বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চাইলো ঐক্যফ্রন্ট

গতকাল শুক্রবার রাজধানীর একটি হোটেলে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের উদ্যোগে সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয় -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : সবার অংশগ্রহণে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানে গণমাধ্যমের সহযোগিতা চেয়েছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গতকাল শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর একটি হোটেলে গণমাধ্যম সম্পাদকদের সাথে মতবিনিময়ের পর ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের এই কথা জানান।
তিনি বলেন, দুই ঘন্টা সম্পাদকদের সঙ্গে আমরা মতবিনিময় করেছি। তারা বিভিন্ন ব্যাপারে মতামত দিয়েছে,  আমাদেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন যে, আমাদের কাছ থেকে তারা কী আশা করেন যদি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে হয়। এই মতবিনিময়কে আমাদের জন্য খুবই মূল্যবান মনে করি। সরকারের যেসব জিনিস আমরা চিহ্নিত করেছি, আমরা আশা করবো যে এসব ব্যাপারে সংবাদ মাধ্যম সজাগ দৃষ্টি রাখবে।
ড. কামাল বলেন, সম্পাদকরা আমাদের অতীতের তিক্ত কিছু অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন। বিশেষ করে নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে তারা কথা বলেছেন। তারা বলেছেন, এসব বিষয়ে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনে তাদের সহযোগিতা চেয়েছি। জবাবে সম্পাদকগণ বলেছেন, তারা সক্রিয়ভাবে সত্য ঘটনা তুলে ধরবেন যাতে করে ভোটাররা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন।
আপনারা সম্পাদকদের কাছে কি ধরনের সহযোগিতা চেয়েছেন- জানতে চাইলে বিএনপি মহাসচিব ও ঐক্যফ্রন্টের মুখপাত্র মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও  নিরপেক্ষ  নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আমরা সব ধরনের সহযোগিতা চেয়েছি।
ড. কামাল হোসেন বলেন, এডিটর সাহেবদের সাথে আমাদের আলোচনার উদ্দেশ্য ছিলো অতীতের অভিজ্ঞতার আলোকে কী কী জিনিস তারা অতীতে দেখেছেন। তারা মনে করেন এবার সেগুলো থেকে আমাদেরকে বিরত থাকতে হয় এবং সক্রিয়ভাবে সবাইকে চেষ্টা করতে হয় যে, জনগণ সত্যিকার অর্থে নির্ভয়ে স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে এবং সত্যিকার অর্থে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়। সুষ্ঠু নির্বাচন করতে সরকারের যেমন কর্তব্য আছে, আমরা যারা বিরোধী দল নির্বাচন করতে যাচ্ছি তাদেরও কর্তব্য আছে যে নির্বাচনের পরিবেশ রক্ষা করা যাতে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হয়।
মতবিনিময় সভা শেষ হওয়ার আগেই বেরিয়ে এসে আমাদের নতুন সময় এর সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান সাংবাদিকদের বলেন, আমি তাদের জিজ্ঞাসা করেছি সাম্প্রতিক সময়ে ঐক্যফ্রন্টের জনসভাগুলোতে কোরআন তেলোয়াত, বাইবেল, গীতা ও ত্রিপিটক পাঠের মাধ্যমে শুরু হয়েছে। সেখানে বঙ্গবন্ধু, বাংলাদেশের স্বাধীনতা এবং মুক্তিযুদ্ধের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। এগুলো তাদের ঐক্যবদ্ধ চিন্তার ফল কিনা? এ বিষয়গুলো নিয়ে তাদের ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নির্বাচনের আগে আমাদের সামনে তুলে ধরবেন কিনা। আমি জানতে চেয়েছি নির্বাচনের পর বাংলাদেশের স্বাধীনতা সুবর্ণ জয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধুর শততম জন্মবার্ষিকীর যে উৎসব তারা জয়ী বা পরাজিত হলে কিভাবে পালন করবেন। এসব প্রশ্নের নোট তারা নিয়েছেন, পরে উত্তর দেবেন। আমি জরুরী কাজের  কারণে আগেই চলে যাচ্ছি।
তিনি বলেন, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেই প্রশ্ন করেন, আপনাদের জোট ক্ষমতায় গেলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। এর জবাবে ড. কামাল বলেন, সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের সদস্যরা সিদ্ধান্ত নেবেন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রধান সম্পাদক তৌফিক ইমরোজ খালিদী সাংবাদিকদের বলেন, আমি মতবিনিময় সভায় একটি প্রশ্ন করেছি যে, ফ্রন্ট যদি জয়লাভ করে তাহলে প্রধানমন্ত্রী কে হবেন। সেই প্রশ্নের উত্তর আমি পাইনি। আমার মনে হয় এই ফ্রন্টকে সবাই যারা নির্বাচন করছে তাদের বলতে হবে যে, সম্ভাব্য ক্ষেত্রে তারা যদি বিজয়ী হন কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সংসদীয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে, সংসদীয় গণতন্ত্রের ক্ষেত্রে। যেমন আমরা বৃটিশ পার্লামেন্টারি সিষ্টেম অনুসরণ করার চেষ্টা করি, ভারতে হোক, বৃটেনের হোক বা অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশে সবাই কিন্তু আগে থেকে জেনে যান যে, এই দল বা এই জোট বিজয়ী হলে প্রধানমন্ত্রী কে হবে। সেই বিষয়টা কিন্তু এই ফ্রন্টকে পরিষ্কার করতে হবে। সেটা তারা এখনো পরিষ্কার করেননি।
গুলশানের হোটেল লেকশোরে বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে দুই ঘন্টার এই মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকের শুরুতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সম্পাদকদের স্বাগত জানিয়ে জাতীয় যুক্তফ্রন্টের নেতৃবৃন্দকে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর ফ্রন্টের নেতা ড. কামাল হোসেন বক্তব্য রাখেন।
এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রথম আলোর মতিউর রহমান, হলিডের সৈয়দ কামালউদ্দিন, সাংবাদিক রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের তৌফিক ইমরোজ খালিদী, মানবজমিনের মতিউর রহমান চৌধুরী, নিউ এজ এর নুরুল কবীর, আমাদের নতুন সময়ের নাইমুল ইসলাম খান, ঢাকা ট্রিবিউনের জাফর সোবহান, দিনকালের ড. রেজোয়ান সিদ্দিকী প্রমুখ সম্পাদকরা অংশ নেন।
এছাড়া বাংলাদেশ প্রতিদিনের আবু তাহের, বাংলাদেশের খবর এর সৈয়দ মেজবাহ উদ্দিন, ইনকিলাবের মুন্সি আবদুল মান্নান, নিউজ টুডে‘র মোসলেম উদ্দিন আহমেদ, ডেইলি স্টারের সাখাওয়াত হোসেন লিটন, যুগান্তরের মাসুদ করীম, সমকালের লোটন একরাম, সাপ্তাহিকের গোলাম মোর্তজাসহ বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের জ্যৈষ্ঠ সাংবাদিকরা অংশ নেন। ভয়েস অব অ্যামেরিকার আমীর খসরু, রয়টার্সের সিরাজুল ইসলাম কাদির, এএফপির শফিকুল আলমও ছিলেন মতবিনিময় অনুষ্ঠানে।
 বৈঠকে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড. কামাল হোসেন সাংবাদিকদের বক্তব্য শুনেছেন। অনুষ্ঠানে বিএনপির মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, খন্দকার মোশাররফ হোসেন, মওদুদ আহমদ, জেএসডির আসম আবদুর রব, তানিয়া রব, গণফোরামের মোস্তফা মহসিন মনটু, সুব্রত চৌধুরী, নাগরিক ঐক্যের মাহমুদুর রহমান মান্না, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার সুলতান মো. মনসুর আহমেদ, গণস্বাস্থ্য সংস্থার ট্রাস্টের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীসহ  ঐক্যফ্রন্টের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে সাপ্তাহিক এর সম্পাদক গোলাম মত্তুজা বলেন, বৈঠকে সম্পাদকদের পক্ষ থেকে নির্বাচনে যাবার ঘোষণা দেয়ায় ঐক্যফ্রন্টকে ধন্যবাদ জানানো হয়েছে। আমরা বলেছি এটা একটা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। তিনি বলেন, আমরা ঐক্যফ্রন্টকে বলেছি, নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে যাতে স্পষ্ট ঘোষণা থাকে। আমরা দেখবো-দেখি এসব যেন না হয়। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট আমাদের থেকে নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সহযোগিতা চেয়েছেন। আমরা যেন প্রকৃত সত্যটাই তুলে ধরি সেটার উপর ঐক্যফ্রন্ট নেতারা গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি বলেন, সম্পাদকরা বলেছেন দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গলকর সব কিছুই আমরা তুলে ধরবো।
নির্বাচনে সবার জন্য সমান সুযোগ আছে কিনা একজন সম্পাদক হিসেবে আপনার মূল্যায়ন কি- এমন প্রশ্নের জবাবে গোলাম মর্ত্তুজা বলেন, এটা সত্য যে এখনো সেভাবে সবার জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হয়নি। এক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে আরও তৎপর হতে হবে। এতে তাদের তৎপরতার ঘাটতি রয়েছে। তিনি বলেন, সবার সমান সুযোগ পেতে ঐক্যফ্রন্ট আবারও প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করতে পারেন। ইসির সাথেও বৈঠকের পথ রয়েছে। এছাড়া অনেকে রাষ্ট্রপতির সাথে বৈঠক করার কথা বলছেন। সেটিও করা যেতে পারে। তিনি বলেন, এক্ষেত্রে সবার জন্য সমান সুযোগ না হলেও কাছাকাছি একটা অবস্থার সৃষ্টি হবে।
 তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে শেষ পর্যন্ত থাকতে চান। তারা চান আমরা যেন প্রকৃত সত্যটা তুলে ধরি। আমরা যেন গায়েবি মামলা, গ্রেফতার এসব নিয়ে গণমাধ্যমে প্রকৃত সত্যটা তুলে ধরি। তিনি বলেন, ঐক্যফ্রন্ট খুবই চিন্তিত এই নিয়ে যে, তারা নির্বাচনে তাদের এজেন্ট দিতে পারবেন কিনা। আপনারা কিছু ওয়াদা করেছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এখানে ওয়াদা করার কিছুই নাই। সত্যটা আমরা তুলে ধরছি, ভবিষ্যতে তুলে ধরবো।
গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনের পর গণমাধ্যমের সম্পাদকদের সাথে বসলেন ড. কামাল হোসেন। এই ফ্রন্টে বিএনপি, জেএসডি, কৃষক শ্রমিক জনতা  লীগ, গণফোরাম, নাগরিক ঐক্য, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এই ৬টি রাজনৈতিক দল রয়েছে।
এর আগে গত ১৮ অক্টোবর কূটনীতিকদের সাথেও মতবিনিময় করেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। আগামীকাল বেসরকারী টেলিভিশনসহ অনলাইন প্রতিনিধিদের সাথেও বৈঠক করার কথা রয়েছে ঐক্যফ্রন্টের।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ