শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বাঘ যখন নিজেই ঘোগ

৬৮ কেজি গাঁজা ও ২৪ বোতল ফেন্সিডিলসহ গ্রেফতার হয়েছেন ভৈরবের দায়িত্বরত মাদকনিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ইনস্পেক্টর কামনাশীষ সরকার। অর্থাৎ যার হাতে মাদকের করাল গ্রাস থেকে দেশের তরুণ ও যুবসমাজকে রক্ষা করে মাদকব্যবসা রুখে দেয়া এবং এর সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের আইনের কাছে সোপর্দ করবার দায়িত্ব, তিনি নিজেই মাদকব্যবসায় নিয়োজিত বলে মনে হয়। কথায় বলে না, ‘বাঘের ঘরে ঘোগের বাসা?’ ওইরকম আর কী! না, বাঘের বাসায় ঘোগ আশ্রয় নেয়নি। বরং খোদ বাঘই ঘোগে পরিণত হয়েছে। শুধু কামনাশীষ সরকার একাই বাঘ থেকে ঘোগ হয়েছেন এমন না। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে আরও কেউ কেউ আছেন, যাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সহায়তায় অপরাধীরা সমাজের একটা অংশকে তাদের অভয়ারণ্য বানিয়েছে। কামনাশীষের আগেও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ঘাবটিমেরে থাকা কোনও কোনও ঘোগ ধরা খেয়েছেন। এদের কারুর কারুর চাকরি গেছে। জেল- জরিমানাও হয়েছে। এরপরও আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী সংস্থার কোনও কোনও সদস্য মাদকব্যবসাসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। কেন?
ঘোগ হচ্ছে এমন একটি বুনো জন্তু, যেটি দেখতে কুকুরের মতো। এটি জঙ্গলে জলার ধারে লুকিয়ে থেকে মানুষের পোষা পশু-পাখি ধরে এনে খেয়ে ফেলে। দোষ হয় বাঘের। এ প্রাণিটি বাঘের চাইতে যেমন হিংস্র, তেমনই ক্ষিপ্র এবং ভয়ঙ্করও। মাদকসহ গ্রেফতারকৃত ইনস্পেক্টর কামনাশীষ সরকার তেমনই মারাত্মক ঘোগরূপে মাদকের ব্যবসা করে এলাকার তরুণ-যুবকদের যেমন মাথা খাচ্ছেন; তেমনই অপরাধ বিস্তারে ইন্ধন যোগাচ্ছেন। আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে কামনাদের লুকিয়ে অবস্থান দেশ ও জাতির জন্য যেমন বিপজ্জনক, তেমনই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার জন্যও উদ্বেগের কারণ। কামনাদের ভূমিকার জন্য আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীসমূহের যেমন বদনাম হচ্ছে, তেমনই এগুলোতে কর্মরত সৎ ও কর্তব্যনিষ্ঠ সদস্যদের সঙ্গে জনগণের দূরত্ব বাড়ছে কোনও কোনও ক্ষেত্রে। এমনকি এই ঘোগদের জন্য অনেক সময় আমাদের দক্ষ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর মহৎ কার্যক্রমও প্রশ্নের মুখোমুখি হয়ে পড়ে।
কামনাশীষ সরকারদের অশুভ তৎপরতার জন্য দেশের আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তব্যনিষ্ঠ ও দায়িত্বশীল সদস্যদের সুনাম বিনষ্ট হবে কেন? বলতে দ্বিধা নেই, শুধু দেশে নয়, বিশ্বসংস্থার শান্তিরক্ষা বাহিনীতেও দারুণ দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে আমাদের এসব সংস্থার সদস্যরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছেন। এসব অর্জন কামনাশীষ সরকারদের কামনাবাসনা পূরণে ধূলিসাৎ হতে দেয়া যায় না কোনওক্রমেই। তাই ভৈরবের কামনাসহ আইন-শৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীতে ঘাবটি মেরে থাকা ঘোগদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা খুব জরুরি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ