বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

দুর্বার আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে

গতকাল সোমবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ফোরামের উদ্যোগে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত প্রতিবাদ সভায় বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -সংগ্রাম

স্টাফ রিপোর্টার: দেশ এখন এক দলের হাতে স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে পড়ে গেছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দেশে এখন আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। এই নৈরাজ্য ও অপশাসনকে সরাতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দলমতনির্বিশেষ সকলে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই পাথর সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে। একইসাথে বর্তমান জাতীয় সংসদ জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী সংসদ নয় দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, এরা জোর করে ক্ষমতায় থাকতে চায়। ঠাকুরগাঁও-৩ আসনে সংসদ সদস্য জাহিদুর রহমান জাহিদের পথ অনুসরণ করে আরো কয়েকজন শপথ নেয়ার গুঞ্জনের মধ্যে গতকাল সোমবার দুপুরে এক প্রতিবাদ সভায় বিএনপি মহাসচিব এই মন্তব্য করেন। যদিও মির্জা ফখরুলের এই ঘোষণার কিছু সময় পর বিএনপি চার সংসদ সদস্য শপথ নিয়েছেন।
জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে বৃহত্তর ময়মনসিংহ ফোরামের উদ্যোগে দলের চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া ও যুবদলের সাধারণ সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর মুক্তি এবং দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মিথ্যা মামলা প্রত্যাহারের দাবিতে এই সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। দলের নির্বাহী কমিটির সদস্য সামসুজ্জামান সুরজের সভাপতিত্বে এবং এসএম ওবায়দুল হক নাসিরের পরিচালানায় প্রতিবাদ সভায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান, সাংগঠনিক সম্পাদক সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, সমাজ কল্যাণ বিষয়ক সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, নির্বাহী কমিটির সদস্য হায়দার আলী লেলিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদের জুয়েল, যুব দলের এসএম জাহাঙ্গীর, ছাত্র দলের আকরামুল হাসান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, এখন যে সরকার আছে এই সরকার জনগণের দ্বারা নির্বাচিত সরকার নয়। বিগত যে নির্বাচন হয়েছে সেই নির্বাচনে জনগণকে অংশগ্রহণ করতে দেয়া হয়নি। আমরা সবাই জানি, দেশে এখন গণতন্ত্রের বিন্দুমাত্র নেই, লেশমাত্র নেই। এটা শুধু আমাদের কথা নয়, বিদেশে-বাইরে বিভিন্ন গণমাধ্যমের ভেতরে পোস্ট এডিটোরিয়ালের লেখাগুলোতে বার বার উঠে আসছে।
দেশে এখন আইনের শাসন নেই মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশে এখন জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক কোনো সংসদ নেই, সরকার নেই। দেশ এখন এক দলের হাতে একটা স্বেচ্ছাচারিতার মধ্যে পড়ে গেছে।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, এই আওয়ামী লীগ ২০০৮ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে, সুচিন্তিতভাবে, অত্যন্ত গুছিয়ে একদলীয় শাসনের দিকে যাওয়া শুরু করেছে। এই কথাটা আমরা বার বার বলেছি। কিন্তু আমাদের দুর্ভাগ্য যে আমরা সেটাকে সেভাবে প্রতিরোধ করতে পারি নাই। কারণ আওয়ামী লীগ যে দুঃশাসনের মধ্য দিয়ে, সকল রাষ্ট্রযন্ত্রকে নিয়ন্ত্রনের মধ্যে নিয়ে যে নজিরবিহীন নির্যাতন-নিপীড়ন চালিয়েছে, আমাদের লক্ষ লক্ষ নেতা-কর্মীদের মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতার করেছে, নির্যাতন করেছে, আমাদের সিনিয়র নেতাসহ অনেক নেতাকে গুম করে দিয়েছি, হত্যা করেছে। এই নজিরবিহীন নির্যাতনের মধ্য দিয়ে এই ফ্যাসিস্টদের বিরুদ্ধে সেই গণতান্ত্রিক শক্তির লড়াই সবসময় অসামঞ্জস্যপূর্ণ হয়।
তিনি বলন, খুব কঠিন সংগ্রাম, এই সংকট খুব কঠিন। এই সংকটকে শুধুমাত্র হাসি-খেলার মধ্য দিয়ে উত্তরণ সম্ভব নয়। বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দ্বীপ নয়, বাংলাদেশ সমগ্র বিশ্বের সঙ্গে একটি দেশ, বিশ্ব রাজনীতির সঙ্গেও বাংলাদেশের রাজনীতির সম্পর্ক রয়েছে। আজকে যদি আমরা আঞ্চলিক রাজনীতির দিকে তাকাই, আমরা যদি বিশ্ব রাজনীতির দিকে তাকাই তাহলে দেখবো সবখানেই একটা কর্তৃত্ববাদী শাসন ব্যবস্থার জন্য সবাই ঝুঁকে পড়েছে। আমরা যদি চারদিকে তাকিয়ে দেখি তাহলে দেখব- গণতন্ত্র কেনো জানি দিন দিন পিছিয়ে যাচ্ছে। যারা গণতন্ত্রের কথা বলেন, গণতন্ত্রের কথা বলতেন তারা সেইভাবে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন না।
তৃণমূল থেকে সংগঠন শক্তিশালী করা হচেছ উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, আমাদের সংগঠনকে আরো শক্তিশালী করতে চাই, আমাদের সংগঠনকে একটা অত্যন্ত ডায়নামিক সংগঠনে পরিণত করে দেশনেত্রীর মুক্তি, গণতন্ত্রের মুক্তি এবং আমাদের নেতৃবৃন্দের মুক্তির জন্য আমরা আন্দোলন করতে চাই। আমি বিশ্বাস করি আমরা যদি সত্যিকার অর্থে তৈরি হয়ে সংগ্রাম করি অবশ্যই বিজয় আমাদের সুনিশ্চিত হবে।
আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই মন্তব্যকরে মির্জা ফখরুল বলেন, লড়াইয়ের কোনো বিকল্প নাই, সংগ্রামের কোনো বিকল্প নাই। একটা বড় কিছু পেতে হলে আমাদের সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এগুতে হবে। আমাদের হতাশ হওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে বুঝতে হবে যে, একটা কঠিন সংগ্রামের মধ্য দিয়ে আমরা এগুচ্ছি, সেই সংগ্রাম সফল করতে হলে আমাদেরকে অবশ্যই জ্ঞানে সমৃদ্ধ হতে হবে, যে কৌশলে যেতে চাই, সেই কৌশলে সমৃদ্ধ হতে হবে।
বিএসএমএমউতে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা তুলে ধরে বিএনপি মহাসচিব বলেন, দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া অনেক কষ্টে আছেন। তিনি প্রায় ১৪ মাসের উপরে কারাগারে আছেন, তিনি খুবই অসুস্থ যা আমি বর্ণনা করতে পারবো না। আমি নিজে গেছি দেখেছি তাকে। তিনি এখন নিজে বিছানা থেকে উঠতে পারেন না, তাকে সাহায্য করতে হয়। তিনি হাঁটতে পারেন না, হুইল চেয়ারে চলতে হয়, খেতে পারেন না, তার শরীর একদম ভালো নেই। তিনি বলেন, আমাদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মহোদয় প্রায় এক যুগের উপরে নির্বাসিত হয়ে আছেন। প্রতি মুহূর্তে তিনি দেশের কথা চিন্তা করছেন, দলের কথা চিন্তা করছেন। তিনি ভাবছেন কীভাবে দেশে ফিরে আসা যায়।
দেশের অর্থনীতির চরম দুরাবস্থায় সরকারের নীতির ব্যর্থতার কঠোর সমালোচনা করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সরকার উন্নয়নের ঢোল বাজাচ্ছে। জনগনকে বিভ্রান্ত করছে। আজকে টার্ণেল করবে কর্ণফুলির নদীর নিচে, টার্ণেল করবে বুড়িগঙ্গা নদীর নিচে। আমাদের টার্ণেলের প্রয়োজনীয়তা আছে কিনা এই মুহূর্তে সেটা তো একবারও ভেবে দেখবে না। অথচ ঢাকা শহরে এখন পর্যন্ত শিক্ষার্থী, নারীরা রাস্তায় পরাপারে দুর্ঘটনা রোধে কোনো উদ্যোগ নিতে (সরকার) পারে নাই। প্রতিদিন আমাদের ছেলে-মেয়েরা, মানুষজন প্রাণ দিচ্ছে। আইনের শাসন বলতে কিছু নেই। সব জায়গায় তারা ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আসুন, এই নৈরাজ্য ও অপশাসনকে সরাতে হলে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে, দলমতনির্বিশেষ সকলে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই পাথর সরিয়ে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ২০০৮ সালে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসার পরপরই পরিকল্পিতভাবে একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েমের পথে হাঁটছে। তিনি বলেন, আমাদের হতাশ হওয়ার সুযোগ নেই, আমাদের বুঝতে হবে অত্যন্ত প্রতিকূল অবস্থায় আমাদের হাঁটতে হচ্ছে। আমাদের দলকে আরো সমৃদ্ধ করতে হবে। বিএনপি মহাসচিব বলেন, বাংলাদেশ কোনো বিচ্ছিন্ন দেশ নয়, সারাবিশ্বের সাথে আমাদের সম্পর্ক আছে। সারা বিশ্বে একটি কর্তৃত্ববাদী শাসন চলছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিশ্ব রাজনীতির সাথে বাংলাদেশের অনেক সম্পর্ক রয়েছে। তাই আমাদের আরো সমৃদ্ধ হতে হবে, জ্ঞান অর্জন করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর সমালোচনা করে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান বলেন, শেখ হাসিনার আক্রোশে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া তিলে তিলে মৃত্যুর পথে ধাবিত হচ্ছেন। তিনি বলেন, একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করার জন্যই এ অনির্বাচিত সরকার প্রতিবাদী কণ্ঠস্বর বন্ধ করার জন্য বেগম খালেদা জিয়াসহ জাতীয়তাবাদী শক্তির নেতৃবৃন্দকে কারাগারে আটকে রেখেছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সমালোচনা করে আমান উল্লাহ আমান বলেন, বাংলাদেশের সব নির্বাচনী কেন্দ্রে ভোট হয়েছে ২৯ ডিসেম্বর রাতে। সকল ডিসি ও ইউএনও, প্রিজাইডিং কর্মকর্তাদের আগের রাতেই ব্যালট পেপার দিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। এটা বাংলাদেশের সকল জনগণ জানেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেবল জানেন না। ২৯ তারিখের ভুয়া নির্বাচনে কেমন ভোট হয়েছে তা এদেশের শিক্ষক সমাজ জানেন। তারা কীভাবে প্রিজাইডিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করছেন তা জিজ্ঞাসা করলেই জানতে পারবেন।
ডাকসুর সাবেক এ ভিপি বলেন, সংসদে এখন আর জনগণের কথা বলা হয় না। এ অনির্বাচিত সরকার জনগণের ভোটের অধিকারসহ সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে হলে রাজপথে আন্দোলন করে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ