বন্দুক-পিস্তল দিয়ে আ’লীগ ক্ষমতা দখল করে আছে
স্টাফ রিপোর্টার : বর্তমান আওয়ামী লীগ রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করার পাশাপাশি বন্দুক-পিস্তল দিয়ে ক্ষমতা দখল করে আছে বলে অভিযোগ করেছে বিএনপি। গতকাল শনিবার দুপুরে দলের এক গণঅনশন কর্মসূচিতে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই অভিযোগ করেন। একইসাথে সরকার নিজেরা পরাশক্তির কাছে বিক্রি হয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। বলেন, এই সরকার জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়নি। তারা ক্ষমতা দখল করে আছে বেআইনিভাবে। তারা বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রে পরিণত করতে চলেছে এবং করেও ফেলেছে। বাংলাদেশ এখন একটা ব্যর্থ রাষ্ট্র। উদ্দেশ্য , বাংলাদেশকে একটা নতজানু পরনির্ভরশীল দেশ হিসেবে গড়ে তোলা। পরাশক্তিগুলোর কাছে তারা (সরকার) বিক্রি হয়ে গেলো। তারা আজকে নেতাদেরকে, দেশকে বিক্রি করে দিয়ে তারা দাসে পরিণত হয়েছে।
নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের নিচতলায় ঢাকা জেলার দোহার-নবাবগঞ্জ উপজেলা বিএনপি ও অঙ্গসংগঠনের উদ্যোগে বিএনপি চেয়ারপার্সন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে প্রতীক গণঅনশন করে। বেলা ১১টা থেকে ২ টা পর্যন্ত এই কর্মসূচি শতাধিক নেতা-কর্মী খালেদা জিয়ার মুক্তি সম্বলিত নানা প্ল্যাকার্ড বহন করে। বিএনপি মহাসচিব পরে পানি পান করিয়ে অনশন ভঙ্গ করান।
জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আবু আশফাক খন্দকারের সভাপতিত্বে এই কর্মসূচিতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, নির্বাহী কমিটির সদস্য নিপুণ রায় চৌধুরী, রফিক হাওলাদারসহ নবাবগঞ্জ ও দোহারের স্থানীয় নেতারা বক্তব্য রাখেন। কর্মসূচি উদ্বোধন করেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
মির্জা ফখরুল বলেন, আজকে জোর করে, রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যবহার করে, বন্দুক-পিস্তল ব্যবহার করে তারা (আওয়ামী লীগ সরকার) ক্ষমতা দখল করেছে। ওদের সঙ্গে পাক হানাদার বাহিনীর কোনো পার্থক্য আমি খুঁজে পাই না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, কী ভয়ংকর কথা- যে মহিলাকে নোয়াখালীর সূবর্ণচরে যে ব্যক্তির নির্দেশে গণধর্ষন করা হলো সেই নির্দেশকারী আওয়ামী লীগ নেতাকে উচ্চ আদালত থেকে জামিন দেয়া হয়েছে এক বছরের জন্যে। অথচ আমাদের হাজারো নেতা-কর্মী আছেন যাদের বিরুদ্ধে শত শত মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদেরকে আটক করে রাখা হয়েছে, তাদেরকে জামিন দেয়া হয় না। দুর্নীতির দায়ে দন্ডপ্রাপ্ত মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, মহীউদ্দিন খান আলমগীরসহ আওয়ামী লীগের নেতারা জামিন পান।
সম্প্রতি সারাদেশে সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষের প্রাণহানির ঘটনা তুলে ধরে তিনি বলেন, এখানে (বাংলাদেশ) কোনো আইন নেই, কোথাও কোনো বিচার নেই, এখানে আইনের শাসন নেই, প্রশাসন চলে না। আপনারা দেখেছেন সড়কের কী অবস্থা হয়েছে। প্রতিদিন মানুষ মারা যাচ্ছে, অসংখ্য মানুষ মারা যাচ্ছে। আজকে দেখছেন ক্রাইম বেড়েছে, কোথাও কোনো বিচার নেই। কোথায় গেলে বিচার পাওয়া যাবে? কারণ দেশে কোনো সরকার নেই।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশকে রক্ষা করার জন্য, জনগণকে রক্ষা করার জন্য দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে কারাগার থেকে বের করে আনতে হবে। কারণ তিনি হচ্ছেন আমাদের প্রতীক, সংগ্রামের প্রতীক, গণতন্ত্রের প্রতীক, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের প্রতীক। আসুন আমরা সবাই সেই উদ্দেশ্যে সাহস নিয়ে আসি ঐক্যবদ্ধ হয়ে গণতন্ত্রকে মুক্ত করি, দেশনেত্রীকে মুক্ত করি।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা মামলা মোকাদ্দমায় ভয় পান তারা দয়া করে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। যারা ভয় পাবেন না তারা দায়িত্ব পালন করবেন। গয়েশ্বর বলেন, ৩০ ডিসেম্বরে নির্বাচন নিয়ে হতাশ হওয়ার কোনো কারণ নেই। কারণ এখন বিএনপি নয়, দেশের মানুষের দুঃশাসন চলছে। এটা থেকে রক্ষা পেতে হলে বিএনপিকে এগিয়ে আসতে হবে। তাই আমি বলবো, যারা মামলা মোকাদ্দমায় ভয় পান তারা দয়া করে দায়িত্ব ছেড়ে দেন। যারা ভয় পাবেন না তারা দায়িত্ব পালন করবেন। এ ব্যাপারে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমান ও মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানান গয়েশ্বর।
কালো দিবসের বাণী: স্বৈরাচার এরশাদ কর্তৃক অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল উপলক্ষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর গতকাল গণমাধ্যমে দেয়া এক বাণীতে বলেন, ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি কালো অধ্যায়। এ দিনে সামরিক ফরমান জারি করে শহীদ জিয়ার পুণরুজ্জীবিত বহুদলীয় গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। কেড়ে নেয়া হয়েছিল বাক, ব্যক্তি, বিবেক, মুদ্রণ ও সমাবেশের স্বাধীনতাসহ মানুষের সকল নাগরিক স্বাধীনতা।
তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রসমূহে স্বাধীন মত প্রকাশের অধিকারকে জোরালোভাবে স্বীকৃতি দেয়া হয়। কিন্তু ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চের এই দিনটিতে স্বৈরাচার এরশাদ অবৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতা দখল করে ইতিহাসের নির্লজ্জ স্বৈরতন্ত্র কায়েম করে। এরশাদ কেবলমাত্র ক্ষমতা দখল করে ক্ষান্ত থাকেনি বরং জনগণের ওপর নিপীড়ণ নির্যাতন চালিয়ে দীর্ঘ ৯ বছর দেশবাসীকে এক চরম বিভীষিকাময় দুর্বিষহ অবস্থার মধ্যে নিক্ষেপ করেছিল। অনৈতিক রাজনৈতিক কর্মকান্ড, শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস, সীমাহীন দুর্নীতিই স্বৈরাচারী শাসনের অবলম্বন হয়ে দাঁড়ায়। ৯ বছর ছাত্র-গণআন্দোলন নিষ্ঠুরভাবে দমন করতে গিয়ে স্বৈরশাসকের পেটোয়া বাহিনী গুলি চালিয়ে হত্যা করে অসংখ্য ছাত্র-জনতাকে। ১৯৮২ থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত জাতির জীবনে এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচিত হয়েছিল। সেই স্বৈরশাসকের সাথে অভিন্ন বৈশিষ্ট্যের বর্তমান অগণতান্ত্রিক শাসকগোষ্ঠীর আঁতাত পুনরায় বহুমাত্রিক গণতন্ত্রের পথচলাকে আটকিয়ে দিয়ে দেশের মানুষকে খাঁচায় বন্দী করে রেখেছে। দেশে এখন মানুষের বাক, ব্যক্তি, মত প্রকাশের স্বাধীনতাসহ সকল নাগরিক স্বাধীনতা সম্পূর্ণভাবে অপহৃত করা হয়েছে। গণতন্ত্র চিরস্থায়ীভাবে দেশ থেকে বিদায় করে দেয়ার লক্ষ্যেই বারবার যিনি গণতন্ত্রকে স্বৈরাচারের বন্দীশালা থেকে মুক্ত করেছেন সেই আপোষহীন নেত্রী দেশনেত্রী বেগম জিয়াকে আটক করে রাখা হয়েছে। বাংলাদেশের মানুষকে নির্বাক করে রাখতে রাষ্ট্রযন্ত্রকে নির্দয়ভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। দেশে এক অসহনীয় ঘোর দুর্দিন বিরাজমান। এমতাবস্থায় আমি আজকের এই কালো দিনে দল, মত, শ্রেণী, পেশা নির্বিশেষে সকল পর্যায়ের মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে বর্তমান দুঃসহ দুঃশাসন থেকে মুক্তি পেতে সংগ্রামী অভিযাত্রায় সামিল হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য সোচ্চার আওয়াজ তুলতে হবে।