শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জমির উর্বর মাটি কেটে ইটভাটায় বিক্রি ॥ উৎপাদন হ্রাস

তাড়াশ সংবাদদাতা: সিরাজগঞ্জের তাড়াশ উজেলার ৮ ইউনিয়নে কৃষি জমির উর্বর মাটি  কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ইটভাটায়। প্রশাসনের অনুমোদন ছাড়াই জমির শ্রেণী পরিবর্তন করে এক শ্রেণীর দালালচক্র দীর্ঘদিন ধরে এ ব্যবসা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে। অন্যদিকে এসব মাটি ট্রাক দিয়ে ইটভাটায় নেয়ায় গ্রামীণ কাঁচা-পাকা সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। গ্রামীন কাঁচা রাস্তা, পাকা সড়ক ব্যবহারের সুনির্দিষ্ট নিতিমালা থাকলেও তা মানা হচ্ছে না। নিতিমালা না মানার জন্য শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে শ্বাসকষ্টে। এলাকার সাধারণ মানুষসহ স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীদের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। উপজেলার চান্দাইকোনা ইউনিয়ানের সরাইদহ গ্রামের সোহরাব হোসেনসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, ভুইয়াগাঁতী এলাকায় অবস্থিত হিরো ব্রিকস, এসএন ব্রিকস, কিয়া ব্রিকস, দেওভোগ এলাকার হাসান ব্রিকসসহ বিভিন্ন ইটভাটার ইট তৈরির জন্য কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহারকৃৃত উপকরণ হচ্ছে মাটি। সেই মাটি কেটে নেওয়া হচ্ছে কৃষি জমি থেকে কতিপয় স্বার্থান্বেষী দালাল চক্ররা জমির মালিকদের মাটি কাটার জন্য ভুল বুঝিয়ে অনুমোদন ছাড়াই এসব মাটি কাটাসহ নদী রক্ষা বাঁধ কেটে নিয়ে ইটভাটায় সরবরাহ করছে। এসব মাটি লাইসেন্স বিহীন ট্রাকে সরকারি সম্পদ নষ্ট করে বালু, সিমেন্ট, মাটি অবাদে পরিবহন করার কারণে রাতারাতি মালিকরা লাখ লাখ টাকা মুনাফা অর্জন করছে। রাত-দিন চব্বিশ ঘন্টা মাটি বহনের জন্য গ্রামীন কাঁচা-পাকা সড়কগুলো চাকার তলায় পিষ্ট হয়ে এক থেকে দুই ফিট ডেবে যাচ্ছে। এছাড়া মাটি পরিবহনের সুবিধার্থে ইউনিয়ন পরিষদের কাঁচা রাস্তাগুলো কেটে নষ্ট করা হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সরকারি লক্ষ লক্ষ টাকায় নির্মাণকৃত কাঁচা রাস্তা, ব্রিজ, কালভার্ট, যা আবার নির্মাণ করতে সরকারের প্রচুর পরিমাণ অর্থ অপচয় করতে হবে। এ দিকে ভোগান্তির শিকার উপজেলার চার লক্ষাধিক মানুষ। মাটি পরিবহণ কারীরা প্রভাবশালী হওয়ার কারণে কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বলতে সাহস পায় না। এছাড়া স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনকে ম্যানেজ করেই এসব মাটি কেটে তা পরিবহন করা হচ্ছে বলেও অনেকে অভিযোগ করেন। ইট ভাটায় ব্যবহৃত হচ্ছে রেজিস্ট্রেশনবিহীন অসংখ্য ট্রাক। যার ফলে সরকারের রাজস্ব ধ্বংস হচ্ছে। সরেজমিন দেখা যায়, রায়গঞ্জ উপজেলায় নতুন পুরাতন মিলে ৬০টির বেশী ইট ভাটা রয়েছে। বৈধ রেজিস্ট্রেশন রয়েছে ১৪ টির মত আর সবগুলোর বৈধ কোন কাগজ পত্র নাই। স্থানীয় কৃষি অধিদফতরের অনুমতি ছাড়াই কৃষি জমিতে গড়ে উঠেছে ইটভাটাগুলো। আর ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে হাজার হাজার একর কৃষি জমি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ভাটার কর্মরত কর্মচারীরা জানান পরিবেশ অধিদফতর ও আয়কর বিভাগের কর্মকর্তাগণ নিয়মিত মাসোহারা পেয়ে থাকেন। ভাটাগুলোতে মাটি ও ইট বহনকারী বৈধ কাগজপত্র বিহীন ট্রাক ব্যবহৃত হয়। ড্রাইভিং সনদ বিহীন, অপ্রশিক্ষিত ও অদক্ষ চালক দ্বারা চালিত হয়, যাদের ট্রাক পরিচালনা আইনের বিন্দুবিসর্গ পর্যন্ত জ্ঞান নেই তাদের। যে কারণে ট্রাকের চাকায় পিষ্ট হয়ে প্রাণ দিতে হচ্ছে নিরীহ পথচারিদের। গত কয়েক মাসে এক শিশুসহ দুই নারীর মৃত্যু হয়েছে, মারাত্মক আহত হয়ে পঙ্গুত্ব বরণ করেছে অনেকে। এ সব ঘটনায় আইনি পদক্ষেপ না নেয়ায় বেপরোয়া হয়ে উঠেছে ভাটা কর্তৃপক্ষসহ সংশ্লিষ্ট যানবাহন চালকরা। পরিবেশ সংরক্ষণ আইন-১৯৯৫, পরিবেশ বিধিমালা-১৯৯৭, ইট পোড়ানো (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০০১, শব্দ দূষণ বিধিমালা -২০০৬, পরবর্তীতে ইট প্রস্তুত এবং ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন-২০১৩ এর ৮-ধারা অনুযায়ী কৃষি জমি ও আবাসিক এলাকায় ভাটা স্থাপন দন্ডনীয় অপরাধ এপর অগ্রাহ্য করে নতুন একাধিক ইটভাটা নির্মাণের কাজ চলছে মহাসমারোহে। অনাবাদি ২ একর জমি ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও প্রতিটি ইটভাটা নির্মাণে ১০ একরের অধিক দো-ফসলি আবাদি কৃষি জমি ব্যবহার করা হচ্ছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ