শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

বাদশাহ আকবর কি নিরক্ষর ছিলেন?

মো. জোবায়ের আলী জুয়েল : আজ যার কথা লিখতে বসেছি, তিনি ছিলেন দিল্লীর সর্বাপেক্ষা সফল নরপতি দিল্লীশ্বর, জগদীশ্বর বাদশাহ আকবর, সম্রাট আকবরকে জানতে এই বংশের অতীত ইতিহাস আমাদের অবশ্যই জানার দরকার রয়েছে। আকবর যে বংশে জন্মগ্রহণ করেছিলেন তাঁর প্রতিষ্ঠাতা  বা আদি পূরুষ ছিলেন ইতিহাস প্রসিদ্ধ তৈমূর লং। বাল্যকালে তৈমূর লং অর্থের বিনিময়ে নগরবাসিদের অশ্ব চরাতেন। অল্প কিছুদিনের মধ্যে এই অশ্বের সাহায্যে তিনি সেনাপতি ও মহা-প্রতাপশালী দ্বিগবিজয়ী সম্রাট  হয়েছিলেন। তিনি খোঁড়া ছিলেন বলেই জনগণ তাকে তৈমূর লং বলে ডাকতো। তিনি যদিও স্বয়ং নিরক্ষর ছিলেন তবুও তাঁর রাজ্বত্বে বহু জ্ঞানী, গুণী ও বিদ্বানের সমাহার ছিল এবং তিনি নিজেও অনেক সভা সমাবেশে পান্ডিত্য জাহির করে সেকালে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সমর্থ হয়েছিলেন। তাঁর অধস্তন ষষ্ঠপুরুষ মোগল বাদশাহ বাবর ১৫২৬ খ্রিষ্টাব্দে দিল্লী ও আগ্রার সাম্রাজ্য লাভ করেছিলেন। তাঁর জীবনের ইতিহাস উৎত্থান ও পতনের এক অদ্ভুদ কাহিনী বিদ্যমান ছিলো। তিনি মাত্র ১২ বৎসর বয়সে পিতৃহীন হয়ে ফরগনার সিংহাসন লাভ করেছিলেন। আবার কখন ও তাঁকে এক মুষ্টি অন্যের জন্য লালায়িত হতে দেখি এবং আপনার পরিবারবর্গ ও নিকট আত্মীয়দের শত্রুর কবলে ফেলে প্রাণ নিয়ে দেশ দেশান্তরে পলায়ন করতেও দেখি। তবু এতো কষ্টের মধ্যেও বাবর ফার্সী ও তুর্কী ভাষায় বিদ্বান ছিলেন। তিনি আরবী ভাষাও জানতেন। তাঁর হাতের লিখা ছিল অত্যন্ত সুন্দর। বাবর তাঁর আপন জীবন কাহিনী প্রাঞ্জল তুর্কী ভাষায় লিখে গেছেন। বাদশাহ আকবরের আদেশে বৈরাম খাঁর পুত্র আব্দুর-রহীম খান-খানান এই পুস্তক খানা ১৫৮৯ খ্রিষ্টাব্দে ফারসী ভাষায় অনুবাদ করেছিলেন। এই বইখানা পরবর্তীতে “Memors of Baber” নামে ইংরেজী ভাষায় প্রসিদ্ধ হয়ে রয়েছে। এছাড়াও বাবরের স্বরচিত অনেকগুলি কবিতা ও স্বহস্তে লিখিত রয়েছে। যা হোক আমরা অনুমান করতে পারি যে, বাবর একজন জ্ঞানী ও পন্ডিত ব্যক্তি ছিলেন। বাবরের পুত্র হুমায়ুন একজন বিদ্বান সুলেখক ও কবি ছিলেন। তাঁর রচিত অনেকগুলি ফার্সী কবিতাও রয়েছে। আকবর এমন পিতামহ ও পিতার সন্তান ছিলেন, কিন্তু পরবর্তী সম্রাটদের মত বিদ্বান ছিলেন না। ইতিহাস থেকে জানা যায় আকবর চার বৎসর চার মাস চার দিন বয়সে প্রথম বিদ্যা শিক্ষা আরম্ভ করেছিলেন এবং তাঁর শিক্ষক নির্বাচিত হয়েছিলেন তৎকালীন মোল্লা অসামউদ্দীন নামক একজন ব্যক্তি। কিছুকাল পরে বাদশাহ হুমায়ুন পুত্রের পরীক্ষা গ্রহণ করে দেখলেন যে, পুত্রের লেখাপড়া আশানুরূপ অগ্রগতি হয় নাই। তখন সেই শিক্ষকের পরিবর্তে মোল্লা বায়েজীদ নামক আরেকজন গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। কিন্তু সেই শিক্ষক দ্বারাও আশানুরূপ ফল না পাওয়ায় তখন মৌলনা আব্দুল কাদির নামক আরেকজন শিক্ষক নিযুক্ত করা হয়। তথাপি বাদশাহ আকবর লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করতে পারলেন না। কিছুকাল পরে পিতা হুমায়ুন দেখলেন যে, রাজকুমার কবুতর, ঘোড়া, উট ও শিকারী কুকুর নিয়ে সব সময় ব্যস্ত থাকছেন। কোনো ক্রমেই লেখাপড়া মনোযোগ দিতে পারছেন না। তখন হুমায়ুন তাঁর বন্ধু বৈরাম খাঁর পরামর্শনুযায়ী আকবরকে মোল্লা পীর মোহাম্মদ নামক একজন শিক্ষকের নিকট বিদ্যা শিক্ষার ভার অর্পণ করেন। সুতরাং এরকম প্রতিনিয়ত পাঁচজন শিক্ষকের কাছে পর্যায়ক্রমে অল্প কিছুদিন ধরে ধরে শিক্ষা গ্রহণ করে আকবর অল্পবিস্তর অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে উঠেন, একথা নিঃসন্দেহে বলা যায়। সুতরাং আকবর যে একবারে নিরক্ষর ছিলেন একথা আদৌ ঠিক নয়।
এই সময়েই হুমায়ুন ভারত আক্রমণ করলেন এবং কুমার আকবর ও যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছিলেন। সেই জন্য আকবর আর কোনো ক্রমেই লেখাপড়ায় আর আগ্রহী হয়ে উঠতে পারে নাই। ৯৬৩ হিজরীতে (১৫৫৬ খ্রি.) আকবর রাজ্য লাভ করে দিল্লীর সিংহাসন আরোহণ করেন তখন বাদশাহ আকবরের বয়স ছিল মাত্র ১৪ বছর। বাদশাহ আকবর রাজ্য লাভ করে মীর আব্দুল লতীফের কাছে দিওয়ানী হাফিজ (হাফিজের কবিতাবলী) পড়তে আগ্রহী হয়ে উঠেন। তিনি সব সময় হাফিজের কবিতা ভালবাসতেন এবং হাফিজের অনেক কবিতা ও চরণ তার কন্ঠস্থ ছিল। অনেক সভা সমিতিতে তর্ক করবার সময় তিনি হাফিজের কবিতার প্রায়ই উক্তি প্রয়োগ করতেন। এই হাফিজের কবিতা প্রমাণিত করে তিনি অল্প বিস্তর কিছু বিদ্যা  ও অক্ষর জ্ঞান নিশ্চই অর্জন করেছিলেন। কেননা হাফিজের কবিতা বা রুবাইয়াত পড়তে অবশ্যই বিদ্যার প্রয়োজন রয়েছে। নিরক্ষর ব্যক্তির দ্বারা কিছুতেই এটা সম্ভবপর নয়। বাদশাহ আকবর কে অনেকে নিরক্ষর বলে থাকেন এবং ওর স্বপক্ষে য্ুিক্ত প্রদর্শন করেন তার কারণ হলো এই যে, (১) আজ পর্যন্ত কোনো স্থানে আকবরের হস্তাক্ষর পাওয়া যায় নাই এবং (২) তাঁর পুত্র জাহাঙ্গীর তাঁর জীবনী গ্রন্থে (তুজ্কা জাহাঙ্গীর) তাঁকে উম্মী অর্থাৎ অশিক্ষিত বলেছেন। কিন্তু তাঁর বাল্য জীবনীতে যতটুকু আমরা ইতিহাস পাই (আগেই উল্লেখ করা হয়েছে) তাতে সম্পূর্ণ নিরক্ষর বিবেচনা করা অন্যায় হবে। অবশ্য এখানে উল্লেখ করা যেতে পারে তিনি নিরক্ষর না হলে তাঁর পুত্র তাকে উম্মী বলে সম্মোধন করলেন কেন? এ প্রশ্নের উত্তরে বলা যেতে পারে যে কোনো বিদ্বান বংশের একজন অল্প শিক্ষিত ব্যক্তিকে সেই বংশের অন্য বিদ্বানেরা অল্প শিক্ষিত না বলে “মূর্খই” বলে থাকেন। এটা একটা চিরন্তন প্রথা এবং এই বাংলাদেশে এর ভূরি ভূরি দৃষ্টান্ত দেয়া যেতে পারে। জাহাঙ্গীর ও সেই কারণে তাঁর অল্প শিক্ষিত পিতাকে উম্মী বলেছেন এতে কোনো সন্দেহ নাই। ঐতিহাসিক বদাউনীর দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে বাদশাহ আকবর নিরক্ষর ছিলেন না। বদাউনী আকবর বাদশাহ সর্ম্পকে লিখেছেন লেখার ভঙ্গি ও ভাষা অনুমোদন করতে বিদ্যার প্রয়োজন হয়, নিরক্ষর ব্যক্তি কখনই এটা পারেনা। ৯৯০ হিজরী মহাভারতের অনুবাদ বর্ণনার সময় তিনি লিখেছিলেন সম্রাট কয়েক রাত্রি নকীব খাঁকে মহাভারতের ভাবগুলি জানিয়ে দিতেন নকীর খাঁ ফারসী ভাষায় তা’ লিপিবদ্ধ করে রাখতেন। একজন বিদ্বান অনুবাদককে মহাভারতের মত গ্রন্থের ভাবার্থ বুঝিয়ে দেয়া নিরক্ষর ব্যক্তির কাজ হতে পারে না।
সেকালের ইতিহাস থেকে জানতে পারা যায় পাঁচটি ফার্সী ও পাঁচটি হিন্দি কবিতা স্বয়ং আকবরের স্বহস্তে রচিত বলে অনুমান করা হয়। কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এগুলিন কোন কবির রচিত। আকবরের নামে প্রকাশিত মাত্র। এরূপ সন্দেহ করার কোন কারণ নেই। সেকালের ফার্সী, আরবী, হিন্দী ও সংস্কৃতি ভাষার কবির অভাব ছিল না। আবুল ফজল, ফৈজী ও আগরা প্রবাসী উর্ফীর মতো উচুঁ দরের কবিরা তৎকালে আকবরের রাজদরবার অলঙ্কৃত করেছিলেন। এছাড়াও বদউনী অনেকগুলি কবির তালিকা দিয়েছিলেন তাঁরা সকলেই আকবরের অনুগ্রহ প্রার্থী ছিলেন। আকবরের অর্থের ও অভাব ছিল না। তিনি কবি রূপে বিখ্যাত হওয়ার ইচ্ছা পোষণ করলে খুব সহজেই সে সময় তা’হতে পারতেন। কিন্তু পরবর্তীতে আমরা তা’দেখিনা। ইচ্ছা করলেই তিনি সে সময় অন্যের লেখনির সাহায্যে নিজ নাম দিয়ে অনেক উৎকৃষ্ট কবিতার বই ছাপতে পারতেন। কিন্তু তিনি তা কখনই করেন নাই।
এবার আকবর যে, নিরক্ষর ছিলেন না এবং তিনি স্বহস্তে ফার্সী কবিতা রচনা করেছিলেন তার প্রমাণ উপস্থাপন করবার চেষ্টা করবো। একবার (৯৯৭ হিজরী) ১৫৮৯ খ্রিষ্টাব্দে বাদশাহ আকবর তার স¤্রাজ্ঞী সহ ভূস্বর্গ কাশ্মীরে বেড়াতে গিয়েছিলেন। সেখানকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে তিনি আবেগে আপ্লুত হয়ে আবুল ফজলকে (আইন-ই-আকবর নামা গ্রন্থের প্রণেতা) বলেছিলেন আমার মাতা মরিয়ম-মকানী (হামিদা বানু) এখানে থাকলে তিনি এই দৃশ্য দেখে আনন্দ পেতেন। অতএব, আমার মাতাকে একখানা আর্জদাশু (বিনয় পত্র) লিখে দাও, যদি তিনি কষ্ট করে এখানে একবার আসেন তবে আমি নিজেকে অত্যন্ত সৌভাগ্যবান মনে করবো। যখন আবুল ফজল ঐ পত্রখানা লিখলেন তাঁর পরেই বাদশাহ আকবর ঐ নিচে দু’লাইন ফার্সী কবিতা লিখেছিলেন। কবিতাটা পাঠকের কৌতূহল নিবৃত্তির জন্য এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো।
“হাজী ব-সূয়ে কাবা রওয়দ অজ বরাস্ত হজ্ব।
য়ারব! বুওয়দ, কি কাবা বি-আয়দব-সূয়ে মা।
হাজী (হজ্বযাত্রী)রা  কাবাতে (মক্কার প্রধান উপাসনালয়ে) হজ্ব (তীর্থ) করতে যেয়ে থাকে। হে আল্লাহ! এমন হউক যে (আমার) কাবা (কাবার মত ইবাদতময় ব্যক্তি অর্থাৎ মাতা) আমার দিকে আসেন। অর্থাৎ যাত্রীরা হজ্ব করতে পবিত্র তীর্থস্থানে তো গিয়াই থাকে হে আল্লাহ! আমার ইবাদতময় হজ্ব স্বরূপা মাতাকে আমার কাছে এনে দাও।
আকবর তাঁর প্রিয় সেনাপতি (পার্ষদ) রাজা বীরবলের মৃত্যু সংবাদ (যুদ্ধক্ষেত্রে ১৫৮৬ খ্রিষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারি মাসে মারা যান) পেয়ে রাজ সভাতে বসে স্বহস্তে কবিতা লিখেছিলেন।
দীন জানি সব দীহ্ন এক দুরায়ো দুঃসহ দুঃখে
সে দুঃখ হম কঁহ দীহ্ন, কচ্ছু না রাখো বীরবল।
দীন দুঃখী জেনে তাঁর যথা সর্ব্বস্ব দান করেছেন। একমাত্র দুৎসহ দুঃখ কাউকেই কখনও দেন নাই। সেই দুঃখ এখন আমাকে (বাদশাহ আকবরকে) দিয়ে গেলেন। নিজের জন্য বীরবল কিছুই রেখে গেলেন না।
বাদশাহ আকবর কবিতায় আরো বলেছেন-
গিরিয়া কর্দম জেগ মৎ মুজবে খুশ-হালী শুদ্।
রেখত্ম খুলে দিল্ অজ্ দীদা, দীলম্ আলী শুদ্ ।
তোমার জন্য শোক করে ক্রন্দন করলাম, তাতে আমার উপকার হলো। আমি চক্ষু থেকে অশ্রুরূপ রক্তপাত করলাম, তাতে আমার হৃদয় শোক শূন্য হলো।
আরো এক কবিতায় বাদশাহ আকবর আমাদের উপহার দিচ্ছেন সুন্দর এক উপদেশ-
“দোশ বীনা বকুয়ে ম্যা ফারোশাঁ প্যামনা-এ-ম্যা বজরে পরীদম ॥
অকনু জে খুমার, সরগরানম! জর দাদম, ও দর্দ র্স খরীদম” ॥
গতরাত্রে মদ্য বিক্রেতাদের পল্লীতে ধন দিয়ে, একপাত্র মদ্য ক্রয় করলাম। এখন খোয়ারীতে মাথাভার হয়েছে (হায়) অর্থ ব্যয় করলাম ও (তার পরিবর্তে) মাথা ব্যথা ক্রয় করলাম।
মন, বঙ্গ নমী-খুরম, ম্যা আরেদ্
মন্ চঙ্গ নমী জনম ন্যা আরেদ্।
আমি ভাঙ খাইনা, মদ্য আনো, আমি চঙ বাজাই না, বাঁশী আনো। অথবা, আমি ভাঙ খাইনা, আনিও না। আমি চঙ বাজাই না আনিও না।
বাদশাহ আকবরের শেষ একটা চরণ উদ্বৃতি দিয়ে এই প্রবন্ধের ইতি টানছি-
জা কো জস্ হ্যায় জগৎ মে, জগৎ সরা হ্যায় জাহি,
তা’ কো জীবন সফল হ্যায়, কহৎ আকবর সাহি।
যার জগতে যশ আছে ও যে জগৎকে অনিত্য বাসস্থান (সরাইখানা) বিবেচনা করে, আকবর শাহ্ বলছেন, তাঁর জীবনই সার্থক।
এখানে উপসংহারে বলা যায় আকবর যদি নিরক্ষর হতেন, কিছু শিক্ষিত না হতেন তা’ হলে অন্য লেখকদের লেখার ভাব ও ভাষা নিয়ে কিভাবে সমালোচনা করতেন? আমরা জানি বাদশাহ আকবর সদা সর্বদা পন্ডিত মন্ডলী দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। তাঁদের সমালোচনা তর্ক, বির্তক সর্বক্ষণ শুনতেন। এইভাবে আকবর তাঁর অসাধারণ প্রতিভা বলে সামান্য অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হয়েও জেনে শুনে প্রচুর জ্ঞান লাভ করেছিলেন। এই জ্ঞানের বলেই শিক্ষিত পন্ডিতদের মতো নানা বিষয়ে সমালোচনা করতে পারতেন এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। নিজ হস্তে অক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে তিনি যে কবিতা লিখতে পারতেন বাদশাহ আকবরের রচিত এই প্রবন্ধে রচিত পাঁচটি ফার্সী কবিতাই তারই যথার্থ প্রমাণ মেলে। তিনি নিজে অল্প শিক্ষিত ছিলেন বলেই সদা সর্বদা বিদ্বান মন্ডলীর দ্বারা পরিবেষ্টিত থাকতেন। তাদের জ্ঞানগর্ভ আলাপাদি শ্রবণ করতেন। তাদের কে নিয়ে অনেক বিষয়ে জ্ঞান আহরণ করতেন। তাতেই তিনি অনেক কিছু শিখেছিলেন। যদি তিনি নিরক্ষর থাকতেন, তবে কখনই তিনি তাঁর দরবারে বিদ্বান মন্ডলীর সঙ্গে তর্কে লিপ্ত হতে পারতেন না। শুধু তাই নয় তাঁর অসাধারণ জ্ঞান সত্ত্বার কাছে সেকালের অনেক প্রসিদ্ধ প্রসিদ্ধ পন্ডিতগণকেও পরাভব স্বীকার করতে হয়েছে। তাঁর ছিল অসাধারণ জ্ঞান পিপাসা, স্মৃতি শক্তি এবং শিল্পানুরাগ। অসাধারণ প্রতিভা বলে তিনি প্রজাদের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা অর্জন করেন। তিনি মুসলমান, হিন্দু, বৌদ্ধ, জৈন, ফার্সী, খ্রিষ্টান প্রভৃতি ধর্মের পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের সঙ্গে ধর্ম বিষয়ে গভীর আলোচনায় দিনের পর দিন অতিবাহিত করতেন এবং গভীর রাত্রি পর্যন্ত তাদের নিকটে ধর্ম ব্যাখ্যা শুনতেন। সেই জন্য বাদশাহ আকবরকে সেকালের মোগল বাদশাহদের মধ্যে সবচেয়ে বিজ্ঞ ও পরক্রমশালী সফল নরপতি বলে অ্যাখ্যা দেওয়া হতো। স্বতঃস্ফুর্তভাবে ডাকা হতো দিল্লীশ্বরঃ জগদীশ্বরঃ বাদশাহ আকবর।
তথ্যসূত্র :
তুজকা জাহাঙ্গীর (ফার্সী গ্রন্থ) : সম্রাট জাহাঙ্গীর
বাবর নামা : বাদশাহ বাবর
আইন-ই-আকবরী : আবুল ফজল
আকবর নামা : আবুল ফজল
বাংলা, ভারতের ইতিহাস : ড. মহোর আলী
বাদশাহ আকবর : ঐতিহাসিক বাদউনী
লেখক : সাহিত্যিক, কলামিস্ট, গবেষক, ইতিহাসবিদ ও অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ