শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

৩০ ডিসেম্বর অবৈধ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে

স্টাফ রিপোর্টার : বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার আয়োজিত আলোচনা সভায় বক্তারা বলেছেন, আগামী ৩০ ডিসেম্বর ক্ষমতাসীন অবৈধ সরকারের পতনের মধ্য দিয়ে দেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে। এটা তখনই সম্ভব হবে যখন হাজার হাজার মানুষ বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে ভোট কেন্দ্রে যাবে। একইসাথে ফলাফল হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রে উপস্থিত থাকবে। বক্তারা ভোট যুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক প্রস্তুতি নেবার জন্য দেশবাসীকে আহবান জানিয়েছেন।
দলের ভাইস চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেনের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন এ্যানী ও সহ প্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম আলিমের পরিচালনায় আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। আরো বক্তব্য রাখেন নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না, গণস্বাস্থ্যেও প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, জয়নাল আবেদীন, যুগ্ম মহাসচিব মাহবুবউদ্দিন খোকন, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন প্রমুখ।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের অবশ্যই এই নির্বাচনকে আন্দোলনের অংশ হিসেবে চূড়ান্ত জয়ের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে। আমাদের নেতা তারেক রহমান সাহেব গত তিনদিন ধরে দিনে কমপক্ষে ২০/২২ বার এই কথাই বলছেন নেতা-কর্মীদের যারা মনোনয়নের জন্য আসছেন। তিনি এই ওয়াদা নিচ্ছেন- আমরা ভোটের দিনে এই আন্দোলনটা করবো, সমস্ত মানুষকে নিয়ে আমরা ভোট কেন্দ্রে যাবো। আমার বয়স হয়ে গেছে, খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি। তারপরেও আমি বলতে চাই, শেষ রক্ত বিন্দু দিয়ে আমরা সংগ্রাম করব, লড়াই করব বুকে বুক বেঁধে। ইনশাল্লাহ ৩০ ডিসেম্বরের পরেই এদেশে স্বাধীন মানুষের পতাকা উড়বে, ওদের পতাকা উড়বে না। এই দানবের পরিণতি হবে।
মামলা-মোকাদ্দমায় জর্জরিত দলের নেতা-কর্মীর উদ্দেশ্যে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা যদি আজকে মুক্তি চাই, আমাদেরকে সবগুলো অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে এবং সেই অস্ত্র হচ্ছে আমাদের ভোটের অস্ত্র। আমরা যদি আজকে জনগণের কাছে চলে যাই, জনগণকে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়ে আসি, আমি যদি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ওই ভোটের দিনে ভোট দিতে যাই তাহলে কোনো শক্তি নেই আমাদের ঠেকিয়ে রাখতে পারে।
এখানে অনেকে আছেন, আমি অনেককে দেখছি, চিনতে পারছি। পালিয়ে পালিয়ে না বেড়িয়ে ভোটের জন্য যান, প্রত্যেকের বাড়ি বাড়ি যান এবং ভোটের দিন সবাইকে নিয়ে ভোট কেন্দ্রে আসুন। ওইখানেই সমস্ত আন্দোলনকে উৎসাহিত করূন। তাহলেই আমরা জয়যুক্ত হবো।
তারেক রহমানকে তার জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, তার আজকে জন্মদিন। আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, এখন আমাদের নেতা এবং ভবিষ্যতের রাষ্ট্র নায়ক। তার এই জন্মদিনে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি, তার দীর্ঘ জীবন কামনা করছি।
তিনি বলন, আমরা কী মুখ বুঝে বসে থাকবো? আমরা কী এই অবস্থার পরিবর্তনের জন্য চেষ্টা করবো না? ১০ বছর চেষ্টা করছি। এখন শেষ চেষ্টা হচ্ছে ৩০ ডিসেম্বর এই নির্বাচনের মধ্য দিয়ে। এই সুযোগ আজকে এটা এসেছে। মান্না সাহেব ডা. জাফরুল্লাহ সাহেব বললেন, আমার হাত-পা বেঁধে রাখবে, এই রাখার মধ্য দিয়েও আমাদের যেতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, আমরা শৃঙ্খল মুক্ত হতে হলে ওই শৃঙ্খল ভেঙে ফেলতে হবে। আমরা যদি মুক্তি চাই, আমাদেরকে ভোটের সমস্ত অস্ত্র ব্যবহার করতে হবে।
ফখরুল বলেন, সরকার এতো ভয় পেয়েছে যে, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান সাহেব লন্ডন থেকে কথা বলছেন স্কাইপেতে সেটা পর্যন্ত বন্ধ করে দিচ্ছেন, ইন্টারনেট বন্ধ করে দিচ্ছে। আমাদের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করবে না বলে আবারো গ্রেপ্তার করছে, আবারো ভয় দেখাচ্ছে। বিভিন্ন রকম কৌশল। ধানের শীষ সম্পর্কে একটা রিটও করিয়েছে কালকে। ধানের ছড়া ধানের শীষ বলা যাবে না। রাজনৈতিকভাবে কতটা দেউলিয়া হলে কতটা ভীত সন্ত্রস্ত্র হলে সরকার এসব করতে পারে।” এসব কখন করে যখন তার জনসমর্থন থাকে না, জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। আপনাদের প্রতিরোধ তৈরি করতে হবে। জনগণের শক্তি দিয়ে জ্বাল তৈরি করতে হবে, জনগণের শক্তি দিয়ে তাকে বাধ্য করতে হবে, একটা সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন করতে। এর কোনো বিকল্প নেই। এটা আমাদের বাঁচা মরা অস্তিত্বের সংগ্রাম।
মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, আজকে একটাই পথ আছে- জনগণের রায়ে এই সরকারকে বদলিয়ে দিতে হবে। ওরা সব ধরনের নির্যাতন করছে। একটা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার পৃথিবীর ইতিহাসে হয়নি। ওরা সেই ধরনের অত্যাচার- নির্যাতন করার পরেও আবার টেলিভিশনে প্রচার করে- থ্যাংক ইউ পিএম। কিসের থ্যাংকস? আপনি একটা ফকিরকে ভিক্ষা দিয়েছেন কিনা সেটা দেখিয়ে ওদিকে নিজেকে ধন্যবাদ দেবার জন্য উপস্থাপন করেন আর শত শত নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করেন। তারজন্য আপনাকে ধিক্কার জানাতে হয়।
সকল জনগণকে এক সাথে নিয়ে বলতে হবে তুমি যাও, তোমাকে চাই না। তুমি যতদিন আজো ততদিন পর্যন্ত দেশের গজব হবে। সামনে ভোট। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নেন, ওই ভোট আমি কেড়ে নেবো জনগণের হাতে দেবো সেই ভোট জনগণ সমস্ত ধানের শীষের বাক্সভরিয়ে দেবে। আমাদের কাজ আজকে এটাই।
তিনি বলেন, বিএনপির লাখ লাখ কর্মী। আপনাদের মানুষের দ্বারে দ্বারে যেতে যত মামলা থাকুক। পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে দ্বারে দ্বারে গিয়ে বলতে হবে- একটাই সুযোগ আমরা যেভাবে শ্লোগান দেই, আপনারা দেন- আসিতেছে শুভ দিন, ধানের শীষে ভোট দিন। এখন বলবেন দিন তো এসে গেছে, দিনক্ষণ ঠিকও হয়ে গেছে। কোন দিন কত তারিখ। ৩০ ডিসেম্বর।
এটাই লড়াই। আমরা এই নির্বাচনেই এই জালেম সরকারের পতন ঘটাবো। নির্বাচনের প্রচারের ২১ দিন সারা বাংলাদেশে চষে বেড়াতে হবে। মানুষের কাছে গিয়ে একটাই কথা বলবেন, আমাদের সমস্ত লড়াই ওই ভোটের দিন আমরা স্বৈরাচারের পতন ঘটাবো। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে জন্মদিনের শুভেচ্ছাও জানান মান্না।
ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, তারেক জিয়াকে কী আপনারা ভালো বাসেন? তাহলে তাকে আপনাদের ভালোবাসার একটা প্রমাণ দিতে হবে। সেটা হচ্ছে সামনে ৩০ ডিসেম্বর ভোট। আপনাদের সুষ্ঠু নির্বাচন আদায় করে নিতে হবে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তবেই জনগণ ভোট দিতে পারবে, তারেক জিয়াকে আপনারা দেশে আনতে পারবেন। সুষ্ঠু নির্বাচন কীভাবে আদায় হবে? আজকে এখানে যারা উপস্থিত আছেন যারা নেই তাদেরকে একটা প্রতিশ্রুতি দিতে হবে। যত অত্যাচার হোক, আরো যদি এক লাখ লোক গ্রেপ্তার হয় আপনারা কোনোভাবে ভোটের ময়দান ছেড়ে যাবেন না। রাতে বেলা আপনাকে নিয়ে গেলে ভোটকেন্দ্রে মাকে নিয়ে আপনার ভাই-বোনকে দাঁড়াতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ