শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

জয়পুরহাটে বাস দুর্ঘটনায় ৮ জন নিহত আহত ৩২

জয়পুরহাট সংবাদদাতা : জয়পুরহাট-বগুড়া মহাসড়কের সদর উপজেলার বানিয়াপাড়া এলাকায় বগুড়া থেকে জয়পুরহাট অভিমুখে আসা যাত্রীবাহী বাস মীর পরিবহন চালকের বেপোরয়া বাস চালানোর কারণে নিয়ন্ত্রন হারিয়ে রাস্তার পার্শ্বে খাদে পড়ে ঘটনাস্থলেই ৩ শিশুসহ ৮ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিহত ৫ জনের পরিচয় পাওয়া গেলেও বাকি ৩ জনের পরিচয় পাওয়া যায়নি।
নিহতরা হলেন, জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার রতনপুর গ্রামের সামসুদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া (৬৫),একই উপজেলার কড়িয়া গ্রামের হুমায়ুন কবিরের ৭ মাসের শিশুকন্যা হুমাইদা, কালাই উপজেলার পাঁচশিরা গ্রামের আবু বক্করের স্ত্রী হেনা পারভীন (৪৫), গাইবান্ধা জেলার আমবাড়ির আব্দুল জলিলের মেয়ে জয়পুরহাট নার্সিং ইনস্টিটিউটের ১ম বর্ষের ছাত্রী শারমিন (১৯), রংপুর জেলার পীরগঞ্জ উপজেলার আলামপুর গ্রামের দিলীপ মুর্মুর শিশুকন্যা রীপা মুর্মু (৩)। নিহত অপর ৩ জনের মধ্যে ৩ বছরের শিশু ছেলে ও ২ জন ৪০-৫০ বছর বয়সের নারীর পরিচয় পাওয়া যায়নি। পরিচয় পাওয়া নিহত ৫ জনের মরদেহ পরিবারের কাছে সন্ধ্যায় হস্তান্তর করা হয়। এসময় জয়পুরহাট পৌরসভার পক্ষ থেকে ৬ হাজার ও সরকারীভাবে ৬ হাজার নিহতের প্রত্যেক পরিবারকে মোট ১২ হাজার করে নগদ অর্থ প্রদান করেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায়।
এ ঘটনায় আহত হয়ে ৩২ জন জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ভর্তি হন। আহতদের মধ্যে ১৩ জনের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় তাদের বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে।
ঘটনাস্থল ঘুরে জানা গেছে, বগুড়া থেকে জয়পুরহাটের দিকে আসা যাত্রীবাহী বাস মীর পরিবহন (এমপি) (ঢাকা-মেট্রো-জ-০৪-০৩৫০) বাসটি দুপুর দেড়টার দিকে বাসস্ট্যান্ড থেকে ৩ কিঃ মিঃ দূরে বানিয়াপাড়া নামক স্থানে পুলিশ বক্সের নিকট একটি ছোট ব্রীজ পার হবার সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে রাস্তার পার্শ্বে খাদে পড়ে উল্টে যায়।
আহতরা হলেন, জয়পুরহাট শহরের চিত্রাপাড়া মহল্লার টিএমএসএস মেডিকেল কলেজের ছাত্রী সোহানা আকতার মিশু (২২), বিশ্বাসপাড়া মহল্লার তারিন (৫৬), খন্জনপুর মহল্লার সঞ্জয় বিশ্বাস (৪০), সাহেবপাড়া মহল্লার অরুন (৩০), ধারকী গ্রামের ফেরদৌস (৩৭), জেলার পাঁচবিবি উপজেলার কড়িয়া গ্রামের আয়েশা সিদ্দিকা (২০), কালাই উপজেলার কাদিরপুর গ্রামের আবু বক্কর সিদ্দিক (৪৬), একই উপজেলার আওড়া গ্রামের আলাউদ্দিন (৩০), মতিউর (৩৫), নওগাঁ জেলার বদলগাছী উপজেলার সিহাবুল (২৪), ধামুইরহাট উপজেলার সলপী গ্রামের মুকুল (৩৬)সহ বর্তমান জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে ১৯ জন চিকিৎসাধীন রয়েছে।
আহত ফেরদৌস, শিহাব ও আবু বক্কর সিদ্দিকসহ বাসের একাধিক যাত্রীর সাথে কথা বলে জানা যায়, বগুড়া থেকে কালাই পর্যন্ত নির্ধারিত সময় বেশী পার করায় জয়পুরহাট পাওয়ার ১০ কি.মি এলাকা বটতলী পার হয়ে বাসটি বেপোরোয়া হয়ে চালানোর সময় ব্রীজ পার হবার পর দ্রুত গতি থাকায় হঠাৎ করেই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পার্শ্বে খাদে পড়ে উল্টে যায়।
ফায়ার সার্ভিস জয়পুরহাট স্টেশনের উপ-সহকারী পরিচালক নিজাম উদ্দিন জানান, দুপুর দেড়টার দিকে আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে ৩টি ইউনিট নিয়ে উদ্ধার কাজে অংশগ্রহণ করি। এসময় ঘটনাস্থল থেকে ৮ জনের লাশ উদ্ধার ও আহতদের জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে পাঠানো হয়।
জয়পুরহাট সদর থানার ওসি (তদন্ত) মোমিনুল হক জানান, এ ঘটনায় গাড়ীর ড্রাইভার ও হেলপার এখন পর্যন্ত পলাতক এবং তাদের বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি চলছে।
জয়পুরহাটে হঠাৎ করে দুপুর বেলায় একসঙ্গে ৮ জন মারা যাওয়ার ঘটনায় এলাকায় শোকের ছায়া নেমে পড়েছে। পুরো জেলাবাসী শোকে কাতর।
এ ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্য এ্যড. সামছুল আলম দুদু, জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাকির হোসেন, পুলিশ সুপার রশিদুল হাসান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন চন্দ্র রায়, সদর উপজেলা ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হাসিবুল আলমসহ বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ জয়পুরহাট জেলা আধুনিক হাসপাতালে আহতদের খোঁজ খবর নেন ও সুচিকিৎসার জন্য নির্দেশ দেন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ