শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

খুলনায় মওসুমী ইফতার ব্যবসায়ীদের মাথায় হাত

খুলনা অফিস : খুলনায় বিপাকে পরেছে মওসুমী ইফতারি ব্যবসায়ীরা। সিটি করপোরেশনের হকার ও ফুটপাত দখল উচ্ছেদের কারণে এবারের রমযানে মওসুমী ইফতার সামগ্রীর বিক্রেতারা কোথাও বসতে পারেননি।
খুলনা নগরীর অধিকাংশ সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিবছর যেসব স্থানে রকমারি ইফতার সামগ্রী নিয়ে মওসুমী ব্যবসায়ীরা বসতো, সেসব জায়গা এখন ফাঁকা। সিটি করপোরেশন ও পুলিশ থেকে নগরীর সাতরাস্তা মোড়, শিববাড়ী মোড়, ময়লাপোতা মোড়, ফেরিঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, শান্তিধাম মোড়, পিটিআই মোড়, নিরালা মোড়, রূপসা মোড়সহ উল্লেখযোগ্য সব জায়গায় মাইকিং করে হকারদের বসতে নিষেধ করা হয়েছে। ইফতার বিক্রেতাদের বসতে না দেয়ায় কিছু কিছু এলাকায় বিপাকে পড়েছেন রোজাদাররাও।
রূপসা মোড়ের মওসুমি ইফতারি ব্যবসায়ী মালেক গাজী বলেন, 'প্রতিবছর রোযার সময় রাস্তার পাশে আমরা একটু ইফতারি বিক্রি করতাম।
বিকেলে বসে আবার সন্ধ্যার মধ্যেই উঠে যেতাম। সারা রোযায় যা ইনকাম হতো, তাই দিয়ে ঈদ করতাম। এবার আমাদের বসতে না দেয়ায় মাথায় হাত পড়েছে। মাইকিং করে গেছে। আমরা মাল (ইফতারি) নিয়ে বসতে গেছিলাম, সব ফেলায়ে দিয়েছে।'
পিটিআই মোড়ের রোকন শিকদার বলেন, 'আমাদের এখানে হোটেল আছে। প্রতিবছর হোটেলের সামনের ফুটপাতে একটা টেবিল পেতে ছোলা, পিয়াজু, বেগুনি বিক্রি করতাম। এবার এসে সিটি করপোরেশন থেকে নিষেধ করে গেছে। আমাদের ক্ষতি হয়েছে এতে।'
২৩ নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নিয়ামুল করীম বলেন, 'আগে সব সময় বাসা থেকে বেরিয়েই ইফতারি সামগ্রী পেতাম। এ বছর ইফতার বিক্রেতাদের বসতে না দেয়ায় আমরা খাবার কিনতে পারছি না। প্রতি বাড়িতেই তো ইফতার তৈরি করা সম্ভব হয় না। যাদের বাড়িতে ইফতার তৈরি হয় না, তারা এখন কি করবে?'
তবে, দুই যুগেরও বেশি সময় ধরে খুলনার মানুষের কাছে পছন্দের শীর্ষে নানা হালিম নগরীর সাউথ সেন্ট্রাল রোডের পাইওনিয়ার মহিলা কলেজের সামনে সামিয়ানা টাঙিয়ে বসেছে । এ দোকানে ভিড় করে হালিম কিনছেন অনেকে। খুলনা শহর ছাড়াও আশপাশের জেলা এমনকি পার্শ্ববর্তী বিভাগ থেকেও এখানে হালিম কিনতে এসেছেন অনেকেই।
কথা বলে জানা গেছে, নানা হালিমের মূল রাঁধুনির নাম মো. হজরত আলী। ৭৫ বছর বয়সী হজরত আলীকে কেউ এ নামে চেনে না। নানা নামের আড়ালে ঢাকা পড়েছে তার আসল নাম। নানা হালিম বিক্রি করতে গিয়েই তার আসল নাম হারিয়ে যায় বলে জানা গেছে।
নানা হালিমের কারিগর মো. হজরত আলী বলেন, ‘১৯৯৩ সাল থেকে এ হালিম তৈরি করি। ভেজাল ছাড়া আসল হালিমের স্বাদ রোজাদারদের কাছে পৌঁছে দিতে আমার এ হালিম তৈরি করা হয়। আসল হালিমের স্বাদ নিতে আমার এখানে খুলনা শহরের মানুষের পাশাপাশি আশপাশের অনেক জায়গা থেকেও আসে।’
তিনি আরও বলেন, ‘প্রতিদিন হালিম তৈরিতে ৬০ থেকে ৬৫ কেজি খাসির গোস্ত, ৬০ কেজি সোনামুগ ডাল, পোলাও চাল, দেশে ঘি, গম ও অনেক রকম মশলার মিশ্রণে প্রায় ১৬০ কেজি হালিম তৈরি করা হয়। এ ভেজালমুক্ত হালিম প্রতিদিন ৬ থেকে ৮টি ড্যাগে তৈরি করি। আমার কাজে সাহায্য করে ৬ জন সহকারী। শুধুমাত্র রমযানেই এ হালিমের ব্যবসা করেন তিনি।’
হজরত আলী বলেন, ‘প্রতিদিন ৫০ থেকে ৭০ হাজার টাকার হালিম বিক্রি হয়। আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিবের আজানের আগেই সব হালিম বিক্রি শেষ হয়ে যায়। মাটির সানকিতে ১০০, ২০০, ৩০০, ৫০০, ৮০০, ১০০০ টাকা মূল্যের বিভিন্ন সাইজের পাত্রে হালিম বিক্রি করি।’
পাশ্ববর্তী জেলা পিরোজপুর থেকে নানা হালিম কিনতে আসা রেজাউল হাওলাদার বলেন, ‘অনেক বছর ধরে ইফতারে নানা হালিম খাই আমরা। রোযার প্রথম দিকে বেশি পরিমাণে কিনে নিয়ে যাই। ফ্রিজে সংরক্ষণ করে খাই। শেষ হলে আবারও নিয়ে যাই। আমাদের ওখানে এতো ভালো হালিম পাওয়া যায় না।’

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ