শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

অগ্নিকান্ডে ৯টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল ॥ দায়ভারকার?

নুরুল আমিন মিন্টু, চট্টগ্রাম ব্যুরো : চট্টগ্রামে সরকারি জমিতে অবৈধভাবে গড়ে ওঠা একটি বস্তিতে অগ্নিকান্ডে নয়টি তাজা প্রাণ ঝরে গেল। গভীর রাতে আগুন লাগল। কে আগুন দিয়েছে? কীভাবে আগুন লেগেছে ? কেনো আগুন লাগল? আগুনের সূত্রপাত কী-এসব তদন্ত সাপেক্ষ ব্যাপার। এসব বিষয় খতিয়ে দেখতে চট্টগ্রাম জেলা প্রসাশন তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, কে নেবে এর দায়ভার। শ্রমজীবী মানুষগুলোর কী কোনো মুল্য নেই। সরকারি জমিতে অনিরাপদ অবস্থায় অবৈধভাবে বস্তিঘর গড়ে তোলা হয়েছিল, কেনো প্রসাশন নির্বিকার ছিল।
প্রশ্ন ওঠেছে ওখানে কারা সরকারি জমিতে অবৈধভাবে বস্তি গড়ে তুলেছেন। বছরের পর বছর ধরে সরকারি জায়গায় অবৈধভাবে বস্তি গড়ে ওঠলেও প্রশাসন নিরব ছিল কেন? প্রশাসন কী ব্যাপরটি জানতেন না? এসব অবেধ বস্তিতে বিদ্যুৎ সংযোগ হলো কীভাবে ?
অভিযোগ রয়েছে সরকারি দলের লোকজন এসব অবৈধ বস্তি গড়ে তুলেছেন। তারা প্রভাবশালী, প্রভাব খাটিয়ে তারা সেখানে বিদ্যুৎ সংযোগ স্থাপন করেছেন। প্রশাসনকে ম্যানেজ করেছেন তারা। ফলে প্রশাসন দেখেও না দেখার ভান করেছেন। সেখান থেকে তুলেন মাসোহারা।
হাসিনা বেগম নামে ক্ষতিগ্রস্ত এক নারী জানান, স্থানীয় কসাই আক্তার, সেলিম, ইয়াহিয়া খান, সাত্তার, ফরিদ, হেলাল  ওই বস্তির ঘরগুলো থেকে ভাড়া তুলতেন। তারা এই বস্তির মালিক। বিভিন্ন অংশ কসাই আক্তার কলোনি, সেলিম কলোনি, ইয়াহিয়া খান খান কলোনি, সাত্তার কলোনি, ফরিদ কলোনি, হেলাল কলোনি-এরকম নামে পরিচিত ছিল।
সেখাসে তারাপ অন্তত ৪শ’ ঘর গড়ে তুলেছেন তারা। অগ্নিকান্ডে অন্তত ২শ’ ঘর পুড়েছে। সেখানে ৪শ’ পরিবারে অন্তত দেড় হাজার থেকে দুই হাজার মানুষ বসবাস করতো। ওখানে বসবাস করা সব মানুষ ছিল নি¤œ আয়ের। বাসাগুলো ছিল অনিরাপদ, তাই তারা ভেতর থেকে তালা লাগিয়ে ঘুমাতেন।
পটিয়ার শান্তিরহাটের রুমা আকতার (৩৫) ৭ বছর ধরে থাকেন এ বস্তিতে। মাছের গদিতে দেওয়ার জন্য অনেক কষ্টে জমিয়েছিলেন ১ লাখ টাকা। আগুনের লেলিহান শিখা যখন তার ভাড়া বাসাটি ঘিরে ফেলছিল তখন বিছানার নিচে রাখা টাকা না নিয়েই পড়িমরি করে বেরিয়ে প্রাণে বেঁচে যান।
নূর বেগম ১ হাজার ৮০০ টাকা মাসিক ভাড়ায় ৬ বছর ধরে থাকছেন বস্তিতে। বললেন, পাশের গার্মেন্টে কাজ করি। নিজে না খেয়ে ২০-৩০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেছিলাম। সব পুড়ে গেছে। দম বন্ধ অবস্থায় জান নিয়ে কোনো রকমে পালিয়েছিলাম।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কেউ হারিয়েছে স্বজন। কারও গেছে সারা জীবনের সঞ্চয়। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার, চাল, ডাল, পরনের কাপড়, কাঁথা-বালিশ সব কেড়ে নিয়েছে সর্বনাশা আগুন। খোলা আকাশের নিচে থেমে থেমে বিলাপ করছেন ক্ষতিগ্রস্ত নারীরা। তাদের ঘিরে ক্ষুধা আর আতঙ্কে কান্নাকাটি করছে শিশুরা।
নগরের আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিস এর সহকারী পরিচালক মো. জসীম উদ্দীন বলেন, সরকারি খাস জমিতে গড়ে তোলা এ বস্তির কাঁচা ঘরগুলো খুবই কাছাকাছি। এখানে প্রচুর দাহ্যবস্তু রয়েছে। বৈদ্যুতিক সংযোগও আছে। অনেকে মশার কয়েল জ্বালিয়ে ঘুমায়, বিড়ি-সিগারেট খায়। রান্নার জন্য গ্যাস সিলিন্ডার আছে। তাই আগুনের সূত্রপাত কীভাবে হয়েছে, এর সঙ্গে কোনো নাশকতাকারী জড়িত কিনা তা তদন্ত সাপেক্ষে বলা যাবে। জেলা প্রশাসক ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছেন।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষতিগ্রস্তরা পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জেনেছি-এখানকার বেশিরভাগ ঘরেই মানুষ ভেতর থেকে তালা মেরে ঘুমান। তালা খোলার ঝক্কির কারণে দুর্ঘটনার সময় তাড়াহুড়ো করে নিজেরা বের হতে কিংবা জিনিসপত্র বের করতে বেগ পেতে হয়।
নগরের বাকলিয়া থানার ওসি প্রণব চৌধুরী জানান, কর্ণফুলী রাজাখালী খালের পাশের ভেড়া মার্কেট সংলগ্ন ওই খাস জমি অবৈধভাবে দখল করে ওই বস্তি গড়ে তোলা হয়েছিল।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ