শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে ‘গণহত্যা’ চালানো হয়েছে

৪ ডিসেম্বর, রয়টার্স : গত সোমবার ওয়াশিংটনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ নামের একটি থিংক ট্যাংক বলেছে, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে রোহিঙ্গাদের যে নির্যাতনের শিকার হতে হয়, তা গণহত্যা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের অনুরোধে এই সংস্থা এ বছর মার্চ ও এপ্রিলে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের মধ্যে মাসব্যাপী যে তদন্ত পরিচালনা করে, সংবাদ সম্মেলনে তার সারসংক্ষেপ বর্ণনা করা হয়। এই সংস্থার সভাপতি পল উইলিয়ামস বলেন, রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে যা ঘটেছে, তা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ।

উল্লেখ্য, এ বছর সেপ্টেম্বরে মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এই সংস্থার প্রস্তুত তদন্তের ভিত্তিতে এক প্রাথমিক প্রতিবেদনে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর সীমাহীন নিপীড়ন ও নির্যাতনের বিবরণ প্রদান করে। তাতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে পরিকল্পিত জাতিহত্যার প্রমাণ লিপিবদ্ধ করা হলেও গণহত্যার প্রসঙ্গটি এড়িয়ে যাওয়া হয়।

মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্স গত মাসে এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনাকে ‘ট্র্যাজেডি’ হিসেবে বর্ণনা করেন, কিন্তু তাকে ‘গণহত্যা’ বলতে অসম্মত হন। বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, এমন স্বীকৃতির ফলে আন্তর্জাতিক আইনের চোখে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য বেশ কিছু আইনগত দায়-দায়িত্ব এসে পড়ে, যার জন্য তারা এখনো প্রস্তুত নয়।

যেসব তদন্তকারী স্টেট ডিপার্টমেন্টের রোহিঙ্গাবিষয়ক প্রতিবেদনটি প্রস্তুত করেন, তাঁরাও বলছেন, রোহিঙ্গা নির্যাতন গণহত্যা, সে কথা স্বীকার করে নেওয়া উচিত।

গতকাল ন্যাশনাল পাবলিক রেডিওর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে মার্কিন নৌবাহিনীর রিজার্ভ সদস্য গ্রেগরি নুন বলেন, তদন্তকালে তিনি এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হয়েছেন, যা গণহত্যা ছাড়া আর কিছু নয়। রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের সঙ্গে কথা বলার সময় এক হাজারেরও বেশি সাক্ষাৎকার তাঁরা গ্রহণ করেন। উদ্বাস্তুরা সবাই একই রকম ভয়াবহ ঘটনার বিবরণ দিয়েছেন।

থিংক ট্যাংক জানায়, সেনাবাহিনীর সদস্যদের হাতে রোহিঙ্গা নারীরা পুরো গ্রামবাসীর সামনে গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন। অনেক ক্ষেত্রে বৌদ্ধ ভিক্ষুরাও এসব ধর্ষণে অংশ নেয়।

ওয়াশিংটনের হলকস্ট মিউজিয়ামও এক বিবৃতিতে রোহিঙ্গা নির্যাতনকে গণহত্যা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান ও তার প্রতিকারে যথাযথ আইনি ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানিয়েছে।

এর আগে মিয়ানমারে সংঘটিত রোহিঙ্গা নিধনযজ্ঞকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাষ্ট্রের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। নিধনযজ্ঞের জন্য দায়ীদের বিচারের আওতায় আনতে জরুরিভিত্তিতে একটি অপরাধ আদালত স্থাপনের আহ্বান জানিয়েছে একটি মানবাধিকার সংস্থা। দ্য পাবলিক ইন্টারন্যাশনাল ল অ্যান্ড পলিসি গ্রুপ (পিআইএলপিজি) নামের এ সংস্থাটি রোহিঙ্গা নিপীড়নের ঘটনা মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ। গত সোমবার সংস্থাটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বর্মি সেনাবাহিনী কর্তৃক রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা ও যুদ্ধাপরাধ সংঘটনের প্রামাণ্য দলিল রয়েছে।

প্রতিবেদন তৈরিতে বর্মি সেনাবাহিনী ও উগ্রপš’ী বৌদ্ধদের জাতিগত নিধনযজ্ঞের ভয়াবহতায় বাংলাদেশে পালিয়ে আসা হাজারখানেক রোহিঙ্গার সঙ্গে কথা বলেছে মানবাধিকার সংস্থা পিআইএলপিজি।

পিআইএলপিজি বলছে, কোনও জনগোষ্ঠী নিজ দেশের সরকারের নৃশংস অপরাধের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হলে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দায়িত্ব। ফলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের সুরক্ষা নিশ্চিতের বাধ্যবাধকতা রয়েছে।

বার্মার পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে এই প্রতিবেদনের বিষয়ে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ