শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দেশব্যাপী বাড়ি বাড়ি হানা দিয়ে তল্লাশীর নামে চলছে পুলিশী তান্ডব

স্টাফ রিপোর্টার : চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের আগে তফসিল ঘোষণা থেকে বিরত থাকতে নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে বিএনপি। গতকাল রোববার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে নয়াপল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এ আহ্বান জানান। রিজভী বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একদিকে আলোচনা অন্যদিকে আন্দোলন, এটি আমার বোধগম্য নয়। প্রধানমন্ত্রী, এখনও তো সেই অর্থে জোরালো আন্দোলন শুরু হয়নি, আপনি সংলাপের মাধ্যমে সংকট নিরসন করতে পারলে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো তো আন্দোলনের পথে যাবে না। সংকট নিরসনের চাবিকাঠি আপনার হাতে। আলোচনার আহবান তো জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে অব্যাহত আছে। তবে আপনাকে কালের যাত্রার ধ্বনি শুনতে হবে। কালের যাত্রার ধ্বনি হচ্ছে বর্তমানে জনগণের দাবি-যা জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট সাত দফা দাবির মাধ্যমে উত্থাপন করেছে। আপনি সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নিন তাহলে তো কোন সংকট থাকার কথা নয়। সংলাপ ফলপ্রসূ করুন, তখন বিরোধী দল আন্দোলনের পথে হাঁটবে না। একইসাথে দেশব্যাপী বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশীর নামে পুলিশ তান্ডব চালাচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন রিজভী।
বিএনপির সিনিয়র এই নেতা বলেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে যে সংলাপ চলছে, সেই সংলাপে এখনও পর্যন্ত সংকট সুরাহা না হওয়ার আগেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার তোড়জোড় করছে নির্বাচন কমিশন-যা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। এমনকি নির্বাচন কমিশনের সদস্যদের মতামতকেও অগ্রাহ্য করা হচ্ছে। গণমাধ্যমেও এমন খবর প্রকাশিত হয়েছে। শনিবার জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের পক্ষ থেকে তফসিল পেছানোর আবেদন করা হলেও ইসির সচিব তা অস্বীকার করে বলেছেন তারা কোন চিঠি পাননি। এ সপ্তাহের মধ্যেই তফসিল ঘোষনা করা হবে বলে তিনি সাংবাদিকদের জানান। আমি নির্বাচন কমিশনের উদ্দেশ্যে বলতে চাই-নিজ আইনসঙ্গত ক্ষমতাবলে জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিন। রাজনৈতিক সংকট সমাধান না হওয়া পর্যন্ত তফসিল ঘোষনা থেকে বিরত থাকুন।
রিজভী আরও বলেন, সারাদেশে নির্বাচনি কর্মকর্তা অর্থাৎ প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার বাছাই করছে পুলিশ। বিভিন্ন থানা নির্বাচন কর্মকর্তারা নির্বাচনী কর্মকর্তাদের তালিকা তৈরি করে পুলিশের হাতে তুলে দিচ্ছে। পুলিশ তালিকা ধরে ধরে কারা সরকার দলীয় সমর্থক তাদের নাম বাছাই করছে নির্বাচন কর্মকর্তা হিসেবে। এমনকি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে গিয়ে যাচাই করছে, ফোন করে জিজ্ঞাসা করছে আপনি কোন রাজনৈতিক দলের সদস্য। যদি কোন শিক্ষক বিএনপি সমর্থক হয়ে থাকে তাকে বলা হচ্ছে আপনার নির্বাচনের দায়িত্ব পালনের দরকার নেই। জনগণ এমন কর্মকান্ডকে ভোট কারচুপির পূর্ব প্রস্ততি বলেই মনে করছে। সরকারের হুকুমেই এমন নজিরবিহীন কর্মকান্ড চলছে বলে জনগণ বিশ্বাস করে।
রিজভী বলেন, জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখে সারাদেশে বিএনপিসহ বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে গায়েবি মামলার পর এখন দেশজুড়ে গণগ্রেফতারের মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছে পুলিশ। সর্বব্যাপী নিপীড়ণের ধারায় বিভিন্ন জেলা, উপজেলায় বিএনপির সক্রিয় নেতা-কর্মীদের বেছে বেছে গ্রেফতার করা হচ্ছে। গণগ্রেফতারের সঙ্গে চলছে রমরমা অর্থ-আদায় বাণিজ্য। পুলিশ বিএনপি নেতা-কর্মী ও সমর্থকদের আটক করে অথবা মিথ্যা মামলায় নাম জড়িয়ে গ্রেফতারের হুমকি দিয়ে টাকা আদায়ের ঘৃন্য পথ বেছে নিয়েছে। পুলিশ গায়েবী মামলার তালিকা ধরে ধরে এলাকায় এলাকায় গিয়ে বিএনপি ও বিএনপির সমর্থকদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা আদায় করছে। অনেককে গ্রেফতার করে পরিবারের সদস্যদের বলা হচ্ছে-মোটা অংকের টাকা নিয়ে আসেন, আটককৃতদের মামলায় নরমাল ধারা দিয়ে চালান করে দিব যাতে সহজে জামিন পেয়ে যায়। এছাড়াও বাড়িতে বাড়িতে হানা দিয়ে তল্লাশীর নামে চলছে পুলিশী তান্ডব। বিভিন্ন জেলা থেকে আমাদের কাছে এ ধরণের খবর আসছে প্রতিনিয়ত, প্রতি মুহূর্তে।
 দেশের বিভিন্নস্থানে গ্রেফতার ও মামলা দায়েরের পরিসংখ্যান তুলে ধরে রিজভী বলন, কোর্টচাঁদপুর থানায় গোয়েন্দা পুলিশ নানা ভয়ভীতি দেখিয়ে গ্রেফতারের পাশাপাশি বিএনপি নেতাকর্মীদের কাছ থেকে বিপুল অংকের টাকা দাবি করছে। পুলিশ বিএনপি নেতাদের কাছ থেকে জোর করে টাকা আদায় করছে মামলা দেয়া হবে না এই শর্তে। সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশীদের কাছ থেকে ইতোমধ্যে টাকা আদায় করেছে পুলিশ। আমি পুলিশের এই ঘৃন্য ও ন্যাক্কারজনক কর্মকান্ডে ধিক্কার জানাচ্ছি, প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং এধরণের কর্মকান্ড থেকে সরে আসার আহবান জানাচ্ছি।
বরিশালের গৌরনদীতে পুলিশী প্রহরায় আওয়ামী ক্যাডার’রা রাস্তা কেটে বোমা ফাটিয়ে ত্রাসের সৃষ্টি করেছে। অথচ এই ঘটনায় পুলিশ উল্টো বিএনপি’র নেতাকর্মীদের নামে মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। গাজীপুর মহানগর যুবদলের সভাপতি প্রভাষক বশির আহমেদকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. মাজহারুল আলমের বাসায় তিন দফা তল্লাশি করে তাকে না পেয়ে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেছে পুলিশ। এছাড়াও মহানগর যুবদলের সাধারণ সম্পাদক জসিম বাটের বাসায় দফায় দফায় তল্লাশীর নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানী করছে পুলিশ।
ফেনী জেলা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের সদস্য জাহিদ আহমেদ ইমনকে গায়েবী মামলায় গ্রেফতার করে দু’দিন পর হাতে অস্ত্র দিয়ে চালান দিয়েছে ফেনী সদর থানা পুলিশ। স্বেচ্ছাসেবক দল বগুড়া জেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোঃ কনক সরকারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছে। টাঙ্গাইল জেলা সদর উপজেলার কাকুয়া ইউনিয়ন বিএনপি’র সভাপতি শাহ আলীকে একদিন আগে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গাইবান্ধা জেলা গোবিন্দগঞ্জ উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিরাজুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ২৩নং ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক হাসান উদ্দিন আহমেদ সোহেলকে গতকাল কামরাঙ্গীর চর থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উত্তরখান থানা যুবদলের সাংগঠনিক সম্পাদক রিপন, যুবদল সদস্য মারজান এবং মতি মাষ্টারসহ ৫ জন নেতাকর্মীকে পল্টন এলাকা থেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। রিজভী আহমেদ দলের পক্ষ থেকে নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতারের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি এবং অবিলম্বে তাদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও গায়েবী মামলা প্রত্যাহার করে নি:শর্ত মুক্তির জোর দাবি জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ