মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রংপুর-৫ আসনে ধানের শীষ প্রার্থী গোলাম রব্বানীর মনোনয়ন বাতিল

*কয়েকজনকে লাঞ্ছিত করে আ’লীগ নেতাকর্মীরা

রংপুর অফিস : রংপুর-(৫) মিঠাপুকুর আসনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের ব্যানারে ২০ দলীয় জোটের প্রার্থী জামায়াত নেতা অধ্যাপক গোলাম রব্বানীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেছেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। গতকাল বৃহ¯পতিবারর সকাল সাড়ে ১০টার দিকে যাচাই-বাছাই শেষে মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তা এনামুল হাবীব।

রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, হলফনামায় জি আর ৫৭০/১৩ এবং জি আর ৫৪৮/১৭ মামলা দুটি উল্লেখ না করায় এবং উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে গৃহীত হয়েছে এ মর্মে কোন চিঠি দেখাতে না পারায় তার মনোনয়ন পত্র অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এব্যাপারে গোলাম রব্বানীর আইনজীবী এ্যাডভোকেট বায়েজীদ ওসমানী জানান, রিটার্নিং কর্মকর্তা এনামুল হাবীব আমাদের কোন কথা না শুনেই এক তরফা ভাবে এ সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। প্রকৃত বিষয় হচ্ছে, নি¤œ আদালতের ঐ মামলা দু’টি জেলাজজ আদালতে বদলী হওয়ার পর সে সবের নাম্বার পরিবর্তন হওয়ার পর জি আর ৫৭০/১৩ নম্বর মামলা হয়েছে স্পেশাল ট্রাইবুনাল ২২/১৫ এবং জি আর ৫৪৮/১৭ মামলা হয়েছে স্পেশাল ট্রাইবুনাল ২৪/১৮। এ ছাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান পদ থেকে পদত্যাগ করলেও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে তা গৃহীত হয়েছে কিনা এটা দেখার বিষয় সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন তার প্রস্তাবক এবং সমর্থক সহ রংপুর আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাউয়ুম মন্ডল জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের সভাপতি এডভোকেট একরামুল হক, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আফতাব উদ্দিন, অ্যাডভোকেট আব্দুল হাদী বেলাল, ইসলামিক ল ইয়ার্স কাউন্সিলের বায়েজীদ ওসমানী, প্রস্তাবক ওমর ফারুক সহ বেশ কয়েক জন আইনজীবী এবং সাংবাদিক।

রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে বেরিয়ে গোলাম রাব্বানীর আইনজীবী বায়েজিদ ওসমানী বলেন, যাচাই-বাছাইয়ের সময় আমাদের কথা বলার সুযোগ না দিয়েই একতরফাভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তা রায় ঘোষণা করেছেন। তিনি বলেন, যে মামলার কথা বলা হয়েছে সেই দুটি মামলায় গোলাম রাব্বানীর নাম নেই। কিন্তু আমরা তথ্য দিতে চাইলে রিটার্নিং কর্মকর্তা কোনো কথা শোনেননি। আইনজীবী বায়েজিদ ওসমানী আরও বলেন, তারা এ বিষয়ে উচ্চ আদালতে আপিল করবেন। এ সময় বর্তমান এমপি এইচএন আশিকুর রহমানের পক্ষে উপস্থিত মহানগর আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা মারমূখী হয়ে আমাদেরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত এবং অশালীন ভাষায় গালাগাল করেছেন।

এদিকে মুঠোফোনে ওই হট্টগোলের ভিডিও ধারণ করতে গেলে দুই সাংবাদিকের ফোন কেড়ে নেন রিটার্নিং কর্মকর্তা। এতে উপস্থিত সাংবাদিকদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরে সাংবাদিক নেতাদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

উল্লেখ্য, জামায়াত নেতা গোলাম রব্বানী ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে অংশ নিয়ে ১ লাখ ২৮ হাজার ভোট পেয়ে আওয়ামী লীগের প্রার্থী জাকির হোসেনকে পরাজিত করে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। বিগত আন্দোলনের সময় বেশ কিছু মামলায় বিভিন্ন সময়ে তিনি প্রায় সাড়ে ৪ বছর কারাগারে আটক থাকেন।

 

প্রতিকার চেয়ে সিইসির নিকট গোলাম রব্বানীর আবেদন 

মনোনয়ন বাতিলের সার্টিফাইড 

কপি দেন নি রিটার্নিং অফিসার 

স্টাফ রিপোর্টার : মনোনয়ন বাতিল করার পর তার সার্টিফাইড কপি না দেয়ায় আইনী প্রতিকার চেয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে আবেদন করেছেন রংপুর-৫ (মিঠাপুকুর) আসনে ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী মোঃ গোলাম রব্বানী। গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর এক প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গোলাম রব্বানী তার মনোনয়ন পত্রটি বাছাইয়ের পর তা বাতিল করায় বাতিলের সার্টিফাইড কপির আবেদনের সাড়ে ৮ ঘণ্টা পরও সার্টিফাইড কপি না পেয়ে গতকাল সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় প্রধান নির্বাচন কমিশনারের নিকট লিখিত আবেদন জানান।

তিনি তার আবেদনে বলেন, আমি নিম্ন স্বাক্ষরকারী, ২৮ ডিসেম্বর রংপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং অফিসার এর নিকট মনোনয়ন পত্র জমা দিতে গেলে তিনি তা গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানান। বেশ কয়েকটি পত্রিকায় এ সংবাদ প্রকাশিত হয়। আমি সংক্ষুব্ধ হয়ে হাইকোর্টে রিট পিটিশন দায়ের করলে আমার রিট পিটিশনটি গৃহীত হয় এবং নির্বাচন কমিশন ও রিটার্নিং অফিসারকে আমার মনোনয়ন পত্র জমা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। সরকার আপিল করলে আপিল খারিজ হয়ে যায়। সুপ্রিম কোর্ট ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমার মনোনয়ন পত্র গ্রহণের নির্দেশ দেন। ৫ ডিসেম্বর আমার প্রস্তাবক, সমর্থক ও একজন আইনজীবী মনোনয়ন পত্রটি রিটার্নিং অফিসার এর নিকট জমা দেন। ৬ ডিসেম্বর সকাল ১০ টায় আমার মনোনয়ন পত্র বাছাই এর সময় নির্ধারিত হয়। আমার প্রস্তাবক, সমর্থক ও একজন আইনজীবী সেখানে উপস্থিত হন। বাছাই এর পর রিটার্নিং অফিসার আমার মনোনয়ন পত্রটি বাতিল করেন। 

তিনি বলেন, আপিল বিভাগের নির্দেশনা অনুযায়ী রিটার্নিং অফিসারের আদেশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে নির্বাচন কমিশনে আপিলের জন্য বলা হয়েছে। আমার আবেদন পত্র বাতিল করার পরপরই ৬ ডিসেম্বর ২০১৮  আমার নিয়োজিত আইনজীবী আমার পক্ষ থেকে রিটার্নিং অফিসারের আদেশের সর্টিফাইড কপির জন্য আবেদন করেন। কিন্তু সন্ধ্যা ৬.১৫ টা পর্যন্ত আমাকে সার্টিফাইড কপি সরবরাহ করা হয়নি। রিটার্নিং অফিসারের এই দায়িত্বহীন ভূমিকার কারণে  নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে আপিল  আবেদন পেশ করতে না পারার আশংকা দেখা দিয়েছে। আমি যেন যথাসময়ে নির্বাচন কমিশনে আপিল দায়ের করতে না পারি এবং ক্ষতিগ্রস্ত হই সেজন্য রিটার্নিং অফিসার ইচ্ছাকৃতভাবে টালবাহানা করে সময়ক্ষেপণ করেন। আমাকে যথাসময়ে আপিল করতে না দেয়ার ষড়যন্ত্র করে রিটার্নিং অফিসার আইন, সংবিধান ও নির্বাচন কমিশনের বিধি লংঘন করেছেন। সেইসাথে তিনি সর্বোচ্চ আদালতের আদেশ লংঘন করে আদালত অবমাননা করেছেন। তিনি রিটার্নিং অফিসারের এই ভূমিকার বিরুদ্ধে আইনী প্রতিকার প্রার্থনা করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ