শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪
Online Edition

একদিন তারেক রহমানের শাস্তি কার্যকর হবে

জাপান, সৌদিআরব ও ফিনল্যান্ড সফর বিষয়ে গতকাল রোববার গণভবনে সাংবাদিক সম্মেলন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা -পিআইডি

স্টাফ রিপোর্টার : লন্ডনে থাকা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, এই নাম নিতেও ঘৃণা লাগে। তবে আজ হোক কাল হোক এক দিন না একদিন তাঁর (তারেক রহমান) শাস্তি কার্যকর হবে।
গতকাল রোববার গণভবনে এক সাংবাদিক সম্মেলনে এ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। গতকাল তিনি ওই সফর নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।
তিনি ২৮মে থেকে ৭ জুন পর্যন্ত জাপান, সৌদি আরব এবং ফিনল্যান্ড সফর শেষে গত শনিবার দেশে ফেরেন। প্রধানমন্ত্রী তাঁর ত্রিদেশীয় সফরের শুরুতে গত ২৮মে জাপানের রাজধানী টোকিও পৌঁছেন।
জাপানে তাঁর অবস্থানকালে বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে আড়াই বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ৪০তম অফিসিয়াল ডেভেলপমেন্ট এসিসটেন্স (ওডিএ) চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেখ হাসিনা জাপানের প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করেন।
পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী ‘এশিয়ার ভবিষ্যত’ শিরোনামে আয়োজিত নিক্কেই আন্তর্জাতিক সম্মেলনে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন। এছাড়া সেখানে তাঁর সম্মানে আয়োজিত একটি নাগরিক সংবর্ধনায়ও যোগ দেন এবং জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দের সঙ্গে প্রাতঃরাশ গোলটেবিল আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।
গুলশানের হোলি আর্টিজান বেকারীতে সন্ত্রাসী হামলার শিকার জাপানী নাগরিকদের পরিবার বর্গ এবং জাইকা সভাপতি শিনিচি কিতাওকার সঙ্গে পৃথকভাবে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
প্রধানমন্ত্রী সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ আল সৌদের আমন্ত্রণে ৩১ মে সৌদি আরব পৌঁছেন এবং পবিত্র মক্কা নগরীতে অনুষ্ঠিত ১৪ তম ওআইসি শীর্ষ সম্মেলনে যোগদান করেন।
তিনি মক্কাতে পবিত্র ওমরাহ পালন করেন এবং মদীনায় রাসুল মুহাম্মাদ (সা.) এর রওজা মোবারক জিয়ারত করেন।
অর্থমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি ও শিল্প বিনিয়োগ উপদেষ্টা, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী, বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীসহ উচ্চপর্যায়ের সরকারি ও ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল তাঁর সফরসঙ্গী ছিলেন।
দু’দেশের মধ্যকার ব্যবসা-বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর জন্য বৈঠকে তিনি জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, আড়াইহাজারে জাপানি বিনিয়োগকারীদের জন্য একটি আলাদা অর্থনৈতিক অঞ্চল স্থাপন করা হচ্ছে। তাঁরা চাইলে অন্যান্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলে বা চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্প নগরীতে শিল্পকারখানা স্থাপন করতে পারেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,সভায় জাপানের শীর্ষ ব্যবসায়ীগণ ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারে বাংলাদেশ সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের প্রশংসা করেন এবং তাঁরা বাংলাদেশে আরও বিনিয়োগের আশ্বাস দেন।
তিনি বলেন,একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন করায় প্রধানমন্ত্রী আবে আমাকে অভিনন্দন জানান। তিনি বাংলাদেশ ও জাপানের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় নেয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, মিয়ানমার থেকে আগত বাস্তচ্যূত রোহিঙ্গাদের সুরক্ষা প্রদানের জন্য শিনজো আবে তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলায় বাংলাদেশকে পূর্ণ সহযোগিতার আশ্বাস দেন।
জাপানের প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জনে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, শিনজো আবে বলেছেন- ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশের মধ্যম আয়ের দেশে উন্নত হওয়ার পথে এবং ২০৩০ সালের মধ্যে বাংলাদেশের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে জাপান বাংলাদেশের পাশে থাকবে।
ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত ৭ জন জাপানী নাগরিকের জন্য জাপানের প্রধানমন্ত্রীর কাছে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী আবে-কে জানাই যে বাংলাদেশ সন্ত্রাসবাদ ও সহিংস চরমপন্থার প্রতি ‘জিরো টলারেন্স’ নীতি অনুসরণ করে।
এই বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় তিনি জাপানের মত বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্রের সঙ্গে একযোগে কাজ করারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
জাপান দক্ষ শ্রমিক নিয়োগের জন্য নতুন একটি অভিবাসন আইন গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই আইনের আওতায় ‘নির্দিষ্ট দক্ষ শ্রমিক’ শ্রেণিতে নিয়োগের জন্য বাংলাদেশকে একটি অনুমোদিত উৎস দেশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করার অনুরোধ জানান। সম্ভাব্য কর্মীদের জন্য জাপানি ভাষা প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের জন্য জাপানের সহযোগিতা চান। জাপানের প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাবটি বিবেচনার আশ্বাস দিয়েছেন।
শেখ হাসিনা এ সময় জাপানের প্রধানমন্ত্রী এবং তাঁর সহধর্মীণী আকি আবে-কে সুবিধাজনক সময়ে বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানালে তিনি তা বিবেচনার আশ্বাস দেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দ্বিপাক্ষিক বৈঠক শেষে আমার এবং জাপানের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বাংলাদেশ ও জাপানের মধ্যে ৪০তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ স্বাক্ষরিত হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন,আমি উন্নত এশিয়া গড়ে তোলার লক্ষ্যে কয়েকটি ধারণা পেশ করি। বাংলাদেশ সংলাপের মাধ্যমে রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে চাই বলেও তিনি সম্মেলনে উল্লেখ করেন।
সম্মেলনের পর জাইকার প্রেসিডেন্ট শিনিচি কিতাওকা আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন এবং বাংলাদেশের উন্নয়নে জাইকার অব্যাহত সমর্থন ও দৃঢ় প্রতিশ্রুতির জন্য ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে মুসলিম বিশ্বের বেশকিছু দেশ শান্তি, নিরাপত্তা, অভ্যন্তরীণ দ্বন্ধ, বাইরের হস্তক্ষেপ, সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ ও মানবিক বিপর্যয়সহ নানারকম সমস্যার সম্মুখীন। এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের এবং একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পরিম-লে শান্তি ও নিরাপত্তা রক্ষায় সংস্থাটির সম্মিলিত উদ্যোগ গ্রহণের আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ওআইসির চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনে মুসলিম উম্মাহর উন্নতি সাধন তথা নির্যাতিত এবং নিপীড়িত মানবতার মুক্তি সংগ্রামে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ ভূমিকা প্রশংসিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, বিশেষত রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ যেভাবে সহমর্মিতা প্রদর্শন করেছে তা শুধু মুসলিম দেশগুলোর জন্য নয় বরং সারা বিশ্বের জন্য একটি অনুকরণীয় ও অনুসরণীয় দৃষ্টান্ত বলে বারবার প্রশংসিত হয়েছে।
তিনি বলেন,এই সম্মেলনে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া যথাযথভাবে ও দ্রততম সময়ে সম্পন্ন করার জন্য বাংলাদেশের বিভিন্ন উদ্যোগ ও পদক্ষেপসমূহ উপস্থাপন করি।
শেখ হাসিনা বলেন, শীর্ষ সম্মেলনের পাশাপাশি রোহিঙ্গা বিষয়ক মন্ত্রী পর্যায়ের এডহক বৈঠকে রোহিঙ্গাদের ন্যায্য অধিকার আদায় ও মিয়ানমার কর্তৃপক্ষকে উপযুক্ত জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য গাম্বিয়া কর্তৃক আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে ওআইসির পক্ষ থেকে মামলা দায়ের করার জন্য সম্মিলিত তাগিদ আসে। চতুর্দশ শীর্ষ সম্মেলনের চূড়ান্ত ইশতেহারে এটির উল্লেখ করা হয়।
তিনি বলেন, পাশাপাশি গাম্বিয়ার নেতৃত্বাধীন এ উদ্যোগে আইনি ও আর্থিক সহযোগিতা যোগানের জন্য সদস্য রাষ্ট্রসমূহের প্রতি আমি আহ্বান জানাই।
তিনি বলেন,আমি সম্মেলনে জানাই যে বাংলাদেশে অবস্থিত ওআইসি-র সহযোগী প্রতিষ্ঠান ইসলামী প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে ‘উৎকর্ষ কেন্দ্র’ হিসেবে গড়ে তুলতে বাংলাদেশ সচেষ্ট রয়েছে। পাশাপাশি ওআইসির মধ্যকার আন্তঃবাণিজ্য, বিনিয়োগ, সবুজ ও নীল অর্থনীতির উন্নয়ন, মুসলিম উম্মাহর আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় ক্ষেত্রে মধ্যপন্থার চর্চা ইত্যাদিতে ওআইসি-ও প্রচেষ্টা ও উদ্যোগসমূহে বাংলাদেশ সব সময়ই সমর্থন দিবে।
শেখ হাসিনা বলেন,আমি বিশ্বাস করি এই সম্মেলনে বাংলাদেশের গৃহীত উদ্যোগ, অভিজ্ঞতা ও অর্জনগুলো মুসলিম বিশ্বসহ বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার মাধ্যমে বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, ওই একুশে আগস্টের হামলায় আইভি রহমানসহ ২৮ জন মানুষ নিহত হন। শতাধিক মানুষ আহত হন। শুধু একুশে আগস্ট নয়, ১০ ট্রাক অস্ত্র চোরাচালানের সঙ্গেও যুক্ত সে (তারেক রহমান)। শেখ হাসিনা বলেছেন, এসব ব্যক্তির জন্য অনেকের মায়াকান্না দেখছি। আমরা যুক্তরাজ্যের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছি। তবে ওরা অনেক টাকার মালিক। সব সময় চেষ্টা করে ঝামেলা সৃষ্টি করার। আমি সেখানে গেলেও ঝামেলা সৃষ্টি করতে চায়। তবে যাই হোক, তাঁর শাস্তি কার্যকর হবে।
বিমানবন্দরে ইমিগ্রেশনের ক্ষেত্রে কঠোর হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাঁকে ফিনল্যান্ড থেকে আনতে যাওয়ার বিমানের উড়োজাহাজের পাইলটের পাসপোর্ট ছেড়ে কাতার যাওয়ার ঘটনা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, এটা ইমিগ্রেশনের দুর্বলতা। শেখ হাসিনা বলেন, দিনে দিনে ভিআইপি ও ভিভিআইপির সংখ্যা বাড়ছে। আরও যত ‘ভি’ লাগুক না কেন কাউকে ছাড়া হবে না।
১২ দিনের সরকারি সফরের বিষয়ে দেশবাসীকে অবহিত করতে বিকেল পাঁচটটার দিকে সংবাদ সম্মেলনে আসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি জাপানের সঙ্গে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ঐতিহাসিক পরম্পরা তুলে ধরেন।
জাপানের সঙ্গে মাতারবাড়ি, সাবরাং প্রকল্পের কথা স্মরণ করে দেন তিনি। বলেন, সাবরাংয়ে টুরিস্ট প্লেস করবে সরকার। এটা পুরোপুরি বিদেশিদের জন্য করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সৌদি আরবে ওআইসির সম্মেলন এবং সেখানে তাঁর সফরের নানা দিক নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।
আসছে বাজেটে সামাজিক কল্যাণ খাতে সরকারের অগ্রাধিকার কী হবে এমন প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি বাংলাদেশে বিশাল। প্রতিবন্ধী, বিধবা, অসহায় দারিদ্র্য পীড়িত মানুষের জন্য সরকার নানা কর্মসূচি নিয়েছে। এসব অব্যাহত থাকবে। উন্নত দেশগুলোর জনসংখ্যা কম। তারা অনেক কিছু পারে। অনেক সম্পদ তাদের। কিন্তু আমাদের মতো সম্পদ ও বিপুল জনসংখ্যা থাকলে কী হতো সেটাই প্রশ্ন।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ