বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

“পৃথিবীর প্রধানতম পাঁচটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থে মুহাম্মদ (সা:)”

এডভোকেট আব্দুস সালাম প্রধান : ॥ পূর্বপ্রকাশিতের পর ॥
রাজা বললেন-ইরামের আধিপত্য কি চিরস্থায়ী হবে না অস্থায়ী?
সাতীহ বললো, তাদের আধিপত্য অস্থায়ী হবে।
রাজা বললেন-কার হাতে ক্ষমতার অবসান ঘটবে?
সাতীহ বললো, এক পুত: পবিত্র নবীর হাতে। তিনি উর্ধজগত থেকে ওহী লাভ করবেন।
রাজা বললেন, এ নবী কোন বংশোদ্ভূত?
সাতীহ বললো, তিনি নাদারের পুত্র মালেক, মালেকের পুত্র ফিহির, ফিহিরের পুত্র গালেবের বংশ থেকে উদ্ভুত হবেন। তার জাতির হাতে ক্ষমতা থাকবে বিশ্বজগতের বিলুপ্তি ঘটার মুহুর্ত পর্যন্ত।
রাজা বললেন, বিশ্বজগতের আবার শেষ আছে নাকি?
সে বললো, হ্যা, যেদিন পৃথিবীর প্রথম মানবগণ ও শেষ মানবগণ একত্রি হবে। যারা সৎকর্মশীল তারা সুখী হবে, আর যারা অসৎকর্মশীল তারা দুঃখ ভোগ করবে।
রাজা বললেন-তোমার ভবিষ্যদ্বাণী কি সত্য?
সে বললো-হ্যা, রাতের অন্ধকার ও উষার আলোর শপথ, সুবিন্যস্ত প্রভাতের শপথ, আমি যা বলেছি তা পুরোপুরি সত্য।
এরপর শেক এসে পৌছলো রাজার দরবারে। সাতীহকে রাজা যা যা বলেছিলেন শেককেও তাই বললেন। কিন্তু সাতীহ যা বলেছে তা তাকে জানতে দিলেন না-তারা উভয়ে একই ধরনের ভবিষ্যদ্বাণী করে, না ভিন্ন রকমের, তা দেখবার জন্য তিনি ব্যাপারটা গোপন করলেন।
শেক বললো-আপনি স্বপ্নে দেখেছেন, অন্ধকার থেকে একটি অগ্নিশিখা বেরিয়ে এলো। সেটা একটা পর্বত ও একটা বাগানের মাঝখানে পতিত হলো। অতঃপর সেখানকার সকল প্রাণীকে গ্রাস করলো।
রাজা বুঝতে পারলেন যে, উভয়ের বক্তব্য অভিন্ন। শুধু এতটুকু পার্থক্য যে, সাতীহ বলেছিল, টুকরোটা নিম্নভূমিতে নামলো। আর শেক বলেছে, একটি পর্বত ও একটি বাগানের মাঝখানে নামালো। অতঃপর তিনি শেককে বললেন, তুমি ঠিকই বলেছ। এবার বল এর তাবীর কি?
সে বললো, দুই পর্বতাকীর্ণ দেশের সমস্ত মানুষের শপথ করে বলছি, আপনার দেশে সুদানীরা আক্রমণ চালাবে এবং সব দুর্বল লোক তাদের অঙ্গুলী হেলনে চলতে বাধ্য হবে। তারা আবাইয়ান থেকে নাজরান পর্যন্ত সমগ্র ভূখন্ডের ওপর আধিপত্য বিস্তর করবে।
রাজা বললেন-এটা অত্যন্ত বেদনাদায়ক ও ক্রোধোদ্দীপক ব্যাপার। এ ঘটনা কবে ঘটবে? আমার জীবদ্দশাতেই, না আরো পরে?
সে বললো- আপনার পরে বেশ কিছুকাল অতিক্রান্ত হবার পর। এরপর একজন পরাক্রমশালী ব্যক্তি আপনাদেরকে উদ্ধার করবে এবং হানাদারদেরকে ভীষণভাবে অপমানিত ও লাঞ্ছিত করে বিতাড়িত করবে।
রাজা বললেন-এই পরাক্রমশালী ব্যক্তি কে?
সে বললো-একজন যুবক, যিনি নগণ্য বা নীচাশয় নন। যী ইয়াযানের বাড়ী থেকে তার অভ্যুদয় ঘটবে। তিনি হানাদারদের একজনকেও ইয়ামানে টিকতে দেবেন না।
রাজা বললেন-এই ব্যক্তির শাসন কি চিরস্থায়ী হবে না ক্ষণস্থায়ী।
শেখ বললো, একজন প্রেরিত রাসুলের আগমনে তার শাসনের অবসান ঘটবে-যিনি সত্য ও ন্যায় প্রতিষ্ঠা করবেন, ধার্মিক ও সজ্জনদের সমভিব্যাহারে আসবেন, তাঁর জাতির শাসন চলবে কিয়ামত পর্যন্ত।
রাজা বললেন-কিয়ামত কি?
সে বললো, যেদিন শাসকদের বিচার হবে, আকাশ থেকে আহবান আসবে, সে আহবান জীবিত ও মৃত সকলেই শুনতে পাবে। আর নির্দিষ্ট সময়ে সকল মানুষকে সমবেত করা হবে। সেদিন মিত্যাচারী লোকদের জন্য হবে সাফল্য ও কল্যাণ।
রাজা বললেন-তুমি যা বলেেেছা তা কি সত্য?
সে বললো-হ্যা, আকাশ ও পৃথিবী এবং তার মধ্যকার সকল সমতল ও অসমতল সব কিছুর রবের শপথ করে বলছি, আমি আপনার কাছে যে, ভবিষ্যদ্বাণী করলাম তা সঠিক ও সন্দেহাতীত।
রাবিয়া এই দুই ভবিষ্যদ্বক্তার কথায় বিশ্বাস স্থাপন করলেন এবং স্বীয় পরিবার পরিজনকে প্রয়োজনীয় পাথেয় দিয়ে ইরাক পাঠিয়ে দিলেন। তারপর পারস্যের তৎকালীন সম্রাট শাপুর ইবনে খুরযাদকে চিঠি লিখে পাঠালেন। শাপুর তাদেরকে হিরায় বসবাস করার ব্যবস্থা করে দিলেন। এই কিংবদন্তিতে মুহাম্মদ (দ:) এর আগমনের সুস্পষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী প্রকাশ পেয়েছে।
সীরাতে ইবনে হিশাম : বাংলা অনুবাদ : আকরাম ফারুক। প্রকাশনায় ইসলামীক সেন্টার-ঢাকা এবং পৃষ্ঠা-১৯,২০,২১।
মুহাম্মদ (দ:) এর পিতা-মাতার বিবাহকালীন একটি ঘটনা : ইবন ইসহাক বলেন-ঐতহিাসিকদের মতে মুহাম্মদ (দ:) এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব পুত্র আব্দুল্লাহর হাত ধরে বনু আসাদ ইবনে আব্দুল উযয়া ইবন কুসাই এর এক মহিলার নিকট গমন করেন। মহিলাটি হলো ওয়ারাকা ইবনে নওফলের বোন। তার নাম ছিল উম্মে কিতাল। সে সময়ে সে কাবার নিকট অবস্থান করছিল। আব্দুল্লাহকে দেখে সে বলল-আব্দুল্লাহ তুমি যাচ্ছ কোথায়? আব্দুল্লাহ বললেন-আমি আমার আব্বার সঙ্গে যাচ্ছি। মহিলাটি বলল- যদি তুমি এই মুহুর্তে আমার সাথে মিলিত হতে সম্মত হও তা হলে আমি বদলে যে সংখ্যক উট জবা করা হয়েছে সে সংখ্যক উট তোমাকে দেব। জবাবে আব্দুল্লাহ বললেন, আমি আমার আব্বার সঙ্গে আছি। তাকে ছেড়ে অন্যত্র যাওয়া বা তার মতের বাইরে কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। আব্দুল্লাহকে নিয়ে আব্দুল মুত্তালিব ওহব ইবন আবদে মানাফ এর নিকট যান। ওহব ইবন আবদে মানাফ তখন বয়স ও মর্যাদায় বনু যুহরার সর্দার ছিলেন। আলাপ আলোচনার পর তার কন্যা আমিনার সাথে আব্দুল্লাহর বিবাহ হয়ে যায়। আমিনাও ছিলেন তার সম্প্রদায়ের মহিলাদের নেত্রী। ঐতিহাসিকদের মতে বাড়িতে নিয়ে আসার পর আমিনার আব্দুল্লাহর বাসর হয়। তাতে মুহম্মদ (দ:) তার গর্ভে আসেন। অতঃপর আব্দুল্লাহ পুনরায় বনু আসাদের উল্লেখিত মহিলার নিকট যান। কিন্তু মহিলা তাকে এবার কিছুই বলল না। আব্দুল্লাহ বললেন কি ব্যাপার। আজ যে কোন প্রস্তাবেই করছ না। যেমনটি গতকাল করেছিলে? মহিলাটি বলল-গতকাল তোমার সাথে যে নুর ছিল তা এখন আর তোমার সঙ্গে নেই। তোমাকে এখন আর আমার প্রয়োজন নেই। উল্লেখ্য যে, এই মহিলা তার ভাই ওয়ারাকা ইবনে নওফলের নিকট শুনেছিল যে, ঐ সময়ে একজন নবীর আগমন হবে। তাই সে আকাক্সকাকরে ছিল যে, সেই নবী তারই গর্ভে জন্মলাভ করুক।
আল বিদায়া ওয়ান নিয়াহা এর বাংলা অনুবাদ: ইসলামী ফাউন্ডেশন, ঢাকা, বাংলাদেশ-২য় খন্ড পৃষ্ঠা নং-৪৬৩।
পাদ্রী বাহীরার ঘটনা : মুহাম্মদ (দ:) আবু তালিব ১২ বছর বয়সী মুহাম্মদ (দ:) কে নিয়ে এক কাফিলার সাথে সিরিয়ায় রওয়ানা হলেন বাণিজ্যোপলক্ষে। যাত্রার প্রাক্কালে বালক মুহাম্মদ (দ:) তার সাথে যাওয়ার আবদার করলেন। হে বিগলিত চাচা তার আবদার উপক্ষো করতে পারলেন না। তিনি বললেন-আমি তাকে সাথে নিয়ে যাবো, তাঁকে রেখে আমি কক্ষণও কোথাও যাবো না।
আবু তালিব তাকে সাথে নিয়ে সফরে বেরুলেন। কাফিলা বুসরা এলাকায় পৌছলে যাত্রা বিরতি করলো। সেখানে ছিলেন বাহীরা নামে এক খৃষ্টান পাদ্রী তিনি এক গীর্জায় তিনি থাকতেন। ঈসায়ী ধর্ম সম্পর্কে তিনি ছিলেন খুবই পারদর্শী। দীর্ঘকাল ব্যাপী ঐ গীর্জায় একখানা আসমানী কিতাব রক্ষিত ছিলো। পুরুষানুক্রমে ঐ জ্ঞানের উত্তরাধিকার চলে আসছিলো। বাহীরার কাছ দিয়ে ইতিপূর্বে তারা প্রায়ই আসা যাওয়া করতেন। কিন্তু তিনি কারো সামনে বেরুতেন না বা কারো সাথে কথাবার্তা বলতেন না। কিন্তু এই বছর যখন কুরাইশদের কাফিলা আবু তালিব ও বালক মুহাম্মদ (দ:) সহ ঐ স্থানে বাহীরার গীর্জার পাশে যাত্রাবিরতি করলো, তখন বাহীরা তাদের জন্য প্রচুর খাদ্যের ব্যবস্থা করলেন।
কথিত আছে বাহীরা তার গীর্জায় বসেই একটা আশ্চর্য ব্যাপার দেখতে পান। তিনি কাফিলার এগিয়ে আসার সময় দেখেন যে, সমগ্র কাফিলার মধ্যে একমাত্র বালক মুহাম্মদ (দ:), কে আকাশ থেকে একখন্ড মেঘ ছায়া দিয়ে চলেছে। অতঃপর তারা একটা গাছের ছায়ায় যাত্রা বিরতি করলে মেঘ এবং সেই গাছের ডালপালা মুহাম্মদ (দ:) এর ঝুঁকে ছায়া দিতে লাগলো। এ দৃশ্য দেখে বাহীরা গীর্জা থেকে বেরিয়ৈ আসলেন এবং লোক পাঠিয়ে কাফিলার লোকদেরকে বলে পাঠালেন, হে কুরাইশ বণিকগণ, আমি আপনাদের জন্য খাওয়ার বন্দোবস্ত করেছি। আপনাদের মধ্যে ছোটবড় দাস বা মনিব সবাইকে এসে খাদ্য গ্রহণ করতে অনুরোধ করছি। কুরাইশদের মধ্য থেকে এক ব্যক্তি বললেন, হে বাহীরা আজকে আপনি নতুন মহিমায় মন্ডিত হয়েছেন। ইতিপূর্বে আমরা বহুবার আপনার নিকট দিয়ে যাতায়াত করেছি। কিন্তু কখনো আপনি এরূপ আতিথেয়তা দেখাননি। আজকে আপনার এরূপ করার কারণ কি? বাহীরা বললেন, সে কথা ঠিকই। আগে আমি কখনো এরূপ করিনি। তবে আজ আপনারা আমার অতিথি। তাই মনের ইচ্ছা আপনাদের যতœ করি। আপনাদের জন্য খাবার তৈরী করি এবং আপনারা সকলেই খাবার গ্রহণ করুন।
অতঃপর সকলেই খেতে গেলেন। কিন্তু অল্প বয়স্ক হবার কারণে মুহাম্মদ (দ:) কাফিলার বহরের সাথে গাছের ছায়ায় বসে রইলেন। খাওয়ার জন্য সমবেত কুরাইশী বণিকেদর সবাইকে ভালভাবে পরখ করে বাহীরা সেই পরিচিত হাবভাব ও চালচলনের কোন লক্ষণ দেখতে পেলেন না, যা বালক মুহাম্মদ (দ:) এর মধ্যে তিনি দেখেছিলেন। তাই তিনি বললেন, হে কুরাইশী অতিথিবৃন্দ, আপনাদের কেউই যেন আমার খাবার গ্রহণ থেকে বঞ্চিত না থাকেন। তারা বললেন, হে বাহীরা, যারা এখানে আসার মত তারা সবাই এসেছেন। শুধুমাত্র একটি বালক কাফিলার বহরে রয়েছে। সে কাফিলার মধ্যে কনিষ্ঠতম। বাহীরা বললেন-না, তাকে বাদ রাখবেন না। তাকেও ডাকুন। সেও আপনাদের সাথে খাবার গ্রহণ করুক। জনৈক কুরাইশী বললো, লাত ও উযযার শপথ, আব্দুল্লাহ ইবনে আব্দুল মুত্তালিবের ছেলে আমাদের সাথে থাকবে অথচ আমাদের খাবার গ্রহণ করবে না এটা হতেই পারে না। এটা আমাদের জন্য নিন্দনীয় ব্যাপার। একথা বলে সে উঠে গিয়ে বালক মুহাম্মদ (দ:) কোলে করে নিয়ে এলো এবং সবার সাথে খাবারের বৈঠকে বসিয়ে দিলো। এই সময় বাহীরা তার সমগ্র অবয়ব গভীরভাবে দেখতে লাগলেন এবং দেহের বিশিষ্ট নিদর্শনগুলো পর্যবেক্ষণ করতে লাগলেন। তার বিবরণ তিনি পূর্ববর্তী আসমানী কিতাবে পেয়েছেন। সমাগত অতিথিদের সকলের খাওয়া শেষ হলে এবং তারা এক এক করে সবাই বেরিয়ে গেলে বাহীরা মুহাম্মদ (দ:) এর নিকট এসে বললেন, হে বৎস, আমি তোমাকে লাত ও উযযার দোহাই দিয়ে অনুরোধ করছি, আমি যা জিজ্ঞেস করবো তুমি তার জবাব দেবে। বাহীরা লাত ও উযযার দোহাই দিলেন এই জন্য যে, তিনি কুরাইশদেরকে পরস্পর কথাবর্তা বলার সময় ঐ দুই মুর্তির শপথ করতে শুনেছেন। মুহাম্মদ (দ:) বললেন-আমাকে লাত উযযার দোহাই দিয়ে কিছু জিজ্ঞেস করবেন না। আল্লাহর শপথ, আমি ঐ দুই দেবতাকে সর্বাধিক ঘৃণা করি। বাহীরা বললেন-আচ্ছা, তবে আল্লাহর দোহাই দিয়ে বলছি, যা জিজ্ঞেস করবো তার জবাব দেবে। মুহাম্মদ (দ:) বললেন- বেশ কিকি জানতে চান বলুন। অতঃপর বাহীরা তাকে নানা কথা জিজ্ঞেস করতে লাগলেন। তার ঘুমন্ত অবস্থার কথা, তার দেহের গঠন প্রকৃতি ও অন্যান্য অবস্থার কথা। মুহাম্মদ (দ:) তার সব প্রশ্নের যা জবাব দিলেন, তা বাহীরার জানা তথ্যের সাথে হুবহু মিলে গেল। তাপর তিনি তার পিঠ দেখলেন। পিঠে দুই স্কন্ধের মধ্যবর্তী স্থানে নবুওয়াতের মোহর অংকিত দেখতে পেলেন। মোহর অবিকল সেই জায়গায় দেখতে পেলেন যেখানে বাহীরার পড়া আসমানী কিতাবের বর্ণনা অনুসারে থাকার কথা ছিল। এসব করার পরে বাহীরা আবু তালিবকে জিজ্ঞেস করলেন, বালকটি আপনার কে? তিনি বললেন, আমার ছেলে। বাহীরা বললেন সে আপনার ছেলে নয়। এই ছেলের পিতা জীবিত থাকতে পারে না। আবু তালিব বললেন, ভ্রাতুষ্পুত্র। বাহীরা বললেন, ওর পিতার কি হয়েছিল? আবু তালিব বললেন, এই ছেলে মায়ের পেটে থাকতেই তার পিতা মারা গেছে। বাহীরা বললেন, ঠিক, এ রকম হওয়ার কথা। আপনার ভ্রাতুস্পুত্রকে নিয়ে গৃহে ফিরে যান। খবরদার, ইয়াহুদীদের থেকে ওকে সাবধানে রাখবেন। আল্লাহর কসম, তারা যদি এই বালককে দেখতে পায় এবং আমি তার যে নির্দশন দেখে চিনেছি তা যদি চিনতে পারে তাহলে তারা ওর ক্ষতি সাধনের চেষ্টা করবে। কেননা আপনার এ ভ্রাতুষ্পুত্র অচিরেই এক মহামানবক হিসাবে আবির্ভূত হবেন। অতঃপর তাকে নিয়ে তিনি তাড়াতাড়ি স্বদেশে ফিরে গেলেন।
পাদ্রী বাহীরার বক্তব্যে মুহাম্মদ (দ:) এর আগমনের বিষয়টি সুস্পষ্টভাবে তাওরাত যাবুর ও ইঞ্জিলে বিদ্যমান ছিল তা প্রমাণিত হয়। কিন্তু মুহাম্মদ (দ:) এর পৃথিবীতে আগমনের পর বিভিন্ন বাইবেল থেকে মুহাম্মদ (দ:) এর নাম ও অন্যান্য দৈহিক গঠনের বর্ণনা ইহুদী খৃষ্টান ধর্মযাজকরা বাইবেল থেকে মিটিয়ে দিয়েছেন এবং তাকে শেষ নবী হিসাবে মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।
আর একটি কিংবদন্তী : মুহাম্মদ (দ:) এর জন্মের পূর্বে আরব জাহানে মাত্র তিনজনের লোকের পিতা তাদের সন্তানের নাম মুহাম্মদ রেখেছিল ১) কবি ফারাজ দাকের দাদা মুহাম্মদ বিন সুফিয়ান বিন মুজাশি। ২) মুহাম্মদ বিন ওয়াইহ ইবনে আলজালাহ ৩) মুহাম্মদ ইবনে হিসবান ইবনে রাবিয়া। এতিন জনের প্রত্যেকের পিতা জানতে পেরেছিলেন যে, আল্লাহর শেষ রাসুলের আবির্ভাবের সময় ঘনিয়ে এসেছে এবং তিনি হেজাজে জন্মগ্রহণ করবেন। লোক মুখে তারা একথা শুনে তাদের প্রত্যেকের আকাংখা জন্মেছিল যে, তিনি যেন তার সন্তান হন। একবার তারা আসমানী কিতাবের জ্ঞান রাখে এমন একজন বাদশার কাছে যান। তিনি তাদেরকে জানান যে, মুহাম্মদ নামের শেষ নবীর আবির্ভাব ঘটতে যাচ্ছে। এই সময় তারা নিজ নিজ স্ত্রীদের গর্ভবতী দেখে এসেছিলেন ফলে তারা তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন যে, তাদের সন্তানের নাম মুহাম্মদ রাখবেন। সেই সিন্ধান্ত অনুসারে তারা তাদের সন্তানের নাম মুহাম্মদ রেখেছিলেন। (দেখুন সরীতে ইবনে হিসাম বাংলা অনুবাদের-টিকা-নম্বর ১৪ পৃষ্ঠা নং-৩৯,৪০ প্রকাশক ইসলামীক সেন্টার। )
শেষ কথা : আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের লাখ কোটি শুকরিয়া। প্রায় চার পাঁচ মাসের পরিশ্রমে আমাদের প্রিয়নবী ও দুনিয়া আখিরাতের মানবজাতীর নেতা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব সন্তান মুহাম্মদ (দ:) এর আগমন বিষয়ে কুরআন পূর্ববর্তী প্রাচীন পাঁচটি ধর্মের ধর্মগ্রন্থে উল্লেখিত ভবিষ্যদ্বাণীসহ তাঁর জন্মের প্রাক্কালে বিভিন্ন কিংবদন্তী ও জনশ্রুতি তুলে ধরা সম্ভব হলো। মুহাম্মদ (দ:) কে যারা শেষ নবী মানে না তারা মুসলমান হবার দাবী করতে পারে না। পৃথিবীতে একজন মুসলমানকে অবশ্যই মুহাম্মদকে (দ:) তাঁর রাজনৈতিক, সামাজিক, আধ্যাত্মিক নেতা হিসাবে গ্রহণ করতে হবে এবং তাকে বিচার দিবসে মানবজাতির পক্ষে সুপারিশকারী হিসাবে মিনে নিতে হবে। আমরা এমন একজন মহান রসুলের উম্মত হওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করতে পেরেছি সে জন্য পুনরায় আল্লাহর দরবারে লাখো-কোটি শুকরিয়া। সেইসাথে দরুদ এবং সালাম আমাদের প্রিয় নবীর প্রতি, সাল্লালাহু আলাহি ওয়াসাল্লাম। আমিন। (সমাপ্ত)
  লেখক : এডভোকেট জজ কোর্ট, রংপুর। এম.এম (ডাবল) বি.এস এস (সম্মান), এম.এম. এস রাষ্ট্র বিজ্ঞান, এল.এল.বি (ঢা: বি:)।
E-Mail : [email protected]

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ