শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

লেনদেন ভারসাম্য ও সামগ্রিক বাণিজ্যে ঘাটতি যথাক্রমে ১৩৫ ও ৩৮৫ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার :

চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লেনদেন ভারসাম্যে ও সামগ্রিক বাণিজ্যে বিপুল পরিমাণ ঘাটতি দেখা দিয়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ঘাটতির পরিমাণ ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলারে পৌঁছেছে। সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা।

বাংলাদেশ ব্যাংক গত রোববার লেনদেন ভারসাম্যের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করেছে, তাতে দেখা যায়, চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে, অর্থাৎ জুলাই-সেপ্টেম্বর সময়ে ব্যালেন্স অফ পেমেন্টে (বিওপি) ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে এই ঘাটতি ছিল ১৮১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। আর ৯৭৮ কোটি ডলারের বিশাল ঘাটতি নিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থবছর শেষ করেছিল বাংলাদেশ। এবার জুলাই-অগাস্ট সময়ে বিওপিতে ঘাটতি ছিল মাত্র ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার। সেপ্টেম্বরে তা ১৩৫ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যায়। সাধারণভাবে কোনো দেশের নিয়মিত বৈদেশিক লেনদেন পরিস্থিতি বোঝা যায় চলতি হিসাবের মাধ্যমে। আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য নিয়মিত আয়-ব্যয় এতে অন্তর্ভুক্ত হয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আমদানি বাড়ায় বৈদেশিক লেনদেনে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে। তবে জাতীয় নির্বাচনের সময় আমদানির গতি কিছুটা ‘ধীর’ থাকে। সেক্ষেত্রে এই ঘাটতি গত অর্থবছরের মত ১০ বিলিয়ন ডলারে গিয়ে নাও ঠেকতে পারে বলে তাদের ধারণা।

রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি থাকলেও বেড়েছে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ। চলতি ২০১৮-১৯ অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সামগ্রিক বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৩৮৫ কোটি ২০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৩২ হাজার ৩৫৬ কোটি টাকা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণসহ বড় বড় প্রকল্পের কাজ চলছে। এসব প্রকল্পের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম জোগান দিতেই আমদানি করতে হচ্ছে। রফতানি যে হারে বেড়েছে, আমদানি বেড়েছে তার প্রায় দেড়গুণ। ফলে রেমিট্যান্সের কিছুটা ইতিবাচক পরিস্থিতি সত্ত্বেও বহির্বিশ্বের সঙ্গে লেনদেনে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতি হচ্ছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের করা হালনাগাদ প্রতিবেদনে তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮-১৯ অর্থবছরের তৃতীয় মাস শেষে ইপিজেডসহ রফতানি খাতে বাংলাদেশ আয় করেছে ৯৭৪ কোটি ৭০ লাখ ডলার। এর বিপরীতে আমদানি বাবদ ব্যয় করেছে এক হাজার ৩৫৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। সেই হিসাবে সেপ্টেম্বর শেষে দেশে বাণিজ্য ঘাটতি দাঁড়ায় ৩৮৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় (বিনিময় হার ৮৪ টাকা দরে) ৩২ হাজার ৩৫৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। যা গত ২০১৭-১৮ অর্থবছরের একই সময় ছিল ৩৬৫ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বহির্বিশ্বের সঙ্গে বাংলাদেশের চলতি হিসাব (-) ঋণাত্মক রয়েছে। তবে গত বছরের তুলনায় এ (-) ঋণাত্মক কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে চলতি হিসাবে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ১৩৫ কোটি ৪০ লাখ ডলার, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮১ কোটি ৯০ লাখ ডলার। তবে এক মাসের ব্যবধানে চলতি হিসাব ঋণাত্মক বেড়েছে। অর্থবছরের প্রথম দ্বিতীয় আগস্টে শেষে ঘাটতি ছিল ৫ কোটি ৮০ লাখ ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হলো নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়। সেই হিসাবে উন্নয়নশীল দেশের চলতি হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকা ভালো।

এদিকে আলোচিত সময়ে সেবাখাতে বেতন-ভাতা বাবদ বিদেশিদের পরিশোধ করেছে ২৩৯ কোটি ৭০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ এ খাতে আয় করেছে ১৫৯ কোটি ২০ লাখ ডলার। এ হিসাবে সেবায় বাণিজ্যে দেশে ঘাটতি দাঁড়িয়েছে ৮০ কোটি ডলার।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, আলোচিত সময়ে দেশে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (এফডিআই) এসেছে ৭২ কোটি ডলার, যা গত অর্থবছরের চেয়ে ৭ দশমিক ৯৫ শতাংশ বেশি। এদিকে এফডিআই বাড়লেও দেশের শেয়ারবাজারে বিদেশি বিনিয়োগ ব্যাপক হারে কমেছে। অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে শেয়ারবাজারে মাত্র ২ কোটি ৯০ লাখ ডলারের বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে। যা তার আগের অর্থবছরে ছিল ১৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ