শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

এশিয়ার হয়ে শেষ বিশ্বকাপ যাদের

মোহাম্মদ জাফর ইকবাল : অনেকেই খেলেছেন একাধিক বিশ্বকাপ। নিজ দেশের হয়ে আলোর দ্যুতি ছড়াচ্ছেন এখনো। তবে কেউ বয়সের ভারে আবার কেউ স্বেচ্ছায় ছাড়তে চাইছেন বাইশ গজের এই পরিচিত অঙ্গন। বিশ্বকাপ খেলুড়ে দেশগুলোর অনেক ক্রিকেটারের জন্যই এবারের বিশ্বকাপই শেষ আসর। কেউ কেউ আগাম ঘোষণা দিয়ে রেখেছেন। আবার কেউ চমক হিসেবে অপেক্ষায় রাখছেন ভক্তদের। এবারের লিখায় এশিয়ার প্রতিভাবান যে কয়জন ক্রিকেটার ক্রিকেটকে বিদায় জানাতে পারেন বা এই বিশ্বকাপই যাদের শেষ আসর তেমন কয়েকজনের কথা তুলে ধরা হলো।
চার বছর পর আবারও শুরু হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপ ক্রিকেট। ইন্টারন্যাশনাল ক্রিকেট কাউন্সিলের (আইসিসি) দ্বাদশতম আসর বসছে ইংল্যান্ড এ্যান্ড ওয়েলসে। চলতি ৩০ মে লন্ডনের ওভালে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মধ্যকার ম্যাচ দিয়ে পর্দা উঠছে ২০১৯ বিশ্বকাপের। বিশ্বের টেস্ট খেলুড়ে দশটি দেশ বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আফগানিস্তান, নিউজিল্যান্ড, দক্ষিণ আফ্রিকা, ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং স্বাগতিক ইংল্যান্ড লড়বে চির প্রত্যাশিত বিশ্বকাপ শিরোপার জন্য। বিশ্বকাপ শিরোপা জয়ে অবদান রাখার কারণে অনেক গ্রেটই স্মরণীয় হয়ে আছেন। আসন্ন বিশ্বকাপও তার ব্যতিক্রম হবে না এবং বেশ কিছু ক্রিকেট লিজেন্ডদের দেখা যাবে মাঠে। এদের মধ্যে অনেকেই আছেন নিজ নিজ দলের সিনিয়র খেলোয়াড়। দলের জন্য যাদের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। এটাই হতে পারে যাদের শেষ বিশ্বকাপ।
মাশরাফি বিন মর্তুজা (বাংলাদেশ) : বাংলাদেশ অধিনায়কের রয়েছে দীর্ঘ ও বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার। বারবার ইনজুরিতে পড়া সত্ত্বেও বোলিংয়ের অনেক অর্জনই নিজের করে নিয়েছেন। ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’ দেশের হয়ে খেলেছেন ২০৫ ওয়ানডে। জাতীয় দলের হয়ে রেকর্ড সর্বোচ্চ ৭০ ম্যাচে নেতৃত্ব দেয়া ম্যাশ ওয়ানডেতে শিকার করেছেন ২৫৯ উইকেট। পঞ্চাশ ওভার ক্রিকেটে দেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারিও তিনি। ৩৬ টেস্টে শিকার করেছেন ৭৮ উইকেট। ৫৪ টি২০তে নামের পাশে ৪২ উইকেট। ব্যাট হাতে লোয়ার অর্ডারে ঝড় তুলতে সক্ষম মাশরাফি খেলেছেন ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল)। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি২০তে অধিনায়কত্ব করেছেন ঢাকা গ্লাডিয়েটর্স, কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স এবং রংপুর রাইডার্সের হয়ে। পেয়েছেন একাধিক শিরোপার স্বাদ। খেলাকালীন সংসদ সদস্য বনে যাওয়া তারকার এটিই হতে যাচ্ছে শেষ বিশ্বকাপ। যে কোনদিন হয়তো ক্রিকেট ছাড়ার ঘোষণাটাও দিয়ে দিতে পারেন টাইগার সুপারস্টার।
মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত) : বিদায় নিলেও ভারতের ক্রিকেট ইতিহাসে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে ধোনির নাম। অনেক বিশেষজ্ঞের মতেই তিনি সর্বকালের সেরা উইকেটরক্ষক। একজন ক্যারিশম্যাটিক ক্যাপ্টেন গত দুই দশকের বেশি সময় ধরে ভারতীয় ক্রিকেট দলের আত্মা হয়ে আছেন। অধিনায়ক হিসেবে সবচেয়ে বেশি ৩৪১টি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার রেকর্ড তার দখলে। ৩৭ বছর বয়সী ধোনির রয়েছে সমৃদ্ধ একটি ক্যারিয়ার। ৯০ টেস্টে করেছেন ৪৮৭৬ রান। ৩৪১ ওয়ানডেতে ৫০.৭২ গড়ে তার মোট রান ১০,৫০০। এছাড়া ৯৮টি টি২০তে ৩৭.৬০ গড়ে ১৬১৭ রানের মালিক ধোনি। ২০১৪ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন মাহী। ২০১৮ সালে ফর্ম নিয়ে ধুঁকছিলেন রাঁচিতে জন্মগ্রহণ করা এ সুপারস্টার। যে কারণে অনেকেই তার সমালোচনায় ছিলেন মুখর। তবে এ বছর অস্ট্রেলিয়া সফরে তিন ওয়ানডের সব ম্যাচেই হাফ সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে বিশ্বকাপের আগে ফর্মে ফিরেছেন দুর্দান্তভাবে। নির্বাচিত হয়েছিলেন সিরিজ সেরা খেলোয়াড়। আইপিএলেও ধরে রেখেছেন সেই ফর্ম। আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও ফুরিয়ে যাননিÑ তারই প্রমাণ দিয়েছেন ধোনি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজ থেকে নিজের আত্মবিশ্বাসটা যেন আবারও ফিরে পেয়েছেন নতুন করে। এবার আরও এগিয়ে যাওয়ার পালা। ভারতকে ওয়ানডে ও টি২০ বিশ্বকাপের শিরোপা এনে দিয়েছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে ৩১৪ ক্যাচ এবং ১২০ স্টাম্পিং করা ধোনি আসন্ন বিশ্বকাপেও ভারতীয় দলের প্রাণ ভোমরা। খোদ অধিনায়ক বিরাট কোহলিও সেটি স্বীকার করেন।
লাসিথ মালিঙ্গা (শ্রীলঙ্কা) : ৩৫ বছর বয়সী লাসিথ মালিঙ্গা তার শেষ বিশ্বকাপ খেলতে পারেন ২০১৯ আসর। মারদাঙ্গা প্রকৃতি, ঝাকড়া চুল এবং বোলিং এ্যাকশনের জন্য বিশেষভাবে পরিচিত লঙ্কান এ বোলার। তবে ডান-হাতি এ মিডিয়াম ফাস্ট বোলার সবচেয়ে বেশি পরিচিত তার বোলিং দক্ষতার জন্য। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে বহুবার নিজের বোলিং ক্যারিশমা দিয়ে দলকে জিতিয়েছেন তিনি। ইনজুরির কারণে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেয়ার আগে ৩০ ম্যাচে শিকার করেছেন ১০১ উইকেট। ২০১৮ ওয়ানডেতে শিকার ৩২২ উইকেট। ৭৩ টি-২০তে উইকেট ৯৭টি। নিউজিল্যান্ড সফরে ওয়ানডে সিরিজে অধিনায়কত্ব করেছেন তিনি। তার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কা জয় করেছে টি-২০ বিশ্বকাপ শিরোপাও। বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লীগে তিনি প্রতিনিধিত্ব করেছেন মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স, খুলনা রয়্যালস, মেলবোর্ন স্টার্স, গায়ানা এ্যামাজন ওরিয়র্স, সাউদার্ন এক্সপ্রেস, রংপুর রাইডার্স, খুলনা টাইটান্সের হয়ে।
শোয়েব মালিক (পাকিস্তান) : পুরো ক্যারিয়ারে সব পজিশনেই ব্যাটিং করেছেন শিয়ালকোটে জন্মগ্রহণ করা শোয়েব মালিক। প্রায় দুই দশকের বেশি সময় যাবত আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলছেন এ ব্যাটিং অলরাউন্ডার। সর্বোচ্চ ১০৮ টি-২০ ম্যাচেও সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত হওয়ার রেকর্ডও রয়েছে তার। সীমিত ওভার ক্রিকেটের প্রতি নজর দিতে বিশেষ করে ২০১৯ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে ২০১৫ সালে টেস্ট ক্রিকেট থেকে অবসর নেন তিনি। ক্রিকেটের সব ফরমেটেই তার রয়েছে সমৃদ্ধ রেকর্ড। ৩৫ টেস্টে বল হাতে ৩২ উইকেটসহ তার মোট রান ১৮৯৮। ২৮২ ওয়ানডেতে ১৫৬ উইকেটের সঙ্গে রান ৭৪৮১। ১১১ আন্তর্জাতিক টি-২০তে ২২৬৩ রান ও উইকেট ২৮। নির্ভরযোগ্য এ খেলোয়াড় এ বছর বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগ (বিপিএল) টি-২০ ক্রিকেটে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের হয়ে খেলেছেন। এছাড়া তিনি নিজ দেশে করাচী হোয়াইটসসহ বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লীগে খেলে থাকেন। ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন মালিক।
মোহাম্মদ হাফিজ (পাকিস্তান) : পাকিস্তানের সর্বকালের সেরা ব্যাটিং অলরাউন্ডারদের একজন মোহাম্মদ হাফিজ। বয়স ৩৮। দেশের হয়ে ৫৫ টেস্টে ৩৭ দশমিক ৬৫ গড়ে ৩৬৫২ রান করেছেন হাফিজ। ২০০৩ সালে আভিষেক হওয়ার পর ২০৮ ওয়ানডে ম্যাচে ৩২ দশমিক ৯৯ গড়ে তার মোট রান ৬৩০২। এছাড়া ৮৯ টি-২০তে ২৪ দশমিক ৪৬ গড়ে তার মোট রান ১৯০৮। সারগোদায় জন্মগ্রহণ করা হাফিজ এ্যাকশন ত্রুটির কারণে কিছুদিন বোলিং করতে পারেননি। তবে নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত তিনি ওয়ানডে, টেস্ট ও টি-২০তে যথাক্রমে ১৩৭, ৫৩ এবং ৫৪ উইকেট শিকার করেছেন এ অফ ব্রেক বোলার। বল হাতে বেশ কিপ্টেও ছিলেন তিনি। টি-২০ ক্রিকেট চালু হওয়ার পর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ঘরোয়া আসরের নিয়মিত খেলোয়াড় ৩৮ বছর বয়সী হাফিজ। ইন্ডিয়িান প্রিমিয়ার লীগে (আইপিএল) কলকাতা নাইট রাইডার্স, পাকিস্তান সুপার লীগে (পিএসএল) ফয়সালাবাদ ওলভস, লাহোর কালান্দার্স, ক্যারিবিয়ান প্রিমিয়ার লীগে (সিপিএল) সেন্ট কিটস, নেভিস প্যাট্রিয়টস, বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লীগে (বিপিএল) রাজশাহী কিংসের হয়ে খেলেছেন এ অলরাউন্ডার। তবে গত বেশ কিছুদিন যাবত ফর্মটা মোটেই ভাল যাচ্ছে না হাফিজের এবং ২০১৯ বিশ্বকাপের পরই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট থেকে অবসর নিতে পারেন। তবে বিভিন্ন দেশের ঘরোয়া টি-২০ লীগে খেলা চালিয়ে যাবেন তিনি।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ