শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

বিশ্বকাপের শেষ চমক তাসকিন আহমেদ?

অরণ্য আলভী তন্ময় : বিশ্বকাপ ক্রিকেট শুরু হতে আর খুব বেশি সময় বাকি নেই। আগামী ৩০ মে ইংল্যান্ড ও ওয়েলসে শুরু হবে এবারের আসর। যেখানে অংশ নেবে বাংলাদেশও। এরই মধ্যে সব দেশের জাতীয় দলের নাম ঘোষণা করা হয়েছে। তবে খেলোয়াড় বদলের সুযোগও রয়েছে দলগুলোর সামনে। সে কারণে শেষ মুহুর্তে যাতে করে একজন কার্যকরী খেলোয়াড়কে দলে নেওয়া যায় সেই চেষ্টাই করছেন তারা। চলতি বছরের বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) দিয়েই আবারো আলোচনায় আসেন তাসকিন আহমেদ। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স তাকে নিয়ে নতুন ভাবনার জন্ম দেয়। পুরস্কার স্বরুপ সুযোগও পেয়েছিলেন নিউজিল্যান্ডগামী বাংলাদেশ দলে। কিন্তু পেসারদের সাথে আঠার মতো লেগে থাকা ইনজুরির কারণে আর ব্ল্যাকক্যাপসদের দেশে যাওয়া হয়নি। বিশ্বকাপ দলে থাকার জন্য নতুন করে লড়াই করতে হয় তাকে। সেই লড়াইয়ে জয়ী হলেও ইংল্যান্ডগামী বাংলাদেশ দলে জায়গা হয়নি দীর্ঘদেহী এই পেসারের। যদিও আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান ত্রিদেশীয় সিরিজে ঠিকই নির্বাচকরা দলে রেখেছেন তাকে। তাকে দলে নেওয়ার পরই বিষয়টিকে অন্যভাবে দেখছিলেন কেউ কেউ। নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে, তাহলে কি বিশ্বকাপের দলে আবু জায়েদ চৌধুরী রাহির পরিবর্তে সুযোগ পেতে চলে চলেছেন তাসকিন। বিষয়টি যদিও এখনো চুড়ান্ত হয়নি, তবে আলোচনা যেহেতু চলছে তাহলে এর সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন জানিয়েছেন, বোলিং বৈচিত্রের কারণেই নাকি কোচ ষ্টিভ রোডস তাসকিনকে দলে চাইছেন। যদিও তার কাছে এরকম কোন প্রস্তাব আসেনি বলে জানিয়েছেন তিনি। তবে ক্রিকেট অপারেশন্স কমিটির চেয়ারম্যান আকরাম খান ক’দিন আগে বলেছিলেন, ইনজুরি ও বড় কোন কারণ ছাড়া বিশ্বকাপ দলে পরিবর্তনের কোন সুযোগ নেই। তবে যেহেতু আলোচনা শুরু হয়েছে সেহেতু বিষয়টিকে উড়িয়ে দেওয়ার কোন সুযোগ নেই। বাংলাদেশের বিশ্বকাপ দলে এখন পেস বোলার চারজন। মাশরাফি বিন মোর্ত্তজা, রুবেল হোসেন, মোস্তাফিজুর রহমান ও আবু জায়েদ রাহি সবাই একই রকম বোলার। দলের বাইরে থাকা তাসকিনের উচ্চতা, গতি ও বাউন্স দেওয়ার ক্ষমতা ইংল্যান্ডে কাজে লাগাতে চাইছেন কোচ। এখন দলে পরিবর্তনের সুযোগ থাকার বিষয়টি কোচ কাজে লাগাতে চাইছেন বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। আবু জায়েদ রাহিকে আবার কোন সুযোগ না দিয়ে বাদ দেওয়ার পক্ষপাতী নন বিসিবি সভাপতি। আবার এও জানিয়েছেন, তাকে তাসকিনের ইনজুরির কারণেই দলে সুযোগ দেওয়া হয়েছিল। দলে পরিবর্তনের বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও ডালপালা মেলা গুঞ্জনের তো একটা সুরাহা হতেই হবে। হুট করেই কেনো এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হতে যাচ্ছে। দলের সঙ্গে আয়ারল্যান্ড গেলেও কেনো বাদ দেয়া হচ্ছে রাহিকে? বিষয়গুলোর উত্তর যদিও এখনো পাওয়া যাচ্ছেনা। যদিও আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে ফোনে সে কারণ জানিয়েছেন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ’বিশ্বকাপের দলে এখনো পরিবর্তনের সুযোগ রয়েছে। ইনজুরির কারণে রাহি একদিন মাত্র নেটে বোলিং করেছেন। তবে ফিজিওরা এখনো পর্যন্ত ইনজুরির ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলতে পারেননি।’ ইনজুরি হলেও সেটি কাটিয়ে উঠতে এখনো তো অন্তত আড়াই সপ্তাহ সময় রয়েছে রাহির সামনে। তবু কেনো স্কোয়াডে বদলের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে? ভেতরের খবর হলো জাতীয় দলের অধিনায়ক মাশরাফি এবং কোচ স্টিভ রোডস চাচ্ছেন একজন এক্সপ্রেস বোলার নেয়া হোক বিশ্বকাপে। আর বর্তমান স্কোয়াডে পঞ্চম পেসার হিসেবে এক্সপ্রেস বোলারের অভাবপূরণে একমাত্র অপশন এখন তাসকিন আহমেদই। যেহেতু ২৩ মে’র মধ্যে জানাতে হবে নিজেদের চূড়ান্ত স্কোয়াড, তাই মূলত ত্রিদেশীয় সিরিজ চলাকালীনই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলতে চাইছে বিসিবি। তবে আদৌ রাহির বদলে তাসকিনকে নেয়া হচ্ছে কিনা, নিলেও সেটি কেনো? এ বিষয়ে বিসিবি সভাপতি তার অবস্থান সাংবাদিকদের ব্যাখ্যা করেছেন। এদিকে আয়ারল্যান্ডে অনুষ্টেয় ত্রিদেশীয় সিরিজকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মঞ্চ বানাতে চেয়েছিলেন কোচ স্টিভ রোডস। সে পরিকল্পনা থেকে কিছুটা হলেও সরে আসতে হয়েছে তাকে। এখন কোচের চিন্তার পুরোটা জুড়েই ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল খেলা নিয়ে। যে করেই হোক তিন জাতি ওয়ানডে টুর্নামেন্টের শেষ দিন পর্যন্ত খেলতে চান তিনি। বিশেষ করে বিশ্বকাপের দলের বাইরে যাদেরকে নেওয়া হয়েছে তাদেরকে দেখার সুযোগই যে তিনি পাচ্ছেন না।  ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে লিগের ফিরতি ম্যাচেও সেরা একাদশ খেলাতে চান রোডস। এক্ষেত্রে অপেক্ষা বাড়ছে স্কোয়াডের চার অতিরিক্ত সদস্য তাসকিন আহমেদ, ফরহাদ রেজা, নাঈম হাসান ও ইয়াসির আলীর। তাসকিন, ফরহাদ তবু আয়ারল্যান্ড ’এ’ দলের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন। বাকি দু’জনের এখনো সেই সুযোগ ঘটেনি। নির্বাচক হয়ে দলের সঙ্গে থাকা ম্যানেজার মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছেন, ’বিশ্বকাপের আগে এই সিরিজটাকে আমরা প্রস্তুতির জন্য নিয়েছিলাম। কিন্তু যে উদ্দেশ্যে আয়ারল্যান্ডে আসা সেই প্র্যাকটিটাই তো ঠিকঠাক হচ্ছে না। দুই দিন কিছুই করা যায়নি। প্রকৃতির ওপর তো কারও হাত নেই। এখন বাকি দিনগুলো ভালো গেলেই স্বস্তি’। আবু জায়েদ রাহি যদিও বাদই পড়ে যান তাহলে বাংলাদেশে ফিরে আসবে ২০ বছর আগের স্মৃতি। যেখানে জাহাঙ্গীর আলমের জায়গা নিতে পারে সিলেটের এই পেস বোলার। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ডাক পাওয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে যদি বাদ পড়তে হয় তাহলে সেটিকে বড় বেশি দুর্ভ্যাগেরই বলতে হবে। মাশরাফি কিংবা তাসকিন কারো মতো এতটা জনপ্রিয় হতে পারেননি। তবে নিজের একটা পৃথিবী রয়েছে, যদি বিশ্বকাপ দল থেকে বাদই পড়ে যান তাহলে সেখানে কত বড় ঝড় বয়ে যাবে তা এখনই বোঝা যাচ্ছে। কারণ একজন খেলোয়াড়ের আজন্ম লালিত স্বপ্ন থাকে বিশ্বকাপ খেলার। সেই সুযোগটি পেয়েও যদি হারাতে হয় তাহলে নিজেকে বিশ্ব ভ্রমান্ডের সবচেয়ে দুর্ভাগা মানুষই ভাববেন। এখনো সবকিছু চুড়ান্ত হয়নি। তবে আলোচনাটা যেভাবে চলছে তাতে করে পরিবর্তনের অপেক্ষাই করছেন সবাই। রাহির বিশ্বকাপ দলে স্কোয়াডে জায়গা পাওয়াটা অনেকের মতো তার নিজের কাছেও ছিল চমকের। এখন সেটিকে কাজে লাগানোর সুযোগ না পেয়ে যদি হারাতে হয় তাহলে কি আর কষ্টটা চেপে রাখা যাবে? আগামী ২৩ মে পর্যন্ত কোনো কারণ দেখানো ছাড়াই দলে পরিবর্তনের যে সুযোগ রেখেছে বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইসিসি, সেটিই নিচ্ছে বাংলাদেশ। ১৯৯৯ বিশ্বকাপের আগে জাহাঙ্গীর আলমের স্বপ্নও দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। মিনহাজুল আবেদীন নান্নুকে বাদ দেওয়ায় তুমুল সমালোচনা হয়েছিল দেশজুড়ে। সমালোচনা থেকে মুক্তি পেতে সে সময়কার ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শমতোই দলে নেওয়া হয়েছিল নান্নুকে। সেই নান্নুই এখন জাতীয় দলের প্রধান নির্বাচক। তারও কুড়ি বছর আগের সেই ঘটনা ভুলে যাবার কথা নয়। সেটি যে এখন আরেকজনের উপর বয়ে যাবে সেই ভাবনাও কি ভেবেছিলেন তিনি। সেবারের ট্র্যাজেডির শিকার হওয়া জাহাঙ্গীর আলমকে অবশ্য নিজেদের খরচে পুরো বিশ্বকাপে দলের সঙ্গেই রেখেছিল বিসিবি। এবার আবু জায়েদ রাহির ভাগ্যেও কি সেরকম কিছু ঘটতে যাচ্ছে কিনা কেন জানে। স্কোয়াডের ১৬তম সদস্যের মর্যাদা পেলে ১৯৯৯ সালের পর দ্বিতীয় ঘটনার বাস্তবায়ন ঘটবে বাংলাদেশে। বিভিন্ন সুত্রে জানা গেছে, দলের প্রয়োজনের পাশাপাশি কারো মন যাতে ভেঙ্গে না যায় সে কারণে এই পদ্ধতি অবলম্বন করতে হতে পারে বিসিবিকে। তবে একটা বিষয় বেশ আশ্চর্য ঠেকেছে সবার কাছে। বিশ্বকাপ স্কোয়াডে ১৫ সদস্যের একজন তিনি। তবু আয়ারল্যান্ড উলভসের বিপক্ষে প্রস্তুতি ম্যাচে খেলার সুযোগ মেলেনি রাহির। ত্রিদেশীয় সিরিজের মূল ম্যাচে তো এখনো মেলেনি সুযোগ। এমনকি দলের নির্ধারিত এবং অনির্ধারিত অনুশীলনেও বাংলাদেশ দলের প্রশিক্ষণ পরিকল্পনায় এই পেসারের মর্যাদা বড়জোর স্থানীয় কোনো নেট বোলারের মতোই! তাহলে কি রাহিকে নিয়ে সব পরিকল্পনা ইতি টেনে নেওয়া হয়েছে? দলের নানা বিষয় নিয়ে এই প্রশ্নটা তাই উঠছেই। ফরহাদ রেজা, ইয়াসির রাব্বি কিংবা নাঈম হাসানরা বিশ্বকাপ স্কোয়াডে নেই, ত্রিদেশীয় সিরিজের সিরিয়াস ভাবনাতেও থাকাটা প্রত্যাশিত নয়। তবু নেটে কোচিং স্টাফের দৃষ্টিসীমাতেই দেখা যাচ্ছে তাঁদের, অনুপস্থিত শুধু এক রাহি। তাকে নাকি ইনজুরির কারণে দলের সাথে অনুশীলনও করাচ্ছেনা টিম ম্যানেজমন্টে। তাহলে তো বিশ্বকাপের দলে থাকা নিয়ে সংশয়টা বাড়বে বৈ কমবেনা। এবার প্রথম জানা গেল যে আবু জায়েদ রাহির ইনজুরি ছিল। সে কারণেই নাকি তাসকিনকে বিশ্বকাপ স্কোয়াডে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে? দলে রাখা হলেও ১৯৯৯ বিশ্বকাপে জাহাঙ্গীরের মতো ২০১৯ বিশ্বকাপেও কোনো ম্যাচ হয়তো খেলা হবে না রাহির। টিম ম্যানেজমেন্টের বিশ্বকাপ ভাবনায় যে নেই, তাকে নিয়ে কি পরিকল্পনা করবে ক্রিকেট বোর্ড। গত বিশ্বকাপেও বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেটশিকারী (৮) ছিলেন তাসকিন আহমেদ। কিন্তু এবার বিশ্বকাপ দলে নেই এই ফাস্ট বোলার। চোটজর্জর ২০১৮ সালের পর বছরের শুরুতে বিপিএল দিয়ে দারুণ ছন্দে ফিরেছিলেন। ২২ উইকেট নিয়ে নিউজিল্যান্ড সফরের টেস্ট-ওয়ানডে দলে ডাক পেয়েছেন। কিন্তু বিপিএলের শেষ দিকে ইনজুরিতে পড়ে ছিটকে পড়েন দল থেকে। ইনজুরি কাটিয়ে ঢাকা প্রিমিয়ার ডিভিশন লিগে ম্যাচ খেললেও জ্বলে উঠতে পারেননি। নির্বাচকরা মনে করেন, এখনও ফিট হতে পারেননি তাসকিন। তাই বিশ্বকাপ দলে জায়গা হয়নি এই দ্রুতগতির বোলারের। যদিও শেষ মুহূর্তে আয়ারল্যান্ড সফরে দলের সঙ্গী হচ্ছেন তিনিও। কে জানে, ভাগ্যে থাকলে হয়তো খেলেও ফেলতে পারেন বিশ্বকাপ! এখন সেটিই আবার হতে যাচ্ছে। টানা দ্বিতীয় বিশ্বকাপ খেলার খুব কাছে কি তাসকিন, উত্তর জানা যাবে ২৩ মে’র মধ্যে। আবার ১৯৯৯ সালের জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্যই বরণ করতে হচ্ছে কুড়ি বছর পর আবু জায়ে চৌধুরী রাহিকে। হয়তো সেই চমক দেখা যায় তাহলে হয়তো কষ্ট নিয়েই থাকতে হবে সিলেটের এই তরুণ পেসারকে। সেটাও একটা চমকই হবে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ