বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

রাজশাহী টু খুলনা স্বপ্নসেতুর মেলবন্ধন

ড. মাহফুজুর রহমান আখন্দ : ট্রেনযাত্রার অভিজ্ঞতা একবারে খারাপ ছিলো না। ২৫ অক্টোবর আমাদের বড়ছেলে নাশিতের পৃথিবীতে আগমন দিবস হলেও পরীক্ষার টেনশনে এ সব মাথায়ই ছিলো না বলা যায়। তবুও একটা আলাদা অনুভূতি বাবার হৃদয়ে খেলা করবে-এটাই স্বাভাবিক। সাতক্ষীরা এলাকার শিক্ষাবিদ জি এম আব্দুল গাফ্ফার লিখিত এবং পরিলেখ প্রকাশিত তোহফায়ে মুমিন গ্রন্থটির দুইকার্টুন বইও নিয়েছিলাম সাথে। শিল্পী রহিসুল ইসলাম বইগুলো স্টেশনে পৌঁছে দিতে সহায়তা করেছিল। প্রচ- ভীড় ঠেলে যশোরে পৌঁছে গেলে লেখকের সুযোগ্যপুত্র আবু ফয়সাল বইগুলো গ্রহণ করেন। আমরা ভালোভাবেই পৌঁছে গেলাম খুলনায়। দুর্লভ টিকিটটি সংগ্রহ করে দেবার জন্যে সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যাপক এবং বর্তমান এশিয়ান ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ড. ওসমান গণি ভাইকে কৃতজ্ঞতা জানালাম হৃদয়ের গভীর থেকে।
খুলনার সাথে অনেক স্মৃতিই জড়িয়ে আছে। শিল্প-সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের বন্ধুরাও আছেন খুলনায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট বন্ধু এস এম মাহবুবুর রহমানের সাথে যোগাযোগ হয়েছিল আগেই। ওয়াসা কর্মকর্তা সিবিএ নেতা মাহবুব হাজারো ব্যস্ততার ভীড় ঠেলে মোটরবাইক নিয়ে হাজির হয়ে গেলেন। শিল্পী তাওহীদুল ইসলাম আব্বাসও এসে হাজির হয়েছিলো অভ্যর্থনা জানানোর জন্য। অবশেষে মাহবুবের বাইকে উঠে নিমিষেই পৌঁছে গেলাম রায়েরমহল বাজার। আমার আবেগ আর স্মৃতিমাখা রায়েরমহল। সাংবাদিক নেতা এবং শিল্প-সাহিত্যের অন্যতম স্বাপ্নিক পুরুষ শেখ বেলাল উদ্দিনের বাসায়। খুলনার সাংবাদিক জগতের উদীয়মান নক্ষত্র, সততা এবং কর্তব্যে নিষ্ঠাবান এক কলম সৈনিক ছিলেন তিনি। তিনি ছিলেন খুলনা প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি, খুলনা মেট্রোপলিটন সাংবাদিক ইউনিয়নরে সভাপতি ও দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরো চীফ। সদালাপী মিষ্টভাষী, সকলের সাথেই ছিল তাঁর হৃদ্যতা। তাঁর চিন্তা-চেতনা ও ধ্যানজ্ঞানে ছিলো বঞ্চিত, র্নিযাতিত, নিপীড়িত গণমানুষ। গণমানুষের কথাই ফুটে উঠেছে তাঁর বিভিন্ন কর্ম ও লেখনীতে। খুলনা টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠীর প্রতিষ্ঠাতা পরিচালকের দায়িত্ব পালন ছাড়াও বিভিন্ন সাংস্কৃতিক, সামাজিক, রাজনৈতিক ও শিক্ষাসংস্থার সাথে নিবিষ্টভাবে জড়িত ছিলেন তিনি। তাঁকে কেড়ে নিয়েছে হায়েনা। ২০০৫ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার রাত সোয়া ৯টায় খুলনা প্রেসক্লাবের অভ্যর্থনা কক্ষের দরজার সামনে মোটরসাইকেলের হ্যান্ডেলে সন্ত্রাসীদের রাখা রিমোট কন্ট্রোল বোমায় শেখ বেলাল উদ্দিন গুরুতর আহত হন। আশঙ্কাজনক অবস্থায় খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতলে, পরের দিন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১১ ফেব্রুয়ারি তিনি শাহাদাৎবরণ করেন। পিতা শেখ মোদাচ্ছের চলে গেছেন পরপারে। মামলার রায়ে চরমপন্থী নেতা হাসান, স্বাধীন ও মেরাজ কারাভোগ করলেও মা মন্নুজান নেসার বুক আজও শূণ্যতায় হাহাকার করে শেখ বেলালের জন্য। ৩ ভাই আর ৫ বোনের বুকে এখনো বড়ভাই বেলাল হারানোর ক্ষতচিহ্ন। বাসায় পৌঁছেই মায়ের ভালোবাসা, আদর। তাঁর বৌমাকে সাথে নিয়ে যাইনি এ জন্য কৈফিয়ত দিতে হলো। সাংবাদিক ও অধ্যাপক শেখ শামসুদ্দিন দোহা আমাদের থাকার সব ব্যবস্থা করে দিলেন। গল্প হলো ছোটভাই শেখ কুতুবউদ্দিন রব্বানীর সাথে। খুলনার ঐতিহ্যবাহী খাবারের সাথেই রাত পার করলাম।
ঢেঁকি স্বর্গে গেলেও ধান ভানে। ছেলের ভর্তি পরীক্ষার বিষয় নিয়ে খুলনা গেলেও সময়টা কেটেছে পরিকল্পিত। সকালে খুলনার শিল্প-সংস্কৃতি নিয়ে ভাবেন এমন বেশ কয়েকজনের সাথে আড্ডা হলো। সাথে ছিলেন এ্যাডভোকেট শাহ আলম, অধ্যাপক নজিবুর রহমান, কবি শেখ মনিরুল ইসলাম, শিল্পী আবদুল হান্নান, শিল্পী আবদুল্লাহিল কাফি,  এস এ মুকুল প্রমুখ। আড্ডা শেষে খাওয়ার ধুম। চারতলার ছাদবাগানে খাওয়ার আড্ডা। কয়েকশো প্রজাতির গাছ আর সবজি-ফুলে কোমল সকালটা ভীষণ আলোড়িত করলো।
টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠীর ঐতিহ্যের সাথে সম্পৃক্ত ছিলাম ছোটবেলা থেকেই। সাইমুম, টাইফুন, পাঞ্জেরী, হেরাররশ্মি এসবই ছিলো সংস্কৃতি চর্চার পাদপীঠ। কবি মতিউর রহমান মল্লিক এবং এ সকল শিল্পীগোষ্ঠীর কর্মকা-ই আমাকে সাহিত্য-সংস্কৃতির মাঠে টেনে এনেছে। সেই টাইফুন শিল্পীগোষ্ঠীর গানের ১৫তম অডিও এ্যালবাম ‘ভ্রমণের গান’ এর মোড়ক উন্মোচন এবং শিল্পী সমাবেশে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলাম ২৬ তারিখ সকাল নয়টায়। প্রায় সোয়া ঘন্টা কথা বলেছি। কথা বলেছি সংস্কৃতি চর্চার একাল সেকাল নিয়ে। কথা বলেছি কবি মতিউর রহমান মল্লিকের সাংস্কৃতিক বিপ্লবের স্বপ্ন নিয়ে, আমাদের দায়বদ্ধতা নিয়ে। অনুষ্ঠানে সমন্বিত সাংস্কৃতিক সংসদের অফিস সম্পাদক ও সাবেক সাইমুম পরিচালক ইকবাল হাসান, টাইফুনের ভাইসচেয়ারম্যান শাহরিয়ার ফয়সাল, উপদেষ্টা মুশাররফ আনসারী, সাবেক পরিচালক শিল্পী আবদুল্লাহ আল কাফি, শিল্পী নাজমুল কবির, শিল্পী লোকমান হোসাইনসহ টাইফুনের শিল্পী ও কলাকুশলীরদের উপস্থিতি মুখরিত করে তোলে অনুষ্ঠানের হলরুম। টাইফুনের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান নিজেই সবকিছু তদারকি করেন। শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি তাঁর অনুরাগ আমাকে ভীষণভাবে আলোড়িত ও আশান্বিত করেছে।
টাইফুনের অনুষ্ঠান শেষ করেই মোটরবাইকে আবার ভোঁ দৌড়। এবার তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের সাথে আড্ডা। সৃজন লেখক সংঘের আয়োজনে বাংলাসাহিত্যের শক্তিমান কবি ফররুখ আহমদের জন্মশতবার্ষিকী আলোচনা এবং সাহিত্যাড্ডার আয়োজন ছিল জমজমাট। সৃজন পত্রিকার সম্পাদক নূরুল ইসলাম সাদ্দাম, নির্বাহী সম্পাদক এইচ এম ফাইজুল ইসলাম, সহকারী সম্পাদক ওমর আল ফারুক, আবুল হাসান জারজিস ছাড়াও আশিকুজ্জামান, তাওহিদুজ্জামান, শরিফুল ইসলাম, তানভীর রহমান এবং এহতেসামুল হক শাদিদ প্রমুখের প্রচেষ্টায় জমজমাট হয়ে উঠেছিল অনুষ্ঠানটি। তরুণ কবি-সাহিত্যিকদের লেখাপাঠের পর্বটাতে আমার উপস্থিত হবার সুযোগ হয়নি। তবে লেখাগুলো দেখে আমি ভীষণ আশাবাদী হয়েছি। তরুণ লেখকদের চোখে মুখে দেখেছি সম্ভাবনার উজ্জ্বল আভা। কথা বলেছি প্রায় একঘন্টা। ভীষণভাবে আপ্লুত হয়েছি তাদের কমিটমেন্টের কারণে।
তিনটি অনুষ্ঠান শেষে আবারো শেখ বেলাল ভাইয়ের বাড়িতে। খাবার মেনুতে খুলনার ঐতিহ্যবাহী মাছের সাথে অন্যান্য সব আইটেম তো আছেই। ব্যাপক খাইদাই হলেও বিশ্রামের সুযোগ নেই। খাওয়া সেরে আবারো মোটর বাইকে ভোঁ। ‘সভ্যতার সংকট ও মুসলিমবিশ্ব’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান বক্তার আলোচনা রাখার জন্য উপস্থিত হলাম। হলরুম ভর্তি উপস্থিতি। তরুণদের প্রাধান্যই ছিলো পুরো হলরুমে। প্রায় দেড়ঘন্টার আলোচনা। আলোচনা করা হয় বিশ্বায়নের মোড়কে সংস্কৃতি-সভ্যতার হাল-হকিকত, মুসলমানদের সভ্যতার বিকৃতি। সেইসাথে ফিলিস্তিন, কাশ্মির, ফিলিপাইন, মিয়ানমারের আরাকানসহ মুসলিম সংখ্যালঘু রাষ্ট্রসমূহের মুসলমানদের সংস্কৃতি-সভ্যতার দৈন্যদশার চিত্র ও পরিণামও আলোকপাত করা হয়। মুসলিম তরুণদের দায়বদ্ধতাকে শাণিত করাই এ অনুষ্ঠানের মূল লক্ষ্য। মাগরিবের নামাজ শেষে আবারো মোটরবাইক। এবার খুলনা সাহিত্য পরিষদের অফিসে দেশজ এর আয়োজনে ‘মানবতাবাদী কবি ফররুখ আহমদ : ঐতিহ্য ও কাব্যভাষা’ শীর্ষক আলোচনা এবং সাহিত্য আড্ডা। সন্ধ্যে সাড়ে ছয়টায় শুরু করে রাত সাড়ে নয়টা পর্যন্ত চলে অনুষ্ঠান। প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলাম আমি। বিশিষ্ট সাংবাদিক শেখ শামসুদ্দিন দোহার সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আলোচনা রাখেন এ্যাডভোকেট শাহ আলম, অধ্যাপক নজিবর রহমান, কবি শেখ মনিরুল ইসলাম, গীতিকার ও নাট্যকার এস এম মাহবুবুর রহমান।
২৭ অক্টোবর ছিলো কুয়েটে ভর্তি পরীক্ষা। ২৬ তারিখ সারাদিন ব্যস্ততায় কেটে গেলেও বুকের ভেতরে আলাদা একটা টেনশনে দুরুদুরু করছিলো। আজ সেটা আরো বেশি বেড়ে গেছে। শেখ বেলাল ভাইয়ের ছোটভাই রব্বানী আগেই ইজিবাইক কন্ট্রাক্ট করে রেখেছিলেন। নাস্তাপর্ব সেরে সকাল সকাল রওনা। বাইপাস মেইন সড়ক হয়ে চলছে ইজিবাইক। দুইধারে মাছের ঘের আর সবুজের সমারোহ। বার বার মনে পড়ছিলো কবি মতিউর রহমান মল্লিকের ‘বিলের দিকে’ কবিতার লাইনগুলো। ‘ভোর পাঁচটার মধ্যে তুমি শেখ বেলাল ভাইদের গাঁয়ের বাড়ি পৌঁছে যেতে পারো।.. তারপর শিশিরের অজ¯্র চাদরের ভেতর থেকে/ জেগে ওঠে স্বপ্নের গাছ এবং মৌমাছির মত অগণিত স্বর্ণের ঘের। ঘেরের ধারে ঘর/ ঘরের ধারে ঘের এবং পানির মধ্যে মাছের কল্লোল ছাড়া আর কিছুই নেই।’ কবিতার লাইনগুলো স্মরণ করতে করতেই আধাঘন্টা সময়ের মধ্যেই পৌঁছে গেলাম কুয়েটে। অসংখ্য অভিভাবকের ভীড়ে অনেক পরিচিত মুখ ভেসে এলো। সবার চোখে মুখে উৎকণ্ঠা। কবি সায়ীদ আবুবকরের সাথে কফি আড্ডার মাঝেই পরিচিতি হলাম বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-কর্মকর্তাসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার অভিভাবকের সাথে। সবার মুখে শুধু সন্তানদের নিয়ে প্রত্যাশা-হতাশার দোলাচাল।
পরীক্ষার্থীকে নিয়ে বাসায় ফিরে খাওয়া শেষ করতেই মোটরবাইকের হুইসেল। আবারো যাত্রা বিসিএস সেমিনারে। ক্যারিয়ার এইডের ব্যানারে বিসিএস সেমিনার। পৌঁছেই দেখি ছোটখাটো হলরুমে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। সেমিনারবক্তা হিসেবে আমার নাম উল্লেখ করে চাররঙা পোস্টার-লিফলেটের মাধ্যমে প্রচার করা হয়েছে। ‘আমাদের স্বপ্ন : আমাদের ক্যারিয়ার’ শীর্ষক প্রায় পৌনে দুইঘন্টা বক্তৃতা করলাম। তরুণদের স্বপ্নমাখা দীপ্তিছড়ানো হৃদয়ের সাথে আমার হৃদয়ও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসে ভরপুর। মনের মধ্যে দোলায়িত হতে থাকলো ফেলে আসা সোনালি অধ্যায়।
বক্তৃতা শেষ করেই মাগরিবের সলাত। নামাজ শেষে বাসায় ফেরা, অতঃপর শেখ শামসুদ্দিন দোহাকে নিয়ে এবার কবিভক্তি মিশন। কবি আবুবকর সিদ্দিক। কবি আল মাহমুদ, শামসুর রাহমান, শহীদ কাদরী, সৈয়দ শামসুল হক প্রমুখ সেরা কবিদের সমসাময়িক হলেও তাঁকে ষাটের দশকেও ধরে নেয়া হয়। পঞ্চাশের পরে ষাটের দশকের অন্যতম কবি তিনি। ১৯৩৪ সালের ১৯ আগস্ট জন্মগ্রহণ করেছিলেন বাগেরহাটে। ১৯৫৮ সালে বাংলা সাহিত্যে এম.এ শেষ করে শিক্ষকতা পেশায় নিজেকে আত্মনিয়োগ করেন। চাখার ফজলুল হক কলেজ, দৌলতপুর বিএল কলেজ, বাগেরহাট পিসি কলেজ, বাগেরহাট নাইট কলেজ, ফকিরহাট কলেজ, কুষ্টিয়া কলেজ, কুষ্টিয়া গার্লস কলেজ এবং রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন ১৯৫৮ সাল থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত। দীর্ঘদিনের কর্মজীবনে হাজারো ছাত্র-ছাত্রী, শুভানুধ্যায়ী যেমন তৈরি করেছেন তেমনি কবিতার মাঠে নিবেদিত চাষি হিসেবে তিনি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন ষাটের অন্যতম প্রধান কবি হিসেবে। জীবন সায়াহ্নে এসে আজ তিনি অসহায়। রাজশাহীর বাড়িঘর ছেড়ে খুলনায় বোনের আশ্রয়ে পাঠ করছেন জীবনের শেষ পা-ুলিপি। আপনজন বলতে তেমন আর কেউ নেই পাশে। নেই কোন স্বজন-শুভানুধ্যায়ী। মাঝে মাঝে ফোনে খোঁজ-খবর নিতাম। আজ তাঁর সাথে দেখা করার জন্যই এ যাত্রা। মোটরবাইকে চলে এলাম ২ নাম্বার কাস্টমস ঘাটের বিপরীতে মুন্সীপাড়া তিন নাম্বার লেনে। পথিমধ্যে প্রেসক্লাব হয়ে দৈনিক সংগ্রামের ব্যুরোচিফ আবদুর রাজ্জাক রানাকে সারপ্রাইজ দিলাম। আড্ডা হলো। কথা হলো দৈনিক মানবজমিন ব্যুরোচিফ রাশিদুল ইসলাম, টিভি সাংবাদিক রফিউল ইসলাম টুটুলের সাথে। ঠা-া-গরমে আপ্যায়িতও হলাম। ইতোমধ্যে বন্ধু মাহবুবও নাশিতকে নিয়ে হাজির। তিনি নাশিতকে নিয়ে বাগেরহাটে গিয়েছিলেন হযরত খান জাহান আলী রহ. এর অমরকীর্তি দেখানোর জন্য। অবশেষে দোহা ভাই আর নাশিতকে নিয়ে পৌঁছে গেলাম কবি আবুবকর সিদ্দিকের ঠিকানায়। অসুস্থ কবি শুয়ে আছেন জীবনের লেনদেন চুকিয়ে দেবার মানসে। উঠতে পারছেন না। ফুলেল শুভেচ্ছাটাও শুয়ে থেকেই গ্রহণ করলেন। কথা হলো। অনেক কথা। স্মৃতিকথা। আফসোস ঝরে পড়ছে তাঁর কথার পরতে পরতে। আমি কিছু সম্ভাবনার কথা শুনালাম। রাজশাহীর সাহিত্যচর্চায় তরুণদের উচ্ছ্বাসের কথা। তিনি সতেজ আর সজীব হয়ে উঠলেন। উঠে বসলেন। আমাদের সাথে আড্ডা দিলেন প্রায় তিনঘন্টা ধরে। বাংলা একাডেমি থেকে সদ্যপ্রকাশিত তাঁর ‘বরীনভূমি বাদাবন’ নামের গল্পগ্রন্থটি আমাকে উপহার দিলেন অটোগ্রাফসহ। আরেকটি বই দিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের আইবিএস-এর বাংলার অধ্যাপক ড. সরোচিষ সরকারের জন্য। আড্ডার ফাঁকে তিনি বললেন, ‘তোমাদের পরশে আমি তো এখন সুস্থই হয়ে গেলাম’। এই বয়সে একাকিত্ব সত্যিই জীবনকে মৃত্যুর কাছাকাছি নিয়ে যায়, সঙ্গআড্ডা জীবনের স্বপ্নজাগায়- সেটাই প্রমাণিত হলো।
বাসায় ফিরে রাত প্রায় এগারোটা। খাওয়া শেষে পারিবারিক আড্ডা। খালাম্মা, বড় আপা, মেজআপা, মেজভাবি রুহী, সাহারা পারভীন তরুভাবি [ছাদবাগানে মুগ্ধ হয়ে ভাবির নাম তারু থেকে তরু রাখলাম] ছোটভাবি এলিনা, দোহাভাই, রব্বানী ভাই, মেহজাবিন, রাওহা, আফিফা, নাহিয়ান, আদিবা এবং ভাগ্নে শাহ মাখদুমসহ জম্পেশ আড্ডা। গান, কবিতা আর কথামালায় রাতপ্রায় একটার কাঁটা ছুঁইছুঁই। ফর্সা আলোয় নাস্তা সেরে ভোরের প্রশান্তিময় হাওয়ার তালে নেচে নেচে মোটরবাইকে স্টেশনে পৌঁছে দিলেন বন্ধু মাহবুব। সাড়ে ছয়টায় ট্রেন কু..ঝিকিঝিক। পরিবহণ ধর্মঘটের কারণে ট্রেনে উপচে পড়া ভীড়। এসি টিকিট সংগ্রহ করে দেবার জন্যে প্রিয় মেহেদী ও আবদুর রহমানকে ধন্যবাদ এবং দুআ জানাচ্ছিলাম হৃদয়ের গভীর থেকে। ট্রেনের তালে তালে মনের বারান্দায় খেলা করছিল খালাম্মার আদরমাখানো গল্প, ঝাল-মিষ্টির আপ্যায়ন, তরুভাবির ছাদবাগান এবং নাশিতসহ সোনামনিদের গান, নাহিয়ানের মুসা-ফিরাউনের গল্প সর্বোপরি একটি শহীদি পরিবারের ভালোবাসার পরশ। ট্রেনে খেয়ে নেবার জন্য বেঁধে দেয়া এলিনাভাবির নাস্তাটাও মনে করিয়ে দিচ্ছিল ভালোবাসার মেলবন্ধনের স্মৃতি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ