজাল জব্দ করা হয়েছে। এ ছাড়াও ২৭ অক্টোবর শনিবার জাল ব্যবসায়ীর সভাপতি মো. মহিউদ্দন এর জাল কারখানা থেকে ২ কোটি মিটার কারেন্টজাল জব্দ করে পুড়িয়ে দেয়া হয়। তার পরেও থেমে নেই কারেন্ট জাল উৎপাদন।
জেলা মৎস্য অধিদপ্তরের ২০১৭ তথ্যনুসারে ছোট-বড় সব মিলিয়ে ১শ’ ৬৯টি জাল কারখানা রয়েছে। এর মধ্যে ৪২টি মাল্টিফিলামেন্টের। ২৮টি অবৈধ কারেন্ট জাল করখানা বন্ধ রয়েছে। বাকি ৮০টি অবৈধ কারেন্ট জাল কারখানা আছে।
এছাড়া জেলা কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শক অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নিয়ে জেলা সদরে গড়ে উঠেছে ৫০টি জাল কারখানা। এর মধ্যে মাল্টিফিলামেন্ট-মনোফিলামেন্ট জাল কারখানাও রয়েছে।
এদিকে জাল ব্যাবসায়ীরা দিচ্ছে অন্য তথ্য। তারা জানিয়েছেন, সদর উপজেলার পঞ্চসার ইউনিয়নে প্রায় ছয় শতাধিক কারখানার সাড়ে ৩ হাজার মেশিনে দিনে দুপুরে উৎপাদন হচ্ছে কারেন্ট জাল। দিবা ও প্রভাতি দুই সিফটে চলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল উৎপাদন।
সরকারি কাগজপত্র, লাইসেন্স ছাড়াই জাটকা ও সব ধরনের মাছের মরণ ফাঁদ কারেন্ট জাল উৎপাদন হচ্ছে। মাঝে মাঝে র্যাবের অভিযানে কিছু কারখানাকে জরিমানা করা হলে কিছু সময় কারেন্ট জালের উৎপাদন বন্ধ থাকে। অভিযান ধারাবাহিকতা বজায় না থাকায় আবার কারখানার মালিকরা প্রকাশ্যে কারেন্ট জালের উৎপাদন করে। অনেক সময় কিছু সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা আগে ভাগেই অভিযানের কথা কারখানার মালিকদের জানিয়ে দেন। এতে অনেক সময় অভিযান ব্যর্থ হয়।
তাছাড়া মুক্তারপুর ফেরি ঘাট থেকে ফিরিঙ্গী বাজার এলাকায় স্থল ও নদী পথে প্রতিনিয়ত ট্রা ও ট্রলারসহ বিভিন্ন যানে করে ঢাকার চক বাজারসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কারেন্ট জাল সরবরাহ করছে। একটি নির্দিষ্ট ট্রাক দিয়ে সপ্তাহে ৩ থেকে ৪ বার মাওয়া ফেরি পার হচ্ছে। এ ছাড়াও হাটলক্ষীগঞ্জ লঞ্চ ঘাটেও বিভিন্ন লঞ্চে করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দক্ষিণবঙ্গে বিক্রি হচ্ছে। নদীতে নৌ-পুলিশের অভিযান না থাকায় এ জাল পাচার হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পঞ্চসার ইউনিয়নের জাল ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, একই মেশিনে সব ধরনের জাল বানানো যায়। তবে মুনাফা ও চাহিদা বেশি থাকায় কারেন্ট জালই বেশি উৎপাদন করা হয়।
কারেন্ট জাল উৎপাদন, পরিবহন, বাজারজাতকরণ, সংরক্ষণ বা ব্যবহার সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ থাকা সত্বেও আপনারা কেন কারেন্ট জাল উৎপাদন করছেন? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেছেন, আমরা একা জাল উৎপাদন করি না। আরো অনেকেই জাল উৎপাদন করে। কারেন্ট জাল তৈরির সুতা যারা উৎপাদন করে তাদের কাছে যান। এ প্রতিবেদককে তিনি আরো বলেন, আপনার কিছু জানার দরকার হলে জাল ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি মহিউদ্দিন আহম্মেদ, সহ-সভাপতি মো. হাবীব চেয়ারম্যান (সাবেক), পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তফা, আনোয়ার এবং হাজী মো শফিউদ্দিনের কাছে জিজ্ঞাসা করেন। ওনাদের কারেন্ট জাল কারখানা, জাল তৈরি করা বন্ধ করলে আমাদের মতো ছোট খাটো কারখানা গুলো এমনেতেই বন্ধ হয়ে যাবে।
এদিকে কারেন্ট জাল ব্যবসায়ীর সহ-সভাপতি মো. হাবীব ও পঞ্চসার ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম মোস্তাফার মুঠোফোনে কল দিয়ে তাদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা নৃপেন্দ্র নাথ বিশ্বাস বলেছেন, জেলার কারেন্ট জাল বন্ধ করতে সপ্তাহে কম পক্ষে ২টি অভিযান পরিচালনা করা দরকার। তবে অভিযান পরিচালনা করতে যে পরিমানে অর্থ লাগে সে পরিমানে অর্থ আমাদের জন্য বরাদ্দ নেই। তার পরেও আমরা আমাদের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।