শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জড়িতদের শনাক্ত করা যায়নি মামলাও হয়নি

তোফাজ্জল হোসেন কামাল : পোড়া মবিলকান্ডকে ‘অমানবিক’ উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল  ভিডিও ফুটেজ দেখে শনাক্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলা করার কথা বলেছেন ছয় দিন আগে। তাদের ছাড় দেয়া হবে না উল্লেখ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, পরিবহন ধর্মঘটের নামে সড়কে তারা হয়রানি করেছে, তাদের ছাড় দেওয়া হবে না। গত মঙ্গলবার (৩০ অক্টোবর) সন্ধ্যায় রাজধানীর গুলশান ইয়ুথ ক্লাবে ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিত সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই হুঁশিয়ারি দেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী।
এই হুঁশিয়ারীর দু‘দিন আগেই সড়ক পরিবহন আইনের কয়েকটি ধারা সংশোধনসহ ৮ দফা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে শ্রমিকদের ধর্মঘটের সময় মানুষের মুখে কালি মাখানো,ছাত্রীর পোশাকে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়া,অ্যাম্বুলেন্সসহ জরুরী পরিবহনের চালক-যাত্রীদেরকে হেনস্তা,পোড়া মবিল লাগিয়ে কান ধরে ওঠবোস করানোসহ সড়ক জুড়ে দু‘দিন ধরে নৈরাজ্য সৃষ্টির ঘটনা ঘটে।
এসব ঘটনার সপ্তাহ পার হতে চলেছে। কিন্তু কাজের কাজ কোনটাই হয় নি। জড়িতদের বিরুদ্ধে মামলাতো দূরে থাক,তাদেরকে শনাক্ত করা সম্ভব হয় নি। উপরন্তু,জড়িতদের আড়াল করার চেষ্টা চলছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। পোড়া মবিলকান্ড নিয়ে পরিবহন শ্রমিক ও নেতারা এখন দ্বিধাবিভক্ত। তারা এখন একে অপরকে দুষছে।
এদিকে,গত বুধবার জনস্বার্থে দায়ের করা এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এক আদেশে পরিবহন ধর্মঘটের সময় গাড়ির চালক ও শিক্ষার্থীদের মুখে ও শরীরে পোড়া মবিল মাখানো, অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় শিশু মৃত্যুসহ শ্রমিকদের বিশৃঙ্খল কর্মকান্ডের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কী কী পদক্ষেপ নিয়েছে, তা জানতে চেয়েছে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে পুলিশ মহাপরিদর্শককে এ বিষয়ে জানাতে বলা হয়েছে।
একই সঙ্গে ধর্মঘটের নামে এসব ভয়ংকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি যেন না ঘটে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কেন নির্দেশনা দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সচিব, পুলিশ মহাপরিদর্শক, ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার, ঢাকা মেট্রোপলিটন ট্রাফিক পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার, মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জের দুই ডেপুটি কমিশনার এবং পুলিশ সুপারকে এ রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
সড়ক পরিবহন আইন সংশোধনের নামে শ্রমিকরা গত ২৮ ও ২৯ অক্টোবর দেশে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট পালন করে। এ সময় বিশৃঙ্খল পরিবহন শ্রমিকরা সাধারণ চালক ও শিক্ষার্থীদের মুখে পোড়া মবিল লাগিয়ে দেয়। তারা অ্যাম্বুলেন্স আটকে রাখায় অন্তত দুই শিশুর মৃত্যু হয়। এ বিষয়ে সংবাদমাধ্যমগুলোতে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে তা গত মঙ্গলবার হাইকোর্টের নজরে আনা হয়। এরপর আদালতের নির্দেশে পরদিন বুধবার হাইকোর্টে রিট দায়ের করার পর  সেই রিটের শুনানি শেষে আদালত উক্ত আদেশ দেন।
সাপ্তাহিক ছুটি শেষে কর্মদিবসের প্রথম দিন গত রোববার সকাল থেকে সারা দেশে চলা ৪৮ ঘণ্টার এ পরিবহন ধর্মঘটকে ‘নৈরাজ্য’ উল্লেখ করে ব্যাপক সমালোচনা হয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
ধর্মঘটকারী শ্রমিকদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে,সড়ক দুর্ঘটনার সব অপরাধ জামিনযোগ্য করা, পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান বাতিল করা, সড়ক দুর্ঘটনায় গঠিত যেকোনো তদন্ত কমিটিতে ফেডারেশনের প্রতিনিধি রাখা, ড্রাইভিং লাইসেন্স পাওয়ার জন্য সর্বনিম্ন শিক্ষাগত যোগ্যতা পঞ্চম শ্রেণি নির্ধারণ এবং সড়কে পুলিশের হয়রানি বন্ধ করা। এর আগে গত ১২ অক্টোবর শ্রমিক ফেডারেশন সিদ্ধান্ত নেয়, সড়ক পরিবহন আইন সংস্কারসহ আট দফা দাবি ২৭ অক্টোবরের মধ্যে পূরণ না হলে ২৮ অক্টোবর থেকে দুদিনের কর্মবিরতিতে যাবেন শ্রমিকরা।
পর্যবেক্ষক মহলের মতে,একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন ৪৮ ঘণ্টা বেআইনি ধর্মঘট পালন করেই ক্ষান্ত হয়নি; তাদের ভাষায়, দাবি না মানলে ভবিষ্যতে ৯৬ ঘণ্টা ধর্মঘট পালনেরও ঘোষণা দিয়ে রেখেছে। যে আট দফা দাবিতে তারা ধর্মঘট পালন করেছে, সেটি মেনে নিলে সড়কপথে বিশৃঙ্খলা ও দুর্ঘটনা আরও বাড়বে। এখনো কাগজপত্রে যেটুকু জবাবদিহি আছে, সেটুকুও থাকবে না।
তাদের মতে, যেখানে বিরোধী দলকে নিয়মতান্ত্রিক সভা-সমাবেশই করতে দেওয়া হয় না, দিলেও নানা শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়, সেখানে ধর্মঘটের নামে সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন দেশের অর্থনীতি তো বটেই, জনগণকেও ৪৮ ঘণ্টা জিম্মি করে রাখল, অথচ সরকার ছিল পুরোপুরি নির্বিকার। জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় সদা উদ্গ্রীব সরকারকেও সড়কে যাত্রীদের নিরাপত্তা রক্ষায় কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যায়নি।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন,যেকোনো আন্দোলন বা কর্মসূচির একটি নিয়মকানুন থাকে, এখানে তা-ও লঙ্ঘন করা হয়েছে। ধর্মঘট পালন করতে হলে ১৫ দিন আগে কর্তৃপক্ষকে নোটিশ দিতে হয়। কিন্তু সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশন তা না দিয়ে এটিকে কর্মবিরতি হিসেবে চালিয়ে দিয়েছে। সেটাই যদি হবে তাহলে পরিবহনশ্রমিকেরা রাস্তায় হানাহানি ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করলেন কেন? তাঁরা  শুধু নিজেরাই গণপরিবহন বন্ধ রাখেননি; ব্যক্তিগত গাড়ি, রিকশা, অটোরিকশা পরিবহনেও বাধা দিয়েছেন। ব্যক্তিগত গাড়ির চালকের মুখে পোড়া মবিল মেখে দিয়েছেন, অনেক চালককে কান ধরে ওঠবস করিয়েছেন। এমনকি তাঁদের মাস্তানি থেকে রেহাই পায়নি স্কুল-কলেজের ছাত্রীরাও। এ ধর্মঘটে অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, দুই দিনের জন্য জনজীবন নিশ্চল হয়ে পড়েছে, সে কথা সবার জানা। কিন্তু তার চেয়েও মর্মান্তিক হলো ধর্মঘটের কারণে মৌলভীবাজার ও সুনামগঞ্জে দুটি শিশুর মৃত্যু। এর মধ্যে ধর্মঘটি শ্রমিকেরা হাসপাতালগামী অ্যাম্বুলেন্স আটকে দিয়ে এক শিশুকে বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়েছেন। যানবাহন না পেয়ে অনেক রোগী হাসপাতালে যেতে পারেনি। এসব অপূরণীয় ক্ষতির দায় কে নেবে? সড়কে পরিবহনশ্রমিকদের নৈরাজ্য ও মাস্তানির বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নেওয়া অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। মন্ত্রীর সংগঠন বলেই কি এই রেয়াত? পরিবহনশ্রমিকেরা ফের ধর্মঘটের হুমকি দিয়েছেন। কীভাবে তাঁরা এই হুমকি দিতে পারলেন? তাঁদের ন্যায়সংগত দাবিদাওয়া থাকলে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করে তার সমাধান করতে পারেন। কিন্তু ধর্মঘটের নামে দেশের অর্থনীতি ও জনগণকে জিম্মি করে কোনো ধর্মঘট চলতে পারে না।
ধ্বংসাত্মক রাজনৈতিক কর্মসূচি আমাদের জাতীয় জীবনে একেকটি ক্ষত রেখে যায়। সড়ক পরিবহনশ্রমিকেরাও ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে পোড়া মবিলের মহড়া দিয়ে যে ক্ষত সৃষ্টি করেছেন, তা সহজে মুছে ফেলা যাবে না।
দায়ীদের আড়ালের চেষ্টা চলছে?
 দেশব্যাপী পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ধর্মঘটের সময় শিক্ষার্থী, ব্যক্তিগত গাড়ির চালক ও যাত্রীদের মুখে পোড়া মোবিল মাখানোসহ কান ধরে ওঠবোসের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ‘ঢাকা জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়ন’-এরসহ-সেক্রেটারি আমির হোসেন ও ক্যাশিয়ার আব্দুল জব্বারকে বহিষ্কার করে ‘বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেড়ারেশন’। তবে, এই সিদ্ধান্তকে সাংগঠনিক দ্বন্ধের জের হিসেবে দেখছেন বহিষ্কৃত দুই নেতা। তাদের দাবি, এর মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের আড়াল করার চেষ্টা করা হচ্ছে।
এদিকে, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক  ফেড়ারেশনের নেতারা বলছেন,ধর্মঘটে পোড়া মোবিল  হামলাকারী দুই শ্রমিককে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারা হলেন,বরিশালের মৃত মহব্বত আলী সরদারের ছেলে যাত্রাবাড়ী এলাকার শ্রমিক আবুল কাশেম অলী ও একই এলাকার বিল্লাল হোসেন। তারা ধর্মঘট আহ্বানকারী বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেড়ারেশনের অন্তর্ভুক্ত ঢাকা জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সদস্য। আর এই দুই শ্রমিককে সহযোগিতা করেছেন একই ইউনিয়নের বর্তমান সহ-সেক্রেটারি আমির হোসেন ও ক্যাশিয়ার আব্দুল জব্বার। প্রমাণ পাওয়ার পর এই দুই নেতাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাদের সঙ্গে আরও বেশ কয়েকজন সাবেক ও বর্তমান শ্রমিক নেতা  রয়েছেন।
 ফেড়ারেশনের অভিযোগ,  সাবেক এই দুই শ্রমিকনেতা ঘর্মঘটে নানা অপ্রীতিকর কান্ড ঘটিয়ে দেশজুড়ে সাধারণ নাগরিক ও শিক্ষার্থীদের ক্ষেপিয়ে তুলে ফায়দা লুটতে চেয়েছেন। তারা যাত্রাবাড়ী এলাকার শ্রমিক ও ঢাকা জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সদস্য আবুল কাশেম অলী ও বিল্লাল হোসেনসহ আরও বেশ কিছু শ্রমিককে দিয়ে চালক, যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের গায়ে ও মুখে পোড়া মোবিল  মাখানোসহ নানা অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটিয়েছেন। এরআগেও পণ্যপরিবহন ধর্মঘটের সময় এই দুই নেতা এমন কান্ড ঘটিয়েছেন। এমন অভিযোগে ঢাকা জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সভাতি ইকবাল হোসেন বাদী হয়ে গত ৯ অক্টোবর তাদের বিরুদ্ধে ওয়ারী থানায় একটি মামলা করলে মামলাটি সাধারণ ডায়েরি হিসেবে গ্রহণ করা হয়। থানার সাধারণ ডায়েরি নং ৯/৩৪৬।
ওই মামলার আসামিরা হলেন,ধোলাইখাল মালিক সমিতির কার্যকরি সভাপতি মাসুদ রানা, তার বাবার নাম আব্দুল আলী। তিনি নারিন্দার ১৯ দক্ষিণ মুসন্দিতে থাকেন। দ্বিতীয় জন ঢাকা জেলা ট্রাক, ট্যাংক লরি ও কাভার্ড ভ্যান শ্রমিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি জয়নাল আবদিন। তার বাবার নাম আব্দুর রশিদ। তিনি ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় থাকেন। আর তৃতীয় জন একই সমিতির কোষাধ্যক্ষ আব্দুল জব্বার। তার বাবার আলীম উদ্দিন। তিনিও ধোলাইখাল ট্রাক স্ট্যান্ড এলাকায় থাকেন। এর মধ্যে মাসুদ রানা স্থানীয় কাউন্সিলর সারোয়ার হোসেন আলোর খুবই ঘনিষ্ঠ বলে জানা গেছে। সে কারণে পুলিশ তাকে ধরছে না বলেও অভিযোগ শ্রমিক ফেড়ারেশনের। তাদের দাবি, পুলিশ এই নেতাদের গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই এর সঙ্গে আর কারা জড়িত, তাদের নাম বেরিয়ে আসবে।
এদিকে আন্দোলনে পোড়া মোবিল  হামলার অভিযোগে ফেড়ারেশন থেকে বহিষ্কৃত শ্রমিক নেতাদের অভিযোগ প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতেই ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক দ্বন্ধকে আন্দোলনের সঙ্গে মিলিয়ে প্রকৃত অপরাধীদের আড়ালের চেষ্টা করছে শ্রমিক ফেড়ারেশন।
জানতে চাইলে ইউনিয়নের বর্তমান কোষাধ্যক্ষ-আব্দুল জব্বার বলেন, ‘এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা। যারা এসব অভিযোগ করছেন, তারাই আন্দোলনে চালক, যাত্রী ও শিক্ষার্থীদের গায়ে-মুখে পোড়া মোবিল  মেখেছেন। আমরা এই আন্দোলনের বিরুদ্ধে ছিলাম। আমরা পণ্যপরিবহন ধর্মঘট করেছি। আমরা কেন মোবিল মাখবো?’ তার অভিযোগ,‘যারা আমাদের বহিষ্কারের কথা বলছে তারা আন্দোলনের সময় যাত্রাবাড়ী এলাকায় গেলে শ্রমিকদের হামলার শিকার হয়। কারণ শ্রমিকরা আন্দোলন চায় না। তারা আন্দোলন করতে বাধ্য করার চেষ্টা করে। চালকদের মুখে পোড়া মোবিল  মাখার চেষ্টা করে। পরে শ্রমিকদের হামলা শিকার হলে তারা এখন হামলাকারী শ্রমিকদের বিরুদ্ধে নানা কথা বলছে।’
এদিকে,গত সোমবার সকালে পরিবহন ধর্মঘট চলাকালীন সময়ে নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের শিক্ষার্থীদের বহনকরা গাড়ি ভাঙচুর ও শিক্ষার্থীদের গায়ে কালি ছুড়ে মারার প্রতিবাদে কলেজ শিক্ষার্থীরা মানববন্ধন করেছেন নগরীর চাষাঢ়া শহীদ মিনারের সামনে। সকাল ১১টা থেকে ১২ টা পর্যন্ত চলা এই মানববন্ধন কর্মসূচিতে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা হাতে লেখা বিভিন্ন শ্লোগান সম্মিলিত ফেস্টুন প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানান। প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল ‘রাজপথে নৈরাজ্য,প্রশাসন চুপ কেন? অ্যাম্বুলেন্স আটকে শিশু হত্যা কেন? প্রশাসন জবাব চাই? শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বাস ভাঙচুর কেন? প্রশাসন জবাব চাই? জনগণকে জিম্মি করে হেনস্তা কেন? প্রশাসন জবাব চাই?’ এসময় ‘ভেজা বেড়াল গোঁফের ফাঁকে হা হা করে হাসছে বেশ,পোড়া মোবিলের কলঙ্কে লাঞ্ছিত আজ বাংলাদেশ।’ লেখা একটি প্ল্যাকার্ড সবার দৃষ্টি কাড়ে।
মানববন্ধন থেকে শিক্ষার্থীরা ছাত্রীদের গায়ে কালি ছুড়ে মারা ও গাড়ি ভাঙচুরকারী পরিবহন শ্রমিকদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসার দাবি জানান। তাদের দাবি পুলিশের সামনে পরিবহন ধর্মঘটের নামে শ্রমিকরা সড়কে নৈরাজ্য চালালেও পুলিশ কোনও ব্যবস্থা না নিয়ে নীরব দর্শকের মতো দাঁড়িয়ে ছিল।
মানববন্ধন থেকে প্রশাসনের উদ্দেশে শিক্ষার্থীরা বলে,এসব পরিবহন শ্রমিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে ছাত্ররা আবারও বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবে।
নেতৃবৃন্দরা যা বলছেন...
জানতে চাইলে ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর মহাসচিব সৈয়দ এহসানুল হক কামাল বলেছেন, অনেক গবেষণার পরই সড়ক পরিবহন আইন পাস করা হয়েছে। তা সত্বেও এর প্রতিবাদে রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হলো।
সৈয়দ এহসানুল হক কামাল বলেন, ‘এখন সড়ক পরিবহন আইন যেটি হলো তা নিয়ে গবেষণা কম হয়নি। মন্ত্রণালয় দীর্ঘদিন ধরে এটা নিয়ে কাজ করেছে। এর পরই আইন হয়েছে। কিন্তু আমরা চেয়েছিলাম সড়ক পরিবহন নিরাপত্তা আইন, কিন্তু সেটা না হয়ে হলো সড়ক পরিবহন আইন।’ তিনি বলেন, ‘সড়ক পরিবহন নিরাপত্তা আইনটি চাওয়ার কারণ হলো, এই সেক্টরে নিরাপত্তা দিতে হবে। অন্যদিকে যে আইনটি হলো সেটিতে পরিবহন শ্রমিকরা প্রতিবাদ জানালো। রাস্তায় নেমে নৈরাজ্য সৃষ্ট করলো। এই যে ৪৮ ঘণ্টা ধর্মঘট করলো পরিবহন সেক্টর, এতে যে নৈরাজ্য হয়েছে, তা কতটা ঘৃণিত, তা নতুন করে বলার কিছু নেই!’
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হানিফ খোকন বলেছেন, ধর্মঘট গণতান্ত্রিক অধিকার হলেও কেউ নৈরাজ্য সৃষ্টি করলে তা তাদের গায়েও লাগে। ‘অমরা দীর্ঘদিন ধরে শ্রম আইন নিয়ে আন্দোলন করে আসছি। তবে ধর্মঘট আন্দোলন একটি গণতান্ত্রিক অধিকার। আমি গাড়ি চালাবো না, এটা আমার গণতান্ত্রিক অধিকার। কিন্তু যারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে তারা তো আইন পরিপন্থী কাজ করছে। এটা অপরাধ। যখন রাস্তায় একটি পক্ষ নৈরাজ্য সৃষ্টি করে তখন আমাদের গায়ে লাগে। যখন একজন সাধারণ মানুষের মুখে কালি মাখানো হয় তখন আমার মুখেও কালি লাগে।’
বাংলাদেশ যাত্রীকল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী বলেছেন, পরিবহন শ্রমিকদের ডাকা ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে পুরো জাতি জিম্মি অবস্থায় ছিল। ‘এই ধর্মঘটে দেখেছি চালকদের মুখে কালি মাখানো হয়েছে। হাসপাতালে পৌঁছাতে না পারার কারণে শিশু মারা গেছে, এমনকি কান ধরে ওঠবস করানো হয়েছে। কিন্তু সবচেয়ে লজ্জাজনক বিষয় হলো প্রশাসন পুলিশ নির্লজ্জের মতো দাঁড়িয়ে থেকেছে। কোনও স্টেপ নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘আমি বলছি না কারো ধর্মঘট করার অধিকার নেই। গণতান্ত্রিক দেশে অবশ্যই আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। কিন্তু সাধারণ মানুষ হিসেবে আমার হাসপাতালে যাওয়ার অধিকার রয়েছে, চিকিৎসা নেওয়ার অধিকার রয়েছে, স্কুলে যাওয়ার অধিকার রয়েছে। আমরা গোটা দেশ, জাতি এই ৪৮ ঘণ্টা জিম্মি অবস্থায় ছিলাম।’
বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সহ-সভাপতি কাউসার আহমেদ পলাশ বলেছেন, ধর্মঘটের সময় যারা মানুষের মুখে পোড়া মোবিল মাখিয়ে দিয়েছে তারা ফেডারেশনের কেউ নয়। তারা সন্ত্রাসী। তাদের ধরে শাস্তি দিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি।
কাউসার আহমেদ পলাশ বলেন, ‘ যোগাযোগমন্ত্রীকে একটি স্মারকলিপি দেওয়া হয়। এরপর প্রত্যেক জেলা প্রশাসক বরাবার স্মারকলিপি দেওয়া হয়েছে। এরপর এই কর্মসূচি দেওয়ার আগে ছোট ছোট কর্মসূচি যেমন, মানববন্ধন, কর্মবিরতি দেওয়া হয়েছে। পরে এই ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটের বিষয়ে আগেই ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।’
তিনি বলেন, ‘এই ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘটে কে বা কারা পোড়া মোবিল দিয়েছে, সেটা আমরা জানি না। তবে একুটু নিশ্চিত করে বলতে পারি, তারা আমাদের সংগঠনের কেউ নয়। এদের খুঁজে বের করা উচিত, এরা কারা? আমাদের লোকদের কেউ এই কাজ করেনি। আমি নিজে একজনকে রাস্তায় গিয়ে ধরেছি। সে পরিচয় দিয়েছে, সে চালক। কিন্তু পরিচয়পত্র দিতে পারেনি। তখন তাকে প্রশ্ন করা হয়েছে, কে আপনি? কোন দলের? আমরা সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের পক্ষ থেকে গোয়েন্দা বাহিনী, প্রশাসনের কাছে অনুরোধ করবো, আপনারা তাদের ধরুন। শাস্তি দিন। যারা সাধারণ মানুষের মুখে কালি লাগিয়েছে। তারা সন্ত্রাসী।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ