শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সিলেট টেস্টে বাংলাদেশের লজ্জাজনক হার

স্পোর্টস রিপোর্টার : পাঁচ বছর পর জিম্বাবুয়ের কাছে টেস্ট হারল বাংলাদেশ। শুধু হারই নয়, বিশাল ব্যবধানে ঘরের মাঠে টাইগাররা লজ্জাজনকভাবে হারল সফরকারী দলের কাছে। হারারেতে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশ সর্বশেষ টেস্ট হেরেছিল ২০১৩ সালে। এরপর তাদের বিপক্ষে টানা ৪টি টেস্ট জিতেছে টাইগাররা। কিন্তু গতকাল সিলেটে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানে হেরেছে স্বাগতিকরা। অবশ্য এই টেস্টে জয়ের জন্য ৩২১ রানের টার্গেট পাওয়ার পরই টাইগারদের পরাজয় অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায়। কারণ এতো বড় টার্গেটে আগে কখনও জয় পায়নি বাংলাদেশ। জয়ের জন্য ৩২১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে টেস্টের তৃতীয় দিনের শেষ বিকেলে বাংলাদেশ কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৬ রান করেছিল।

 ফলে গতকাল চতুর্থ দিনে অসাধারণ কিছু করার টার্গেটে মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ দল। তবে শেষ পর্যন্ত সেটা আর করা হয়নি টাইগারদের। বরং নিজেদের অসহায় করে দ্বিতীয় ইনিংসে মাত্র ১৬৯ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ। ফলে প্রথম টেস্টে ১৫১ রানের বড় ব্যবধানে জয় পায় জিম্বাবুয়ে। ফলে ১৭ বছর পর বিদেশের মাটিতে পেলো প্রথম টেস্ট জয়। তাও ১১ মাস কোনও রকম টেস্ট না খেলে। ৩২১ রানের লক্ষ্যে চতুর্থ ইনিংসে ব্যাট করে জেতাটা স্বাগতিকদের কাছে ছিলো চ্যালেঞ্জিংই। কারণ এমন চ্যালেঞ্জে পরিসংখ্যানও বিপক্ষে ছিলো বাংলাদেশের। চতুর্থ ইনিংসে ব্যাটিং করে ২৩ টেস্টের মাত্র তিনটিতে জিতেছে স্বাগতিকরা। সার্বিকভাবে  টেস্টেও শেষ ইনিংসে তাড়া করে জয়ের নজির খুব বিরল। আর প্রথম এই টেস্ট জিততে হলে বাংলাদেশকে আগের তিনটি রান তাড়া করার রেকর্ডকেও পেছনে ফেলতে হতো। কিন্তু ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেটা করতে পারেনি বাংলাদেশ।  অবশ্য দিনের শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। দুই ওপেনার মিলে দলকে এনে দেন পঞ্চাশ রান। কিন্তু পঞ্চাশ পার হতেই শুরু হয় জিম্বাবুয়ের বোলারদের তা-ব। লাঞ্চের আগেই বাংলাদেশের ৫ উইকেট তুলে নেয় তারা। লাঞ্চ থেকে ফিরে বাকি ৫ উইকেট হারিয়ে দিনের দ্বিতীয় সেশনেই ১৬৯ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। ফলে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল সফরকারীরা। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে প্রথম আক্রমণটা হানেন সিকান্দার রাজা। তারপর তাতে যোগ দেন কাইল জার্ভিস। আর শেষটায় জাদু দেখান ব্র্যানডন মাভুতা। এছাড়া অভিষিক্ত ওয়েলিংটন মাসাকাদজাও যোগ দেন উইকেট শিকারে। এদিন লিটন দাসের আউটের মধ্য দিয়ে দিনের প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ব্যক্তিগত ২৩ রানে সিকান্দার রাজার এলবিডাব্লুর ফাঁদের পড়েন লিটন। যদিও প্রথমে এলবিডাব্লুর আবেদনে সাড়া দেননি আম্পায়ার। পরে রিভিউ নিলে সিদ্ধান্ত জিম্বাবুয়ের পক্ষে যায়। দলীয় ৬৭ রানে কাইল জার্ভিসের বল মুমিনুলের ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্পে আঘাত হানে। ফলে ব্যক্তিগত ৯ রানে মাঠ ছাড়েন বাংলাদেশের টেস্ট স্পেশালিস্ট এই ব্যাটসম্যান। শুরু থেকেই একপ্রান্ত ধরে খেলতে থাকেন ওপেনার ইমরুল কায়েস। কিন্তু ব্যক্তিগত হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ করার আগেই ৩৭তম ওভারের পঞ্চম বলে রাজার বলে বোল্ড হয়ে যান তিনি। ১০৩ বল খেলে ৪৩ রান করেছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তারপর দলীয় শত রানের কোটা পার হতেই রাজার তৃতীয় শিকার হয়ে মাঠ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। এই ইনিংসে ১৬ রান করেছেন টাইগার অধিনায়ক। আর লাঞ্চের ঠিক আগ মুহূর্তে মাভুতার বলে রাজার তালুবন্দী হয়ে সাজঘরে ফেরেন নাজমুল হোসেন শান্ত (১৩)। আর লাঞ্চ থেকে ফিরে বিদায় নেন দলের সর্বশেষ ভরসা মুশফিকুর রহীম। দলীয় ১৩২ রানে মাভুতার বলে মাসাকাদজার কাছে ক্যাচ দিয়ে পেভিলিয়ানে ফিরে যান মুশফিক (১৩)। মুশফিকের বিদায়ের পর খুব বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়নি বাংলাদেশের ইনিংস। মাভুতা দ্রুতই গুটিয়ে দেন বাংলাদেশকে। আউট করেন মেহেদী হাসান মিরাজ (৭) ও নাজমুল ইসলাম অপুকে (০)। আর তাইজুল ইসলাম (০) ও আরিফুল হকের (৩৮) উইকেট তুলে  নেন ওংয়েলিংটন। জিম্বাবুয়ের হয়ে ২১ রানে ৪ উইকেট নিয়েছেন মাভুতা। এছাড়া রাজা নিয়েছেন ৩ উইকেট। ওয়েলিংটন ২টি ও জার্ভিস নিয়েছেন একটি করে উইকেট। সিলেটে প্রথমে ব্যাট করে জিম্বাবুয়ে প্রথম ইনিংসে করেছিল ২৮২ রান। জবাবে বাংলাদেশ ব্যাট করতে নেমে প্রথম ইনিংসে ১৪৩ রান করলে জিম্বাবুয়ে বড় লিড পায়। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করতে নেমে জিম্বাবুয়ে ১৮১ রান করলে জয়ের জন্য বাংরাদেশ পায় ৩২১ রানের কঠিন টার্গেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর: 

জিম্বাবুয়ে (প্রথম ইনিংস) : ২৮২/১০ (ওভার ১১৭.৩) (মাসাকাদজা ৫২, চারি ১৩, টেইলর ৬, উইলিয়ামস ৮৮, রাজা ১৯, মুর ৬৩*, চাকাবা ২৮, ওয়েলিংটন ৪, মাভুটা ৩, জার্ভিস ৪, চাতারা ০; রাহী ১/৬৮, তাইজুল ৬/১০৮, আরিফুল ০/৭, মিরাজ ০/৪৫, নাজমুল ২/৪৯, মাহমুদউল্লাহ ১/৩)।

বাংলাদেশ (প্রথম ইনিংস) : ১৪৩/১০ (ওভার ৫১) (লিটন ৯, ইমরুল ৫, মুমিনুল ১১, নাজমুল ৫, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিক ৩১, আরিফুল ৪১*, মিরাজ ২১, তাইজুল ৮, নাজমুল ৪, রাহী ০; জার্ভিস ২/২৮, চাতারা ৩/১৯, মাভুতা ০/২৭, রাজা ৩/৩৫, ওয়েলিংটন ০/২১, উইলিয়ামস ১/৫)।

জিম্বাবুয়ে (দ্বিতীয় ইনিংস) : ১৮১/১০ (ওভার ৬৫.৩) (মাসাকাদজা ৪৮, চারি ৪, টেইলর ২৪, উইলিয়ামস ২০, রাজা ২৫, মুর ০, চাকাবা ২০, ওয়েলিংটন ১৭, মাভুটা ৬, জার্ভিস ১*, চাতারা ৮; তাইজুল ৫/৬২, অপু ২/২৭, রাহী ০/২৫, মিরাজ ৩/৪৮, মাহমুদউল্লাহ ০/৭, মুমিনুল ০/৪)।

বাংলাদেশ (দ্বিতীয় ইনিংস) : ১৬৯/১০ (ওভার ৬৩.১) (লিটন ২৩, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ৯, মাহমুদউল্লাহ ১৬, শান্ত ১৩, মুশফিক ১৩, আরিফুল ৩৮, মিরাজ ৭, তাইজুল ০, অপু ০, রাহী ০*; জার্ভিস ১/২৯, চাতারা ০/২৫, রাজা ৩/৪১, উইলিয়ামস ০/১৩, মাভুতা ৪/২১, মাসাকাদজা ২/৩৩)।

ফলাফল : জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী।

ম্যান অব দ্য ম্যাচ : শন উইলিয়ামস।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ