বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ইসির নজরদারিতে দুই সিটির কাউন্সিলর প্রার্থীরা

# সরকারি দলের দেড় শতাধিক কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে সক্রিয়
স্টাফ রিপোর্টার : সময় যতই ঘনিয়ে আসছে, ততই তুমুল প্রচার-প্রচারণা শুরু করেছেন ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলররা। মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলরদের প্রচারণাও থেমে নেই। দুই সিটিতে অনুষ্ঠিত কাউন্সিলর নির্বাচনে ব্যস্ত সময় পার করছে  সকল প্রার্থী। অভিযোগ উঠেছে, আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনীত প্রার্থী না থাকলেও গোপনে স্থানীয় এমপিরা নিজেদের আত্মীয়স্বজনদের সমর্থন দিচ্ছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও সরকারি দলের অঙ্গ-সহযোগী অঙ্গসংগঠন থেকে প্রার্থী রয়েছে। তবে এই নির্বাচনকে সামনে রেখে চতুর্মুখী সহিংশতার আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন অনেক প্রার্থী। এরইমধ্যে কয়েকজন প্রার্থী প্রতিপক্ষের হুমকী-ধমকীর ভয়ে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরে দাড়িয়েছেন বলেও জানা গেছে। তবে জীবনের নিরাপত্তার ভয়ে কেউই মুখ খোলছেন না।
এদিকে গত সোমবার নির্বাচনের আইনশৃঙ্খলা বিষয়ক কমিটির বৈঠক শেষে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বলেছেন, নির্বাচন কমিশন ভবননির্বাচন কমিশন ভবনঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেন কোনো ধরনের গ-গোল করতে না পারেন সে জন্য তাদের ওপর নজরদারি করবে এবং তাদের গতিবিধি অনুসরণ করবে নির্বাচন কমিশন। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকা উত্তর সিটির মেয়র পদে উপনির্বাচনের ভোট গ্রহণ করা হবে। একই সাথে উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে নতুন যুক্ত হওয়া ৩৬টি ওয়ার্ডে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। হেলালুদ্দীন বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা কাউন্সিলরদের কড়া নজরদারিতে রাখবেন, প্রার্থীদের গতিবিধি অনুসরণ করবেন। কেউ গন্ডগোল করলে আইনগতভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। সচিব জানান, সিটি নির্বাচনে পুলিশের মোবাইল ফোর্স থাকবে ৯টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স থাকবে ৬টি, র‌্যাবের মোবাইল টিম থাকবে ৯টি এবং বিজিবির মোবাইল টিম থাকবে ৯টি। এ ছাড়া আলাদাভাবে র‌্যাব ও বিজিবির কিছু মোবাইল টিম অপেক্ষমান বাহিনী হিসেবে থাকবে। নির্বাচনের শৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ও বিচারিক হাকিম নিয়োজিত থাকবেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর যারা প্রধানেরা কমিশনকে আশ্বস্ত করেছেন, নির্বাচনে এমন কোনো পরিবেশ সৃষ্টি হবে না যার কারণে ভোটারেরা ভোটকেন্দ্রে যেতে ভয় পাবেন।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ অংশের ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে নির্বাচন করার জন্য নির্বাচন কমিশন (ইসি) তফসিল ঘোষণা করেছে। আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। কাউন্সিলরের পাশাপাশি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে (উপ নির্বাচন) নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. আতিকুল ইসলাম (নৌকা), জাতীয় পার্টির শাফিন আহমেদ (লাঙ্গল), প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল (পিডিপি) থেকে শাহিন খান (বাঘ), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) আনিসুর রহমান দেওয়ান (আম) ও স্বতন্ত্রপ্রার্থী নর্থ সাউথ প্রপার্টিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রহিম (টেবিল ঘড়ি) প্রতীক পেয়েছেন। মেয়র পদ ছাড়াও সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদেও নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণ অংশের ৩৬টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ থেকে গড়ে ৪-৬ জন করে সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থী মাঠে রয়েছেন। সংরক্ষিত ১২টি ওয়ার্ডের নারী কাউন্সিলর পদেও প্রায় অর্ধশত নারী প্রার্থী হয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী তালিকায় বিদায়ী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এবং বিদায়ী ইউপি মেম্বারদের সংখ্যাই বেশি। ইউনিয়ন ভেঙে সিটি করপোরেশনের নতুন ওয়ার্ড গঠিত হওয়ায় এসব জনপ্রতিনিধি এবার কাউন্সিলর নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এ ছাড়া দল, সহযোগী-ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের মহানগর, থানা ও সদ্য সাবেক ইউনিয়ন নেতারাও এই নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দলীয় সূত্রে জানা যায়, আসন্ন ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন কাউন্সিলর, সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর নির্বাচনে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠন থেকে দরীয় প্রতীকে অংশ না নেয়া এবার সরকারি দল আওয়ামী লীগ এই দুইটি পর উš§ুক্ত রেখেছেন। নির্বাচনকে প্রতিযোগিতা মূলক করতেই মেয়র ছাড়া বাকি পদগুলো উš§ুক্ত রেখেছেন। এবারের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগ, সেচ্ছাসেবক লীগ ও সরকারি দলের সহযোগী অঙ্গসংগঠন থেকে প্রার্থী হয়েছেন একাধিক ব্যক্তি। প্রার্থীরা নিজেদের বিজয়ী করতে নির্বাচনে শক্তি প্রয়োগের প্রবণতা দেখা দিয়েছে। স্থানীয় নেতারা কারো পক্ষ না নেওয়া সংগঠনগুলো বিভিন্ন বিভিন্ন ভাবে প্রচার প্রচারণা চালাচ্ছেন। আওয়ামী লীগের প্রার্থী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকদের দিয়ে প্রচারনায়, যুবলীগের প্রার্থীরা যুবলীগের নেতাকর্মী, ছাত্রলীগের প্রার্থীরা ছাত্রলীগের নেতাকর্মী ও সমর্থক নিয়ে বিভিন্ন বিভিন্ন ভাবে প্রচারণা মাঠে রয়েছে। যেহেতু  বেশির ভাগ প্রার্থীরা সরকারি দলের রাজনীতি করেন, একারণে নির্বাচনের দিন ও তার আগের দিন সহিংশতার আশঙ্কা দেখছেন স্থানীয় ভোটাররা।
এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে বিভিন্ন এলাকায় চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এলাকায় আসতে শুরু করেছে। তবে এসব সন্ত্রাসীরা যাতে বিশৃঙ্খল পরিবেশ সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি রাখছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। স্থানীয়দের ধারণা, কাউন্সিরর প্রার্থীরা প্রত্যেকেই নিজ নিজ এলাকায় প্রভাবশালী হওয়ায় নিজেদের বিজয়ী করতে সকল প্রকার শক্তি প্রয়োগের চেষ্টা করবেন। এতে নির্বাচনের আগে-পরে বড় ধরনের সংঘাতের ঘটনা ঘটতে পারে। এরইমধে ৬৪ নং ওয়াডের একজন প্রভাবশালী প্রার্থী অন্য প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। আর ৬৫ নং ওয়ার্ডের আরেক প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা মো. এনামুল ইসলাম এনাম ইতিমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাড়িয়েছেন।
এ বিষয়ে কথা হয় ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ এর সাথে তিনি বলেন, সবারই ভোটার অধিকার রয়েছে। আর আওয়ামী লীগ এই পদটি উš§ুক্ত রেখেছেন। এতে সহিংশতা নয় বরং অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হেদায়েতুল ইসলাম স্বপন বলেন, নির্বাচন অবাধ-সুষ্ঠ করার দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। তবে আওয়ামী লীগের একজন কর্মী হিসেবে আমরা মনে করি অতিথের যেকোনো নির্বাচন থেকে এবারের সিটি নির্বাচন অনেক সুন্দর ও সুষ্ঠ হবে। তিনি বলেন, কোনো ওয়ার্ডে যাতে প্রার্থী ও সমর্থকদের মধ্যে গন্ডগোল না, সেদিকে আমাদের নজর আছে। একইসাথে আওয়ামী লীগের রাজনীতির সাথে জড়িত প্রত্যেক প্রার্থীকে বলে দেয়া হয়েছে, কেউ কারো প্রচার কিংবা নির্বাচনী কাজে বাধা হয়ে দাঁড়াবেন না।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ