বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাছাইপর্ব খেলতে হবে বাংলাদেশকে

মাহাথির মোহাম্মদ কৌশিক : টেস্ট স্ট্যাটাস প্রাপ্ত দেশ হয়েও এখন বাংলাদেশকে বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে অংশ নিতে হবে। আগামী ২০২০ সালের টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য আবারো বাছাইপর্বের কঠিন লড়াইয়ে নামতে হবে। বলাবহুল্য এই লড়াইয়ে বাংলাদেশ সঙ্গী হিসেবে পাচ্ছে আরেক টেস্ট খেলুড়ে দেশ ও সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলংকাকে। বিপিএলের পর সামনের মাসেই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে লড়াইয়ে নামকে লাল সবুজ প্রতিনিধিরা। এদিকে বাংরাদেশের প্রতিপক্ষ কিউইরা ঘরের মাঠে টানা চার সিরিজ জেতার নতুন রেকর্ড করেছে। ঘরের মাঠ, পরের মাঠ মিলিয়ে গত সাত সিরিজের ছয়টাতেই জিতেছে তারা। ধারাবাহিক সাফল্যের প্রতিফলন টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়েও। লংকানদের পর নিউজিল্যান্ডের পরের টেস্ট ফেব্রুয়ারিতে, বাংলাদেশের বিপক্ষে। টানা চার টেস্ট সিরিজ জেতার পুরস্কার র‌্যাঙ্কিংয়েও পেল নিউজিল্যান্ড। কেন উইলিয়ামসনের দল দক্ষিণ আফ্রিকাকে টপকে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে তৃতীয় স্থানে উঠে এসেছে। সর্বশেষ প্রকাশিত ২০১৮ সালের র‌্যাঙ্কিংয়ে দক্ষিণ আফ্রিকানদের চেয়ে ১ রেটিং পয়েন্টে এগিয়ে কিউইরা। শ্রীলঙ্কাকে ১-০ ব্যবধানে হারানোর পর ১০৭ রেটিং পয়েন্ট হয়েছে নিউজিল্যান্ডের। দক্ষিণ আফ্রিকা অবশ্য পাকিস্তান সিরিজ শেষেই আবার পেছনে ফেলতে পারে নিউজিল্যান্ডকে। সিরিজে ১-০-তে এগিয়ে থাকা দলটি উঠে যেতে পারে দ্বিতীয় স্থানেও। বছর শেষের র‌্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশ আছে অষ্টম স্থানে। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারত (১১৬) সবার ওপরে, ১০৮ পয়েন্ট নিয়ে দুইয়ে ইংল্যান্ড। ব্যাটসম্যানদের টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে ৩ পয়েন্ট হারালেও শীর্ষস্থান ধরে রেখেছেন ভারতের অধিনায়ক বিরাট কোহলি। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কিউই অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনের চেয়ে ৩৪ পয়েন্ট এগিয়ে কোহলি। সেঞ্চুরিয়ান টেস্টে ৬ উইকেট নেওয়া কাগিসো রাবাদাই ধরে রেখেছেন বোলিংয়ের শীর্ষস্থান। ইংল্যান্ডের জেমস অ্যান্ডারসনের চেয়ে মাত্র ৬ পয়েন্ট এগিয়ে প্রোটিয়া ফাস্ট বোলার। পাঁচ ধাপ এগিয়ে তিনে উঠেছেন মেলবোর্ন টেস্টে ৯ উইকেট নেওয়া অস্ট্রেলীয় ফাস্ট বোলার প্যাট কামিন্স। কামিন্সের মতো ক্যারিয়ার-সেরা অবস্থানে উঠেছেন ভারতের জাশপ্রীত বুমরা। ম্যাচে ৯ উইকেট নেওয়া বুমরা ১২ ধাপ এগিয়ে উঠেছেন ১৬ নম্বরে। বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের মধ্যে ব্যাটিংয়ে সবার ওপরে সাকিব আল হাসান (২৩ তম)। বোলিংয়ে সাকিবের (২০ তম) চেয়ে এগিয়ে শুধু মেহেদী হাসান মিরাজ (১৭ তম)।
অলরাউন্ডার র‌্যাঙ্কিংয়ে সাকিবই ধরে রেখেছেন এক নম্বর জায়গা। অর্থাৎ এসব র‌্যাংকিং থেকে এখন সবচেয়ে বড় লক্ষ্য আগামী বছরের বিশ্বকাপে কোয়ালিফাই করা। এবার সুপার টেন নয়, ২০২০ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে থাকবে ‘সুপার ১২’, আরেক অর্থে দ্বিতীয় রাউন্ড। এই সেরা ১২ পর্বেও সরাসরি খেলতে পারছে না বাংলাদেশ। সরাসরি সুপার ১২ খেলতে হলে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টোয়েন্টি-২০ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে থাকতে হতো সেরা আটে। দেশের মাঠে ২০১৪ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে বাংলাদেশ সরাসরি ‘সুপার টেন’ বা সেরা দশে খেলতে পারেনি। ভারতে অনুষ্ঠিত ২০১৬ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশ সরাসরি সেরা দশে খেলতে পারেনি। দুটিতেই বাংলাদেশকে সুপার টেনে পা রাখতে হয়েছে প্রাথমিক পর্বের বৈতরণি পেরিয়ে। আগামী টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপেও বাংলাদেশকে এগোতে হবে একই পথ অনুসরণ করে। এবার অবশ্য সুপার টেন নয়, থাকছে ‘সুপার ১২’। বাংলাদেশ সরাসরি সুপার ১২ খেলতে পারছে না। অথচ আফগানিস্তানের আশ্চর্য উত্থান, তারা টুর্নামেন্ট শুরুই করবে এ পর্ব থেকে। অস্ট্রেলিয়ায় অনুষ্ঠিত ২০২০ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপ সরাসরি সুপার ১২ খেলতে হলে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে টোয়েন্টি-২০ র‍্যাঙ্কিংয়ে বাংলাদেশকে থাকতে হতো সেরা আটে।
বাংলাদেশ আছে ১০-এ। নিয়ম অনুযায়ী, সুপার ১২ খেলতে হলে বাংলাদেশকে এখন প্রাথমিক পর্বটা পেরিয়ে আসতে হবে, যেটা তাদের পেরোতে হয়েছিল ২০১৪ ও ২০১৬ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপেও। অথচ যে আফগানিস্তান ২০১৪ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে প্রাথমিক পর্ব পেরোতে পারেনি, গত টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে সুপার টেন খেলছে প্রথম পর্বের বাধা পেরিয়ে, তারাই সরাসরি ২০২০ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের সুপার ১২ খেলবে। ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত টোয়েন্টি-২০ র‍্যাঙ্কিংয়ে আফগানদের অবস্থান যে আটে। বাংলাদেশের সান্ত¡না, তিনবারের ফাইনালিস্ট ও ২০১৪ চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকেও খেলতে হচ্ছে প্রাথমিক পর্বে। র‌্যাঙ্কিংয়ে নয়ে থাকা শ্রীলঙ্কানরা সরাসরি সুপার ১২ খেলতে পারছে না। সরাসরি সুপার ১২ খেলবে পাকিস্তান, ভারত, ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ও আফগানিস্তান। বাকি চারটি দল আসবে প্রাথমিক পর্ব থেকে। এই পর্বে বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে অংশ নেবে আরও ছয়টি দল। ওয়ানডে বিশ্বকাপ কিংবা চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে বাংলাদেশ র‌্যাঙ্কিংয়ে সেরা আটে থেকে যেখানে অনায়াসে টুর্নামেন্টে অংশ নেয়, টোয়েন্টি-২০’তে কেন যেন সেটা দেখা যায় না। ২০১৮ সালে বাংলাদেশ খেলেছে ১৬ টোয়েন্টি-২০, এক বছরে এর চেয়ে বেশি টোয়েন্টি-২০ খেলার রেকর্ড নেই দলটির। তারা জিতেছে মাত্র ৫টিতে, হেরেছে ১১টিতেই। আগস্টে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজটা বাদে হেরেছে প্রতিটি সিরিজ ও টুর্নামেন্টেই। এর মধ্যে আছে আফগানিস্তানের বিপক্ষে ধবলধোলাইয়ের লজ্জাও। সরাসরি সুপার ১২ খেলা নিয়ে অবশ্য অধিনায়ক সাকিব আল হাসান যথেষ্ট আশাবাদী, ‘২০১৮ সালটি টোয়েন্টি-২০ ক্রিকেটে আমাদের খারাপ কেটেছে, তাই বলে আমরা কিন্তু অতটা খারাপ দল নই। সুপার ১২ সরাসরি খেলতে পারছি না ঠিক আছে, তবে আমি আত্মবিশ্বাসী, আমরা প্রাথমিক পর্ব পেরিয়ে টুর্নামেন্টে ভালো করতে পারব। নিজেদের দিনে যে কোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য আমরা রাখি। টুর্নামেন্ট অনেক দূর না যাওয়ার কোনো কারণ দেখি না। এখনো সময় আছে। টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে ভালো করতে এটা আমরা কাজে লাগাব। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ জিতেছি (গত বছর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতেই), সেটি খুব বেশি দিন আগের নয়। ওই পারফরম্যান্স টোয়েন্টি-২০’তে আমাদের সামর্থ্যরে ব্যাপারে অনেক আত্মবিশ্বাসী করেছে।’
ক্রিকেট অভিজাত খেলা
টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপের ফরম্যাটেও আভিজাত্যের ছোঁয়া! অনেকেই এটিকে আভিজাত্যের মোড়কে বলে থাকেন বৈষম্যের ছোঁয়া। ২০২০ টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপে অংশ নেবে মোট ১৬ দল। আইসিসি টোয়েন্টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের প্রথম ১০ দলের সঙ্গে খেলবে বাছাইপর্বের গন্ডি পার হয়ে আসা ছয় দল। র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ দলের মধ্যে প্রথম ৮ দলকে গ্রুপ পর্ব খেলতে হবে না। তারা সরাসরি খেলবে বিশ্বকাপের সুপার-১২ রাউন্ডে। আর বাছাই পর্বের ৬ দলের সঙ্গে র‌্যাঙ্কিংয়ের নবম ও দশম দল মিলে দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে খেলবে গ্রুপ পর্ব। বাংলাদেশ টোয়েন্টি-২০ র‌্যাঙ্কিংয়ের ১০ নম্বরে থাকায় এবারও খেলতে হবে গ্রুপ পর্ব। বছরের প্রথম দিনে দুঃসংবাদ শুনতে হয়েছে ২০১৪ সালের বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কাকেও। তারাও সরাসরি সুপার-১২ রাউন্ড খেলতে পারবে না। কারণ র‌্যাঙ্কিংয়ের নয় নম্বরে রয়েছে দলটি। সেরা আটে থাকার সুবাদে আফগানিস্তান এবার সরাসরি পরের রাউন্ডে খেলার সুযোগ পাচ্ছে। এই বিশ্বকাপের জন্য বাছাই পর্ব খেলে চূড়ান্ত পর্ব নিশ্চিত করেছে স্কটল্যান্ড, জিম্বাবুয়ে, নেদারল্যান্ডস, হংকং, ওমান ও আয়ারল্যান্ড। এই ছয় দলের সঙ্গে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা মিলে আট দল দুই গ্রুপে বিভক্ত হয়ে গ্রুপ পর্ব খেলবে। দুই গ্রুপের সেরা দুই দল সুপার-১২তে খেলার সুযোগ পাবে। এই খবরে হতাশা প্রকাশ করেছেন শ্রীলঙ্কার অধিনায়ক লাসিথ মালিঙ্গা, ‘আমাদের মতো দলকে বাছাইপর্ব খেলতে হবে এটি খুবই হতাশার একটি বিষয়। সরাসরি সুপার-১২তে খেলতে না পারাটা কিছুটা হতাশার। তবে আমি আত্মবিশ্বাসী বিশ্বকাপে আমরা ভালো করব। তবে এতে সুবিধাও আছে। আমরা গ্রুপ পর্বে বাড়তি কিছু ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব।’ এর আগে ২০১৬ সালে ভারতে অনুষ্ঠিত টোয়েন্টি-২০ বিশ্বকাপেও গ্রুপ পর্ব খেলতে হয়েছিল বাংলাদেশকে। হিমাচল প্রদেশের ধর্মশালায় অনুষ্ঠিত গ্রুপ পর্বে নেদারল্যান্ডস ও ওমানকে হারিয়ে পরের রাউন্ড নিশ্চিত করেছিল টাইগাররা। তবে গত আসরের চেয়ে এবার পরের রাউন্ডে যাওয়া অনেকটা সহজই হবে। কেননা গত আসরে গ্রুপ পর্ব থেকে নেওয়া হয়েছিল দুই দল। সেবার পরের রাউন্ড ছিল সুপার-১০।
এবার দুই দল বেশি নেওয়া হচ্ছে। সে কারণে এবার গ্রুপ পর্ব থেকে সুপার-১২তে যাওয়ার সুযোগ পাবে চার দল। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের যতটা দাপট ততটা নয় টোয়েন্টি-২০ তে। সে কারণে র‌্যাঙ্কিংয়ে সুবিধা করতে পারেনি টাইগাররা। তবে ধীরে ধীরে টোয়েন্টি-২০ তেও ভালো করছে বাংলাদেশ। গেল বছরে ক্যারিবীয়দের বিরুদ্ধে তাদের হোমে সিরিজ জয়ই তার বড় প্রমাণ। তবে ঘরের মাঠে সিরিজে হেরে গেলেও এক ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বড় জয় তুলে নিয়েছিল সাকিবরা। তাই ওয়ানডের মতো  টোয়েন্টি-২০তেও আত্মবিশ্বাস বাড়ছে। তা ছাড়া সরাসরি সুপার-১২তে খেলার সুযোগ না পাওয়ায় হতাশার হওয়ার কিছু নেই। বরং গ্রুপ পর্বে খেলাটা বাংলাদেশের জন্য শাপেবরও হতে পারে। কেন না বিশ্বকাপের আগে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে বেশি সময় পাবে টাইগাররা। সুপার-১২তে লড়াইয়ের সম্মুখীন হওয়ার আগে ওয়ার্ম আপের (গ্রুপ পর্ব) সুযোগ পাচ্ছেন সাকিবরা। এখন দেখা যাক কতটা লড়াই করে বাছাইপর্বের বৈতরণী পার হতে পারে সাকিব আল হাসানের দল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ