শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন করব

মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে গতকাল মঙ্গলবার সাভার স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ দলীয় নেতৃবৃন্দ -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার : কারাবন্দী দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার পক্ষে মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধার্ঘ অর্পন করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলামের নেতৃত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটি। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৯ টায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য্যরা জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বিনম্র শ্রদ্ধা জানান এবং কিছু সময়ে নিবরে দাঁড়িয়ে থাকেন তারা। এরপর বেলা ১০টায় নেতৃবৃন্দ আসেন শেরে বাংলানগরে। সেখানে কয়েক হাজার নেতা-কর্মীদের নিয়ে তারা দলের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন। কবরপ্রাঙ্গনে জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের উদ্যোগে মরহুম নেতার রুহের মাগফেরাত কামনা করে বিশেষ মোনাজাতেও অংশ নেন নেতারা।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়া একটি দুর্নীতি মামলায় ৫ বছরের সাজা নিয়ে পুরনো ঢাকার কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি রয়েছেন। কারাবন্দী খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তির দাবি জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। দলের প্রতিষ্ঠাতার কবরে শ্রদ্ধার্ঘ নিবেদন পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এই দাবি জানান তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা দলের চেয়ারম্যান বেগম খালেদা জিয়া  ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পক্ষ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। আমরা এর আগে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর মুক্তিযুদ্ধের শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি।
তিনি বলেন, আজকে দূর্ভাগ্য আমাদের, স্বাধীনতার এবছর পরেও স্বাধীনতার যে মূল চেতনা গণতন্ত্রকে ধূলিসাৎ করে দেয়া হয়েছে, গণতন্ত্রকে হরণ করা হয়েছে। সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলোকে আজকে ধ্বংস করে ফেলা হচ্ছে। বাংলাদেশকে একটা ব্যর্থ রাষ্ট্রের পরিণত করা হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আজকে শহীর রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবরে শ্রদ্ধা নিবেদন করে আমরা শপথ গ্রহন করেছি যে. দেশনেত্রীর মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করব, গণতন্ত্রের মুক্তির জন্য আন্দোলন করব। দেশনেত্রীকে মুক্ত করে আমরা গণতন্ত্রকে ফিরিয়ে নিয়ে এসে এদেশের জনগনের মুক্ত করব।
এই দুইটি কর্মসূচিতে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের মধ্যে খন্দকার মোশাররফ হোসেন, আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, জ্যেষ্ঠ নেতা আলতাফ হোসেন চৌধুরী, এজেডএম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, আদুস সালাম, সিরাজউদ্দিন আহমেদ, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মফিকুল হাসান তৃপ্তি, অনিদ্র্য ইসলাম অমিত, মীর নেওয়াজ আলী নেওয়াজ, সেলিম রেজা হাবিব, আবু আশফাক খন্দকার প্রমুখ নেতৃবৃন্দ ছিলেন।
অঙ্গংগঠনের মধ্যে  আনোয়ার হোসেইন, নুরুল ইসলাম খান নাসিম, আহসানউল্লাহ হাসান, মোরতাজুল করীম বাদরু, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, সাদেক আহমেদ খান, আবুল কালাম আজাদপ্রমূখ নেতৃবৃন্দ  ছিলেন।
জিয়ার কবরে বিএনপি ছাড়াও মহানগর বিএনপি,য্বু দল,স্বেচ্ছাসেবক দল, উলামা দল, মহিলা দল, মস্যজীবী দল, ছাত্র দল, জাসাসসহ বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে পুস্পস্তবক অর্পন করা হয়।
স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে গতকাল সকালে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এবং গুলশানে চেয়ারপার্সনের কার্যালয়ে জাতীয় পতাকা ও দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। স্বাধীনতা দিবস স্মরণে  দল ও অঙ্গসংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুম রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ছবি সম্বলিত বিভিন্ন রঙের পোস্টার বের করা হয়েছে। কয়েকটি জাতীয় দৈনিকে প্রকাশিত হয়েছে ক্রোড়পত্র।দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও  মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দেশবাসীসহ প্রবাসী বাংলাদেশীদের স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছেন। আজ বুধবার বিকালে রাজধানীতে বর্ণাঢ্য স্বাধীনতা র‌্যালী বের করবে নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে।
গ্রেফতারর নিন্দা: গতকাল মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে কুষ্টিয়া জলা প্রশাসক কার্যালয় প্রাঙ্গনে স্বাধীনতা ফলক-এ শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদনের জন্য নেতাকর্মীরা উপস্থিত হলে পুলিশ অতর্কিতে হামলা চালিয়ে জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য সৈয়দ মেহেদী আহমেদ রুমী, সাধারণ সম্পাদক ও কেন্দ্রীয় বিএনপি’র স্থানীয় সরকার বিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ সোহরাব উদ্দিন, বিএনপি নেতা শামীমুল হাসান আরজু, এ কে বিশ^াস বাবু, যুবদল নেতা পিন্টুসহ ১০/১২ নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেফতার করে।  এছাড়াও ফরিদপুর মহান স্বাধীনতা দিবসের এই দিনে বিএনপি’র পক্ষ থেকে স্থানীয় শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করতে গেলে জেলা বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোদারেছ আলী ঈসা, ১নং যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের আহবায়ক জুলফিকার হোসেন জুয়েল, জেলা যুবদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এ কে এম কিবরিয়া স্বপনসহ ২৫ জনের অধিক নেতাকর্মীকে আওয়ামী সশস্ত্র সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর আহত করেছে, আহতরা বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
এইসব ঘটনার নিন্দা জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের এই আক্রমণগুলি সুপরিকল্পিত এবং দেশব্যাপী পুলিশ দিয়ে সরকারী আধিপত্য বিস্তারেরই নগ্ন বহি:প্রকাশ। নির্বাচন, প্রশাসন, আইন-আদালতসহ সবকিছুর ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার অংশ হিসেবেই এখন সার্বজনীন জাতীয় দিবসগুলোকেও একতরফা দলীয়করণ করতেই এই সমস্ত আক্রমণ চালানো হচ্ছে। নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও তাদের ওপর পৈশাচিক আক্রমণগুলি নীলনকশা অনুযায়ী সংঘটিত করা হচ্ছে। মানুষের মৌলিক অধিকারগুলোকে উপেক্ষা করে জনগণকে প্রান্তিক পর্যায়ে ঠেলে দিয়েছে বর্তমান সরকার। সর্বত্র তাদের ব্যর্থতার জন্য যে ধিক্কার উঠেছে সেটিকে দিকভ্রান্ত করতেই বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদেরকে গ্রেফতার ও রক্তাক্ত করা হচ্ছে। উৎপীড়ণ ও জুলুমের পরিকাঠামোর মধ্যেই জীবন-যাপন করতে হচ্ছে বিএনপি নেতাকর্মীদের। দেশের মানুষের জীবন-জীবিকার কোন নিরাপত্তা নেই। বেকারত্ব, কর্মসংস্থানের অভাবে লাখ লাখ মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আশা-আকাঙ্খা ও বেঁচে থাকার স্বপ্ন মানুষের মন থেকে হারিয়ে গেছে। ক্ষমতাসীনদের মদদে সমাজের সর্বত্র বেআইনী সন্ত্রাসীদের আধিপত্য বজায় থাকছে। গুম-খুন ও বিচার বহির্ভূত হত্যাকে সহনীয় করতে সরকার এগুলোকে প্রাত্যহিক কাজে পরিণত করছে। চোখ রাঙানি দিয়ে সরকার জনগণকে শাসন করতে চায়। ন্যায় বিচারকে নির্বাসনে পাঠানো হয়েছে বলেই সরকারী বাহিনীগুলো ও ক্ষমতাসীনদের সন্ত্রাসীরা বিরোধী দলের নেতাকর্মীদেরকে গুম-খুন-মিথ্যা মামলা গ্রেফতার, শারীরিকভাবে আক্রমণসহ দেশব্যাপী রক্ত ঝরাচ্ছে। দেশে এখন রক্তপিপাসুদেরই জয়-জয়কার। দেশের মানুষকে ভয় ও শঙ্কার মধ্যে ডুবিয়ে দিয়ে নির্বিঘেœ দেশ শাসন করতে চাই বর্তমান সরকার। কিন্তু মনুষ্যসমাজে কখনোই কোন স্বৈরশাসক নিজেদের অবৈধ শাসনকে টিকিয়ে রাখতে পারেনি। গণতান্ত্রিক শক্তির উত্থানে স্বৈরাচারের পতন ঘটেছে দেশে-দেশে। বাংলাদেশেও স্বৈরাচারী শাসকের পতন অত্যাসন্ন। কুষ্টিয়ায় গ্রেফতারকৃত নেতাকর্মীদের অবিলম্বে নি:শর্ত মুক্তি এবং ফরিদপুরে বিএনপি নেতাদের ওপর নৃশংস হামলায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির জোর দাবি জানান। ফরিদপুরে বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের আহত নেতাকর্মীদের আশু সুস্থতা কামনা করছি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ