শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

ঈদের আগে পরে ৬দিন ফেরিতে ট্রাক কাভার্ডভ্যান পারাপার বন্ধ থাকবে

স্টাফ রিপোর্টার : আসন্ন ঈদের আগে তিন দিন ও পরে তিন দিন মোট ৬দিন নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ছাড়া সাধারণ ট্রাক ও কাভার্ডভ্যান ফেরিতে পারাপার বন্ধ থাকবে। ঈদে লঞ্চের অনুমোদিত ভাড়ার চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হলে সংশ্লিষ্ট লঞ্চের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং নদীর মাঝপথে নৌকাযোগে যাত্রী উঠালে সংশ্লিষ্ট লঞ্চ মালিকদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিশেষ করে ফেরীঘাট ও লঞ্চঘাটসমূহে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় ও অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাই ঠেকাতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
 গতকাল মঙ্গলবার ঈদে ঘরমুখী মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্ন করতে এসব সিদ্ধান্ত নেয় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়। সভায় সংসদ সদস্য গোলাম কিবরিয়া টিপু, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. শাহাদাৎ হোসেন, বিআইডব্লিউটিসি’র চেয়ারম্যান প্রণয় কান্তি বিশ্বাস, বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমডোর এম মাহবুব উল ইসলাম, নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালক কমডোর সৈয়দ আরিফুল ইসলাম, নৌপুলিশের ডিআইজি শেখ মারুফ হাসান, বিভিন্ন জেলার জেলা প্রশাসক এবং অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, লঞ্চ মালিক সাইদুর রহমান রিন্টু, শহীদুল ইসলাম ভূইয়া, বদিউজ্জামান বাদল, নৌযান শ্রমিক নেতা মো. শাহ আলম ও জাহাঙ্গীর আলম উপস্থিত ছিলেন।
 লঞ্চের স্বাভাবিক চলাচল নিশ্চিতে নৌপথে সব মাছ ধরার জাল পাতা বন্ধ রাখা, রাতে সব ধরনের মালবাহী জাহাজ, বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখা এবং ১ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত দিনের বেলায় সব বালুবাহী বাল্কহেড চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়।
পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে লঞ্চ, ফেরি ও অন্যান্য জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে রাজধানীর মতিঝিলে বিআইডব্লিউটিএ ভবনে অনুষ্ঠিত সভায় এসব সিদ্ধান্ত হয়।
নৌ-প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, নৌপরিবহন ব্যবস্থা আগের চেয়ে বেশি নিরাপদ। গত ১০ বছরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার নৌপরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়নে সামগ্রিক ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। সরকার ১০ হাজার কিলোমিটার নৌপথ খননের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। নৌপথ খননের জন্য ৪০০ থেকে ৫০০ ড্রেজার প্রয়োজন।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর সরকারের সময়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ড্রেজার ছিল মাত্র সাতটি। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর কোনও সরকারই ড্রেজার সংগ্রহের ক্ষেত্রে আন্তরিক ছিল না। গত ১০ বছরে সরকারি বেসরকারি মিলিয়ে প্রায় ২০০ ড্রেজার যুক্ত হয়েছে। আগামী এক বছরে আরো ১৫০টির মতো ড্রেজার যুক্ত হবে।
সভায় জানানো হয়, ঢাকার সদরঘাটে শৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ট্রাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা এবং সদরঘাট থেকে বাহাদুরশাহ পার্ক পর্যন্ত রাস্তা হকারমুক্ত রাখা হবে।
সদরঘাটে পর্যাপ্তসংখ্যক স্টিলের ডাষ্টবিন স্থাপন, জনগণকে ডাষ্টবিন ব্যতিত নদীতে কিংবা পন্টুন/গ্যাংওয়েতে ময়লা আবর্জনা ফেলতে নিরুৎসাহিত করা এবং স্বেচ্ছাসেবক নিয়োজিত করে পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার ব্যবস্থা গ্রহণ নিশ্চিত করতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া টার্মিনালসমূহে সতর্কমূলক বাণী মাইকে ও মনিটরে প্রচারের ব্যবস্থা করা হবে।
সভায় আরো জানানো হয়, ঘাট ইজারাদার কর্তৃক যাত্রী হয়রানি বন্ধে সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও বিআইডব্লিউটিএ’র কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ এবং লঞ্চে যাত্রী ওঠার সময় থেকে লঞ্চের চালক, মাষ্টার ও অন্যান্য কর্মচারীদের অবস্থান নিশ্চিত করা হবে। স্পিডবোটে চলাচলের সময় যাত্রীদের লাইফ জ্যাকেট পরিধান নিশ্চিত করতে হবে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, নৌপথে ডাকাতি, চাঁদাবাজি, শ্রমিক, যাত্রীদের হয়রানি ও ভীতিমূলক অবস্থা প্রতিরোধ করার জন্য রাতে পুলিশের টহলের ব্যবস্থা এবং নদীতে এলোমেলোভাবে ট্যাংকার, লঞ্চ, কোস্টার বার্জ ইত্যাদি চলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হবে। কোনোক্রমেই লঞ্চের যাত্রী ও মালামাল ওভারলোড করা যাবে না। প্রত্যেক লঞ্চের সিড়িতে দুই পার্শ্বে প্রশস্ত রেলিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। সদরঘাট, নদীর মাঝপথ থেকে নৌকা দিয়ে যাত্রী নৌযানে উঠতে না পারে তার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডকে নিয়োজিত রাখা হবে। কেবিনের যাত্রীদের ছবি/ মোবাইল নম্বর/জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর সংরক্ষণ করতে হবে।
তাছাড়া নৌযানে পর্যাপ্ত বয়া এবং নৌপথে বাতি ও মার্কিং এর ব্যবস্থা করতে হবে। শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ী (ইলিয়াস আহমেদ ফেরিঘাট) এবং পাটুরিয়া-দৌলতদিয়াসহ অন্যান্য সকল নৌ-চ্যানেলে প্রয়োজনীয় ড্রাফট নিশ্চিত করতে হবে। ফেরীঘাট ব্যবস্থাপনা কমিটি সংশ্লিষ্ট সবার সহযোগিতা নিয়ে ঘাটে নির্বিঘœ সিরিয়াল প্রদানের ব্যবস্থা করবে। বিআইডব্লিউটিএ, জেলা প্রশাসন, ঢাকা, পুলিশ বিভাগ, লঞ্চ মালিক শ্রমিক কর্তৃপক্ষ, কোস্টগার্ডসহ লঞ্চ, স্টিমার মালিক ও শ্রমিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে সভা অনুষ্ঠান এবং সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, লঞ্চ মালিক, শ্রমিক নেতা ও সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয়ে সভা করে ব্যবস্থাপনার দিকসমূহ নির্ধারণ করবে। সার্বিক অবস্থা মনিটরিংয়ের জন্য নৌ-পরিবহন মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভিজিলেন্স টিম গঠন করবে।
সভায় বলা হয়, গার্মেন্টস ও নিটওয়্যর সেক্টরে ঈদের ছুটি পুনঃবিন্যাস করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, এফবিসিসিআই, বিজেএমইএ, বিকেএমইএ এর সঙ্গে সভা করবে। সংশ্লিষ্ট জেলার নৌযান, নৌপথ, পরিবহনের সাথে সম্পৃক্ত সবার সমন্বয়ে স্থানীয়ভাবে সচেতনতামূলক সভা করা হবে। শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটে নৌ দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য পদ্মা নদীতে ঘূর্ণাবর্ত এলাকা মার্কিং করা হবে। দৈব দুর্বিপাকে দুর্ঘটনায় ডুবে যাওয়া নৌযান/লঞ্চ/জাহাজের অবস্থান যাতে সনাক্ত করা যায় সেজন্য প্রত্যেক নৌ যান/লঞ্চ/জাহাজের ছাদের সাথে ২০০/৩০০ ফুট শক্ত রশি দিয়ে একটি বড় প্লাষ্টিক কন্টেইনার/বয়া বেঁধে রাখতে বলা হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ