ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

'মৃত' চীনা শিল্পীর ভিডিও প্রকাশ করে কী বোঝানো হচ্ছে?

যে ভিডিও ফুটেজে মিস্টার হায়াতকে দেখা গেছে তার স্ক্রিনশট

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক:

চীনের উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের যে শিল্পীর বন্দী শিবিরে মৃত্যু হয়েছিল বলে এর আগে খবর বেরিয়েছিল এবার চীনের রাষ্ট্রীয় সংবাদ মাধ্যম তার একটি ভিডিও প্রকাশ করেছে। কী আছে এই ভিডিওতে?

১০ই ফেব্রুয়ারি তারিখ উল্লেখিত ভিডিওটিতে একজন ব্যক্তিকে দেখা যায় যার নাম বলা হয়, আব্দুরেহিম হায়াত এবং দাবি করা হয় যে সে "শারীরিকভাবে ভালো" আছে।

এর আগে তার মৃত্যুর খবরকে কেন্দ্র করে এ ধরনের বন্দীশিবির বন্ধ করে দিতে চীনের প্রতি তীব্র আহ্বান জানিয়েছিল তুরস্ক।

এ ধরনের ক্যাম্পগুলোতে প্রায় দশ লাখের মত উইঘুর মুসলিম বন্দী আছে বলে খবরে বলা হচ্ছে।

নতুন করে এই ভিডিও প্রকাশের পর সেটির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন উইঘুর সম্প্রদায়ের অনেকে।

যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক উইঘুর হিউম্যান রাইটস প্রজেক্ট-এর চেয়ারম্যান নুরি তুরকেল বিবিসিকে বলেছেন যে, ভিডিওটির কিছু কিছু দিক সন্দেহজনক।

উইঘুররা চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় শিনজিয়ান এলাকার তুর্কী ভাষী মুসলিম সংখ্যালঘু একটি সম্প্রদায়, যারা চীনের কর্তৃপক্ষের তীব্র নজরদারির মধ্যে রয়েছে।

শিনিজিয়াং-এ একজন মুসলিম আজান দিচ্ছেন।

তাদের ভাষা অনেকটা তুর্কী ভাষার মতো। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে চীন থেকে বিশাল সংখ্যক উইঘুর তুরস্কে থেকে পালিয়ে গেছে।

ভিডিওতে কী আছে?

চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল এর তুর্কী ল্যাঙ্গুয়েজ সার্ভিসে এই ভিডিওটি প্রকাশ করা হয়, যেখানে বলা হচ্ছে চীনের সম্পর্কে তুরস্কের সমালোচনার কোন ভিত্তি পাওয়া যায়নি।

ভিডিওতে দেখা যায় মিস্টার হায়াত বলছেন, "দেশের জাতীয় আইন ভঙ্গ করার অভিযোগের তদন্ত হচ্ছে তার বিরুদ্ধে"।

তুরস্ক কী বলছে?

তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে যে, চীনের আটক থাকা উইগররা 'বন্দী-শিবিরগুলোতে' 'নির্যাতন' এর শিকার হচ্ছেনা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হামি অক্ষয় বলেছেন, মিস্টার হায়াতের মৃত্যুর খবর তুর্কী জনগণের মধ্যে এই ধারণা আরো তীব্র করেছে যে শিনজিয়ানে চরমভাবে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ঘটনা ঘটছে।

"২১ শতকে এসে বন্দী-শিবিরের পুন:প্রবর্তন এবং উইগর-তুর্কী নাগরিকদের প্রতি চীন কর্তৃপক্ষের আত্তীকরণ নীতি মানবতার জন্য একটি লজ্জাজনক বিষয়"।

তিনি জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টোনিও গুতেরেস- এর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন "সেখানকার পরিস্থিতিকে মানবিক ট্র্যাজেডি উল্লেখ করে তার অবসানে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে" আহ্বান জানিয়েছেন।

চীন এই বক্তব্যকে "পুরোপুরি অগ্রহণযোগ্য " বলে মন্তব্য করেছে।

তুরস্কের অবস্থান

এখন পর্যন্ত অল্প সংখ্যক মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ এই অভিযোগের বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবে নিন্দা জানিয়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এর কারণ অনেকেই চীনের তরফ থেকে রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক পাল্টা প্রতিশোধের ভয় পাচ্ছেন।

যদিও মিস্টার তুর্কেল বলছেন, ভিডিও প্রকাশের মধ্য দিয়ে প্রমাণ হচ্ছে যে চীনা সরকার সাধারণ মানুষের চাপের কাছে এই প্রতিক্রিয়া দেখাতে বাধ্য হলো।

"চীনের সরকার তুর্কীদের প্রতি প্রতিক্রিয়া দেখালো তার কারণ মুসলিম বিশ্বের মধ্যে এর প্রভাব"উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন, শিনজিয়ানে বন্দীশিবির ইস্যু নিয়ে জাতিসংঘ মহাসচিব "ভয়ঙ্কর ভাবে নিরব"।

তিনি আরো বলেন, "এই খেলার বল এখন চীনের সরকারের আঙ্গিনায়। তারা হায়াতকে আটকে রেখেছে। তারা উউগর জনসংখ্যার ১০% লোককে বন্দী করে রেখেছে।

তারা বিশ্বকে দেখাতে চায় যে, সেখানে কোনধরনের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে না এবং সেগুলো তথাকথিত বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বলে তারা জানাচ্ছে। এই ভিডিওর বিশ্বাসযোগ্যতা প্রমাণ করার দায়িত্ব তাদের।"

মিস্টার তুর্কেল এও বলেন যে, "চীনের যে প্রযুক্তিগত সুবিধা রয়েছে তার কারণে" দেশটির সরকার ভিডিও কারসাজি করতেও পারদর্শী।

বর্তমান প্রযুক্তিতে এমন ভিডিও উপস্থাপন করা সম্ভব। এটা ততোটা কঠিন কিছু নয়" বলছেন মিস্টার তুর্কেল।

চীনের গোপন বন্দি-শিবির

মি. হায়াতের ভাগ্য সম্পর্কে আমরা কতটুকু জানি?

মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, তার মৃত্যু সম্পর্কিত খবরে তারা খুবই উদ্বিগ্ন।

তিনি ছিলেন নামকরা একজন দোতারা বাদক। একটা সময় পুরো চীন জুড়ে তিনি সম্মানিত ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

বেইজিং এ তিনি মিউজিক নিয়ে লেখাপড়া করেন এবং পরে জাতীয় শিল্প গোষ্ঠীর সঙ্গে পরিবেশনা করেন।

এই শিল্পীর আটক হওয়ার পেছনে তার একটি গান দায়ী বলে মনে করা হয়।

ফাদারস বা পিতাগণ শিরোনামের সেই গানটির কথাগুলো নেয়া হয়েছিল উইগরদের একটি কবিতা থেকে যেখানে তরুণ প্রজন্মকে তাদের পূর্ববর্তী যারা আত্মত্যাগ করেছেন তাদের সম্মান জানানোর কথা উঠে এসেছে।

কিন্তু এই গানের লিরিক-এর শব্দ "যুদ্ধের শহীদ"-দৃশ্যত চীনের কর্তৃপক্ষকে এই সিদ্ধান্তে এনে দেয় যে মিস্টার হায়াত এর মধ্য দিয়ে সন্ত্রাসী হুমকি দিচ্ছেন।

উইঘুর কারা?

আত্মপরিচয়ের বেলায় তারা নিজেদেরকে সাংস্কৃতিক ও জাতিগত ভাবে মধ্য এশিয়ার লোকজনের কাছাকাছি বলে মনে করেন। তাদের ভাষা অনেকটা তুর্কী ভাষার মতো।

তবে গত কয়েক দশকে সংখ্যাগুরু চীনা হান জাতির বহু মানুষ শিনজিয়াং অঞ্চলে বসবাস করতে সেখানে গেছেন।

উইঘুর সম্প্রদায়ের লোকজন মনে করছেন এর ফলে তাদের সংস্কৃতি ও জীবনযাপন হুমকির মুখে পড়েছে।

জিনজিয়াং আনুষ্ঠানিকভাবে চীনের অভ্যন্তরে একটি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল হিসাবে স্বীকৃত দক্ষিণে যেরকম তিব্বত অবস্থিত।

সূত্র: বিবিসি বাংলা

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ