বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

মামামি’র সেরা হওয়ার রহস্য

খায়রুল আলম রাজু : আজ শুক্রবার। মামামির স্কুল বন্ধ। সে খেলতে গেলো মাঠে। বাড়ির পাশেই খেলার মাঠ। অনেক বড় মাঠ। এলাকার ছোট-বড় সবাই এখানে খেলতে আসে। আর মামামি এখানকার সেরা ক্রিকেটার। ছোট-বড় সবাই তাকে চিনে। শুধু মিতুল বাদে। তবে মামামিকে মিতুল না চেনার’ই কথা। মিতুল এখানে নতুন এসেছে। সে মামামির বন্ধু, রাতুলের মামাতো ভাই। তাই সে মামামির সাথে পরিচিত হতে চায়। সে রাতুলের মুখে অনেক শুনেছে মামামির কথা। মামামির আগেকার বোকামির কথাও তার জানা। তবে তার নামটা কেমন যেনো। তাই মিতুল মামামির পুরো নাম জানতে চায়। মামামি তখন বললো, আমার পুরো নাম, মামুন মাশরাফি মাহি। ছোট করে সবাই আমাকে মামামি বলেই ডাকে। মিতুল তখন অবাক হলো! বাহ! নামটা বেশ দারুণ তো। মামামি একটু মামা পেলে! আর জানতে চাইল, মিতুল কিসে পড়? তখন মিতুল বললো, ক্লাস থ্রিতে সে পড়ে। তার মানে তারা সহপাঠী। যদিওবা মিতুল অন্য স্কুলে পড়ে।

এভাবেই তারা বন্ধু হয়ে গেলো। তারপর তারা খেলতে নামে, মাঠে। সবার থেকে মামামি’ই এখানকার সেরা ক্রিকেটার। তাই মিতুল জানতে চায়, মামামি কেমন করে এতো সেরা হলো? খেলার শেষে তাই মিতুল মামামিকে প্রশ্ন করে, তুমি কেমন করে এতো সেরা হলে? মামামি তখন বললো, আমি এক সময় বড্ড বোকা ছিলাম! ভাত, মাংস, ফল, শাকসবজি কিচ্ছু খেতাম না। না খেতে খেতে আমি শুকিয়ে হয়েছিলাম কাকতাড়ুয়া। তখন আমি খেলাধোলা কিছুই পারতাম না। স্কুলে অংকও পারতাম না, ঠিকমতো। কেউ কোনো ধাঁধাঁ বললে তার উত্তরও দিতে পারতাম না। আমি ছিলাম বড্ড বোকাসোকা। একদিন হলো কি, আমি নানাবাড়িতে বেড়াতে গেলাম। তখন আমি বেশ ছোট, ক্লাস টুতে পড়ি। সেখানে গিয়েই আমি মামাতো বোন রিতুর সাথে ঘুরতে গেলাম মাঠে। সে আমাকে ধানক্ষেত, পাটক্ষেত দেখাতে নিয়ে গেলো। আমি কিছুই চিনি না। রিতু একটি গাছ থেকে কি জানি পাড়লো। বাঁশের কঞ্চি দিয়ে। তারপর আমাকে খেতে দিলো। কিন্তু আমি খাইনি। কেননা আমার কিছু খেতে ভালো লাগে না। সে আমাকে  বললো, এইটা একটা ফল। এর নাম জাম। খেয়ে দেখ, বেশ মিষ্টি। কিন্তু আমি খাইনি। সে অনেকটা খেলো। বিকেলে যখন আমরা ঘরে এলাম, নানু বললে মামামি এসো ফল খাও। আমি বললাম এই ফলটার নাম জাম। তাই না নানু। কিন্তু নানু বললেন না মামামি, এইগুলো আঙ্গুর। মামামি তখন লজ্জা পেলো। কেননা সে কালো আঙ্গুরগুলো জাম ভেবেছে। আসলেতো সে কিছু খায় না, তাই কিচ্ছু চিনেও না। মা-বাবাও তখন লজ্জা পেলেন। তারপর শহরে এসে আমাকে নিয়ে গেলেন ডাক্তার আঙ্কেলের চেম্বারে। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন আমার সব ঠিক আছে। আমাকে বেশি বেশি খেতে হবে, আর নিয়মিত খেলতে হবে। তারপর থেকে আমি বেশি বেশি খাই। নিয়মিত খেলি...

আচ্ছা তুমি কি কি খাও?

আমি ভাত খাই, মাংস খাই, ডিম খাই, কলা খাই, দুধ খাই, করলা ভাজিও খাই। তবে ফাস্টফুডের কিছু খাই না। এগুলো স্বাস্থ্যকর নয়। ওহ, এজন্যই বুঝি তোমার এতো বুদ্ধি। আর সেরা খেলোয়ারও হয়েছ। হ্যাঁ, শুধু তাই নয়, আমি ক্লাসের সেরা ছাত্রও। আমি কঠিন কঠিন অংকও একাই করতে পারি। জটিল জটিল ধাঁধাঁ দিয়ে সবাইকে বোকাও বানাতে পারি। কেননা আমি বেশি বেশি দুধ, কলা, ডিম, মাছ, মাংস শাকসবজি, ফল খাই। নিয়মিত খেলাধুলাও করি। ফলে আমার মাথায় অনেক বুদ্ধি গিজগিজ করে। তুমি আমার মতো হতে চাও? তাহলে, বেশি বেশি, মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, শাকসবজি খেতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম ও খেলাধুলা করতে হবে। আর মোবাইলে গেমস খেলা আর টেলিভিশনে কার্টুন দেখা চলবে না। তাহলে বুদ্ধি হবে না। আর অবসরে বই পড়তে হবে। গল্পেরর বই, ছড়ার বই, মজার গণিত, সায়েন্স ফিকশন। তা না হলে ধাঁধাঁ শিখতে পারবে না! আর কাউকেও বোকাও বানানো হবে না। মামামির সেরা হওয়ার গল্প শুনে, মিতুলও হতে চায় মামামির মতো। কেননা তার সেরা হওয়ার রহস্যও মামামির মতোই হওয়া চাই। তাই মিতুলও বেশি বেশি দুধ, কলা, ডিম, মাছ, মাংস, ফল, শাকসবজি খায়। নিয়মিত খেলে, ব্যায়াম করে। গল্পের বই, ছড়ার বই, মজার গণিতও সায়েন্স ফিকশনের বই পড়ে। আর সেও এখন ভালো ক্রিকেট খেলতে পারে। মামামির বন্ধু হয়ে মিতুলও এখন তার স্কুলে, সেরা হতে চলেছে....

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ