শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪
Online Edition

অবশেষে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন

মোহাম্মদ সুমন বাকী : ফাইনাল ম্যাচ খেলা প্রথমে ছিলো স্বপ্ন পূরণ। গত শতাব্দীর নব্বই দশকে এমন ফর্মূলায় ক্রিকেট টুর্নামেন্ট কম আয়োজন করেনি স্বাগতিক বিসিবি। লক্ষ্য এই লড়াইয়ে লাল-সবুজ পতাকা টিম ফাইনাল খেলে কোটি কোটি ক্রীড়া প্রেমীর সে স্বপ্ন পূরণ করবে। ব্যাট-বলের আন্তর্জাতিক ভুবনে নিজেদের প্রাথমিক দাপট প্রতিষ্ঠিত হয়ে সারা বিশ্বে চমক দেখাবে। এমন প্রত্যাশায় দিনক্ষণ পার করে চলেন সবাই। কিন্তু সেটা আর পূরণ হয় না! তা কেন? মনের মাঝে প্রশ্ন জেগেছে। ঘুরে ফিরে যা দেখা দিয়েছে বার বার। উত্তর বের হয়নি ব্যর্থতার কারণে। কোনোভাবেই বাংলাদেশ পারছে না। এমন কি ১০০ রানের আগে অল আউট। ওয়ানডে ঘরনার প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ২৫ ওভার খেলতে পারে নাই কোনো কোনো ম্যাচে। তা এ লেখনীর অক্ষরে অক্ষরে স্মৃতিগুলো ভেসে উঠে। যা ছিলো খুবই বেদনাদায়ক। সে কথা সত্য। সেটা সকলের বোধগম্য। তা অবশ্যই উল্লেখ করার মতো। যা বজায় থাকে বিংশ শতাব্দীর কয়েক বছর পর্যন্ত। তখন বাংলাদেশ ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্ত এবং টেস্ট প্লেয়িং দল। অথচ তারা যাচ্ছে তাচ্ছে ভাবে চরম ব্যর্থ। সবুজ ঘাসের ময়দানে তাদের আত্মসমর্পন। সেটা দেখা গেছে অসহায়ের ধারায়। স্বচ্ছ পানির ন্যায় সাক্ষী হয়ে আছে ইতিহাসের পাতা। ওয়ানডে স্ট্যাটাস প্রাপ্ত ও নন টেস্ট প্লেয়িং টিম কেনিয়ার বিপক্ষে বাংলাদেশ গো হারা হেরেছে এমন অবস্থায়। মাঠের যুদ্ধে বিন্দু পরিমাণ পাত্তা পায়নি রয়েল বেঙ্গল টাইগাররা। মরিস ওদুম্বে এবং স্টিভ টি কোলোর স্পিনে বার বার ঘায়েল হয়েছে। নাগ-নাগিনার ছোবলের ছায়া মূর্তিতে সেই দৃশ্য ফুটে উঠে! খেলা পাগল ভক্তদের অভিমত কি এ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে। মন কি চায় স্মৃতির পাতা উল্টাতে? শুধুমাত্র ক্রিকেটের সেক্সি রোমাঞ্চ বিশ্বের ঘরে ঘরে ছড়িয়ে দিতে। তা কি নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে? এক বাক্যে বলা যায় যা অনায়াসে জোয়ার বইয়ে দিবে। শত শত কোটি মানুষের নরম হৃদয়ে। সেটা আঙ্গুলের হালকা টোকায় জাগ্রত করবে। ভালোবাসি ক্রিকেট, ভালোবাসি ক্রিকেট এই কথা বার বার বলবে। এর পাশাপাশি ব্যাট-বলের ক্রীড়াটি সারা দুনিয়ায় সরগরম হয়ে উঠবে নিঃসন্দেহে। আপনাদের অভিমত কি তাতে? অবশেষে বাস্তবতার প্রতিফলন ঘটে। তা মাঠের লড়াইয়ে স্বপ্ন পূরণ করে। এমন পরিস্থিতিতে ঘুরে দাঁড়াবার ইঙ্গিত দিয়ে বাংলাদেশ ধারাবাহিক ভাবে ম্যাচ জিতে। যা ধরা দেয় ফাঁকে ফাঁকে। সেটা তুল তুলে হৃদয়ে তৃপ্তির ঢেকুরের স্পর্শ পাইয়ে দিয়ে। বাস্তবতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে তা ঘুরে ফিরে রশ্মি ঘেরা পথ দেখিয়েছে। আর পিছনে তাকাতে হয়নি। এর বিপরীত চিত্রে এক ধাপ উপরে উঠে। এবার ওয়ানডে ম্যাচের সাথে সিরিজ জিতে নিয়েছে। যা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। চার-ছক্কা মারের উত্তেজনাময় যুদ্ধ বাংলাদেশের জন্য হয়ে উঠে অন্যতম ভরসা। সেটা শতভাগ সত্য কথা। এমন অবস্থায় বজায় থাকে সাফল্যের দোলনায় দুল খাওয়াটা। বিন্দু পরিমাণ মিথ্যে নয়, অফুরন্ত সাহসের ধারাবাহিকতায় সবুজ ঘাসের ময়দানে দুর্দান্ত লড়াইয়ে বার বার ফুটে উঠেছে তা। বীরত্বপূর্ণ সোনালী জয়ে ইতিহাসের পাতায় স্থান পেয়েছে যা। এ ধারায় অক্ষরে অক্ষরে আলোকিত হয়ে আছে সেটা। ২০০৯ সালে বাংলাদেশ  প্রথম ফাইনাল খেলেছে তিন জাতি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক দল হিসেবে মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়াম ভেন্যুতে। ওয়ানডে ঘরনার এই লড়াইয়ে সুযোগ পেয়েছিলো চ্যাম্পিয়ন হবার। তা কাজে লাগাতে পারে নাই। শেষ মুহূর্তে খেই হারিয়ে ফেলে টাইগার্স টিম। অবশেষে রানার্স আপ হয়। বলা যায় সেটা তাদের দুর্ভাগ্য। যা ফুটে উঠে অভিজ্ঞতার অভাবে।
শিরোপা নির্ধারণী সে ম্যাচে বাংলাদেশ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে শ্রীলংকার বিপক্ষে। এরপর আরো চমকপ্রদ নৈপূণ্য দেখিয়ে ময়দান কাঁপিয়েছে লাল-সবুজ পাতাকা জার্সীধারী দল। ফাইনাল খেলে কয়েকটি। তা আবার ভারত, পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। এখানেও শেষ রক্ষা হয়নি তাদের। ব্যাট-বলের উত্তেজনার খেলায় জিততে জিততে কাছে গিয়ে হেরে যায় তারা। যা ছিলো খুবই দুঃখজনক। অথচ সেটা ঘুরে ফিরে একই জায়গায় উপস্থাপন হয়েছে! বাংলাদেশের কোটি কোটি সমর্থক এমন ফাইনালের ব্যর্থতায় হতাশার সাগরে বার বার ডুব দিয়ে মনের ক্লান্তি দূর করেছে। তা দুঃখ বেদনা ভর করে। আর কতবার এমন ঘটনা দেখা যাবে? অন্তর থেকে অন্তরে প্রশ্ন জেগে উঠেছে! এর সমাধান কি মিলবে? নীল আকাশ কি হাসবে লাল-সবুজ পতাকার ছায়াতল ঘিরে রেখে? প্রশ্নের উত্তর মিলেছে! অবাক কান্ড!! যা পাওয়া গেছে হাসি-খুশির জোয়ারকে পুঁজি করে। এই ভাবে সাধনার ফসল ঘরে উঠে। বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়ন হয় অবশেষে। চলতি মাসে সদূর ইউরোপ মহাদেশ এমন মন মাতানো সাফল্য পায় মাশরাফি বাহিনী।
তিন জাতির লড়াই ছিলো এটা। এর আয়োজক ক্রিকেটের পরিচিত দেশ আয়ারল্যান্ড। ওয়ানডে ঘরনার খেলায় বাংলাদেশ প্রথম বারের মতো শিরোপা জয় করে। ফাইনালে সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন ওয়েষ্ট ইন্ডিজকে হারিয়ে দেয় তারা।  এর ফলে এগারো বছরের মাথায় দুঃখ ঘুচে তাদের। অম্ল মধুর শিরোপা পাবার স্বাদ নিয়ে তৃপ্তির ঢেকুর তুলে। সে কথা বলা বাহুল্য। তা ক্রিড়া প্রেমীদের বোধগম্য। তবে এখন আতœ তৃপ্তিতে ভোগার অবকাশ নেই। কারণ আসল খেলা রয়ে গেছে। সামনে বিশ্বকাপ। পারফরম্যান্স সো করতে হবে সেখানে। যা  ফুটে উঠবে প্রতিকূল কন্ডিশনে। কোনো আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ প্রথম চ্যইম্পয়ন হলো আয়ারল্যান্ডের মাটিতে। এর ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে যে কোন মূল্যে।
সেটা উল্লেখ করা প্রয়োজন এ প্রতিবেদনে। ইউরোপ আবহাওয়ার পরিবেশে একটি চমৎকার সাফল্য শিরোপা পাবার মাধ্যমে ধরা দিয়েছে। তা অবশ্যই উৎসাহ যোগাবে বিশ্বকাপ যুদ্ধে। যা শতভাগ ঠিক কথা। তাতে হাওয়ায় ভেসে গেলে চলবে না। এর পরিবর্তে সতর্কমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে বাংলাদেশ টিমকে। কারণ বিশ্বকাপ ভিন্ন বিষয়। এখানে শক্তিশালী দলের অভাব নেই। ভারত, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড, আফ্রিকা, অস্ট্রেলিয়া অন্যতম নাম যেখানে। বিশ্বকাপ আইসিসির টুর্নামেন্ট। সে জন্যে বরাবরের ন্যায় এ আসরে স্পোটিং উইকেট দেখা যাবে। যা নিরপক্ষতার ধারা বজায় রাখে। সেটা সব সময়। তা টুর্নামেন্টের নিয়ম অনুযায়ী তৈরী করা পরিকল্পনা। সকলের জানা আছে যা। সেটা নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। উইকেট (পীচ) কন্ডিশন সমানে সমান। ব্যাটসম্যান ও বোলার উভয়ে সুবিধা পাবেন। তা বরাবরের মতো। পীচ ফ্ল্যাট হয়ে থাকবে। আবার আচরন চেঞ্জ হবে। যা স্বাভাবিক। এই ধারায় বাউন্স মুভ, সুইং, টার্ন এবং লেট সুইং দেখা যাবে। ভয়ংকর হয়ে পাশে থাকবে হঠাৎ হঠাৎ ছুড়ে ফেলা ইয়র্কার। এ সবের জন্য ক্রিকেট আকর্ষনীয় ও চমৎকার। বলেন কি? ইংলিশ কন্ডিশনে এমন বিষয়গুলো থাকছে। তাই সতর্ক হওয়া দরকার মাশরাফির বাংলাদেশের। ভুলে গেলে চলবে না, বিশ্বকাপ প্রথম পর্বের শুরুটা দেখা যাবে লং টাইমের লীগ ম্যাচকে ঘিরে। এরপর সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল। সুতরাং এই অবস্থায় বিপক্ষ দলের মান বুঝে কৌশলগত শক্তি প্রয়োগ করতে হবে মাশরাফি বাহিনীকে। তাহলে সাফল্য পাবার সন্ধানে সূত্রের দেখা মিলবে। সে জন্য সতর্কতা প্রয়োজন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ