বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

সবাই রাজি না থাকলে ইভিএম ব্যবহার করা উচিত নয়

* ঐকমত্য ছাড়া কমিশন কেন ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে এটি প্রশ্নসাপেক্ষ --- ড. শামসুল হুদা
* ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে এক মাসে দুটি সংসদ কিভাবে বহাল থাকে? ---- এম হাফিজউদ্দিন
* তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে --- ড. বদিউল আলম
* গণতান্ত্রিক পরিসর সংকুচিত করার বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ ঠিক নয় ---- সৈয়দা রিজওয়ানা
স্টাফ রিপোর্টার : জাতীয় নির্বাচনে সব দল রাজি না হলে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) ব্যবহার করা উচিত নয়। ঐকমত্য ছাড়া কমিশন কেন ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে এটি প্রশ্নসাপেক্ষ। বক্তারা বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে সরকার আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন হলে এক মাসে দুটি সংসদ কিভাবে বহাল থাকবে প্রশ্ন রাখেন তারা। এছাড়া গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। 
গতকাল শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত  ‘জাতীয় নির্বাচনী অলিম্পিয়াড’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন এ টি এম শামসুল হুদা। সুজন সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খানের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন সাবেক প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) ড. এ টি এম শামসুল হুদা। বক্তব্য দেন সুজন নির্বাহী সদস্য ড. তোফায়েল আহমেদ, সুজন নির্বাহী সদস্য সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এবং সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার প্রমুখ। অনুষ্ঠানটি পরিচালনা করেন সুজন কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার। সুজন আয়োজিত এ সেমিনারে অংশ নেয় সারা দেশ থেকে অসংখ্য শিক্ষার্থী। বর্তমান সরকারের কর্মকা- ছাড়াও যেখানে আলোচনা হয় জাতীয় নির্বাচনকে নিয়ে।
ড. এ টি এম শামসুল হুদা ইভিএম ব্যবহার নিয়ে কমিশনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে বলেন, মোদ্দা কথা হচ্ছে যে, আপনি একটা ফ্রি অ্যান্ড ফেয়ার ইলেকশন করতে চান সব দলের অংশগ্রহণে। তো সেখানে সকল দল যদি এটা করতে রাজি না হয়, এ রকম বিষয় তো করা উচিত নয়।
নির্বাচনে ইভিএম প্রসঙ্গে ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, আমরা যখন কমিশনে ছিলাম, ভারত থেকে কিংবা বেসরকারি কোম্পানি থেকে আমরা ইভিএম মেশিন ক্রয় করিনি। বরং বুয়েট ও মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির মাধ্যমে আমরা ২৫০টি মেশিন তৈরি করেছিলাম। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল সেগুলো আমরা শুধু স্থানীয় নির্বাচনে ব্যবহার করবো। কিন্তু পরের কমিশন এসে নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহার করা বাদ দিল। এই কমিশন হঠাৎ করেই একটি বেসরকারি কোম্পানি থেকে ইভিএম ক্রয় করছে। প্রশ্ন হলোÑ কমিশন যদি সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন করতে চায়, তাহলে সবার ঐকমত্য ছাড়া কমিশন কেন ইভিএম ব্যবহার করতে চাচ্ছে এটি প্রশ্নসাপেক্ষ বিষয়। নির্বাচনে ইভিএম ব্যবহারের আগে বহু পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে সমঝোতার দরকার হয় বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ড. এটিএম শামসুল হুদা বলেন, নির্বাচনের পর রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী ও কার্যকর করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সাধারণত কোনো উদ্যোগ পরিলক্ষিত হয় না। আমি মনে করি, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরে যাতে গণতন্ত্রের চর্চা হয় সেজন্য পদক্ষেপ নেয়া দরকার। কিন্তু নির্বাচন কমিশনের এক্ষেত্রে এখতিয়ার নেই। তাই একটি আইনি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোকে দায়বদ্ধ করতে হবে।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, সংসদের মেয়াদ ২৮ জানুয়ারি শেষ হচ্ছে। তাই তড়িঘড়ি করে ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন না করে সরকার চাইলে তা সময় আরো বাড়াতে পারত।
এম হাফিজউদ্দিন খান বলেন, ২৮ জানুয়ারির মধ্যে জাতীয় নির্বাচন করার ব্যাপারে নির্বাচন কমিশন আইনগতভাবে বাধ্য। কিন্তু সবার অংশগ্রহণে নির্বাচন নিশ্চিত করার জন্য কমিশন চাইলে তফসিল ঘোষণা আরও পিছিয়ে দিতে পারতো। তাছাড়া ডিসেম্বর মাসে বিভিন্ন স্কুলের পরীক্ষা চলছে। আরেকটি বিষয় হলোÑ যদি ২৩ ডিসেম্বর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়, তাহলে ২৮ জানুয়ারির আগে এক মাসের বেশি সময় মাস ধরে একসাথে দুটি সংসদ বহাল থাকবে। এটি দেশে সাধারণত দেখা যায় না।
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, সংবিধান থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরি করে সরকার আইনকে অস্ত্রে পরিণত করেছে। আমরা দেখেছি, বিগত সময়ে যতগুলো নির্বাচন দলীয় সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে, তার একটিও সুষ্ঠু হয়নি। এর মূল কারণ হলো প্রশাসনের ব্যাপক দলীয়করণ। আমরা মনে করি, একটি সাংবিধানিক কমিটি করে আমাদের নির্বাচনী পদ্ধতিতে পরিবর্তন আনা এবং আইন তৈরি করে নির্বাচন কমিশনে কমিশনার নিয়োগ করা দরকার। তিনি প্রার্থীদের যোগ্যতা ও দক্ষতা দেখে ভোটাধিকার প্রয়োগের জন্য তরুণ ভোটারদের আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নির্বাচন নিয়ে সরকার যে তড়িঘড়ি করছে তা মোটেও জনগণের কাছে বোধগম্য নয়। কেন এত তড়িঘড়ি করে? কার স্বার্থে? এটা করা হয়েছে। এটা রাজনৈতিক দল অন্যান্য অংশীজনকে ডেকে এটা প্রমাণ করানো। কিন্তু এগুলো কিছুই করা হয়নি।
ড. বদিউল আলম বলেন, নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সবার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার জন্য হুদা কমিশন দুই বার তফসিল ঘোষণা পিছিয়ে দিয়েছিল। কিন্তু রাজনৈতিক সমঝোতা হওয়ার আগেই এই কমিশন কেন এত তাড়াহুড়ো করে তফসিল ঘোষণা করলো তা আমাদের বোধগম্য নয়।
সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আমাদের রাজনৈতিক ও শাসনব্যবস্থায় যাতে ক্ষমতায় ভারসাম্য তৈরি হয় সেজন্য উদ্যোগ নেয়া দরকার। গণভোট ছাড়া সংখ্যাগরিষ্ঠতাকে কাজে লাগিয়ে যাতে কেউ সংবিধানের মৌলিক কিছু বিষয় পরিবর্তন করতে না পারে সেজন্যও উদ্যোগ নেয়া দরকার। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাতিল করা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক পরিসর ও মূল্যবোধ সংকুচিত হয়, এমন কোনো বিষয়ে আদালতের হস্তক্ষেপ করা ঠিক নয়। আদালতের কাজ হলো দিক-নির্দেশনা দেয়া।
ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, আমরা আগে স্লোগান দিতাম, আমার ভোট আমি দিব, যাকে খুশি তাকে দিব। বর্তমানে এই সুযোগ আর নেই। কারণ আমরা অনেকেই পছন্দের প্রার্থী খুঁজে পাই। দেখা যায়, নির্বাচনে টাকার খেলার প্রভাবে ভালো প্রার্থীরা নির্বাচনী মাঠে থাকতে পারেন না। বর্তমান নির্বাচনী ব্যবস্থায় পরিবর্তন আনা, গুণগত মান বৃদ্ধির জন্য দ্বি-কক্ষ বিশিষ্ট সংসদ রাখা এবং আন্তঃসম্পর্ক বৃদ্ধির জন্য স্থানীয় সরকারের জন্য একটি সমন্বিত আইন প্রণয়নের প্রস্তাব করেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ