পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহার করবে না মোদির বিমান
১২ জুন, পিটিআই : অনুমতি পাওয়া সত্ত্বেও পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহার করে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বিশকেক যাচ্ছেন না। পাকিস্তানকে এড়িয়ে ওমান, ইরান ও মধ্য এশিয়া হয়ে তিনি কিরঘিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে যাবেন। ১৩ ও ১৪ জুন বিশকেকে অনুষ্ঠিত হচ্ছে ‘সাংহাই কোঅপারেশন অর্গানাইজেশন’ বা এসসিও-এর ১৯ তম শীর্ষ সম্মেলন। সেখানে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির প্রথম দেখা হওয়ার সম্ভাবনা নিয়ে ভারতে এই মুহূর্তে জল্পনা চরমে। বালাকোটকান্ডের পর গত ফেব্রুয়ারি মাস থেকে পাকিস্তানের আকাশপথ ভারতীয় উড়োজাহাজের জন্য বন্ধ। নরেন্দ্র মোদির বিশকেক সফরের জন্য পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল ভারত। পাকিস্তান সেই অনুমতি দিয়েছে বলে ভারতীয় সংবাদ সংস্থা পিটিআই তিন দিন আগে খবরও দিয়েছিল। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সেই খবর অস্বীকার করেনি। কিন্তু যাত্রার ঠিক আগের দিন, আজ বুধবার দুপুরে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জানানো হয়, প্রধানমন্ত্রীর উড়োজাহাজ ওমান, ইরান ও মধ্য এশিয়ার অন্য দেশ হয়ে কিরঘিজস্তানের রাজধানী বিশকেকে যাবে। সরকারিভাবে বলা হয়, বিশকেকে পৌঁছানোর দুই ‘রুট’ বা উপায় নিয়েই চিন্তা-ভাবনা চলছিল। এখন ঠিক হয়েছে ওমান, ইরান ও মধ্য এশিয়া হয়ে যাওয়া হবে।
পাকিস্তানকে উপেক্ষা ও অবজ্ঞা করার এই দৃষ্টান্ত নবতম। ইমরান খান পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হওয়ার পর এখনো মোদির সঙ্গে তার দেখা হয়নি। দ্বিতীয় দফার প্রধানমন্ত্রিত্বের শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে ইমরানকে আমন্ত্রণ জানাননি মোদি। ইমরান অবশ্য প্রধানমন্ত্রী হয়ে পর পর দুটি চিঠি লিখে মোদিকে অনুরোধ করেছেন বন্ধ থাকা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা শুরু করতে। মোদি এখনো ইতিবাচক মনোভাব দেখাননি। বিশকেকের আসরে দুই নেতার মধ্যে আনুষ্ঠানিক কোনো বৈঠকও যে হচ্ছে নাÍভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে তাও স্পষ্ট করে বলে দেওয়া হয়েছে। ঘুরপথে বিশকেক যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে প্রশ্ন উঠেছে, কেন তা হলে পাকিস্তানের অনুমতি চাওয়া হলো? অনুমতি পাওয়ার পর কেনই বা তা গ্রহণ করা হলো না? সরকারিভাবে এর কোনো ব্যাখ্যা নেই। যদিও মনে করা হচ্ছে, পাকিস্তানের আকাশসীমা ব্যবহারের অনুমতি চাওয়ার পর সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যমে যে সমালোচনার ঝড় উঠেছে, তা দেখেই সরকারের এই সিদ্ধান্ত।
ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রসচিব বিবেক কাটজু পাকিস্তানের আকাশপথ ব্যবহারের অনুমতি চাওয়ায় সরাসরি হতাশা প্রকাশ করেছেন। এক সর্বভারতীয় ইংরেজি দৈনিকে লেখা নিবন্ধে এই হতাশার কথা জানিয়ে তিনি বলেছেন, গত মে মাসে বিশকেকে এসসিও-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সম্মেলনে যোগ দিতে গিয়েছিলেন ভারতের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। ঘুরপথে না গিয়ে পাক আকাশপথ পাড়ি দেওয়ার অনুমতি তখনো চাওয়া হয়েছিল। পাকিস্তান অনুমতিও দিয়েছিল। সেই অনুমতি চাওয়ার একটা কারণ ছিল। সুষমা ছিলেন অসুস্থ। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তো অসুস্থ নন। কাটজু লিখেছেন, ভারতের জন্য পাকিস্তান তার আকাশপথ বন্ধ করে দেওয়ায় হাজার হাজার সাধারণ মানুষকে প্রবল অসুবিধার মধ্যে পড়তে হচ্ছে। তাঁদের প্রতি, বিশেষ করে উপসাগরীয় দেশগুলোয় কাজ করে যাঁরা ভারতের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধ করছেন, প্রধানমন্ত্রী তাঁদের প্রতি সহানুভূতিশীল হয়ে ঘুরপথেই বিশকেক যেতে পারতেন। বিবেক কাটজু মনে করেন, পাকিস্তানের কাছে এই ‘উপকারটুকু’ চাওয়াই ভারতের উচিত হয়নি।