শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনা-কলকাতা সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ!

খুলনা : খুলনা থেকে সরাসরি কলকাতা বাস সৌহার্দ্য ...

খুলনা অফিস : দীর্ঘ তিন মাস ধরে খুলনা-কলকাতা রুটে বাস চলাচল বন্ধ রয়েছে। সর্বশেষ খুলনা থেকে সরাসরি কলকাতায় বাস গেছে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর। তবে আনুষ্ঠানিকভাবে বন্ধ ঘোষণা না করলেও মাইক্রোবাসযোগে খুলনা কাউন্টার থেকে বেনাপোল পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছে যাত্রীদের। ফলে দুই বাংলার যাত্রীরা আন্তর্জাতিক বাস সার্ভিস থেকে বঞ্চিত হওয়ার পাশাপাশি ভোগান্তির মধ্যে পড়ছেন।

গ্রিন লাইন পরিবহনের বাস দিয়ে ২০১৭ সালের ২২ মে কমলাপুরের বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্পোরেশন (বিআরটিসি) আন্তর্জাতিক বাস টার্মিনাল থেকে ঢাকা-খুলনা-কলকাতা রুটে যাত্রা শুরু হয়। এদিন কলকাতা থেকে ছেড়ে আসা সৌহার্দ্য শ্যামলী পরিবহনের একটি বাস যাত্রী নিয়ে খুলনা হয়ে ঢাকায় যায়।এর আগে ৮ এপ্রিল নয়াদিল্লী থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে খুলনা-কলকাতা রুটে বাস ও ট্রেন চলাচলের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।

এছাড়া ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ঢাকা-মাওয়া-গোপালগঞ্জ থেকে খুলনা হয়ে কলকাতাগামী শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস চলাচল শুরু হয়। এ রুটে পরিবহনটি চালু হওয়ায় যাত্রীরা স্বল্প সময়ে কলকাতার উদ্দেশে যাতায়াত করার সুযোগ পেয়েছিলো। কিন্তু একই বছরের এপ্রিলে বন্ধ হয়ে যায় এই রুটের পরিবহনটিও। যাত্রীরা অভিযোগ করেন, খুলনা থেকে কলকাতাগামী শ্যামলী পরিবহনের যাত্রীদের সঙ্গে প্রতারণা করা হচ্ছে। খুলনা থেকে শ্যামলী পরিবহনে করে বেনাপোল পর্যন্ত নেওয়া হয়। পরে বেনাপোল পার হয়ে লক্কর-ঝক্কর গাড়িতে করে কলকাতা নিউমার্কেট এলাকায় নেওয়া হয়। আর ফেরার সময় তো সরাসরি এই রুটের কোনো বাসই নেই। ফলে টিকিট কিনে মাইক্রোবাসে যাতায়াত করতে হয়। যাত্রীদের সরাসরি সেবার নামে প্রতারণা করা হচ্ছে।  

সৌহার্দ্য শ্যামলী পরিবহনের খুলনা কাউন্টার ইনচার্জ শেখ ইফতেখার হোসেন বলেন, এ রুটে বাস চালুর মধ্য দিয়ে খুলনাসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণ হয়েছিলো। আর এর মাধ্যমে খুলনার যাত্রীদের দিনে দিনে কলকাতা গিয়ে কাজ সেরে আবার সেদিনেই ঘরে ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হয়েছিল। নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যে রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ী কলকাতায় পৌঁছে যেতেন। এর মাধ্যমে দুই দেশের বাণিজ্যে আরও বেশি সম্প্রসারণ ঘটছিলো। কিন্তু কোনো নির্ধারিত কারণ ছাড়াই ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর এ রুটে বাস চলাচল বন্ধ করে দেয় ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশনের (ডব্লিউ.বি.টি.সি) অধীনে পরিচালনাকারী সৌহার্দ্য শ্যামলী পরিবহন কর্তৃপক্ষ। ইফতেখার অভিযোগ করেন, রোড পারমিটের চুক্তির মেয়াদ থাকতেও দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধন করা এ পরিবহন বন্ধ রাখছে বাস মালিক পক্ষ। আজ-কাল চালু করবে বলে মালিক পক্ষ ঘোরাচ্ছে। আশায় আশায় আমাদের মাসের পর মাস কাউন্ডার ভাড়া দিতে হচ্ছে। 

তিনি জানান, প্রতি শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় খুলনা থেকে শ্যামলী (ডব্লিউ.বি.টি.সি) পরিবহনটি কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করতো। এটি কলকাতা থেকে সোম, বুধ ও শুক্রবার খুলনার উদ্দেশে ছেড়ে আসতো।

তার দেওয়া তথ্যমতে, ঢাকা-খুলনা-কলকাতা রুটের শ্যামলী এনআর ট্রাভেলসের (বিআরটিসি) পরিবহনটি প্রতি সোম, বুধ ও শুক্রবার ঢাকা থেকে ছেড়ে খুলনা হয়ে কলকাতার উদ্দেশে যাত্রা করতো। আর কলকাতা থেকে প্রতি শনি, মঙ্গল ও বৃহস্পতিবার খুলনার উদ্দেশে রওনা হতো।   ঢাকা-মাওয়া-গোপালগঞ্জ-খুলনা রুটের শ্যামলী এনআর ট্রাভেলস’র ঢাকা কাউন্টারের ম্যানেজার বিপুল বলেন, সৌহার্দ্য ডব্লিউবিটিসি বাসটি দুর্ঘটনার কারণে বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে মাওয়া হয়ে গোপালগঞ্জ-খুলনা হয়ে কলকাতা রুটের বাস সার্ভিসটি আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে আরিচা হয়ে কলকাতা বাস সার্ভিসটি চালু রয়েছে।   কয়েকজন যাত্রী জানান, সহজে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা প্রাপ্তির কারণে ভ্রমণ, চিকিৎসাসহ বিভিন্ন প্রয়োজনে এ অঞ্চলের মানুষ ভারত যাচ্ছিল। ফেরার পথে কলকাতা থেকে দরকারি কেনাকাটাও সেরে নিচ্ছিলেন তারা। কিন্তু সরাসরি বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় মানুষ পড়েছেন ভোগান্তিতে। এ রুটের বাসের যাত্রী আলি পাকবাজ জুয়েল বলেন, খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে যাওয়ার খবরটা এ অঞ্চলের মানুষের জন্য বেদনাদায়ক। খুলনা ও কলকাতার মধ্যে চলাচলকারী বন্ধন এক্সপ্রেস সপ্তাহে একদিন চলে তার উপর আবার বাস সার্ভিস বন্ধ হয়ে গেছে। তিনি এ অঞ্চলের মানুষের কষ্ট লাঘবের জন্য পুনরায় বাস সার্ভিস চালুর দাবি জানান। সৌহার্দ্য শ্যামলী পরিবহনের মালিক অবনি কুমার ঘোষের ব্যবহৃত নাম্বারে বার বার যোগাযোগ করলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ