ক্রীড়াঙ্গনে অবহেলা আর বঞ্চনার আরেক নাম মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স
খুলনার ক্রীড়াঙ্গনে অবহেলা আর বঞ্চনার আরেক নাম খুলনা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স। অযতœ, অবহেলা আর ব্যবহারের অভাবে নষ্ট হচ্ছে এই কমপ্লেক্সের সব যন্ত্রপাতি। জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ এটি নির্মাণের পর ব্যবহার হয়নি সেভাবে কখনও। কখনো কখনো শুধুমাত্র মাঠটি ব্যবহার হয়েছে, ব্যবহার হয়েছে হোস্টেলটি। আর ত্রুটির কারণে চার বছর আগে নির্মিত সুইমিংপুলটি ব্যবহার করা যায়নি একবারের জন্যও। তবে সম্প্রতি সুইমিংপুলের ফিল্টারেশন ব্যবস্থা মেরামত করা হয়েছে। কিছুদিন আগে মেরামত হয়েছে সুইমিংপুলের সাব স্টেশনটি। সুইমিংপুলটি সংস্কার করা হলেও মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের জিমনেসিয়ামের যন্ত্রপাতি পড়ে রয়েছে অব্যবহৃত অবস্থায়। প্রায় ২৬ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই অবকাঠামো এক প্রকার অকেজো হয়ে পড়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে জাতীয় ক্রীড়া পরিষদ থেকে খুলনা মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের উন্নয়নে ২৬ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে সুইমিং পুল, জিমনেসিয়াম নির্মাণ ও মাঠ সংস্কারের কাজ ছিল। ২০১৩ সালের মধ্যে এ কাজ সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু জিমনেসিয়াম ও সুইমিংপুল নির্মাণ সম্পন্ন হয় ২০১৪ সালের মাঝামাঝি সময়ে। এরপর গত চার বছরে একবারের জন্যও ক্রীড়াবিদরা ব্যবহার করতে পারেনি সুইমিংপুল কিংবা জিমনেসিয়াম। সুইমিংপুল নির্মাণের পর প্রথমবার পানি উত্তলোনের সময় নষ্ট হয়ে যায় এর বিদ্যুৎ সাবস্টেশন। খুলনার ক্রীড়া সংশ্লিষ্টরা বারবার বিভিন্ন দপ্তরে অভিযোগ দিয়েও কোন সুরহা করতে পারেননি এই অবকাঠামোর। জানা গেছে, কয়েক দফা অভিযোগের পর গত আগস্ট মাসে মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্স পরিদর্শনে যান খুলনা বিভাগীয় কমিশনার লোকমান হোসেন মিয়া। কমপ্লেক্সের সার্বিক অবস্থা দেখে তখন দারুণ ক্ষুব্ধ হন তিনি এবং সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে সুইমিংপুলসহ অন্যান্য অবকাঠামো সংস্কারের নির্দেশ দেন। এরপর জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের প্রকৌশলী পুনরায় সংস্কারের উদ্যোগ নেয়। এর মধ্যে বিদ্যুতের সাবস্টেশনটি পুনরায় সংস্কার করা হয়। কিন্তু সুইমিংপুলে পানি ফিল্টারেশনের ব্যবস্থা না থাকায় ব্যবহারের অনুপযোগী ছিল। এছাড়া সুইমিং পুলের বিভিন্ন স্থানে টাইলস খুলে যাওয়ায় সেখান থেকে ময়লা বের হচ্ছিল। এগুলোও সংস্কার শুরু করে তারা। সর্বশেষ জানা গেছে, ইতিমধ্যে পানি ফিল্টারেশন ব্যবস্থা মেরামত করা হয়েছে। ফলে সুইমিংপুলের ব্যবহার উপযোগী পানি উত্তোলন করা যাচ্ছে এখন। এদিকে একই রকম বেহাল অবস্থা জিমনেসিয়ামেরও। গত চার বছরে এখানে জিমনেসিয়ামের কোন যন্ত্রপাতি ব্যবহার করা হয়নি। প্রায় ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত এই জিমনেসিয়ামের যন্ত্রপাতি ব্যবহার না হওয়ায় তা নষ্ট হচ্ছে। জিমনেসিয়ামে উডেন ফ্লোর নির্মাণ করার কথা থাকলেও গত চার বছরে এই জিমনেসিয়ামে কোন ফ্লোর তৈরি হয়নি। তবে সম্প্রতি কোনমতে ঢালাই দিয়ে এই ফ্লোর তৈরি করা হয়েছে।
বেহাল অবস্থায় মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের মাঠটিও। মাঠের একপ্রান্ত কোনরকম সমান থাকলেও অন্যপ্রান্ত জঞ্জালে ভরপুর। অথচ এই মাঠ সংস্কারেও বড় ব্যয় করা হয়েছিল। মাঠের একপ্রান্তে পড়ে থাকতে দেখা গেল একটি ভারি রোলার। যেটি মাঠ সমান করার কাজে ব্যবহৃত হয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রায় ১০ বছর আগে ক্রয় করা এই রোলারটিও কখনও ব্যবহার করা হয়নি। রোলারটি এক স্থানে পড়ে থাকতে থাকতে মাটির সাথে দেবে গেছে। দামি এই রোলারটি এখন কার্যত নষ্ট। মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের অবকাঠামোর নিয়মিত খোঁজ রাখেন খুলনা জেলা ক্রীড়া কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামান। তিনি বলেন, মহিলা ক্রীড়া কমপ্লেক্সের এই দুর্দশা সত্যিই আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। এত বড় অবকাঠামো দিনে দিনে এভাবে নষ্ট হচ্ছে এটা ভাবতেও খারাপ লাগে। তবে বিভাগীয় কমিশনারের স্যারের উদ্যোগে কাজ আবার শুরু হয়েছে এটাই আশার কথা। খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক কাজী শামীম আহসান বলেন, আমরা বারবার বিভিন্ন দপ্তরে এটির সংস্কারের জন্য চিঠি দিয়েছি। মৌখিকভাবেও বিভিন্নভাবে অনুরোধ করেছি। কিন্তু কোন কিছুতেই কাজ হয়নি। এত বড় সরকারি অবকাঠামো ব্যবহার করতে না পারলে সেটি আমাদের জন্য দুঃখজনক। এ বিষয়ে কথা বলার জন্য জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের সংশ্লিষ্ট প্রকল্প প্রকৌশলী মো. আওলাদ হোসেনকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।