বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের সমস্যা সমাধানে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা

খুলনা অফিস : রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল শ্রমিকদের মজুরি কমিশন নিয়ে বিজেএমসির দেয়া প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন না করায় ক্ষুব্ধ সাধারণ শ্রমিকরা। আগামী ৪ দিনের কর্মসূচি কঠোরভাবে পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। এদিকে শ্রমিকদের নয়া কর্মসূচির বিষয়ে বিজেএমসি খুলনা জোনাল আফিসে সতর্কতামূলক জরুরি  বৈঠক করেছে ৯ পাটকলের প্রকল্প প্রধানরা। কঠোর আন্দোলনে রাজপথ আবারও প্রকম্পিত হতে পারে বলে জানিয়েছে শ্রমিকরা।
সমস্যা শুধু খেটেখাওয়া সাধারণ শ্রমিকদের বিষয় নিয়ে। সরকারের অন্য দপ্তরের কোনো দাবি যত সহজে মেনে নেওয়া হয় সেভাবে আমাদের দাবি মানা হয় না। অন্দোলন সংগ্রাম আমাদের কাজ না। আমরা কাজ করে ন্যায্য মজুরি নিয়ে মোটা ভাত মোটা কাপড় হলেই খুশি। ৮ সপ্তাহ কাজ করে এক সপ্তাহের মজুরি হাতে পেলাম এ দিয়ে বাকি দোকানে টাকা দিব না চাল ডাল কিনব। এমন অসহায় আকুতি নিয়ে বললেন ক্রিসেন্ট জুট মিলের শ্রমিক রাজু। তার ঘরে ২ ছেলে ২ মেয়ে পিতা-মাতাসহ পরিবারের সদস্য ৮ জন। এ দুর্মূল্যের বাজারে এভাবে চলা যায়। আমরা বর্তমান ভিক্ষুকদের চেয়েও নিম্ন জীবনযাপন করছি বলে তিনি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলেন।
প্লাটিনাম জুট মিলের শ্রমিক অজিয়ার রহমান জানান, তার এক ছেলে ও এক মেয়ে কলেজে লেখাপড়া করতো। গত কয়েক মাস হয় তাদের কলেজে যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে অর্থাভাবে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খালিশপুর জুট মিলের এক শ্রমিক জানান, তারা অন্য মিলের বদলি শ্রমিকদের চেয়েও কম মজুরি পান। তবুও কষ্ট করে একটি ছেলেকে লেখাপড়া করাচ্ছেন। সামনে এইচএসসি পরীক্ষা। তার ছেলেকে কলেজে পরীক্ষা দিতে পাঠানোর মত কোনো অর্থ তার হাতে নেই। ছেলেকে কি খাওয়াবে তার যোগাড় নেই। এভাবে কি চলা যায়? আমরা কি মানুষ না? আমাদের জন্য বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী মিলটি চালু করে রুটি রুজির ব্যবস্থা করেছিলেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তিনি বলেন, তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অতি দয়ালু, তার কাছে কি শ্রমিকদের এ দূর্দশার কথা পৌঁছে না? তিনি আমাদের জন্য এত কিছু করেছেন আর এতটুকু করতে পারবেন না? এটা তিনি বিশ্বাস করেন না। তিনি বলেন, শ্রমিক বান্ধব প্রধানমন্ত্রী শ্রমিকদের জন্য অনেক কিছু করতে পারেন বলে তার বিশ্বাস। তিনি এখনও বিশ্বাস করেন প্রধানমন্ত্রীর কাছে সকল বিষয় জানালে তিনি ব্যবস্থা না নিয়ে পারবেন না।
এদিকে শ্রমিকদের নয়া আন্দোলন কর্মসূচিতে ১ এপ্রিল লাল পতাকা হাতে বিক্ষোভ মিছিল, ২, ৩, ৪ তারিখ ৭২ ঘন্টা ধর্মঘট এবং প্রতিদিন রেলপথ ও রাজপথ অবরোধ করবে শ্রমিকরা বলে জানায় শ্রমীক লীগ নেতা ও ক্রিসেন্ট জুট মিল সিবিএর সভাপতি মো. মুরাদ হোসেন। বিজেএমসি তাদের সাথে ওয়াদা খেলাপ করেছে। তাই তাদের সাথে কোনো বৈঠকে নেই তারা। এ ৪ দিনের কর্মসূচিতে যদি বিজেএমসি তথা মন্ত্রণালয়ের শ্রমিকদের দাবির বিষয় নিয়ে বরফ না গললে ৭ এপ্রিল ঢাকায় সকল পাটকলের শ্রমিক নেতাদের নিয়ে বৈঠক হবে। বৈঠকে টানা কঠোর কর্মসূচির সিদ্ধান্ত হতে পারে বলে তিনি জানান।
এদিকে খুলনা অঞ্চলের ৯ পাটকলের প্রকল্প প্রধানদের বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে ক্রিসেন্ট জুট মিলের প্রকল্প প্রধান গাজী শাহাদাত হোসেন জানান, তারা বিকেলে বিজেএমসি খুলনা জোন অফিসে জরুরি বৈঠক করেন শ্রমিকদের আন্দোলন বিষয়ে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য। যাতে মিলের কোনো ক্ষয়ক্ষতি, শ্রমিকদের কোনো ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হতে না হয়।
পাটকল শ্রমিকরা মজুরি কমিশন, মিলে পাটক্রয়ের অর্থ প্রদান, বদলি শ্রমিকদের স্থায়ীকরণসহ তাদের ৯ দফা দাবি পূরণের লক্ষ্যে ৭ দিনের কর্মসূচির শেষে দ্বিতীয় দফায় ৪ দিনের কর্মসূচি হাতে নিয়েছে। আজ লাল পতাকা হাতে নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যদিয়ে এ কর্মসূচি শুরু হবে। তবে এ অঞ্চলের ৬ সংসদ সদস্যের সাথে বৈঠক করে তাদের নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করলে হয়তো কোনো সমাধান হতে পারে পারে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ