শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায়

স্টাফ রিপোর্টার : রাজনৈতিক বিবেচনায় আরও তিনটি ব্যাংক অনুমোদনের অপেক্ষায়। সর্বশেষ অনুমোদন পাওয়া ৯টি ব্যাংকের অবস্থাই নাজুক। তারা ধারদেনা করে ব্যাংকিং কার্যক্রম চালাবে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের অনুমোদনের প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
গতকাল মঙ্গলবার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় এই ব্যাংকটির চূড়ান্ত অনুমোদন হতে যাচ্ছে। এর পাশাপাশি এদিন পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংক নামে আরও দুটি ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া হতে পারে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্রে এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।
এখন পর্যন্ত লাইসেন্স পাওয়া ৫৮টি বেসরকারি ব্যাংকের মধ্যে ৫৭টি কার্যক্রম চালাচ্ছে। সর্বশেষ গত অক্টোবরে চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। এটি এখনও কার্যক্রম শুরু করেনি।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, বেঙ্গল ব্যাংকের ব্যাপারে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড আগেই প্রাথমিক অনুমোদন দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবারের বোর্ড সভায় যদি বিষয়টি ওঠে, সেক্ষেত্রে বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংক চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়ে যেতে পারে। আবার পিপলস ব্যাংক ও সিটিজেন ব্যাংকের ক্ষেত্রে আগের বোর্ড সভার দেওয়া কিছু শর্ত পালন করে থাকলে এই দুটি ব্যাংকও অনুমোদন পেতে পারে।
এর আগে গত ১১ ডিসেম্বর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বোর্ড সভায় বেঙ্গল কমার্শিয়াল ব্যাংকের অনুমোদনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়। নতুন এই ব্যাংকটির অনুমোদনের ব্যাপারে ওই দিন বোর্ডের সব সদস্যই রাজি হন। তবে ব্যাংকটির লাইসেন্স পেতে মঙ্গলবারের বোর্ড সভার কাছ থেকে ‘লেটার অব ইনটেন্ট’ নিতে হবে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্বনর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এই বোর্ড সভা হওয়ার কথা।
গত অক্টোবরে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সর্বশেষ বোর্ড সভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পায় পুলিশ সদস্যদের মালিকানায় ‘কমিউনিটি ব্যাংক অব বাংলাদেশ’। ওই সভায় এজেন্ডাভুক্ত তিন ব্যাংকের কিছু কাগজপত্রে ত্রুটি থাকায় অনুমোদনের জন্য শর্ত জুড়ে দেওয়া হয়। শর্তগুলো পূরণ হওয়ায় বেঙ্গল ব্যাংককে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলছেন, কিছুদিনের মধ্যে নতুন এই ব্যাংকগুলো কার্যক্রম শুরু করতে পারবে।
তবে নতুন কোনও ব্যাংকের অনুমতি দেওয়া ঠিক হবে না বলে মনে করেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গর্বনর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। তিনি বলেন, আগের ৯টি ব্যাংক নিয়েই প্রশ্ন আছে। ওই ব্যাংকগুলোর মধ্যে তিনটির অবস্থা খুবই খারাপ। ফারমার্স ব্যাংক তো গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। এমন পরিস্থিতিতে নতুন করে ব্যাংকের অনুমোদন দেওয়া ঠিক হবে না।
বেঙ্গল ব্যাংকের প্রধান উদ্যোক্তা বেঙ্গল গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান মো. জসিম উদ্দিন। দেশে তাদের প্লাস্টিক শিল্পসহ বিভিন্ন ব্যবসা রয়েছে। তিনি আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য মোরশেদ আলমের ভাই। দ্য সিটিজেন ব্যাংকের মালিক আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের মা জাহানারা হক। পিপলস ব্যাংকের উদ্যোক্তা চট্টগ্রামের স্দ্বীপের বাসিন্দা যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা এম এ কাশেম।
 দেশে বর্তমানে ৫৭টি বাণিজ্যিক ব্যাংক কার্যক্রম চালাচ্ছে। নতুন চারটি যুক্ত হলে এই সংখ্যা দাঁড়াবে ৬১টিতে। উল্লেখ্য, নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স বাংলাদেশ ব্যাংক অর্ডার ও ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার পুরোপুরি এখতিয়ার বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পরপই নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে উদ্যোগ নেওয়া হয়। শুরুর দিকে বাংলাদেশ ব্যাংকের আপত্তি থাকলেও রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে তারা পিছু হটে। পরে ফারমার্স ব্যাংকসহ নতুন ৯টি ব্যাংকের লাইসেন্স দেওয়ার ব্যবস্থা করে সরকার। লাইসেন্স পাওয়া আগের এই ব্যাংকগুলো পুরোপুরি কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণে থাকেনি। নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলতে গিয়ে দুটি ব্যাংক আর্থিক অনিয়ম ও ঋণ কেলেঙ্কারিতে ডুবতে বসেছে। এরই মধ্যে ফারমার্স ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদ থেকে সরে যেতে হয়েছে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীরকে। এরপরও অবশ্য বর্ডার গার্ড বাংলাদেশকে (বিজিবি) ‘সীমান্ত ব্যাংক’-এর লাইসেন্স দেওয়া হয়।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ