শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার সমালোচনায় এরদোগান

৪ ফেব্রুয়ারি, আল জাজিরা/রয়টার্স : ইস্তাম্বুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংসভাবে খুন হওয়া সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডে যুক্তরাষ্ট্রের নীরবতার কঠোর সমালোচনা করেছেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রজব তাইয়্যেব এরদোগান। একইসঙ্গে তিনি এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় সৌদি আরবের কাছেও উত্তর চেয়েছেন। রবিবার তুরস্কভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম টিআরটি টেলিভিশনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এই ধরনের ভয়ঙ্কর ঘটনায় আমেরিকার নীরবতা আমি বুঝতে পারছি না। এমনকি সিআইএর সদস্যরাও এ হত্যাকাণ্ডে তুরস্কের সরবরাহ করা রেকর্ডিং শুনেছেন।

জামাল খাশোগিরজব তাইয়্যেব এরদোগান বলেন, আমরা সবকিছু পরিষ্কার করতে চাই। কারণ এটি নৃশংসতা, এটি একটি হত্যাকাণ্ড। এটি কোনও সাধারণ হত্যাকাণ্ড নয়।

এরদোগান বরাবরই বলে আসছেন, খাশোগি হত্যাকাণ্ডের চার মাস আগে সৌদি সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায় থেকে এ হত্যাকাণ্ডের নির্দেশ এসেছিল। টিআরটি’কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, এ খুনের পরিকল্পনায় যুক্ত ছিলেন ২২ জন। এদের মধ্যে ১৫ জন দুইটি বিমানে করে ইস্তানবুল পৌঁছায়। হত্যাকাণ্ডের দিন তারা ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে প্রবেশ করে।

নৃশংস এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে আন্তর্জাতিক তদন্তকারীদের নাম ঘোষণা করে জাতিসংঘ। সংস্থাটির মানবাধিকার দফতর জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে তাদের একটি টিম এ হত্যাকাণ্ডের তদন্ত চালাবে। তদন্ত দলের প্রধান জাতিসংঘের বিশেষ দূত এগনেস কালামার্ড। বিচারবর্হিভূত ও নির্বিচারে মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার এগনেস কালামার্ড একজন ফরাসি শিক্ষাবিদ এবং নিউ ইয়র্কের কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির কলাম্বিয়া গ্লোবাল ফ্রিডম অব এক্সপ্রেশন ইনিশিয়েটিভ-এর পরিচালক। তার দেওয়া প্রতিবেদন জেনেভার জাতিসংঘ মানবাধিকার কাউন্সিলে জমা হয়। জাতিসংঘের পক্ষ থেকে দুনিয়াজুড়ে এ ধরনের তদন্তের অধিকার রয়েছে তার।

জানুয়ারির গোড়ার দিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, সৌদি আরবে সাংবাদিক জামাল খাশোগি হত্যাকাণ্ডের যে বিচার চলছে তার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা সম্ভব হচ্ছে না। ফলে এই বিচার ‘যথেষ্ট নয়’ বলে মনে করে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাই কমিশন-এর মুখপাত্র রাভিনা শামদাসানি বলেছেন, তার সংস্থা খাশোগি হত্যাকাণ্ডের ব্যাপারে আন্তর্জাতিক মহলের সংশ্লিষ্টতায় একটি নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানাচ্ছে। এর মধ্যেই এ খুনের ঘটনায় সৌদি আরবের ব্যাখ্যা দাবি করলেন তুর্কি প্রেসিডেন্ট।

২০১৮ সালের ২ অক্টোবর ইস্তানবুলের সৌদি কনস্যুলেটে নৃশংস হত্যাকাণ্ডের শিকার হন সাংবাদিক জামাল খাশোগি। খুনের নির্দেশদাতা হিসেবে আঙ্গুল উঠে খোদ সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের বিরুদ্ধে। সৌদি আরবের পক্ষ থেকে প্রথমে এ হত্যাকাণ্ডের খবর অস্বীকার করা হয়। পরে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হত্যাকাণ্ডের ঘটনা স্বীকার করলেও এর সঙ্গে যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানের সম্পৃক্ততার খবর অস্বীকার করা হয়। ওই ঘটনায় দুনিয়াজুড়ে সমালোচনার মুখে পড়েন এমবিএস নামে পরিচিত সৌদি যুবরাজ। বর্তমানে ওই হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ে একদল সৌদি নিরাপত্তা কর্মীর বিচার চলছে। তুরস্কের মাটিতে খাশোগি খুন হয়েছেন বলে তুর্কি কর্মকর্তারা ঘাতক বাহিনীর সদস্যদের বিচারের জন্য আঙ্কারার হাতে সোপর্দ করার আহ্বান জানালেও সৌদি আরবের পক্ষ থেকে তা প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে।

ফিলিস্তিনীদের অধিকারের বিষয়ে চুপ থাকব না

তুরস্কের প্রেসিডেন্ট  এরদোগান বলেছেন,তার দেশ ফিলিস্তিনীদের পাশে রয়েছে এবং কোনো চাপের মুখে তুরস্ক ফিলিস্তিনী সমস্যার ব্যাপারে নিজেদের অবস্থান থেকে সরে আসবে না। ফলিস্তিনের রাষ্ট্রীয় র্বাতা সংস্থা জানায়, ইসরাইলি পার্লামেন্টের আরব সদস্যদরে সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রসেডিন্টে এরদোগান এসব কথা বলেন।

সামরিক শক্তিতে মুসলিম বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী দেশ তুরস্করে প্রভাবশালী এ নেতা বলেন, আঙ্কারা সবসময় ফলিস্তিনি মাজলুমদের সহায়তা অব্যাহত রাখবে। ফিলিস্তিনীদের পাশ থেকে আমরা কখনো সরে যাবো না, ফিলিস্তিনীদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়  আমাদের সর্বোচ্চ  চেষ্টা থাকবে।

প্রেসিডেন্ট এরদোগান আরও বলেন, ইসরাইলি দখল থেকে ফিলিস্তিনীকে মুক্ত করা, ফিলিস্তিনী জনগণের স্বাধীকার প্রতিষ্ঠা  আমাদের অন্যতম অঙ্গীকার। এ বিষয়ে আমরা কখনো নমনীয় হইনি।

ফিলিস্তিনী ইসরাইলি দখলদারিত্বের  বিরুদ্ধে বিশ্বের প্রতিটি সংস্থাকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান এরদোগান  । ঠৈকে ফিলিস্তিনী বিষয়ে জোরালো ভূমকিা রাখায় ইসরাইলি পার্লামেন্টের আরব সদস্যরা তুর্কি  প্রেসিডেন্টকে অভিনন্দন জানান। প্রেসিডেন্ট এরদোগানও ইসরাইলি দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকায় তাদের ধন্যবাদ জানান।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ