শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সকলের জন্য লেভেলপ্লেয়িং ফিল্ড অত্যাবশ্যক

মুহাম্মদ হাফিজুর রহমান : জাতীয় নির্বাচন অত্যাসন্ন। এবারে জনগণের দাবী একটি অবাধ, সুষ্ঠু, অংশগ্রহণমূলক গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। নির্বাচনী আবহ তৈরীর চেয়ে রাজনৈতিক দল, পেশাজীবী সংগঠন, মানবাধিকার সংস্থাসহ সকল স্তরের মানুষের তৎপরতা নির্বাচনী পরিবেশ তৈরীর কাজে। সকলেরই প্রত্যাশা এবারের নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। নির্বাচনী কার্যক্রম শুরুর আগেই নির্বাচন কমিশন প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে- তারা আদৌ সুষ্ঠু নির্বাচন উপহার দিতে পারবে কি না?  নির্বাচনের প্রাক্কালে নির্বাচন কমিশনার মাহবুবুল আলম ব্যক্তিগত সফরে আমেরিকা গেছেন। তিনি আর দেশে ফিরবেন কিনা, তার নিশ্চয়তা এখনো পাওয়া যায়নি। তার আমেরিকা সফর নিয়ে কোনো কথা উঠতো না যদি এর পেছনে কোনো কিন্তু না থাকতো। সিইসিসহ অন্যান্য নির্র্বাচন কমিশনারদের সাথে তার মতের প্রচুর অমিল রয়েছে তা আর কোনো গোপন বিষয় নয়। ইতোপূর্বে ই.ভি.এম. নিয়ে বিতর্কের জের ধরে তিনি কমিশনের সভা থেকে নোট অফ ডিসেন্ট দিয়ে ওয়াক আউট করেছিলেন। আমেরিকা যাবার আগে আবারও তিনি সভা বর্জনের পর সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে বলেছেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তাঁর প্রস্তাবগুলো সিইসি উত্থাপন করতে দেননি। অবশ্য একজন নির্বাচন কমিশনার বলেছেন, তিনি তার ব্যক্তিগত প্রস্তাব উত্থাপন করতে চেয়েছিলেন। ব্যক্তিগত বলতে কি বোঝায়? তার একান্ত ব্যক্তিগত কোনো সমস্যা নিয়ে কি তিনি আলোচনা করতে চেয়েছেন? কমিশনারগণ সুষ্ঠু নির্বাচনের স্বার্থে যে সকল প্রস্তাব উত্থাপন করবেন, তা-তো ব্যক্তিগতভাবেই করবেন! মূলত বর্তমান ইলেকশন কমিশন অথবা তার পূর্বে রাকিব কমিশন তারা কেউই মেরুদন্ড সোজা করে সুষ্ঠু নির্বাচনের হিম্মত যে রাখেন না তা বর্তমান সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত সকল নির্বাচনে খুব ভালোভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ক্ষমতাসীন দলের আজ্ঞাবহ নির্বাচন কমিশন  ২০১৪ সালের মতো আরো একটি ভোটার বিহীন একতরফা নির্বাচন অনুষ্ঠানের তোড়জোড় শুরু  করেছে। নির্বাচন কমিশনের প্রস্তুতিপর্ব এবং তাদের বক্তব্য আরো একটি অংশগ্রহণহীন নির্বাচনের বার্তাই দিচ্ছে। ক্ষমতাসীন মহল যেনোতেনোভাবে নির্বাচনী বৈতরণী পার করে ক্ষমতার মসনদকে নিজেদের নাগালের মধ্যে রাখার জন্য লোক দেখানো প্রচারণা শুরু করেছে। ই সি মাহবুবুল হক নোট অব ডিসেন্ট দিয়ে সভা বর্জনের পর আওয়ামীলীগের প্রভাবশালী নেতা এবং সরকারের মন্ত্রী জনাব মোহাম্মদ নাসিম বলেছেন, মাহবুবুল হকের পদত্যাগ করা উচিৎ। সকল বিচারে বোঝা যাচ্ছে ক্ষমতাসীন মহলের ইচ্ছার বাইরে বর্তমান নির্বাচন কমিশন জনগণের চাওয়া-পাওয়াকে প্রাধান্য দিতে পারবে না। একদিকে নির্বাচন কমিশন একতরফা নির্বাচনী প্রচারণা দেখেও বলে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় আছে। অপর দিকে পুলিশ বাহিনী ক্ষমতাসীন মহলের ইচ্ছাকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য দিয়ে একদলীয় নির্বাচনের প্লট তৈরীর কাজে মহাব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। রাজনীতির রসায়নে আষাঢ়ে গল্পের নিত্য নতুন প্লট তৈরী হচ্ছে। গল্পের বুননে কোথাও কোথাও ফাঁক থেকে গেলেও আওয়ামীলীগের নেতাদের চাপার জোর, বশংবদ মিডিয়ার সীমাহীন দালালি আর পুলিশের গ্রেফতার অভিযানে গল্পগুলো রসালো না হলেও বেদনার ব্যপ্তি ছড়াচ্ছে ভালোই। গল্পকাররা তাই হুমায়ুন আহমেদ হতে না পারলেও সরকারের প্রিয়ভাজন হওয়ার প্রতিযোগিতায় দিনরাত পরিশ্রম করছে। রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পের সংজ্ঞা অনুযায়ী ‘শেষ হইয়াও হইলোনা শেষ’-এর মতো মামলার আসামীরা মরিয়াও মরিতে পারে নাই। রবীন্দ্রনাথের কাদম্বীনীকে মরিয়া প্রমাণ করিতে হইয়াছে সে মরে নাই। বিরোধী দলের মৃত নেতাদের মামলার আসামী হয়ে প্রমাণ করতে হচ্ছে তারা এখন আর জীবিত নাই।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্কে বলে এসেছেন বাংলাদেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ বজায় আছে। সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা  গোটা দুনিয়ার কাছে এক ধরনের হলেও আওয়ামীলীগের কাছে তার সংজ্ঞা একটু ভিন্ন ধরনের। ১ অক্টোবর হতে আওয়ামীলীগ সপ্তাহব্যাপী নির্বাচনী গণসংযোগ করেছে। তারা সরকারি সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহণ করে সভা-সমাবেশ মিছিল মিটিং এবং গণসংযোগ  অভিযান পরিচালনা করেছে। প্রতিদিন মিডিয়ায় তাদের প্রচারণার সংবাদ প্রচারিত হয়েছে। নির্বাচনী এ প্রচারণা অবশ্য একতরফাভাবেই হয়েছে। নৌকায় ভোট চাওয়ার প্রথম দফা কর্মযজ্ঞ সেরে ফেলা হয়েছে। রাস্তাঘাটে, বাসে, রেল স্টেশনে সর্বত্র ‘ নৌকায় ভোট দিন’ শীর্ষক পোষ্টার, ফেস্টুন, ব্যানারে ছেয়ে গেছে। নির্বাচনের পূর্বেই ক্ষমতাসীন দল হিসেবে আওয়ামীলীগ সকল সরকারি সুযোগ সুবিধা এবং সরকারের সকল অরগান ব্যবহার করার সুযোগ পাচ্ছে পুরোদমে।  যেদিন হতে আওয়ামীলীগ নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে সেদিনই রাজধানীর হাতিরঝিল থানায় বি এন পি মহাসচিব মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ শতাধিক কেন্দ্রীয় নেতার নামে পুলিশের কর্তব্য কাজে বাধা প্রদান এবং নাশকতার মামলা হয়েছে। মামলায় বি এন পি নেতা সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদের নামও আছে। একটি পত্রিকার সংবাদে দেখলাম জনসভার দিন তিনি ব্যক্তিগত সফরে আমেরিকায় ছিলেন। তিনি নাকি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বি এন পির জনসভায় উস্কানীমূলক বক্তব্য দেয়ার কারণে বি এন পি নেতা-কর্মীরা মগবাজারে পুলিশের উপর হামলা করেছে। এ ব্যাপারে অবশ্য রুহুল কবির রিজভী এক সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, যে পুলিশের কাছে আষাঢ়ে গল্পের প্লট তৈরী থাকে শুধুমাত্র তারিখ বসিয়ে মামলা নথিভুক্ত করা হয়। আওয়ামীলীগ মহাদর্পে নির্বাচনী প্রচারণা শুরু করেছে অপর দিকে বি এন পি নেতারা পালিয়ে বেড়াচ্ছে। কেউ গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আর অন্যরা প্রতিদিন কোর্টে হাজিরা দিতে দিতে ক্লান্ত। ২০১৪ সালে ভোটারবিহীন ও জনসমর্থনহীন যে সরকার গঠিত হয় তার পুরোটাই বৈধতার প্রশ্নে শতকরা জিরো পার্সেন্ট পাওয়া সরকার।  ৫ জানুয়ারির ইলেকশন নাটকে ব্যালটের পরিবর্তে বুলেটের মাধ্যমে ক্ষমতার মেয়াদকে আর এক দফা বৃদ্ধি করা হয়েছে। বিজয়ী ঘোষিত ১৫৩ জন সংসদ সদস্যকে কোনো প্রকার নির্বাচনী কার্যক্রমেই অংশগ্রহণ করতে হয়নি। বাকীরা ভোট কেন্দ্রে ভোটার আনতে না পারলেও কুকুর  বেড়াল দিয়ে পাহারার ব্যবস্থা করতে পেরেছিলেন। এক সময়ের আওয়ামীলীগের লড়াকু যোদ্ধা ছাত্রলীগের সাবেক সেক্রেটারী পরবর্তীতে জাগপার প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত শফিউল আলম প্রধান অবশ্য এ নির্বাচনের উপাধি দিয়েছিলেন ‘কুত্তামার্কা নির্বাচন’।
রাজনীতির ব্যাকরণে অসম্ভব বলে কোনো শব্দ আওয়ামীলীগের অভিধানে নেই। ইলিয়াস আলী, চৌধুরী আলম,  আমিনুল ইসলাম, ওয়ালিউল্লাহ মোকাদ্দেস, ব্রিগেডিয়ার আমান আজমী, মীর আহমদ বিন কাশেমসহ শত শত মানুষ গুম হয়ে যাওয়ার পরেও তা দিব্যি হজম করাই নয় বরং তাদের বিরুদ্ধে ব্লেমগেমে আওয়ামীলীগ চ্যাম্পিয়ন। গুম হওয়া মানুষগুলো নাকি নিজেরা আত্মগোপনে আছে। আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পরিচয়ে ধরে নিয়ে যাবার পর খালে বিলে যাদের লাশ পাওয়া গিয়েছে তারা জানতে পারেনি কি জন্য তাদের হত্যা করা হয়েছে। এ ধরনের হাজারো ঘটনা দিব্যি হজম করার মতো সক্ষমতা আওয়ামীলীগ অর্জন করেছে।
শেয়ার বাজার লুটপাট, বিসমিল্লাহ গ্রুপ, ডেসটিনি, যুবক সবগুলো প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে লাখ লাখ পরিবারকে সর্বস্বান্ত করার মতো লুটপাটের ঘটনা আওয়ামীলীগের অভিধায় কোনো প্রকার দুর্নীতিই না। লুটপাট করতে করতে সরকারি ব্যাংকগুলো সব ফোকলা হয়ে যাবার পর এক পরিবারের মাধ্যমে এক ডজন বেসরকারি ব্যাংক দখলে নিয়ে তাও সাবাড় করার পথে। রডের পরিবর্তে বাঁশের ব্যবহার আওয়ামীলীগই সর্বপ্রথম দেখাতে পেরেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের ভল্ট হতে টাকা চুরি যায়, সরকার জানে না। স্বর্ণ গায়েব হয় সরকারের হুশ ফেরে না। কয়লা গায়েবের সাথে খবর আসে কঠিন শিলাও চুরি হয়ে গেছে। মহাসড়ক হতে গ্রাম গঞ্জের রাস্তাঘাট যেন মঙ্গল গ্রহের পাদপীঠ। এতোসবের পরেও বাংলাদেশ নাকি উন্নয়নের রোল মডেল। গোটা দুনিয়া নাকি উন্নয়নের রহস্য জানতে চায়। ৫ অক্টোবর থেকে সপ্তাহব্যাপী পালিত হয়েছে উন্নয়ন মেলা। সরকারি বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠানকে এতে অংশগ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সরকারের সকল অর্গানকে ব্যবহার করে একতরফা জমজমাট প্রচারণার কাজ চলছে পুরোদমে। উন্নয়নের ডুগডুগি শোনতে শোনতে আম জনতার কান ঝালাপালা। উন্নয়নের কিছু বাস্তব চিত্রও আছে। আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক সমীক্ষার একটি জরীপে দেখা গেছে অতি দ্রুত ধনী হওয়া এবং মাল্টি বিলিয়নার হওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান বিশে^ বাংলাদেশ এক নাম্বারে। নব্য ধনী এবং বিগত দশ বছরে যারা শূন্য থেকে কোটিপতি হয়েছে তাদের শতভাগই যে আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মী তা মনে হয় যে কোনো জরিপ ছাড়াই বলা যায়। আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হওয়ার ক্ষেত্রে এক শ্রেণির আমলা, পুলিশ, সরকারি কর্মকর্তারা প্রতিযোগিতায় এগিয়ে আছেন। একটি অনলাইন নিউজে দেখলাম জনৈক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী আমেরিকায় বাড়ি কিনতে গিয়ে অর্থের উৎস বলতে না পারার কারণে তার ব্যাংক একাউন্ট ফ্রিজ করা হয়েছে। এটা আমেরিকা বলে সম্ভব হয়েছে। মানবাধিকার সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান তলানীতে। হিউম্যান রাইটস্ ওয়াচ, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ দেশী বিদেশী আন্তর্জাতিক সংস্থাসমূহ বাংলাদেশের চলমান মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বার বার প্রশ্ন তুলছে। কিন্তু সরকার সেদিকে আদৌ ভ্রুক্ষেপ করছে না। বৈশ্বিক সক্ষমতা সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান আগের চেয়ে আরো একধাপ নিচে নেমেছে। ১৪০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থান ১৩৩। ১৭ অক্টোবর এক সাংবাদিক সম্মেলনে সিপিডি এ তথ্য প্রকাশ করে।
সরকার নাকি মিডিয়ার টুটি চেপে ধরে নাই। চ্যানেল ওয়ান, সি.এস.বি, দিগন্ত, ইসলামিক টিভি, আমার দেশ কেন বন্ধ হয়েছে সে প্রশ্ন করার হিম্মতও অনেকে হারিয়ে ফেলেছে। এতোগুলো মিডিয়া বন্ধ করে দেয়ার পর সাংবাদিকরা জানতে পারেনি সাগর রুনিকে কেন হত্যা করা হয়েছে। আজীবন প্রতিবাদী লেখক ফরহাদ মজহার নাকি ষাটোর্ধ্ব বয়সে কোনো এক মহিলার প্রেমে ঘর ছেড়েছিলেন! চার্টার্ড একাউন্ট পরিচয়ের চেয়ে সাংবাদিক খ্যাতিই যাকে গোটা দুনিয়ায় পরিচিত করেছে সেই শফিক রেহমান কেন আর পত্রিকায় লেখেন না সে প্রশ্ন করার মতো সাংবাদিক কি এখন খুঁজে পাওয়া যাবে? তিনি নাকি কাকে হত্যা করার ষড়যন্ত্র করেছিলেন। উন্নয়নের আষাঢ়ে গল্পের চেয়ে এ গল্পগুলো কোনো অংশে কম নয়। গল্পের প্লট সাজাতে সাজাতে সরকারের প্রতিটি অরগান এখন গল্প প্রিয় হয়ে গেছে। গল্পগুলো ভালো না লাগলেও মানুষ মুখে মুখে বুলি আওড়ায় আর বেদনার হাসি হাসে। কখনো কখনো গোপনে প্রতিবাদ করে মনের ঝাল মেটায়। প্রকাশ্য প্রতিবাদের সব দরজা বন্ধ। এখন ঘরের মধ্যে কথা বলতেও মানুষ ভয় পায়। নাশকতার ষড়যন্ত্র তত্ত্বের কারণে যখন তখন গ্রেফতারের ভয়ে বিরোধী মতাদর্শের লোকেরা এক একজন ৮-১০টি করে নতুন মামলার আসামী হয়েছেন। বি এন পিকে একটি জনসভা করার অনুমতি দিয়ে কেন্দ্রীয় সব নেতার নামে দুটি মামলা দিয়ে ইংগিত দেয়া হয়েছে যতো জনসভা ততো মামলা। আন্দোলনের হুংকার যতো বাড়বে মামলার পাহাড় ততো উঁচু হবে। বর্তমানে বহুল আলোচিত ভৌতিক মামলার বিষয়ে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ বি এন পি মহাসচিব সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেছেন। তাতে ১৯৯৮ সাল থেকে মারা যাওয়া লোক যেমন আছেন আবার একজন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ যিনি দীর্ঘদিন যাবৎ কিডনি ড্যামেজ জনিত কারণে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন- এমন লোকের নামও আছে। একটি থানার পাঁচটি মামলার কাগজ আমার সামনে আছে। মামলাগুলো দায়ের করা হয়েছে যথাক্রমে ২ সেপ্টেম্বর-২০১৮, ১১ সেপ্টেম্বর-২০১৮, ১২ সেপ্টেম্বর-২১০৮, ১৩ সেপ্টেম্বর-২১০৮, ১৪ সেপ্টেম্বর-২০১৮; মামলা নং যথাক্রমে ১(৯)১৮, ২২(৯)১৮, ২৫(৯)১৮, ২৮(৯)১৮, ৩০(৯)১৮। ১ নং মামলায় আসামী সংখ্যা ৯২ জন নামীয়সহ আরো ৫০/৬০ জন, ২২ নং মামলার আসামী সংখ্যা ১৫৩জন নামীয়সহ আরো অনেকে। ২৫ নং মামলার আসামী সংখ্যা ১৫৩ জন নামীয়সহ আরো অনেকে। ২৮ নং মামলার আসামী সংখ্যা ১৫৩ জন নামীয়সহ আরো অনেকে। ৩০ নং মামলার আসামী সংখ্যা ১৫২ জন নামীয়সহ আরো অনেকে। তার মানে প্রতিটি মামলায় ১৫০ এর অধিক সংখ্যাকে ঠিক রাখা হয়েছে। ২২, ২৫, ২৮ এবং ৩০ নং মামলায় আসামী সবাই একই শুধুমাত্র সিরিয়াল পরিবর্তন করা হয়েছে। একটি মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ১৫০-২০০ জন বি এন পির উচ্ছৃংখল নেতা কর্মী রাস্তা বন্ধ করিয়া শ্লোগান দিয়ে জনমনে ভীতি সঞ্চার করে নাশকতার সৃষ্টি করছিলো .... পুলিশ গিয়ে তাদেরকে নিবৃত করার চেষ্টা করলে ...... একটি রিক্সায় আগুন দিয়ে ভস্মীভূত করে। আর একটি মামলার এজাহারে লিখেছে লেগুনায় আগুন দিলে পিছনের সিট সামান্য পুড়ে যায় এতে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়। সবগুলো মামলায়ই উচ্ছৃঙ্খল  বি এন পি কর্মী.......  শ্লোগান দিতে থাকে....... ভীতি সঞ্চার করে...... এ কথাগুলো প্রায় এক; শুধু দিন তারিখ সামান্য পরিবর্তন করে দেয়া হয়েছে। এভাবে একটি থানার পাঁচটি মামলার সংক্ষিপ্ত খতিয়ান পাঠকদের জ্ঞাতার্থে তুলে ধরলাম। গণমাধ্যমে যে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে তাতে জানা গেছে, কোনো কোনো থানায় ১৪-১৫টি পর্যন্ত মামলা হয়েছে। জাতীয় নির্বাচনের পূর্বে এ ধরনের মামলা কিসের আলামত বহন করে? মামলা দায়েরের পর প্রতিদিন গ্রেফতার অভিযান চলছে পাইকারীভাবে। পুলিশের গ্রেফতার অভিযানের কারণে বিরোধী জোটের নেতা-কর্মীরা অফিস আদালত, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান, বাসা-বাড়ি কোথাও নিরাপদে অবস্থান করতে পারছেন না। সুষ্ঠু নির্বাচনের সংজ্ঞা যদি এটাই হয়ে থাকে তবে আর কি দরকার নির্বাচনী নাটকের?  সরকারের অন্যতম মুখপাত্র এবং আওয়ামীলীগের মুখপাত্র ও দলের সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদের ৫ আক্টোবর রাজধানীর মিরপুরে আওয়ামীলীগের এক সমাবেশে বলেছেন, বি এন পি চাইলে তারাও নির্বাচনী গণসংযোগ করতে পারে, তাঁদের বাধা দেয়া হবে না। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে বিরোধী দলের সামনে বাধার যে পাহাড় এবং দুর্লঙ্ঘ্য দেয়াল তুলে রাখা হয়েছে। এ পরিবেশে কিভাবে সুষ্ঠু নির্বাচন আশা করা যায়? সরকার, আওয়ামীলীগ এবং নির্বাচন কমিশন সকলের যৌথ প্রচেষ্টা যেখানে একটি একদলীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের পথে ধাবিত হচ্ছে। সেখানে কিভাবে আশা করা যায় এমন পরিবেশ পরিস্থিতিতে অংশগ্রহণমূলক সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব? জনাব ওবায়দুল কাদের হুশিয়ারী উচ্চারণ করে বলেছেন, বি এন পি নির্বাচন বানচালের চেষ্টা করছে..... নাশকতার আলামত পাওয়া যাচ্ছে..... এটা ২০১৪ সাল নয়। আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদকের এ বক্তব্যের বিপরীতে জনগণও তো একই কথা বলে তারা আর ২০১৪ সালের মতো একতরফা ভোটারবিহীন নির্বাচন চায় না। জনগণ চায় সকলের অংশগ্রহণমূলক একটি অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য বর্তমান সংঘাতময় অবস্থার অবসান ঘটিয়ে  স্থিতিশীল পরিবেশ ফিরিয়ে আনা ক্ষমতাসীনদের একক দায়িত্ব। এ জন্য সর্বাগ্রে বিরোধী দলের সভা-সমাবেশের উপর অঘোষিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে তাদের জন্য সকল দলের সম সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। দায়েরকৃত সকল রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত মামলা, ভৌতিক মামলা, গায়েবী মামলা যা আছে সব প্রত্যাহার করে এ সকল মামলায় যারা কারান্তরীণ আছে তাদের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। প্রশাসনকে দলীয় কর্মীর মতো ব্যবহারের অশুভ নীতি পরিহার করে তাদের পেশাদারিত্ব নিশ্চিত করতে হবে। বর্তমানে কারান্তরীণ বেগম খালেদা জিয়া শুধু বিরোধী দলীয় নেত্রীই নন, তিনি স্বাধীনতার ঘোষকের স্ত্রী, সাবেক সেনা প্রধানের স্ত্রী, সাবেক প্রেসিডেন্টের স্ত্রী, তিন তিন বারের নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী, সবচেয়ে জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলের চেয়ারপারসন- তাকে মুক্তি দিয়ে সুষ্ঠু নির্বাচনের পথে যে অন্তরায় আছে তা দূর করা সরকারের একক দায়িত্ব। ক্ষমতাসীন মহল যদি সত্যিকারার্থে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আন্তরিকভাবেই চায় তবে উপর্যুক্ত বিষয়গুলোর বাস্তবায়ন তাদের অনিবার্য কর্তব্য। এটা করা না হলে বোঝা যাবে সরকার আসলেই সুষ্ঠু নির্বাচন চায় না।  সরকার কথায় কথায় দৃশ্যমান উন্নয়নের  শ্লোগান দেন। উন্নয়নের অনিবার্য শর্ত গণতন্ত্রের অবাধ চর্চা। গণতন্ত্র, মানবাধিকার, আইনের শাসন এখন বাংলাদেশে দৃশ্যমান নয়। দৃশ্যমান উন্নয়নের জন্য এগুলো পূর্বশর্ত। পদ্মাসেতুর দুটি পিলার দৃশ্যমান মানেই উন্নয়ন নয়। গণতন্ত্র, আইনের শাসন, মানবাধিকার, বাক স্বাধীনতা, ভোটের অধিকারসহ নিরাপদে নির্বিঘেœ বসবাসের নিশ্চয়তা বিধান করলেই উন্নয়ন দৃশ্যমান হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ