শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

সরকার ক্ষমতায় আর ১৫/১৬ দিন তারপরে জবাব দিতেই হবে -ড. কামাল

গতকাল শুক্রবার দলীয় কার্যালয়ে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট আয়োজিত সাংবাদিক সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন -সংগ্রাম

# মরলেও নির্বাচন থেকে সরব না -রব
# ব্যর্থতার দায় নিয়ে ইসির পদত্যাগ করা উচিত -নজরুল ইসলাম খান
# আমরা নির্বাচন পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে থাকবো -মান্না
স্টাফ রিপোর্টার : ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আর মাত্র ১৫/১৬ দিন ক্ষমতায় আছে মন্তব্য করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেছেন, এই সরকারকে বিদায় নিতেই হবে। যারা এই সরকারের অন্যায় আদেশ মানছেন এরপর তাদের এই জন্য জবাব দিতেই হবে। একইসাথে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে হামলা ঘটনা ‘কোনোভাবে মেনে নেয়া যায় না’ উল্লেখ করে অবিলম্বে তদন্ত চেয়েছেন গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন। পুলিশ বাহিনীকে সংবিধানের বাইরে কোনো অন্যায় আদেশ না মানারও পরামর্শ দেন তিনি। গতকাল সকালে মীরপুরে শহীদ বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের হামলার ঘটনার পর বিকালে এক জরুরী সাংবাদিক সম্মেলনে ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা এই দাবি জানান। তিনি বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবসের দিনে সেখানে এই ধরনের ঘটনা আমাদের প্রতি কী হয়েছে সেটা আমরা চিন্তা করি না। শহীদদের প্রতি তারা অবমননা করেছে। এটা মেনে নেয়া যায় না, এটা সারাদেশের কোটি কোটি মানুষ মেনে নিতে পারে না।
তিনি বলেন, আইজি সাহেব আমি আপনার কাছে লিখিত চিঠি পাঠাবো। আপনার সম্পর্কে আমার খুব ভালো ধারণা ছিলো যেন সেই ধারণা থাকে সেই কারণে আমি অনুরোধ করব, আপনি আমাদের কথাগুলোকে খুব গুরত্ব সহকারে দেখবেন। যে জিনিসগুলো আপনাদেরকে তথ্য দেয়া হবে আপনি বিশ্বস্ত লোককে দিয়ে তদন্ত করাবেন। আমরা এই তদন্তকে পুরোভাবে সাহায্য করবো যাতে আমাদের শহীদ বুদ্ধিজীবীদের সম্মানে আমরা এই কাজটি করব।
আহতদের সাংবাদিকদের দেখিয়ে ড. কামাল হোসেন বলেন, তাদের মেডিকেল সার্টিফিকেট আছে। রব সাহেবের (আহত) আঙ্গুলটা দেখছেন। আইজি সাহেব আমি কথা দিচ্ছি- আমরা সব রকমের সাহায্য করবো। আইনানুগ সাহায্য, তদন্ত করার সাহায্য করবো। আপনার পুলিশের মধ্যে যাদের বিশ্বস্ত মনে করেন তাদেরকে ডেকে একটু দায়িত্ব দিন, আমাদের সঙ্গে দিন।
ঘটনার বিবরণ দিয়ে ড. কামাল হোসেনে বলেন, ওখানে শহীদরা আছেন সেখানে আমরা গেছি শ্রদ্ধা জানাতে। এটাতে যাদের গায়ে লাগে ওরা কারা? ভাড়াটিয়া। পয়সা নিয়ে এসব তারা করেছে। এটা কোনো নীতির কাজ হতে পারে  না। এই কাজ কোনো সুস্থ দেশপ্রেমিক মানুষের কাজ হতে পারে না। তিনি বলেন, এ্ ঘটনায় শহীদদের আত্মা অবশ্যই কষ্ট পাচ্ছে। আমাদের একটা জায়গা যেখানে মানুষ আসে শ্রদ্ধা জানাতে ১৪ ডিসেম্বর। এটা কী ভুলে গেছে তারা(সরকার), না তারা জানেই না। যেসব ছোকড়া ওখানে এসব কাজ করেছে। আমি দেখেছি ছোকড়ারা এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছে, ইট পাটকেল মারছে, আহত করেছেন, গাড়ি ভাঙার চেষ্টা করেছে। এরা ছোকড়া, টোকাই। কারা এদের ভাড়া করেছে’ তাও জানতে চান তিনি।
নির্বাচনের প্রচারাভিযান শুরুর পর বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের গ্রেফতারের প্রসঙ্গ টেনে সংবিধান প্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, যেসব পুলিশ কার আদেশে যারা (প্রার্থীরা) আইনানুগভাবে তাদের দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে, কাজ করছেন তাদেরকে কেনো এসে তারা (পুলিশ) চ্যালেঞ্জ করে, বাধা দেয়, কেনো গ্রেপ্তার করে। এই অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট অ্যারেস্ট। আমি প্রত্যেকটা অ্যারেস্টের তথ্য চাই। দেশে এখনো সংবিধান আছে। যে সংবিধানে বঙ্গবন্ধুর স্বাক্ষর এক নম্বর। উনি লিখে দিয়ে গেছে এদেশের মানুষ আইনের আশ্রয় পাবে। পুলিশ আজকে যেটা করেছে এটা বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করেছে। বঙ্গবন্ধু যেটাকে বলেছে হবে- তোমরা সেটাকে ডিফাই করেছো। তোমরা বঙ্গবন্ধুর কথাকে অমান্য করবে, এই বিজয়ের মাসে অমান্য করবে?।
 বেআইনি আদেশ পুলিশের মান্য করা উচিত নয় বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, আমি পুলিশ একাডেমিতে বহু লেকচার দিয়েছি বেআইনি আদেশ মানা একদম নিষেধ। বেআইনি আাদেশ মানবে না- এটা পুলিশরা জেনে রাখো। যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে এরা চিরস্থায়ী কেউ নয়। ভুলে যেও না। তোমরা তো ৫০/৫৫ বছর বয়স পর্যন্ত কাজ করবে আশা করো। এটা মনে রেখে আজকে যে বা যাহারা আদেশ দেয় তোমাদের এটা সাংবিধানিক কর্তব্য সেই আদেশ আইনানুগ কিনা? যদি কোনো লোক আইন ভঙ্গ করছে না তাকে অ্যারেস্ট করা এটা সংবিধান ভঙ্গ করা। তোমাদের শুভাকাক্সক্ষী হিসেবে বলছি- তোমরা সংবিধান ভঙ্গ করার অপরাধ করিও না।
যারা বেআইনি আদেশ দিচ্ছে তাদের দেশের মানুষ চিহ্নিত করে আগামীতে বিচার হবে বলেও জানান ড. কামাল হোসেন। দৃঢ় কন্ঠে তিনি বলেন, সরকার ক্ষমতায় ১৫/১৬ দিন আছে। তাদেরকে  বলব, বেআইনি আদেশ দেয়া বন্ধ করুন, আপনারা আইন মেনে চলুন। সরকার আইনের ঊর্ধ্বেব না। জেনে রাখো এই দেশে কোনো সরকার আইনের ূর্ধ্বে না।
তিনি বলেন, এটা হলো স্বাধীনতার অর্থ। এতো লক্ষ শহীদ হয়েছেন, বুদ্ধিজীবীরা শহীদ হয়েছেন। তারা শহীদ হয়েছিলো যাতে আমরা মাথা উঁচু করে অধিকার নিয়ে বাঁচবো। এই স্বাধীন দেশে ৪৭ বছর পরে দেখতে হচ্ছে- লজ্জা পাওয়া উচিত যারা দেশ শাসন করছেন। লজ্জা পাও, লজ্জা পাও, লজ্জা পাও। লজ্জা পেয়ে মুখটা দেখাও না, মুখটা একটু ঢেকে এদিক ওদিকে থেকে ১০/১৫ দিন কাটিয়ে দাও। তোমাদের মুখ দেখব না যারা এসব অন্যায় কাজ করছে।  অবিলম্বে তা বন্ধ করো। ১৫/১৬ দিন আছো চেষ্টা করো ভালো থাকতে। তারপরে কিন্তু....।
গণমাধ্যমকে দেশের স্বার্থে জনগলের কাছে সঠিক তথ্য পৌঁছিয়ে দেয়ার অনুরোধ রেখে ড. কামাল হোসেন বলেন, আমার বিশ্বাস দেশের মানুয়ের প্রতি একশত ভাগ আস্থা আছে তারা সঠিক বিচার করবে, তারা সংবিধানকে সমুন্নত রাখবে, তারা আইনের শাসনকে দেশে ফিরিয়ে আনবে। আর যারা এসব অন্যায়-অনিয়ম-অসাংবিধানিক কাজ করছে তাদের থেকে আমাদেরকে মুক্ত করবে।
জেএসডির সভাপতি আসম আবদুর রব বলেন, ওরা ভেবেছে ভয় দেখিয়ে আমাদেরকে নির্বাচনের বাইরে রাখবে। সেজন্য আজকে এই হামলার ঘটনা ঘটিয়েছে। কতগুলো ছেলেকে আহত করেছে। এই হামলা পরিকল্পিত। আমরা নির্বাচন করতে চাই। সিলেটে আমাদের নেতা-কর্মীদের ওপর হামলা হয়েছে। আমাদের প্রার্থীরা প্রচারণায় নামতে পারছে না। আমাদের কর্মীদের এখনো নির্দেশ দিচ্ছি না, সকলকে শান্ত থাকতে হবে সাহসের সাথে মোকাবিলা করতে হবে। আগামী ৩০ ডিসেম্বর জনগনকে সাথে নিয়ে ব্যালট বিপ্লব করতে চাই, ব্যালটে যুদ্ধ করতে চাই, স্বৈরশাসনকে বিদায় করতে চাই।
প্রটোকল ব্যবহার করে প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নেওয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফ্ল্যাগ লাগিয়ে গোপালগঞ্জ গিয়ে নির্বাচনী প্রচারণা করবেন। আর আমাদেরকে প্রচারণা করতে দেয়া হবে। এসব প্রিু ফাইজলামি, এটা কী মগের মল্লুক। প্রধানমন্ত্রী যদি ফ্ল্যাগ ব্যবহার করতে পারেন, তাহলে ড. কামাল হোসেনকে প্রটোকল দিতে হবে। দেশবাসীর প্রতি আমাদের আহবান ধানের শীষকে জয়লাভ করে খালেদা জিয়ার মুক্তি তরান্বিত করুন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন,  আজকে বুদ্ধিজীবীদের শ্রদ্ধা জানাতে যাবো সেখানে আক্রমণ করা হবে এটা অবিশ্বাস্য। এই অবিশ্বাস্য কাজগুলো সরকার ও তার দলের লোকেরা কেনো করছে এটা সকলের বোধগম্য। কারণ তারা হারতে চায় না। এতো খুন-গুম, এতো দুর্নীতি-লুটপাট করেছে যে তারা ক্ষমতা ছাড়তে ভয় পায়। অথচ আমরা আশ্বস্ত করেছিলাম যে, আমরা প্রতিহিংসার রাজনীতি করবো না।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন একটা ঠুটো জগন্নাথের মতো হয়ে আছে। কিছুই করেন না সিইসি। তিনি মিন মিন করে বলেন আমরা বিব্রত। আরেক আপনারা স্বাধীন নিরপেক্ষ প্রতিষ্ঠান। আপনাদের বিব্রত হওয়ার কথা নয়, ক্ষুব্ধ হওয়ার কথা, ব্যবস্থা নেয়ার কথা। আপনারা কী মসজিদের ইমাম নাকী। আমি ইসিকে বলব, আজকের ঘটনাসহ গত কয়েকদিনের ঘটনার বিচার ব্যবস্থা নিন। না নিতে পারলে ব্যর্থতার দায়িত্ব মাথায় নিয়ে তাদের পদত্যাগ করা উচিত। এটাই তাদের জন্য সন্মানজনক হবে। মনে রাখতে হবে তারা প্রজাতন্ত্রের মানুষ সরকারের না।
নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, এটা খুবই সংগত দাবি প্রধানমন্ত্রী তার নির্বাচনী প্রচার শুরু করতে যাবেন সমস্ত প্রটোকল নিয়ে, এটা তিনি যেতে পারেন না।  প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে আমরা বলতে চাই,  প্রধানমন্ত্রীর প্রটোকল প্রত্যাহার করা হোক, মন্ত্রীদের সব প্রটোকল বন্ধ করা হোক, গ্রেপ্তার করা হোক। যদি মনে করেন, এরকম করে নির্বাচন পার হয়ে যেতে পারবেন- পারবেন না। আমরা নির্বাচন পর্যন্ত আছি ২৯ তারিখ পর্যন্ত মাটি কামড়ে পড়ে আছি। কিন্তু ৩০ তারিখে এই কামড় অন্যদিকে চলে যাবে। ৩০ তারিখে ব্যালেট বিপ্লব করবে।
সারাদেশে প্রার্থীদের ওপর হামলার পরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের বক্তব্যের নিন্দা জানিয়ে মান্না বলেন, নির্বাচন কমিশনের কাছে অনেক অভিযোগ করেছেন কোনো রকম প্রতিকার করেনি। গতকাল (বৃহস্পতিবার)  সিইসি এমন মন্তব্য করেছে যা কমিশন সরাসরি আমাদের বিরুদ্ধে ও সরকারের পকেটে চলে যাওয়ার মতো আচরণ করছেন।
জামান টাওয়ারে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের কার্যালয়ে এই জরুরী সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, বিএনপির আবদুল আউয়াল মিন্টু, জেএসডির আবদুল মালেক রতন, গণফোরামের সুব্রত চৌধুরী, মোস্তফা মহসিন মন্টু, রেজা কিবরিয়া, জগলুল হায়দার আফ্রিক, আওম শফিকউল্লাহ প্রমুখ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। পরে  কার্যালয়ে জাতীয়তাবাদী সম্মিলিত সাংস্কৃতিক ফ্রন্টের  এক আলোচনায় অংশ নেন ড. কামাল হোসেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ