শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

শাহজাদপুরে নরসুন্দরদের মানবেতর জীবনযাপন

শাহজাদপুর (সিরাজগঞ্জ) সংবাদদাতা : সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার নর সুন্দরদের দুর্দিন চলছে। যুগের সাথে তাল মেলাতে না পেরে অনেকেই তাদের পেশা ছেড়ে অন্য পেশায় ছুটছে। বেশিদিন আগের কথা নয় যখন নরসুন্দরদের বেশ কদর ছিল। শিক্ষিত, অশিক্ষিত, ধনী, গরীব অধিকাংশ লোকজনই সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য নরসুন্দরদের উপর নির্ভরশীল ছিল। গ্রামাঞ্চলে এদের রয়েছে আঞ্চলিক নাম নাপিত। শুধু দোকান বা বাজার নয় বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে নাপিতেরা চুল কাটতো। নাপিত বাড়িতে আসার কথা শুনলেই বড় ছোট সকলেই নাপিতের কাছে ভীড় জমাতো চুল কাটানোর জন্য। বাড়ির কোনে গাছের ধারে নাপিত একটি টুল পেতে আসন বসাতেন। নাপিত মাজায় গামছা বেঁধে তৈরি হতেন। কে আগে আর কে পরে চুল কাটবে তা নিয়ে হুড়োহুড়ি পড়ে যেত। কেঁচির ক্যেঁচ ক্যুঁচ আওয়াজের সাথে নাপিতেরা গান ধরতেন। গানের তালে তালে হাত চালাতেন নরসুন্দরেরা। কেউ আবার কেচ্ছা, কাহিনী বলে সময় পার করতেন । চুল সমান করার জন্য পুরাতন ইমেজের একটি বড় ক্ষুর রাখতেন। নগদ টাকার বালাই ছিলনা বিধায় বেশির ভাগ কাজ করতো বাকীতে। বছর ঘুরে ধানের মৌসুম এলে গ্রামের নরসুন্দরেরা বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে ধর্না দিতো। প্রতি বাড়ি হতে ধান চাল আদায় করতো। এভাবেই তারা রোজগার করতো এবং চালাতো তাদের সংসার। সময়ের প্রেক্ষাপটে এসব এখন শুধুই স্মৃতি। বিলাসবহুল সেলুন ও হেয়ার ড্রেসারের ভীড়ে নরসুন্দরদের কাছে টুলে বসে চুল কাটেনা। গ্রামের নরসুন্দরদেরও আর কেউ বাড়িতে ডাকেনা। আধুনিকতার ছোঁয়ায় সবকিছুতে পরিবর্তন এসেছে। এ ছোয়া লেগেছে প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলেও। গ্রামের মোড়ে মোড়ে, হাট বাজারে, শহরে স্থাপিত হয়েছে অনেক উন্নত মানের সেলুন। সেসব সেলুনে বসেই লোকজন চুল কাটায়। গ্রামের লোকেরা এখন উন্নত রেজারে ভালো মানের ফোম দিয়ে বাড়িতে বসেই সেভ করে। নরসুন্দরদের একজন উপজেলার পোরজনা গ্রামের খোকাশীলের ছেলে সুনীল শীল (৭৫) তিনি জানান, ১৫ বছর বয়স ধেকে এই পেশায় আছেন তিনি। অর্থাৎ ৬০ বছর ধরে অতি কষ্টে টিকে আছেন তিনি। বয়সের ভাড়ে নুহ্য হলেও জীবিকা চলানো কঠিন হয়ে পড়েছে। সারাদিন কাজ করে ৫০ টাকা পাওয়া যায়না। ৪ ছেলে ৩ মেয়ের জনক হলেও বিয়ে করে সবাই এখন নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। তাই বৃদ্ধ স্ত্রীকে নিয়ে কোনমতে চলছে তার জীবন সংগ্রাম।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ