শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঢাবিতে ‘চোর’ ধরে ৫০ হাজার টাকার বিনিময়ে ছেড়ে দিলেন ছাত্রলীগ নেতা

স্টাফ রিপোর্টার : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হলে সন্দেহভাজন এক চোরকে ধরে তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছেন ছাত্রলীগের একজন নেতা। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এ ধরনের ঘটনা ঘটলে নিয়ম অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্যদের হাতে সন্দেহভাজনকে তুলে দেয়া হয়। পরে তারা তাদের পুলিশের কাছে সোপর্দ করে।
তবে টাকা নিয়ে ‘চোর’ ছেড়ে দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যায় হল ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রিফাত উদ্দীন বলেছেন, এর আগে কয়েকজন ‘চোর’ ধরে প্রশাসনের কাছে দিয়ে ‘কোনো কাজ হয়নি’। তাই বাইসাইকেল চুরি যাওয়া শিক্ষার্থীদের ক্ষতিপূরণ দিতে তিনি এটা করেছেন।
বৃহস্পতিবার রাতে হলের মধ্যে সুজন নামের এক ব্যক্তিকে আটক করেন কর্মচারীরা। এ সময় রিফাতসহ কয়েকজন এসে ওই ব্যক্তিকে নিজেদের জিম্মায় নিয়ে যান।
নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী সার্জেন্ট জহুরুল হক হলের একজন ছাত্র বলেন, “হলের কর্মচারী সাইফুল ইসলাম এই চোরকে দেখে সন্দেহ করে। এরপর কয়েকজন কর্মচারী তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে। এ সময় রিফাতউদ্দীনসহ কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতা আসে। তারা ওই চোরকে প্রথমে রিফাতের রুমে নিয়ে যায়। “তারা ওই চোরকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করে। রুম থেকে পরে ওই চোরকে হলের অতিথি কক্ষে নিয়ে আসা হয়। সেখানে তার এক আত্মীয় এসে ওই ছাত্রলীগ নেতাদের হাতে ৫০ হাজার টাকা দেয়। এ সময় ছাত্রলীগের এই নেতা টাকা নিয়ে তাকে ছেড়ে দেয়।”
ঘটনা সম্পর্কে জানতে চাইলে রিফাত উদ্দীন বলেন, “ওই চোর আমাদের কাছে হলের কয়েকটি সাইকেল চুরি করার কথা স্বীকার করেছে। যেসব শিক্ষার্থীর সাইকেল চুরি হয়েছে তারা আমাকে বলেছে, তাদের সাইকেল চুরি হয়েছে। তাই তারা চোরকে প্রশাসনের হাতে না দিয়ে ক্ষতিপূরণ আদায় করতে বলে। “আমি সাধারণ শিক্ষার্থীদের কথা মতো চোরের আত্মীয়ের থেকে টাকা নিয়ে তাদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছি। আমার কাছে আরোও কিছু টাকা আছে তা হিসেব করে যাদের সাইকেল হারিয়েছে তাদের দিয়ে দিব। এ ঘটনা সম্পর্কে আমি ফেসবুকে একটি পোস্টও দিয়েছি।”
তবে হলের ওই ছাত্র বলেছেন, “এই ঘটনার পর রিফাত তার সাথে থাকা একজনকে ৫ হাজার টাকা দিয়েছে। বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছে। পরে সে ও তার কয়েকজন বন্ধু মিলে চাঁনখারপুল এলাকায় নৈশভোজ করতে যায়।”
 চোরকে প্রশাসনের হাতে না দিয়ে টাকা আদায় করার এখতিয়ার তার আছে কি না জানতে চাইলে রিফাত বলেন, “এর আগেও চোর ধরে প্রশাসনের হাতে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন তাদের থানায় দিয়েছে। এতে কোনো লাভ নেই। সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল, তাদের অনেক সাইকেল চুরি হয়েছে, তারা এর ক্ষতিপূরণ চান। তাই চোরের থেকে ক্ষতিপূরণ নেওয়া হয়েছে।”
রিফাত উদ্দীন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীর অনুসারী। এ বিষয়ে রাব্বানী বলেন, বিষয়টি তার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখবেন।“এ ধরনের কাজ সংগঠনের নিয়ম বহির্ভূত। আমরা বিষয়টি দেখব। তবে, আমি বলব যে এ ব্যর্থতা হল প্রশাসনের। আপনারা হল কর্তৃপক্ষকে জিজ্ঞেস করেন।”
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জহুরুল হক হলের ভারপ্রাপ্ত প্রাধ্যক্ষ মো. মুহসীন মিয়া বলেন, “ঘটনার সময় আমাদের এক হাউজ টিউটর সেখানে গিয়ে বিষয়টি হ্যান্ডল করেছেন। টাকা নেওয়ার বিষয়টি আমি জানি না। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।”
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক এ কে এম গোলাম রাব্বানী বলেন, “সাইকেল চুরির ঘটনায় একজনকে কর্মচারীরা ধরেছে। ঘটনাটি আমি শুনেছি। কিন্তু চোরকে প্রক্টরিয়াল টিমের কাছে না দিয়ে তার থেকে টাকা আদায় করার বিষয়ে আমি জানি না। “এমন যদি হয়ে থাকে তাহলে তা ঠিক করেনি তারা। কোনো চাঁদাবাজের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো সম্পর্ক নেই। এ বিষয়ে হল কর্তৃপক্ষকে তোমরা অবহিত কর। এটি প্রমাণিত হলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ