ঢাকা, শুক্রবার 29 March 2024, ১৫ চৈত্র ১৪৩০, ১৮ রমজান ১৪৪৫ হিজরী
Online Edition

খেলাপি ঋণে লাগাম টানতে কমিটি

সংগ্রাম অনলাইন ডেস্ক: খেলাপি ঋণের লাগাম টেনে ধরতে জরুরি বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক; গঠন করা হয়েছে একটি কমিটি।বিশাল অঙ্কের খেলাপি ঋণ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের নির্দেশে এ কমিটি গঠন করা হয়।

খেলাপি ঋণ বেশি বেড়েছে এমন সাতটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে (এমডি) তলব করে কারণ জানতে চেয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মঙ্গলবার (১১ জুন) সন্ধ্যায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক জরুরি সভায় ব্যাংকগুলোর এমডিদের কাছে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে চাওয়া হয়। সোনালী, অগ্রণী, জনতা, রূপালী, আল-আরাফাহ, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংকের এমডিদের ওই সভায় ডাকা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম সভায় যোগ দেন। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্র জানিয়েছে, সভা শেষে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে।

গভর্নর ফজলে কবিরের সভাপতিত্বে এই বঠকে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব আসাদুল ইসলাম উপস্থিত ছিলেন।

সভায় খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ খুঁজতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

যে সাত ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের নিয়ে বৈঠকটি হয়েছে, তার চারটি সরকারি ব্যাংক, এগুলো হচ্ছে সোনালী, অগ্রণী, জনতা ও রূপালী ব্যাংক। বাকি তিনটি বেসরকারি ব্যাংক, সেগুলো হচ্ছে  আল-আরাফাহ, ইসলামী ও ন্যাশনাল ব্যাংক।

বৈঠক প্রসঙ্গে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণে সাত  ব্যাংকের এমডিকে ডাকা হয়েছিল। তারা বলেছেন, অনেকে ঋণ পুনঃতফসিল করেও এখন কিস্তি পরিশোধ করছেন না। এ জন্য খেলাপি ঋণ বেড়ে গেছে।

“বৈঠকে খেলাপি ঋণ বাড়ার কারণ জানতে ও কমিয়ে আনতে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কয়েকটি বিভাগ এ কমিটিতে থাকবে।”

বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইল ছবি বাংলাদেশ ব্যাংক, ফাইল ছবি

ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ, অফসাইট সুপারভিশন বিভাগ, ব্যাংক পরিদর্শন বিভাগ ও ফিন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি বিভাগের সমন্বয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে।

অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দেড় লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়েছে।

বছরের শুরুতে দায়িত্ব নেওয়ার পর অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল ঘোষণা দিয়েছিলেন, খেলাপি ঋণ আর ‘এক টাকাও বাড়বে না’।

সেজন্য ঋণ অবলোপনের নীতিমালা শিথিলসহ কিছু পদক্ষেপও নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু অর্থমন্ত্রীর সে কথা ফলেনি, খেলাপি ঋণ বেড়েই চলেছে।

বাংলাদেশ ব্যাংক সোমবার খেলাপি ঋণের হালনাগাদ যে তথ্য প্রকাশ করে, তাতে দেখা যায়,  গত মার্চ শেষে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক  লাখ ১০ হাজার ৮৭৩ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণ করা ঋণের ১১ দশমিক ৮৭ শতাংশ।

মার্চ শেষে ব্যাংক খাতে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণের (রাইট অফ) স্থিতি ছিল ৩৯ হাজার ২৪৮ কোটি টাকা। খেলাপি ঋণের সঙ্গে অবলোপনকৃত খেলাপি ঋণ যোগ করলে বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে মোট খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় এক লাখ ৫০ হাজার ১২২ কোটি টাকা।

বছরের পর বছর ধরে ব্যাংক ব্যবস্থায় মন্দ মানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ স্থিতিপত্র (ব্যালেন্স শিট) থেকে বাদ দেওয়াকে ঋণ অবলোপন-রাইট অফ বলে। যদিও এধরনের ঋণ গ্রহীতা পুরো টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত খেলাপি হিসেবে বিবেচিত হন।

খেলাপি ঋণ বাড়ার এই খবর প্রকাশের পর বেশ চাপের মধ্যে পড়ে বাংলাদেশ ব্যাংক। অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামালও নাখোশ হন।

অর্থমন্ত্রীর নির্দেশেই জরুরি বৈঠকে আয়োজন করা হয় বলে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক কর্মকর্তা জানান।

তিনি বলেন, বৈঠকে ব্যাংকগুলোকে যে কোনো উপায়ে চলতি জুন মাসের মধ্যে খেলাপি ঋণ কমিয়ে আনার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

অনলাইন আপডেট

আর্কাইভ