লাইফ সাপোর্টেই অস্ত্রোপচার নুসরাতের আপডেট যাবে সিঙ্গাপুরে
স্টাফ রিপোর্টার : ফেনীর সোনাগাজীতে অগ্নিদগ্ধ মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতের অস্ত্রোপচার হয়েছে। ভেন্টিলেশনে (লাইফ সাপোর্ট) রেখেই গতকাল সকাল সোয়া ১০টা থেকে দুই ঘণ্টাব্যাপী এ অস্ত্রোপচার চলে। তার ফুসফুস সক্রিয় করতে এ অস্ত্রোপচার হয়েছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকেরা। ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থীকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আলোচিত শম্পা সন্দেহে পপি নামে এক ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ।
সিঙ্গাপুরের চিকিৎসকদের পরামর্শে এ অস্ত্রোপচার হয়েছে উল্লেখ করে নুসরাতের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডে প্রধান এবং শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের প্রকল্প পরিচালক প্রফেসর ডা. আবুল কালাম জানিয়েছেন, নুসরাতের চিকিৎসার আপডেট রিপোর্ট নিয়মিত সিঙ্গাপুরে পাঠানো হবে।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে তিনি বলেন, আজকের অপারেশনটা গত সোমবার করার কথা ছিল। যেহেতু ওর অবস্থার অবনতি হয় তাই আমরা ভেন্টিলেশনে নিয়ে অপারেশন করি। তার পরিবারও আমাদের সঙ্গে চিকিৎসা ব্যবস্থা নিয়ে একমত হয়েছে। মেয়েটির অবস্থা কালকের চেয়ে আজ (মঙ্গলবার) বেটার।
ডা. আবুল কালাম বলেন, আমরা সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি। তারাও আমাদের মেডিকেল বোর্ডের অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্তে একমত পোষণ করেন। উভয় সিদ্ধান্তে নুসরাতের অস্ত্রোপচার সম্পন্ন হয়।
তিনি বলেন, আমরা ওর পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো প্রতিদিন সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালকে মেইল করব। কোনো কিছু মনিটর করতে হলে ওরা আমাদের মেইলে জানাবে। প্রতিদিন তাদের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ থাকবে। এ ছাড়া ১৫ তারিখ ওদের সঙ্গে আমাদের একটা প্রোগ্রাম আছে এখানে। তারা বাংলাদেশে পাঁচ দিন থাকবে। সে পর্যন্ত যদি মেয়েটি ভালো থাকে তাহলে তাকে ওরা দেখবে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম নাসির উদ্দিন বলেন, আমরা ওর (নুসরাত) জন্য দিনরাত কাজ করছি। আপনারা সবাই দোয়া করবেন। মহান সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছুই সম্ভব হয়ে যায়। আমাদের প্রত্যাশা সে ভালো হবেই। পাশাপাশি আমাদের যদি আরও কিছু করার থাকে আমরা তাও করব। যেহেতু মেয়েটিকে দেশের বাইরে নেয়া যাচ্ছে না, তাই আমরা তার পরীক্ষা-নিরীক্ষার রিপোর্টগুলো সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালকে জানিয়েছি তাদের রিপোর্টগুলো পাঠাচ্ছি।
গত ২৭ মার্চ নুসরাতকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করেন সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাহ-এমন অভিযোগ এনে ছাত্রীর মা বাদী হয়ে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন। মামলার পর পুলিশ তাৎক্ষণিক অধ্যক্ষকে গ্রেফতার করে আদালতের মাধ্যমে জেলহাজতে পাঠান। ওই ঘটনার পর থেকে শিক্ষার্থীদের একটি অংশ অধ্যক্ষের মুক্তির দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করে। অন্যদিকে আরেকটি অংশ শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে মানববন্ধন করে।
এ ঘটনার পর গত রোববার থেকে আগামী ১৭ এপ্রিল পর্যন্ত মাদরাসার স্বাভাবিক কার্যক্রম ও অনির্দিষ্টকালের জন্য হোস্টেল বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে কর্তৃপক্ষ।
এদিকে ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষার্থীকে (১৮) কেরোসিন ঢেলে পুড়িয়ে হত্যাচেষ্টার ঘটনায় আলোচিত শম্পা সন্দেহে পপি নামে এক ছাত্রীকে আটক করেছে পুলিশ। গতকাল সকালে তাকে আটক করা হয়। আটকের বিষয়টি নিশ্চিত করেন ফেনীর পুলিশ সুপার এসএম জাহাঙ্গীর আলম সরকার। মামলার তদন্তের স্বার্থে এ বিষয়ে আর কোনো তথ্য দিতে রাজি হননি তিনি।
আটক উম্মে সুলতানা পপি সোনাগাজী উপজেলার মঙ্গলকান্দি ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর গ্রামের শহিদুল ইসলামের মেয়ে। সে ওই মাদরাসার ছাত্রী রাফির শ্লীলতাহানির ঘটনায় আটক অধ্যক্ষ এসএম সিরাজ উদ-দৌলার শ্যালিকার মেয়ে। সে একই মাদরাসা থেকে এবার আলিম পরীক্ষা দিচ্ছে।
তিনি বলেন, অগ্নিদগ্ধের সময় কেউ একজন ‘শম্পা চল’ বলেছেন এমন শব্দ অগ্নিদগ্ধ ছাত্রী শুনেছেন বলে চিকিৎসকদের কাছে তথ্য দিয়েছেন। সেই সূত্রে শম্পা সন্দেহে পপিকে আটক করে পুলিশ। সে ওই মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১০ জনকে আটক করা হয়েছে।
এর আগে ‘ডাইং ডিক্লারেশন’ হিসেবে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন ছাত্রী তার শরীরে আগুন দেয়া বোরকা পরা চারজনের মধ্যে একজনের নাম ‘শম্পা’ বলে জানিয়েছেন। তার দেয়া বক্তব্য মামলার বিচারকাজে ব্যবহৃত হতে পারে বলে জানায় পুলিশ।
এর আগে দুপুরে সোনাগাজীর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, শম্পা বা আরেকটা নাম আছে আমরা শুনেছি। নামটা কিন্তু কনফার্ম নয়। তারপরও ওই নামের মেয়েটিকে আমরা জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করেছি। তাকে আমরা তদন্তের স্বার্থে জিজ্ঞাসাবাদ করব।
উল্লেখ্য, গত শনিবার (৬ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসা কেন্দ্রে আলিম পরীক্ষা দিতে গেলে ওই ছাত্রীর গায়ে পেট্রল ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। দগ্ধ ছাত্রীর বাড়ি সোনাগাজী পৌরসভার চরচান্দিয়া গ্রামে।
এ ঘটনায় সোমবার রাতে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলা ও পৌর কাউন্সিলর মুকছুদ আলমসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন অগ্নিদগ্ধ ছাত্রীর বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান। এর আগে ২৭ এপ্রিল ওই ছাত্রীকে নিজ কক্ষে নিয়ে শ্লীলতাহানির অভিযোগে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ-দৌলাকে আটক করে পুলিশ। ওই ঘটনার পর থেকে তিনি কারাগারে। এ ঘটনায় ওই ছাত্রীর মা শিরিন আক্তার বাদী হয়ে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেছেন।