ভোটে নির্বাচিত হবে ছাত্রদলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক
স্টাফ রিপোর্টার: ছাত্রদলের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা করেছে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। আগামী ১৫ জুলাই এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৯টা থেকে বিকাল তিনটা পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে ভোট গ্রহণ চলবে। তবে ভোট কেন্দ্রের স্থান এখনো ঠিক করা হয়নি। সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নর্বাচনে প্রার্থী হতে ইচ্ছুকদের অবশ্যই ২০০০ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী হতে হবে। গতকাল রোববার বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক খায়রুল কবির খোকন ‘কাউন্সিল-২০১৯’ এর এই তফসিল ঘোষণা করেন।
তফসিল অনুযায়ী আজ ২৪ জুন ভোটার তালিকা প্রকাশ করবে নির্বাচন কমিশন। ভোটার তালিকার ওপর আপত্তি ১৪ জুন, চূড়ান্ত ভোটার তালিকা ২৬ জুন, মনোনয়নপত্র বিতরণ ২৭ ও ২৮ জুন, মনোনয়নপত্র জমাদান ২৯ ও ৩০ জুন, প্রার্থী বাছাই ১, ২ ও ৩ জুলাই হবে। আগামী ৪ জুলাই প্রার্থীদের খসড়া তালিকা প্রকাশ, তালিকার ওপর আপত্তি ও নিষ্পত্তি ৫ ও ৬ জুলাই এবং চূড়ান্ত তালিকা ৭ জুলাই প্রকাশ করা হবে। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থীরা আগামী ১৩ জুলাই রাত ১২টা পর্যন্ত ভোটের প্রচারণা চালাতে পারবেন।
তফসিল ঘোষণার আগে ছাত্র দলের সাবেক সভাপতি বর্তমানে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু বলেন, ছাত্রদল এদেশের গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায়, ছাত্রদের অধিকার প্রতিষ্ঠায়, স্বাধীনতা রক্ষায় সব সময় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ জিয়াউর রহমানের হাত ধরে এই সংগঠনের যাত্রা শুরু। ইতিহাসের প্রয়োজনে আজকে আবার ছাত্রদলকে জেগে উঠার প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। সেই কারণে আমরা নব উদ্যমে এই সংগঠনকে এগিয়ে নেয়ার জন্যে আমরা ছাত্রদলের আগামী দিনে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য কাউন্সিলের উদ্যোগ নিয়েছি। যে কাউন্সিল অত্যন্ত সংক্ষিপ্ত সময়ে আগামী ১৫ জুলাই করবো। নির্বাচনের মধ্য দিয়ে এই ছাত্র নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এই ঘটনা আগে কখনো দেখা যায়নি যা ছাত্র দল আগামী দিন উদ্যোগ নিয়েছে।
এই নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার জন্য সবেক ছাত্রদল নেতা খায়রুল কবির খোকনের নেতৃত্বে ৭ সদস্যের নির্বাচন পরিচালনা কমিটি, ফজলুল হক মিলনের নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বাছাই কমিটি ও দুদু‘র নেতৃত্বে তিন সদস্যের আপীল কমিটি গঠন করা হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে দুদু বলেন, যারা এই নির্বাচনের প্রার্থী হবেন তাদেরকে অবশ্যই অবিবাহিত হতে হবে। বিবাহিতরা প্রার্থী হতে পারবেন না, তারা তো ছাত্র না।
ভোট কোথায় হবে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, এটা (স্থান) দুই-একদিনের মধ্যে আমরা জানাবো।
ছাত্র দলের বিক্ষুব্ধ ১২ নেতার বহিস্কারের সিদ্ধান্ত সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে দুদু বলেন, ২০০০ সালে যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছেন তাকে ভিত্তি করে প্রার্থী হবেন। তাদের সেশন হবে ১৯৯৮ সালে রেজিস্ট্রেশন। ছাত্রদল একটি নিয়মশৃঙ্খলার ছাত্র সংগঠন। এই সংগঠন ডাকসু, রাকসু, ইকসুর নেতৃত্বে দিয়েছে। এমন কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে এ্ সংগঠন নেতৃত্ব দেয়নি। এটা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের প্রধান ছাত্র সংগঠন। সেই সংগঠনের কেউ যদি নিয়ম শৃঙ্খলার বাইরে যায়, গঠনতন্ত্র মোতাবেক তারা একটা শাস্তির একটা শাস্তির আওতায় আসে।
ছাত্রদলের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণার পরে আমরা এখানে (নয়া পল্টনের কার্যালয়ে) তাদের (বিক্ষুব্ধদের) সাথে কথা বলার জন্য এসেছিলাম। সাংবাদিকরা দেখেছেন। আমাদের দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী এখানে পার্টির নির্দেশে এখানে কাজ করছেন, পার্টি তাকে যেটা বলতে বলে সে ততটুকু বলে। সেখানে তাকে টার্গেট করাটা সমচিত তো নয়ই , এটা শৃঙ্খলার মধ্যে পড়ে না। এটা নৈতিক ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ, এটা ছাত্রদলের সাথে যায় না। এই বিষয়ে পার্টির যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা যথাযথ সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
বয়সসীমা উঠিয়ে দেয়ার প্রতিবাদে গত ১০ জুলাই থেকে ছাত্র দলের বিক্ষুব্ধ নেতা-কর্মীদের আন্দোলন ও গত শনিবার তাদের ১২ নেতাকে সংগঠনের শৃঙ্খলা বিরোধী কার্য্ক্রমের অভিযোগ বহিস্কারের পর নির্বাচন পরিচালনা কমিটি এই তফসিল ঘোষণা করলো। গত ৩ জুন বিএনপি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ছাত্রদলের মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটি ভেঙে দেয়। এরপর আগামী ৪৫ দিনের মধ্যে কাউন্সিলের মাধ্যমে প্রত্যক্ষভোটে সভাপতি ও সাধারণ সম্প্দাক নির্বাচিত করার সিদ্ধান্ত হয়।
সর্বশেষ ছাত্রদলের কমিটি গঠন করা হয়েছিলো ২০১৪ সালের ১৪ অক্টোবর। ওই কমিটিতে সভাপতি হিসেবে রাজীব আহসান ও সাধারণ সম্পাদক হিসেবে আকরামুল হাসানকে নির্বাচিত করা হয়। রাজীব-আকরামের নেতৃত্বে ১৫৩ সদস্যের আংশিক কমিটি গঠন করা পর দীর্ঘদিন পরে এই কমিটি পূর্ণাঙ্গ করা হয়, যাতে ৭৩৬ জনকে পদ দেওয়া হয়েছিলো।
বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর স্বাক্ষরিত ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ছাত্র দলের অনুষ্ঠিতব্য কাউন্সিলে প্রার্থী হওয়ার যোগ্যতা নির্ধারণ করে দেয়া হয়। এগুলো হচ্ছে,এক.প্রার্থীদের জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের প্রাথমিক সদস্য হতে হবে, দুই. অবশ্যই বাংলাদেশে অবস্থিত কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র হতে হবে এবং তিন.কেবলমাত্র ২০০০ সাল থেকে পরবর্তীতে যেকোন বছরে এসএসসি/সমমানের পরীক্ষায় উত্তীর্ণহতে হবে।
সাংবাদিক সম্মেলনে নির্বাচনের সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে শামসুজ্জামান দুদু ছাড়াও আসাদুজ্জামান রিপন, রুহুল কবির রিজভী, ফজলুল হক মিলন, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, আজিজুল বারী হেলাল, এবিএম মোশাররফ হোসেন, শফিউল বারী বাবু, আমিরুল ইসলাম খান আলিম, আবদুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, রাজীব আহসান, আকরামুল হাসান, ইয়াসিন আলী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।