ধানের জেলা দিনাজপুরে হঠাৎ অস্থির চালের বাজার
সংগ্রাম ডেস্ক : শস্যভান্ডার খ্যাত দিনাজপুরে চালের বাজার উত্তপ্ত হতে শুরু করেছে। আমনের ভরা মওসুম চললেও গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি বস্তায় (৫০ কেজি) দাম বেড়েছে ১শ’ থেকে ২শ’ টাকা পর্যন্ত, যা কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা। হঠাৎ চালের বাজারের এমন অস্থিরতায় বিপাকে পড়েছেন ক্রেতারা। চালের পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন। এতে তাদের কিছু করার নেই। তবে মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে, যাতে করে ধানের দাম বেড়ে গেছে। আর এর প্রভাব পড়েছে চালের ওপর। বাংলাট্রিবিউন
দিনাজপুরে চালের বড় পাইকারি বাজার বাহাদুরবাজার (এনএ মার্কেট)। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, গত সপ্তাহে ২৬ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া গুটি স্বর্ণ এখন বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা দরে। বিআর-উনত্রিশ জাতের চাল ৩৩ টাকার স্থলে ৩৭ টাকা দরে, সুমন স্বর্ণ ২৮ টাকা কেজির স্থলে ৩১ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর সবচেয়ে চাহিদাসম্পন্ন বিআর আঠাশ জাতের চাল ৩৫ টাকার স্থলে ৩৭ টাকা ও মিনিকেট জাতের চাল ৪৬ টাকার স্থলে ৪৯ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
দিনাজপুরে বাড়ছে চালের দাম
চালের হঠাৎ এই দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন সাধারণ ক্রেতারা। আমনের এই ভরা মওসুমে চালের দাম বৃদ্ধি পাওয়াকে অস্বাভাবিকভাবেই দেখছেন তারা। দিনমজুর ইয়াসিন আলী বলেন, ‘প্রতিদিন দিনমজুরি করে যা আয় হয় তা দিয়ে সংসার পরিচালনা করতে হয়। দিনমজুরির আয় না বাড়লেও গত কয়েকদিন ধরেই চালের দাম বাড়ছে। অন্যান্য জিনিসপত্রের দাম বাড়লে তেমন ক্ষতি নেই, কিন্তু চালের দাম বাড়লেই আমাদের বিপাকে পড়তে হয়। কারণ গরীবের জন্য ভাত ছাড়া যে চলে না।’
চাল ক্রেতা মামুনুর রশিদ বলেন, ‘নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি চালের দামও বৃদ্ধি পাচ্ছে। কিন্তু আমনের এখন ভরা মৌসুম। এই সময়ে চালের দাম বাড়াটা স্বাভাবিক না। কিন্তু এতে করে ক্রেতাদের কিছু করার নেই।’ চালের বাজার নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকারি মনিটরিংয়ের দাবি জানান তিনি।
চাল ক্রেতা বিলকিস বলেন, ‘এতদিন চালের দাম ঠিক ছিল। কিন্তু এখন চালের দাম বাড়ছে। অন্ততপক্ষে মোটা চালের দাম যেন না বাড়ে আমরা সেটাই চাই।’
এদিকে চালের বাজার বৃদ্ধিতে পাইকারী ব্যবসায়ীদের কোনও হাত নেই, বরং মিল মালিকরা চালের দাম বাড়াচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন পাইকারি ও আড়ৎদাররা। পাশাপাশি মিল মালিকরা চালের সরবরাহও কমিয়ে দিয়েছেন বলে দাবি করেছেন পাইকারি ব্যবসায়ীরা।
চালের পাইকারি ব্যবসায়ী গোলাম রব্বানী বলেন, ‘মিল মালিকরা চালের দাম বাড়ানোয় আমাদের বেশি দামে চাল কিনতে হচ্ছে। যার জন্য আমাদের বেশি দামে চাল বিক্রি করতে হচ্ছে। একইসঙ্গে চালের সরবরাহও কমিয়ে দেওয়া হয়েছে। চালের দাম বৃদ্ধিতে পাইকারি ব্যবসায়ীদের কোনও হাত নেই।’
চাল ব্যবসায়ী বিশ্বজিৎ কুন্ডু বলেন, ‘ক্রেতাসহ অনেকেই মনে করছেন চালের ব্যবসায়ীরা দাম বাড়িয়েছেন। কিন্তু এটা ঠিক না, চালের দাম কমানো ও বাড়ানোর সঙ্গে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জড়িত নন। মিল মালিকরা ধানের সংকট দেখিয়ে চালের দাম বাড়িয়েছে।’
মিল মালিকরা বলছেন, বাজারে সবসময়ই বিআর আঠাশ, উনত্রিশ ও মিনিকেট চালের চাহিদা থাকে। এসব ধান আমন মওসুমের না। তাই আমনের ভরা মওসুম চললেও এসব প্রজাতির ধানের জোগান নেই। তাই চালের দাম বেড়েছে। তবে চালের দাম বৃদ্ধি নয়, এটি স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে দাবি করে ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতদিন চালের দাম কম ছিল।
মিল ব্যবসায়ী গুলশান আলী বাবু দাবি করেন, ‘বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। বেশি দাম দিয়েও ধান পাওয়া যাচ্ছে না। যেসব ধানের চাহিদা রয়েছে সেসব বোরো মওসুমের ধান। ধানের এই সংকটের কারণে চালের দাম বেড়েছে।’
দিনাজপুর জেলা চালকল মালিক সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজা হুমায়ুন ফারুক চৌধুরী শামীম বলেন, ‘চালের দাম কেজিতে ২/৩ টাকা বেড়েছে। তবে এটি বাড়া নয়, বরং স্বাভাবিক পর্যায়ে এসেছে। এতদিন চালের দাম কম ছিল, যা ছিল অস্বাভাবিক। এতে করে অনেক মিল মালিককেই লোকসান গুনতে হয়েছে।’ এখন চালের যে বাজার তা বোরো মওসুমের চেয়েও কম আছে দাবি করে তিনি বলেন, ‘সরকার মোটা চাল কিনেছে ৩৬ টাকা কেজি দরে। সেই হিসেবে মোটা চালের বাজার এখনও কম। তাছাড়া ধানের যে চাহিদা তার চেয়ে জোগান কম। এতে করে কৃষকরাও কিছুটা লাভবান হবে।’