শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

৫ জানুয়ারির ন্যায় নির্বাচন দেখতে চায় না বিদেশীরা

# সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সমস্যাগুলো সমাধানের কাজ চলছে -এইচ টি ইমাম
# সরকার ও ইসির আচণে নির্বাচনের আগেই প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে সংসদ নির্বাচন- আমীর খসরু
# নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ এটাই বলেছি -শারমিন মুরশিদ
# আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় ইলেকশন ফেয়ার না হওয়ার আলামত দেখা যাচ্ছে -ব্রিগেডিয়ার অব. সাখাওয়াত
# সরকার ও নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকার অভাব লক্ষ্য করছি -বদিউল আলম মজুমদার
স্টাফ রিপোর্টার: নির্বাচনের পরিবেশ নিয়ে রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও নির্বাচন পর্যবেক্ষকদের সাথে মতবিনিময় করেছেন কয়েকটি দেশের কূটনীতিকরা। কানাডা, আইআইডি ও এনডিআইয়ের যৌথ উদ্যোগে এই মতবিনিময় সভায় অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, জাপানের কূটনীতিকরা অংশ নেন। গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ১০টা পর্য্ন্ত এই রুদ্ধদ্বার মতবিনিময় সভা হয়। বৈঠকে উপস্থিত দেশগুলো স্পষ্ট করে বলেছে, তারা বাংলাদেশে ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ন্যায় কোনো নির্বাচন দেখতে চান না। তারা চান বাংলাদেশে একটি কার্যকর গণতান্ত্রিক নির্বাচন। যেখানে সব দল স্বাধীনভাবে ভোটের মাঠে তৎপর থাকবে। ভোটাররা স্বাধীনভাবে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন।
বৈঠকে প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচটি ইমাম, গওহর রিজভী, আওয়ামী লীগের দীপু মনি, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রিয়াজ রহমান, বিকল্পধারার শমসের মবিন চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন। এছাড়াও সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অব, এম সাখাওয়াত হোসেন, নির্বাচন পর্যবেক্ষক সংস্থা ব্রতীর শারমিন মুরশিদ, সুজনের বদিউল আলম মজুমদারসহ বিভিন্ন নির্বাচনী পর্যবেক্ষক সংস্থা ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
বৈঠক শেষে প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম সাংবাদিকদের বলেন, একাদশ নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সব কিছু করেছে। তবে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কিছু বিষয়ে সমস্যা আছে। তা সমাধানের জন্য আমরা চেষ্টা করছি। সকল রাজনৈতিক দল ও গণমাধ্যম নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, এখানে মূলত নির্বাচনটি গ্রহণযোগ্য হওয়ার জন্য যে প্রয়োজনীয়তা সেটা আমরা বলেছি। বর্তমান যে প্রেক্ষাপট বাংলাদেশের, এই বাংলাদেশে লেভেল প্ল্যায়িং ফিল্ড না হওয়া সত্ত্বেও আমরা নির্বাচনে এসেছি। এখন আমরা নির্বাচনে আসার পর দেখছি আমাদের জার্নি হচ্ছে লং হিল জার্নি, আমরা আরো নিচের দিকে যাচ্ছি।
বিএনপির এ নীতি নির্ধারক বলেন, আমরা আশা করি যে এটা ক্র্যাশ না করে। আমরা আশা করি নির্বাচনের বাকী  দিনগুলোতে নির্বাচন কমিশন নিরপেক্ষ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। এই পর্যন্ত জনগণের কোনো আস্থা সৃষ্টি হয়নি। বস্তুতপক্ষে নির্বাচনটি নির্বাচনের আগে প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে গেছে বিভিন্ন কারণে এবং এই প্রশ্নবিদ্ধ হওয়া থেকে যদি বেরিয়ে আসতে চান তাহলে তাদের প্রমাণ করতে হবে তারা একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন চান। নইলে প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন আরো ‘খারাপের’ দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কাও প্রকাশ করেছেন তিনি।
আমীর খসরু বলেন, আজকে নির্বাচিত সরকার নাই, নির্বাচিত সংসদ নাই, নির্বাচিত প্রতিনিধি নাই। দেশের মানুষ ভোটের মাধ্যমে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করতে চায়, একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ দেখতে চায়। কিন্তু এখানে সমস্যা হচ্ছে পুরো নিয়ন্ত্রণটা সরকারের হাতে, নির্বাচন কমিশনের হাতে নিয়ন্ত্রণ নাই। তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে কিভাবে?
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক দীপু মনি বলেন, নির্বাচনটা কিভাবে আরো ভালো করা যায় সেই নিয়ে আলোচনা হয়েছে। আমাদের যে বক্তব্য সেটা হলো গত ১০ বছরে ও তার আগে ২০০৭-৮ সালেও নির্বাচনী পুরো প্রক্রিয়ায় যে ধরনের সংস্কার করা হয়েছে যা প্রত্যেকটির উদ্যোগ ছিলো আওয়ামী লীগের উদ্যোগ। ওই সব সংস্কারের মাধ্যমে আজকে একটা সিষ্টেম দাঁড়িয়েছে যার মাধ্যমে একটা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন করা সম্ভব। সেই নির্বাচনে যে পক্ষ-প্রতিপক্ষ আছে তাদের অবশ্যই ভূমিকা রয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলো যেন সঠিক ভূমিকা পালন করে। আওয়ামী লীগ সরকারে আছে আমরা দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করছি এবং করবো। আমরা সবাইকে নিয়ে যে নির্বাচন করতে চাই, ভালো নির্বাচন করতে চাই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সংলাপ করেছে তার মধ্য দিয়ে এবং নির্বাচনের পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে আমরা তার প্রমাণ করছি।
তিনি বলেন, সরকারের যেটি উদ্দেশ্য সেটি হচ্ছে নির্বাচন কমিশন স্বাধীনভাবে নির্বাচন করবে এবং সরকার তাকে সাংবিধানিক যে দায়িত্ব আছে সেই দায়িত্ব অনুযায়ী সর্বাত্মক সহযোগিতা দেবে এবং সরকার সেটি করে যাচ্ছে।
আলোচনা কী হয়েছে প্রশ্ন করা হলে দীপু মনি বলেন, ভেতরে আলোচনার কথা এখানে বলবার কথা না। তবে আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। সবাই সেটি আশা করেন এবং অতীতের চাইতে আমরা এখন যে পদ্ধতিগুলো আছে চতুর্দিকে যেভাবে ডিজিটাইলেজেশন বলেন, মিডিয়ার ব্যাপকতা বলেন, তাতে একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ভালো পরিবেশ তৈরি হচ্ছে সেটিকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে।
বৈঠকে উপস্থিত থাকা ব্রতীর প্রধান নির্বাহী শারমিন মুরশিদ বলেন, এই ধরনের আলোচনা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। যেহেতু এখানে নির্বাচনের সব অংশীদারীরা উপস্থিত ছিলেন। সেই জায়গাটা থেকে বলা হয়, সকলের তাদের জায়গা থেকে তাদের সমস্যাগুলো উত্থাপন করেছেন। সরকারের যারা প্রতিনিধি ছিলেন, তারাও যথেষ্ট খোলাশাভাবে তাদের বোধগুলো পেশ করেছেন। আমরা আশা করি এই ধরনের আলোচনা সবার মধ্যে সম্পর্ক তৈরি করবে, টেনশন ও অস্থিরতা কমাবে।
নির্বাচনের পর্যবেক্ষক হিসেবে পরিবেশ সম্পর্কে আপনারা কি বলেছেন প্রশ্ন করা হলে শারমিন মুরশিদ বলেন, আমরা আগামী দিনের দিকে তাকাতে চাই। আমরা মনে করি যে, রাজনৈতিক দলগুলো একটু সহনশীল হয়। নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা গুরুত্বপূর্ণ। সেই ভূমিকাটা শক্ত করার জন্য সরকারি দল কমিশন থেকে দূরত্ব বজায় রাখবে। আমাদের বক্তব্য ছিলো নির্বাচন কমিশনের ইন্ডিপেন্ডেন্স প্রতিষ্ঠিত করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলো তার থেকে দূরত্ব রক্ষা করবে।
সাবেক নির্বাচন কমিশনার সাখাওয়াত হোসেন বলেন, এখানে যে জিনিসটা উঠে এসেছে  আগামী নির্বাচন যদি গ্রহণযোগ্য না হয় দেশে-বিদেশে যদি দৃশ্যমান ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না দেখা যায় যেটা এখন কিছু আলামত দেখা যাচ্ছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায়। এগুলো দ্য আর অবজারভিং। এটা হয়ত বাংলাদেশে এই পর্যন্ত যেসব অর্জন আছে, খুব ভালো ভালো অর্জন আছে সেই অর্জনগুলোকে ম্লান করতে পারে। সেটাই হলো তাদের ধারণা। যেটা আলোচনায় উঠে এসেছে। এইটুকুই আমি বুঝতে পেরেছি।
সুজন সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সবার আগে প্রয়োজন সকলের অংশগ্রহণ। আপাতত আমরা সেটা দেখতে পাচ্ছি। তবে সেটিকে কার্যকর করতে হলে সরকারের ইতিবাচক মনোভাব থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা তফসিল ঘোষণার পর এখন পর্যন্ত সরকারের পক্ষ থেকে ইতিবাচক ভূমিকার অভাব লক্ষ্য করছি। একইসাথে নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়েও সমালোচনা হচ্ছে। তিনি বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি জনপ্রশসানের ভূমিকা মোটেও ইতিবাচক নয়। এখনো বিরোধী জোটের নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। সামান্য অভিযোগে বিরোধীদের মনোনয়ন বাতিল করা হচ্ছে। আমরা চাই, সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচন।
বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা বলেছেন, দেশের প্রধান দুটি বিরোধী দলের কাছে সহনশীল আচরণ আশা করেছেন বৈঠকে অংশ নেয়া কূটনীতিকরা। একইসাথে সবার অংশগ্রহণে একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সরকারের ইতিবাচক ভূমিকা আশা করেছেন। তারা বলেছেন, বাংলাদেশে একটি গ্রহণযোগ্য গণতন্ত্র চালু থাকুক সেটিই তারা দেখতে চান। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রসঙ্গ তুলে কূটনীতিক দেশগুলো বলেছেন, সেই নির্বাচন কোথাও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এবার যেন সেই রকম কোনো নির্বাচন না হয়। তারা বলেছেন, এখনো বিরোধীরা সেভাবে সুযোগ সুবিধা পাচ্ছেন না। এখনো গ্রেফতার, মামলা-হামলা চলছে। এসব তারা দেখতে চান না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ