পেশা ছাড়ছে শ্রমিকরা॥ কুষ্টিয়ায় বিলুপ্তির পথে কাসা পিতল শিল্প
এক সময়ে কাসা পিতল শিল্পের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও আধুনিকতার ছোয়ায় এ শিল্প বিলুপ্তির পথে । ফলে এ শিল্পের সাথে জড়িত শিল্প পরিবারগুলোরও দূর্দশার শেষ নেই। মেলামাইনের কারণে কাসা-পিতল শিল্প বিলুপ্ত হতে চললেও এ ঐতিহ্যবাহী শিল্পকে ধরে রেখেছে কুষ্টিয়ার বেশ কিছু কারখানার মালিকরা। বিয়ের অনুষ্ঠান, জন্মদিনের উপহার, অতিথি আপ্যায়নে কাসা পিতল শিল্পের তৈরি সামগ্রীর কোন বিকল্প ছিলনা। জামাই ও আত্মীয় স্বজনদের কাসার পাত্রে খেতে না দিলে তাদেরকে অপমান করা হয়েছে বলে মনে করা হতো। তখনকার চাহিদার আলোকেকুষ্টিয়ায় গড়ে ওঠে ২৫/৩০টি কাসা পিতল কারখানা। কুষ্টিয়া শহরের গড়াই নদীর ধারে বড় বাজার ঘোড়া ঘাটের পাশ দিয়ে পথচারী যাওয়ার সময় কাসা পিতল তৈরি কারখানার বড় বড় হাতুড়ির ঠাস ঠাস শব্দে মানুষ কানে আঙুল দিয়ে হাঁটতো। কাসা-পিতল কারিগরদের হাতুড়ি আর যন্ত্রপাতির টুং টাং শব্দে যেন কানে তালা লেগে যেত।
এক সময়ে কুষ্টিয়ার উৎকৃষ্ট মানের সামগ্রী থালা, কলসি, ড্যাগ, জগ, বালতি, কড়াই, বদনা, ঘটি বাটিসহ নিত্য ব্যবহার্য সামগ্রীর সুনাম ছিল দেশ জুড়ে। আধুনিকতার ছোয়ায় মেলামাইন তৈরি হওয়ায় কদর কমেছে এ শিল্পের তৈজষপত্রের।
প্রয়োজনীয় পূজির অভাব, কাঁচামালের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধি,কাসা পিতলের আসবাবপত্র ব্যবহারে মানুষের অনীহাসহ বিভিন্ন কারণে শত বছরের ঐতিহ্য আজ বিলুপ্তির পথে। ফলে বন্ধ হয়ে গেছে কুষ্টিয়ার ২৫/৩০টি কাসা পিতল কারখানা। এর পরও অনেকেই টিকে আছে এ পেশায়।
বাজারে কাসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর কমে যাওয়ায় মালিকরা কারখানা গুটিয়ে নিয়েছে। এখন মাত্র কয়েকটি কারখানা রয়েছে। এখানে কাজ করে এখন আর তেমন আয় হয়না। যে টাকা আয় হচ্ছে তা দিয়ে সংসার চলছে খুবিই কষ্টে।
বর্তমানে কাঁচামালের সংকট থাকায় বাহির থেকে কাঁচামাল আসছেনা। ফলে কাজ কমে গেছে। যত টুকু কাঁচামাল আমদানী করা হচ্ছে তা দিয়ে কোন রকমে কাজ চলছে। প্রায় ২৬/২৭ বছর ধরে এই কাসা-পিতল শিল্পের সাথে জড়িত। এক সময় এই শিল্পের কদর ছিল। বর্তমানে মেলামাইনের তৈজসপত্র বাজারে আসায় কাসা-পিতলের তৈজসপত্রের কদর আর নেই। আগে শত শত শ্রমিক এই কাসা শিল্পে কাজ করে ভালোভাবে সংসার চালালেও এখন আর আয় না থাকায় শ্রমিকরা পেশা ছেড়ে দিয়েছে।
কাসা-পিতলের কাচামাল একস্থান থেকে অন্য স্থানে নিয়ে যাওয়া হলে পথের মাঝে পুলিশ-বিডিআর-এর ঝামেলার কারনে কাচা মাল সংগ্রহে হিমসিম খেতে হয়। তাছাড়া কাসা-পিতলের তৈজসপত্র পাশ্ববর্তী ভারতে পাচার হওয়ায় এ শিল্প চরম ভাবে বাধা গ্রস্থ হচ্ছে। কুষ্টিয়ার তৈরী কাসা-পিতল উন্নতমানের হলেও তা বাহিরে পাঠানো সম্ভব হচ্ছেনা। যে কারনে এই ব্যবসা দিনদিন ধবংশ হয়ে যাচ্ছে। সরকার যদি এ শিল্পের উপর একটু সহযোগীতা করতো তা হলে পুরাতন এ পেশা আবারও ফিরে পেত তার যৌবন।
কুষ্টিয়ার কাসা-পিতল কারখানার মালিক আশরাফ উদ্দিন জানায়, কাসার তৈরী থালা, বাটি, ঘরা, জগ, ড্যাগ, চামচ এর কদর এখনো রয়েছে। মেলামাইনসহ অন্যান্য শিল্পে সরকার যেভাবে সাহায্য সহযোগীতা করছে তেমনি ভাবে কাসা পিতল শিল্পে সহযোগীতা করলে এ শিল্প টিকিয়ে রাখা সম্ভব। মেলামাইনের কারণে ও অন্যান্য সমস্যার কারণে বন্ধ হওয়ার পথে এ শিল্প। এ শিল্পে যদি প্রয়োজনীয় পৃষ্টপোষকতা না দেওয়া যায় তাহলে অদূর ভবিষ্যতে কাসা পিতল শিল্পের ব্যবহার একেবারেই শূন্যের কোঠায় নেমে আসবে। তাই এ শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে হলে সরকারী পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন বলে ব্যবসায়ীরা অভিমত প্রকাশ করেন।