শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

স্কাইপ ও ইন্টারনেট প্রসঙ্গে

সরকারের বিরুদ্ধে নতুন পর্যায়ে তথ্য-প্রযুক্তিকে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার বিএনপি অভিযোগ করেছে, দলটির নির্বাচনী কার্যক্রমকে বাধাগ্রস্ত করার উদ্দেশ্যে সরকার অন্যতম যোগাযোগ মাধ্যম স্কাইপ বন্ধ করে দিয়েছে। এর কারণও জানিয়েছে দলটি। বলেছে, ওইদিন সকাল থেকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান লন্ডনে বসে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে বিএনপির মনোননয়ন প্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছেন। তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করার পাশাপাশি করণীয় সম্পর্কেও নির্দেশনা দিয়েছেন তিনি। এসবই তারেক রহমান স্কাইপের মাধ্যমে করেছেন। উল্লেখ্য, স্কাইপ এমন একটি প্রযুক্তি, যার মাধ্যমে বিশ্বের যে কোনো স্থান থেকে একজন অন্যজন বা কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলতে পারেন এবং কথা বলার সময় উভয় প্রান্তের মানুষদের টেলিভিশন বা কম্পিউটারের স্ক্রিনে দেখা যায়। সাক্ষাৎকার নেয়ার সময় তারেক রহমান যেমন মনোননয়ন প্রত্যাশীদের দেখতে পেরেছেন, মনোননয়ন প্রত্যাশীরাও তেমনি তারেক রহমানকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন।
অন্যদিকে প্রযুক্তি ব্যবহারের এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। দলটির সাধারণ সম্পাদক এবং সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছেন, একটি মামলায় ১৭ বছরের এবং অন্য এক মামলায় যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত আসামী হিসেবে তারেক রহমান নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারেন না। তাছাড়া সর্বোচ্চ আদালতেরও এই মর্মে একটি নির্দেশনা রয়েছে যে, ‘দন্ডিত’ ও বিদেশে ‘পলাতক’ তারেক রহমানের বক্তব্যসহ কোনো খবর বাংলাদেশের কোনো সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ বা প্রচার করা যাবে না। এসব বিষয়ের উল্লেখ করে ১৮ নভেম্বরই আওয়ামী লীগ নির্বাচন কমিশনের কাছে লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। এতে নির্বাচনী আইন লংঘনের অভিযোগ এনে বিএনপির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানিয়েছে ক্ষমতাসীন দল।
নির্বাচন কমিশন অবশ্য আওয়ামী লীগের দাবি অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কমিশনের সচিব বলেছেন, স্কাইপের মাধ্যমে তারেক রহমানের সাক্ষাৎকার নেয়ার ঘটনায় নির্বাচনী আইন বা আচরণ বিধির লংঘন ঘটেনি। ওদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নেয়ার অধিকার রয়েছে তারেক রহমানের। তিনি কিভাবে কোন কাজে অংশ নেবেন সেটা সম্পূর্ণরূপে তার নিজের এবং বিএনপির বিষয়। এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের বা নির্বাচন কমিশনের বলার বা করার কিছু থাকতে পারে না।
এ ধরনের প্রতিক্রিয়ায় আরো বেশি ক্ষিপ্ত হয়েছেন ক্ষমতাসীনরা। তারা টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা বিটিআরসিকে দিয়ে বাংলাদেশে স্কাইপ নিষিদ্ধ করিয়েছেন। সরকার একই সঙ্গে গুলশানে অবস্থিত বিএনপি চেয়ারপারসনের অফিসের সকল ধরনের ইন্টারনেট সংযোগও বিচ্ছিন্ন করেছে। স্কাইপ এবং ইন্টারনেট সংশ্লিষ্ট বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোও সরকারের আদেশ অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছে। প্রতিবাদে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ তুলে বলেছেন, ক্ষমতাসীনরা রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিজেদের অনুকূলে ব্যবহার করছেন। স্কাইপ বন্ধ করার পদক্ষেপে আরো একবার প্রমাণিত হয়েছে, নির্বাচনের মাঠ আওয়ামী জোটের একচেটিয়া দখলে থাকবে। বিএনপির ওই নেতা আরো বলেছেন, স্কাইপ এবং সকল ধরনের ইন্টারনেট সংযোগ নিষিদ্ধ ও বিচ্ছিন্ন করার মাধ্যমে সরকার প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের কণ্ঠই টিপে ধরেছে। বোঝাই যাচ্ছে, বিএনপির প্রতি বিপুল জনসমর্থন দেখে ক্ষমতাসীনরা ভীত হয়ে পড়েছেন। কারণ, জনগণের সমর্থন নিয়ে নয়, তারা বলপ্রয়োগের পথে ক্ষমতায় থাকতে চাচ্ছেন।
শুধু বিএনপি নয়, স্কাইপ ও ইন্টারনেটের ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্ত ও পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সচেতন সকল মহলও সোচ্চার হয়ে উঠেছিলেন। সে কারণেই সরকারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করতে হয়েছে। বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান অফিসের সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা না গেলেও বিভিন্ন রিপোর্টে সাধারণভাবে স্কাইপ ও ইন্টারনেট সংযোগ পুনপ্রতিষ্ঠিত হওয়ার খবর জানানো হয়েছে। আমরা কিন্তু বিষয়টিকে অত্যন্ত গুরুতর ও আপত্তিকর মনে করি। কারণ, দ্রুত বিকাশমান তথ্য-প্রযুক্তির বর্তমান যুগে শিক্ষা ও ব্যবসা-বাণিজ্যসহ সব কাজই মানুষ ইন্টারনেটের মাধ্যমে করে থাকেন। স্কাইপ এবং ইন্টারনেটের ব্যবহার হচ্ছে বিশ্বের সব দেশেই। এখানে এমন বোঝানোর কোনো সুযোগই নেই যে, আওয়ামী লীগ সরকারের বদৌলতে শুধু বাংলাদেশই কথিত ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে। বাস্তবে বিশ্বের অনেক ছোট ও অনুন্নত দেশের মানুষও বাংলাদেশের অনেক আগে থেকে তথ্য-প্রযুক্তির ব্যবহার করে আসছে।
এমন অবস্থায় সম্পূর্ণ রাজনৈতিক কারণে এবং একটি বিশেষ দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার আড়ালে সমগ্র বাংলাদেশকে অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে ফেলার পদক্ষেপ অবশ্যই সমর্থনযোগ্য হতে পারে না। এ ধরনের পদক্ষেপের ফলে বরং বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলোর এমন অভিযোগই সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবে যে, সরকার সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে নিাচনের সম্পূর্ণ মাঠকেই নিজেদের দখলে রাখতে চায়। আমরা ক্ষমতাসীনদের এই কৌশল ও উদ্দেশ্যের বিরোধিতা করি এবং আশা করতে চাই, সংসদ নির্বাচনের আগে আর কখনো স্কাইপসহ ইন্টারনেট ব্যবহার বন্ধ বা বাধাগ্রস্ত করার পদক্ষেপ নেয়া হবে না। কোনো ব্যক্তি বা দলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য নির্বাচন কমিশন এবং উচ্চ আদালতের দরজা যেহেতু খোলা রয়েছে সেহেতু ক্ষমতাসীনদের উচিত এ দুটি স্থানে গিয়েই আবেদন জানানো।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ